হাকিমপুরী

অলিক (অক্টোবর ২০১৮)

Salma Siddika
মোট ভোট ১৩ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৬.১৫
  • ১৮
  • ৫৩
"এক শলাকা সিগারেট হবে স্যার?"

রায়হান জ্বলন্ত সিগারেট হাতে ধরে গভীর ভাবনায় ডুবে ছিলো। আচমকা পাশ থেকে এমন আবদার শুনে চমকে তাকালো। সেই সাথে খুব বিরক্তও হলো। লোকটা কখন তার পাশে বসেছে, রায়হান খেয়াল করেনি। নাহ, লোকটাকে সে চেনে না। তেল চুপচুপে চুল নিপাট আঁচড়ানো, মুখেও তেল চকচক করছে। রোদে পোড়া গাঢ় বাদামি ত্বকে নানা মাপের বলিরেখা স্পষ্ট। পৌষ মাসের শীত কাটানোর জন্য গায়ে ভারী চাদর জড়ানো, সাথে ডোরা কাটা লুঙ্গি। পায়ে প্লাস্টিকের জুতো।
"আমার কাছে সিগারেট নেই, যান। "
একগাল হেসে লোকটা বললো, "এইতো স্যার, মিথ্যা কথা বললেন। আপনে একটু আগেই ওই টঙের দোকান থেইকা এক প্যাকেট বেনসন কিনছেন, পরপর তিনটা সিগারেট ধরাইছেন কিন্তু ফুঁকেন না, এমনেই জ্বালাইতেছেন।"

রায়হানের মাথায় আগুন ধরলো হটাৎ, "আমার যত ইচ্ছা সিগারেট কিনবো, জ্বালাবো, আপনাকে দিবো না, আমার ইচ্ছা। এখন ভাগেন, বিরক্ত করলে একটা থাবর দিবো।" সত্যি হাত উঁচিয়ে ধরলো রায়হান।

লোকটা ঝট করে বেঞ্চ থেকে উঠে পাশে দাঁড়ালো। আশ্চর্য ব্যাপার, রায়হানকে রাগিয়ে দিয়ে লোকটা মনে হয় মজা পাচ্ছে। লোকটার মুখ হাসি হাসি।
রায়হান সিগারেট মুখে চেপে অন্যদিকে তাকালো। বিরক্তিতে তার কপাল কুঁচকে আছে। সুবর্ণা এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা সকাল সাতটায় , এখন আটটা পাঁচ। কি জানি সমস্যা হয়েছে। স্টেশন মাস্টারের অফিসে বড় তালা ঝোলানো। রায়হান একটু আগে দেখে এসেছে। টিকেট কাউন্টারে একটা লোক ঝিমাচ্ছিলো। তাকে জিজ্ঞেস করাতে ভীষণ বিরক্ত হলো। ঘুম মাখা চোখ খুলে বললো, "ট্রেনের সমস্যা।"
"সমস্যা তো বুঝতেই পারছি, কিন্তু কী সমস্যা, কখন আসবে?"
"কি সমস্যা জানলে আপনি সমাধান করতে পারবেন? পারবেন না। তাইলে আজাইরা চিল্লাফাল্লা করবেন না। কিছুদিন আগে স্টেশনে নতুন ওয়েটিং বেঞ্চ বসানো হইছে। ওখানে বসে অপেক্ষা করেন।"
"স্টেশন মাস্টার কই ? তার কাছে আপনার নামে কমপ্লেইন করবো। আপনি মহা বেয়াদব।"

রায়হান খেপে গিয়েছে অথচ লোকটা পাত্তা না দিয়ে বললো, "আমিই স্টেশন মাস্টার। করেন, আমার কাছেই আমার নাম কমপ্লেইন করেন।"
লোকটার চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেছে, কুতকুত চোখে রায়হানকে দেখছে। রায়হানের ইচ্ছা করলো ঘুষি মেরে টিকেট কাউন্টারের কাঁচের দেয়াল ভেঙে দেয়। কিন্তু সে নিজেকে সংযত করে বাইরে নতুন বেঞ্চে এসে বসেছে। হটাৎ এই উটকো সিগারেট প্রার্থীর আগমন।

রায়হানকে একটু শান্ত হতে দেখে লোকটা আবার বেঞ্চের আরেক কোনায় বসলো।
"স্যার, আমি জানি আপনে কেন এত রাইগা আছেন। আমি কিন্তু আপনের মুশকিল আসান কইরা দিতে পারি।"

রায়হান কপাল কুঁচকে তাকালো। পাশের লোকটার চোখে মুখে শিশুদের মতো কৌতুক।
"আমার মুশকিল আসান করতে বলছি আপনাকে? আপনাকে না ভাগতে বললাম? এখনো বসে আছেন কেনো?"
"স্যার, আমি ছাড়া আপনার সমস্যা কেউ সারাইতে পারবে না। "
"আর একটা কথা বললে কিন্তু তোরে সত্যি থাবর লাগামু। যা, ভাগ। "
রায়হান আরো রেগে চিৎকার করে বললো। অথচ বিচলিত না হয়ে পাশের লোকটার চোখে মুখে আরো বেশি কৌতুক ছড়িয়ে পড়লো। এবার লোকটা আর বেঞ্চ ছেড়ে উঠলো না।
"স্যার, আমি জানি আপনার বৌয়ের সাথে আপনার ব্যাপক গেঞ্জাম চলতেছে। আপনার বৌ আপনের সাথে ঠিক মতো কথাও বলে না। আমি কিন্তু এই গেঞ্জাম মিটায় দিতে পারি।"
রায়হান চমকালো। চমকানোই স্বাভাবিক। তার স্ত্রী তার সাথে কথা বলে না, এইটা এই লোক কিভাবে জানলো? রায়হান এতটাই চমকিত যে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো, অবশ্য তার কপাল কুঁচকে রইলো।
"আমার স্ত্রীর সাথে যা ইচ্ছা তা হোক, আপনার পাকনামি করার কে? যান এখন থেকে।" তুই থেকে তুমিতে উঠে নিজের অজান্তে আগের চেয়ে নরম গলায় বললো রায়হান। চলে যেতে বললেও তার কণ্ঠে জোর নেই।
"আমি চইলা যাবো। আপনেরে বিরক্ত কইরা আমার ফায়দা কী? আসলে কি জানেন স্যার, কাউরে বিপদে দেখলে আমার কইলজায় কামড় মারে। কি করমু স্যার, আল্লাহ আমারে এই বিদ্যা দিয়া দুইন্নায় পাঠাইছে। মাইনষের বিপদ আপদ আমি টের পাই। তারপর কে জানি ইশারা দিয়া বইলা দেয় কেমনে সেই বিপদ থেইকা উদ্ধার করা যাইবো। আইজ পর্যন্ত বুজতারলাম না, কে ইশারা করে। কিন্তু স্যার,আমার কথা মানুষ বিশ্বাস করে না। এই যে আপনেও আমারে বিশ্বাস পাইতেছেন না আমি উপকার করি অথচ মানুষ দূর দূর করে। আপনেও যাইতে বলতেছেন। "
লোকটা বিষন্ন মুখে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।

রায়হান কিছুটা বিভ্রান্ত হলো। লোকটা রায়হানের দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বললো, "স্যার, আপনার ইস্তিরি কলির সাথে আপনার সমস্যা আমি মিটায় দিতে পারি। ট্যাকা পয়সা কিছুই লাগতো না। আমি ছাড়া আপনাকে কেউ এই বিপদ থেইকা উদ্ধার করতারবো না।"

রায়হান ভীষণ অবাক হয়েছে কিন্তু মুখভঙ্গিতে সেটা প্রকাশ করছে না। তার স্ত্রীর নাম কলি, সেটা এই লোকের জানার কথা না। কলির সাথে তার সমস্যা চলছে সেটাও এই লোকের জানার কথা না।
এবার রায়হানের সন্দেহ হলো। লোকটা নির্ঘাত বাটপার। কোনোভাবে টের পেয়েছে কলির সাথে তার সমস্যা চলছে তার এই সুযোগে রায়হানের কাছ থেকে টু পাইস কামাই করার ধান্দা। যত্তসব ছোটলোকের বাচ্চা।

রায়হানের মেজাজ খারাপ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কলির সাথে তার বিয়ে হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে। সদ্য বিবাহিত তরুণ স্বামী স্ত্রী প্রেমে ঢলাঢলি করবে এমনটাই স্বাভাবিক। অথচ কলি স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসে গভীর মনোযোগে মোবাইলে গেম খেলছে। সাপের গেম, সাপ খেয়ে খেয়ে লম্বা হবে কিন্তু কিছুতেই দেয়াল ছুঁতে পারবে না। এঁকেবেঁকে দেয়াল এড়িয়ে সাপকে খাবার খাইয়ে লম্বা বানানো হচ্ছে মূল কথা। কলির জীবনে এই মুহূর্তে যেনো ওই সাপটাই সব, রায়হানের কোনো জায়গা নেই। রায়হানের এমন রাগ হচ্ছে, মনে হচ্ছে ফোনটা টেনে নিয়ে রেল লাইনের উপর ফেলে দিতে।

"ও স্যার, এত কী ভাবেন? ভাবতেছেন, আমি পতারক, বাটপার? হাহাহাহা। না স্যার। আমি আপনার কাছে টাকা চাই না। আল্লাহ পাক এই বিদ্যা দিছে লোকের সেবা করার জন্য। যতদিন বাইচ্চা আছি, মানুষের সাহায্য করবো।"
"বললাম না, লাগবে না আপনার সাহায্য, আপনি যান। বিরক্ত করবেন না। "

রায়হান জানে, এসব লোকজন মিষ্টি কথা বলে পরে টাকা চাইবে। একে তাড়াতে পারলে ভালো।
"ঠিক আছে স্যার। চইলা যাইতেছি। যাওয়ার আগে আপনারে একটা জিনিস দিবো। আপনি জিনিষটা নিয়ে আপনার ইস্তিরির কাছে যাইবেন।"
লোকটা শার্টের বুক পকেট থেকে একটা আধমরা গোলাপ বের করে রায়হানের দিকে এগিয়ে দিলো।
"এই ফুলটা নিয়া যান স্যার, হের পরে দেখেন আপনার ইস্তিরি আপনার সাথে কথা না বইলা কই যায়।"
আপনাকে বললাম না, গোলাপ ফুল, কদম ফুল এগুলা আমার লাগবে না, আপনি যান তো! এবার রায়হান রীতিমতো চিৎকার করলো। আশেপাশের লোকজন তাকাচ্ছে।
"ঠিক আছে , যাইতেছি। তবে আপনাকে ফুলটা নিতেই হবে। ফুলটা নিয়ে আপনার ইস্তিরির হাতে দিবেন। সে যদি আপনার সাথে কথা বলে তাইলে আমাকে এক শলাকা সিগারেট দিবেন, আর কথা না বললে আমার গালে জুতার বাড়ি দিবেন, আমি চইলা যাবো। ফুল না নিলে কিন্তু স্যার আমি যাবো না। "

লোকটার চোখে মুখে আশ্চর্য দৃঢ়তা দেখা যাচ্ছে। রায়হান লোকটাকে তাড়িয়ে দিতে পারলো না। ভেতরে ভেতরে নিজেকে সামলে নিলেও মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে গোলাপটা হাতে নিলো।
"এখন গিয়া ফুলটা কলি ম্যাডামের হাতে দেন।"
"আপনি আমার স্ত্রীর নাম জানেন কিভাবে?"
"সব বলবো।আগে আপনি ফুল দেন উনাকে। আমি এইখানে আছি স্যার। হয় সিগারেট, নাইলে জুতার বাড়ি।"

রায়হান দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফুল নিয়ে ওয়েটিং রুমে গেলো।
রুমটা দিনের বেলাতেও বেশ অন্ধকার। একটা জানালা কাঠের পাটাতন দিয়ে বন্ধ করা, কেন, কে জানে। দরজা গলে খুব বেশি আলো প্রবেশ করতে পারছে না। এই মৃদু আলোতেই পুরো ঘর উজ্জ্বল করে কলি বসে আছে। হলুদ রঙের পা ছোঁয়া পোশাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে। আগের মতোই ফোনের দিকে পুরো মনোযোগ কলির। মসৃন আঙ্গুলগুলো ব্যস্ত হয়ে ফোনের বোতামগুলোর উপর খেলে বেড়াচ্ছে।

রায়হানের আবার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। কলির মতো অধরা মানুষের এত সুন্দর হওয়ার কী দরকার ছিলো? রায়হান আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুই বললো না।
কলি কপাল কুঁচকে তাকালো। গতকাল রাত থেকে সে রায়হানের সাথে কোনো কথাই বলেনি।
"গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?"
রায়হান কলির মুখের উপর থেকে মুগ্ধ দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। উত্তর দিলো না।
"মরা গোলাপ কি আমার জন্য?"
রায়হান মাথা নাড়লো।
কলি নির্বিকার ভাবে আবার ফোনের দিকে মনোযোগ দিয়ে বললো, "গোলাপ ফুল আমি পছন্দ করি না। ছোট বেলায় গোলাপ ফুল শুঁকতে গিয়ে নাকে পোকা ঢুকেছিলো। এরপর এমন ভয় পেয়েছি যে গোলাপ ফুলের ধরে কাছেও যাই না। "
"এই গোলাপে পোকা নেই, আমি দুইবার শুঁকেছি। " রায়হান শান্ত ভাবে বললো।
"আপনি দুইবার শুঁকেছেন?" কলি আবার চোখ বড় বড় করে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বললো। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে হাসি চেপে রেখেছে।
"হ্যা, দুইবার শুঁকেছি, কোনো পোকা নেই। তুমি বললে আবার শুঁকে দেখি।"
কথাটা বলে রায়হান ফুলটা নাকের কাছে ধরে খুব জোরে শ্বাস নিলো। প্রথমে কয়েক মুহূর্ত কিছুই হলো না। তারপর হটাৎ রায়হানের মনে হলো নাকের ভেতর কি যেন কুটকুট করছে। রায়হান নাক ঘষতে ঘষতে হাঁচি দিতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই নাকের ভেতরের চুলকানি যাচ্ছে না।

কলি কিছুক্ষন সন্দেহের দৃষ্টিতে রায়হানকে দেখলো। প্রথমে তার মনে হলো রায়হান হয়তো মজা করছে। কিন্তু রায়হান যখন বিরতিহীন হাঁচি দিতে শুরু করলো, কলি তখন ফোন ফেলে রায়হানেই হাত ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তার সত্যি ভয় লাগছে, মনে হচ্ছে, ছোট বেলার মতো পোকা ঢুকেছে রায়হানের নাকে।

কলি রায়হানকে চেয়ারে বসিয়ে ব্যাগ খুলে পানির বোতল এগিয়ে দিলো। রায়হানের পাশে বসে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। বার বার জিজ্ঞেস করতে থাকলো, "এখন কেমন লাগছে?"

রায়হান একটু ধাতস্ত হয়ে পানির বোতল থেকে এক ঢোক পানি খেলো। তার চোখ মুখ অন্ধকার লাগছে। কলি এখনো তার হাত ধরে উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে। এত কাছাকাছি তারা দুইজন গত সাতদিনে একবারও আসেনি।

কলিও বুঝি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হটাৎ সরে গিয়ে কঠিন গলায় বললো, "আপনাকে বললাম না, গোলাপ ফুলে পোকা থাকে। তারপরও একটা মরা ফুল নাকের ভেতর একেবারে ঢুকিয়ে দিলেন? এখন দেখেন কি অবস্থা। হাঁচি দিতে দিতে তো লাল হয়ে গেছেন।"

রায়হান বোকার মতো হাসি হাসি মুখে কলির দিকে তাকালো। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না কলি তার হাত ধরেছে। তার মনে হচ্ছে আরো অনেকবার এমন হাঁচি কাশি আসলেও তার কষ্ট হবে না, কলি যদি এভাবে হাত ধরে থাকে।

"কী ভাবছেন? আমার বোতলের পানি শেষ। যান, বাইরের দোকান থেকে এক বোতল পানি কিনে আনেন। আর এখনও ওই গোলাপ ধরে আছেন? এক্ষনি ফেলে আসুন।"

রায়হান অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে আসলো। বাইরে এসে এদিক ওদিক লোকটাকে খুঁজলো। দূরে একটা কাঁঠাল গাছে হেলান দিয়ে জ্বলজ্বলে চোখে লোকটা তাকিয়ে আছে।
রায়হানকে দেখে গুটি গুটি পায়ে লোকটা এগিয়ে এলো।
"স্যার, কী রেজাল্ট? সিগারেট না জুতা দিয়া থাবড়া ?"

রায়হান লোকটার দিকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো।
লোকটা নির্বিকার ভঙ্গিতে সিগারেট নিলো, যেন আগেই জানতো তার কথাই ঠিক হবে। রায়হান নিজেও একটা সিগারেট ধারালো আর লাইটার জ্বালিয়ে লোকটার সিগারেটও ধরিয়ে দিলো।

"স্যার বলছিলাম না, আপনার বৌ আপনার কাছে না আইসা পারবো না। আপনি যে বিপদে আছেন, আপনেরে দেইখাই আন্দাজ পাইছি।"

রায়হান আসলেই বিপদে আছে। সে বিয়ের জন্য ঠিক তৈরি ছিলো না। মাত্র ছয়মাস হয় চাকরি পেয়েছে। তার ইচ্ছা ছিল বছরখানেক পরে বিয়ে করা কিন্তু মায়ের চাপাচাপিতে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে রীতিমতো চমকে গেছে। মা ইতিমধ্যে একটা মেয়ে দেখে পছন্দ করে রেখেছেন। ঈদের দুদিন আগে মেয়ে দেখে আংটি পরিয়ে ঈদের দুদিন পরেই বিয়ে হয়ে গেলো।

এত হুড়োহুড়ি করে বিয়ে করার চিন্তায় করেনি রায়হান। কিন্তু কলিকে দেখে রায়হানের মাথা আর হৃদপিন্ড দুইটাই চক্কর দিয়েছে। কলি ভয়াবহ সুন্দরী। রায়হান যতবার তাকায় বুক ধ্বক করে ওঠে। সারাজীবন ভালো ছাত্র রায়হান জীবনে দুই একজনকে পছন্দ করেছে কিন্তু ওই পর্যন্তই, কাউকে কিছুই বলা হয়নি। সে দেখতে এমন আহামরি কিছুই না। তার মতো সাধারণ দেখতে লাজুক ছেলেদের সাথে মেয়েরা সেধে বন্ধুত্ব করতে আসে না। ফলে তার জীবন এখন পর্যন্ত প্রেমের ছিটে ফোটা পড়েনি। কিন্তু এই মেয়েকে দেখে রায়হানের সব ওলোট পালট হয়ে গেলো। তার মনে হতে লাগলো কলিকে না পেলে তার জীবন আজকেই শেষ। আজগুবি এক ছেলেমানুষী !

রায়হানের মা গর্বিত ভঙ্গিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন। ছেলের মুগ্ধ দৃষ্টি দেখে মনে মনে সন্তুষ্ট হলেন। যাক, এমন মেয়ে খুঁজে বের করেছেন যাকে রায়হান পছন্দ না করে পারবে না।

মেয়ের পরিবার থেকেই প্রস্তাব আসলো, বেশি দেরি করার দরকার নেই, ঈদের দুদিন পরেই বিয়ে। রায়হানের মা নিমরাজি। একমাত্র ছেলের বিয়ে মহা আড়ম্বরে করতে চান। কিন্তু রায়হানের আর দেরি করতে ইচ্ছা করছে না। দেরি হলে যদি অন্য কেউ তার রাজকন্যাকে ছিনিয়ে নেয়?

সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে রায়হান জিজ্ঞেস করলো, "আপনার নাম কী ?"
মুখ থেকে সিগারেট সরিয়ে লোকটা বললো," মোকাদ্দেস বিন হাকিমপুরী। "
"হাকিমপুরী জর্দা শুনছি, মানুষের নাম হাকিমপুরী শুনি নাই। "
"হাহাহাহা স্যার কি যে বলেন, কই হাকিমপুরী জর্দা আর কই আমি মোকাদ্দেস হাকিমপুরী। আমার এই নাম উনি দিছেন। আগে আমার নাম ছিলো শুধুই মোকাদ্দেস।"
"উনিটা কে?"
মোকাদ্দেসের মুখে রহস্যময় হাসি।
"সে এক বিরাট ইতিহাস। শুনবেন স্যার?"
"না, শুনতে চাই না।"
"ঠিক আছে স্যার, শুনেন তাইলে।" রায়হান অবাক হয়ে দেখলো মোকাদ্দেস তার অনাগ্রহ উপেক্ষা করে নির্দ্বিধায় বলতে আরম্ভ করলো," আমার বাবা খুবই গরিব মানুষ ছিলেন। মানুষের ক্ষেতে দিন মজুরির কাজ করতেন। আমাদের পরিবার ছিলো বিরাট বড়। আমরা ছয় ভাই বইন সাথে অন্ধ দাদী, ছোট ফুফু আর অসুস্থ মা। পরিবারের অবস্থা ফুটা পাতিলের মতো, যতই পানি ঢালেন ফুটা দিয়া পইরা যায়। যাই হোক, আমার বয়স সাত আট হইতেই বাবার সাথে কামে লাইগা গেলাম। তখনই একদিন ঘটনা ঘটলো।"

মোকাদ্দেসের গল্প বলার ভঙ্গির মাঝে এক ধরণের সম্মোহনী ক্ষমতা আছে। কথা বলার সময় মুখের ভঙ্গি অদ্ভুত ভাবে বদলাতে থাকে, চোখ ফেরানো যায় না। রায়হান অনিচ্ছাসত্ত্বেও গল্প শুনে যাচ্ছে।

"একদিন দুইফরে বাবার জন্য ভাত নিয়ে যাইতেছিলাম। আমার মা অসুস্থ থাকার জন্য ফুফু সবার জন্য রানতো। সেই খাবার মুখে দেয়া যাইতো না। কিন্তু খিদা পেটে বাবা সেই খাবার গপগপ কইরা গিলতো। যাই হোক, সেইদিনও ভাত নিয়ে যাইতেছিলাম। ঠাঠা রোধ উঠছে, জ্যৈষ্ঠ মাস। গ্রামের রাস্তা ধইরা হাঁটন যায় না, পায়ের তলা জ্বইলা যায়। আমি রাস্তা থেকে নাইমা পাট ক্ষেতের মধ্যে দিয়া শর্টকাট রাস্তায় যাইতে শুরু করলাম। হটাৎ মনে হইলো পাট গাছ গুলা আমার চেয়ে লম্বা হইয়া গেছে, আমি তলাইয়া যাইতেছি। রাস্তাও হারায় ফেললাম, আমি যতই আইল ধইরা হাঁটি ততই যেন হারায় যাই। ভয়ের চোটে দরদর কইরা ঘামতে লাগলাম। যে কয়টা দোয়া দুরুদ জানি, পড়লাম। হটাৎ উষ্টা খাইয়া পইড়া গেলাম। আমার এমন ভয় করতেছিলো যে চক্ষে আন্ধার দেখতে শুরু করলাম।
এমন সময় কালো গোল পোকার মতো কি জানি একটা আমার দিকে আগায় আসলো। অনেকটা পিঁপড়ার মতো, কিন্তু পিঁপড়ার চেয়ে বড়। আমার শরীল তখন অবশ। মনে হইতেছে মইরা যাইতেছি। পোকাটা আইসা আমার ডান পায়ের কানি আঙুলে একটা কামড় দিলো। পিঁপড়া কামড় দিলে যেমন ব্যাথা লাগে, তেমনি ব্যাথা লাগলো। এরপরে একটা আশ্চর্য জিনিস হইলো। পোকাটা আমার কানি আঙুলের চামড়া ফুটা কইরা শরীরের ভিতর ঢুইকা গেলো। আমি টের পাইতেছিলাম পা বাইতে বাইতে পোকাটা আমার পেটের ভিতরে সাঁতার কাইটা গিয়া কলিজার মধ্যে গিয়া থামলো। সাথে সাথে আমার শরীরে জ্বালা যন্ত্রনা সব শেষ হইয়া গেলো। আর ভয় লাগতেছিলো না। মনে হইলো মাথাটা ভারী হইয়া গেছে। আরামে আমি ঘুমায় গেলাম। এর পর থেইকা সেই পোকার মতো জিনিষটা আমার কলিজার মধ্যেই থাকে। দেখেন স্যার আমার কানি আঙ্গুল কেমন ফুলা।"

রায়হান লক্ষ্য করলো স্যান্ডেলের ফাঁকে ডান পায়ের ছোট আঙ্গুলটা আসলেই কেমন একটু ফোলা। লোকটা নির্ঘাত পাগল। কি সব আজগুবি গল্প বানিয়ে বললো! গরমে হিট স্ট্রোক করে হেলুসিনেশন হয়েছিল হয়তো।

"স্যার, আমার কথা আপনার বিশ্বাস করতেই হবে এমন কোনো কথা নাই। কারো উপরে আমার জোরাজুরি নাই। সেইদিন ক্ষেতের ভিতর আমার ঘুম ভাঙলো মাগরিবের নামাজের সময়। ঘুম ভাইঙ্গা দেখি আমার চারপাশে মশা বিন বিন করতেছে, কিন্তু আমারে একটা মশাও কামড় দেয় না। আমার শরীল পুরা ঝরঝরা লাগতেছিলো। আমি হাঁটতে হাঁটতে বাড়িতে আসলাম। বাড়িতে দেখলাম কান্নাকাটি পইরা গেছে। বাবা কাম থেকে আইসা মাথায় হাত গিয়া বইসা আছে, ভাই বইন আর মা মিল্লা কানতেছে। তারা নাকি সারা গ্রামে খুঁজছে আমারে কিন্তু কেউ আমার খবর বলতে পারে নাই। আমারে দেইখা সবার কি আনন্দ !আমার অন্ধ দাদি তার কাছে যাইতে বললেন। দাদি আমার মাথায় হাত দিয়া বললেন, ভাই তুই তো আর আমার আগের ভাই নাই, তুই বদলাইয়া গেছস।"
"তারপর?" মুখ ফসকে বলে ফেলে রায়হান।
"আমার মনে হইতেছিল আমার কিছু একটা বদল হইছে। কে জানি আমার ভিতর ফিসফিস কইরা কথা বলে। আমি বুঝি না। আমার কেন জানি নিজেরে অনেক পাওয়ারফুল মনে হয়। এই ঘটনার প্রায় এক বছর পরে আমি আমার ভিতরের উনির কথা স্পষ্ট শুনলাম। বাবার সাথে বাজারে গেছি, ততদিনে বাড়ির অবস্থা একটু ভালো হইছে। আমার বড় ভাই কামাই করা শুরু করছে, ফুফুর বিয়া হইছে, দাদি মরছে। তার মানে দুইজন খাবার লোক কমছে, কিন্তু ইনকাম বাড়ছে। যাই হোক, বাজারে গেছি বড় মাছ কিনতে। রাতে নতুন ফুফা বেড়াইতে আসবে। বাজারে আমাদের পরিচিত এক চাচা মাছ বিক্রি করে। তার কাছে গেলাম মাছ নিতে। গিয়া দেখি তার পায়ে ব্যান্ডেজ বান্ধা। সাথে সাথে আমার ভিতরের উনি বললেন, চাচার পা দা দিয়ে কাঁটছে, এই পা টিকবে না।
আতকা কথাগুলা শুইনা খুব ভয় পাইছি কিন্তু কাউরে কিছু বলি নাই। কে আবার কি মনে করবো। মাছ কিন্না বাড়িতে আসলাম। রাতে ফুফা ফুফু বেড়াইতে আসলো। তারা যখন খাইতে বসছে তখন আবার উনি বললো, ফুফা ফুফু কালকে ফিরার পথে বাস একসিডেন্টে মইরা যাবে।
আমি খুব অস্থির হইয়া গেলাম। পরের দিন সকালে যখন ফুফু চইলা যাইতেছিলো আমি খুব কান্না কাটি শুরু করলাম, ফুফুকে যাইতে দিবো না। ফুফা বিরক্ত হইয়া ফুফুকে টাইন্না টুইন্না নিয়ে গেলেন। বিকালে খবর আসলো বাস একসিডেন্টে দুইজনই মরছে। স্যার, আরেক শলাকা সিগারেট দেন। "
রায়হান সিগারেট এগিয়ে দিলো।

মোকাদ্দেস মাথা নিচু করে বললো, "এর পর থেইকা উনির কথা শুনি, মানুষের বিপদ টের পাইলে কলিজার উপরে চাপ লাগে, মাথা ভারী হইয়া যায়। মানুষটারে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারলে এরপরে আমার শান্তি। আমার সেই চাচার পা টা আসলেই কাইটা ফালাইতে হইছিল পরে। তখন ছোট ছিলাম দেইখা কিছুই করতে পারি নাই। উনির কথা শুনলে ভয় লাগতো। আস্তে আস্তে সহ্য হইয়া গেলো। এখন নিজের সাধ্য মতো টেরাই করি মানুষের সাহায্য করতে।"

মোকাদ্দেস মুখ ঘুরিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া বের করে। তারপর আবার বলে,"হাকিমপুরী নামটা কিভাবে আসছে জানেন স্যার? তখন আমি এক কাঠের দোকানে কাজ করি, বয়স একুশ বাইশ। একদিন রাস্তায় পোস্টের দেখলাম -কবিরাজ আলম মিয়া হাকিমপুরী। তখনি উনি বইলা উঠলেন -তোমার নাম মোকাদ্দেস বিন হাকিমপুরী।"

মোকাদ্দেস গল্প বলতে কুশলী তাতে কোনো সন্দেহ নেই রায়হানের। কোথায় থামতে হবে, কোথায় ধরতে হবে সবকিছুতে মোকাদ্দেস সিদ্ধহস্ত। অবশ্য রায়হান এতক্ষনে নিশ্চিত লোকটার মধ্যে অস্বাভাবিকতা আছে। লোকটার হয় মাথা নষ্ট নয়তো সে বড় ধরণের প্রতারক। অবশ্য সিগারেট ছাড়া এপর্যন্ত তার কাছে কোনো কিছু চায়নি মোকাদ্দেস।

"স্যার এইবার বলেন তো, কলি ম্যাডামের সাথে আপনার কী বিষয়?"
"কোনো বিষয় নাই। "
মোকাদ্দেস হাসলো, কিছুই বললো না।

কলির সাথে রায়হানের ঝামেলা জটিল। ওদের বিয়েটা তাড়াহুড়ো করে হলেও পরবর্তীতে বড় অনুষ্ঠান করে বৌ তুলে নেয়ার পরিকল্পনা করলেন রায়হানের মা। অতএব ঠিক হলো বিয়ের পরে রায়হান নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে আর কলি থাকবে কলিদের বাড়িতেই। কলির বাবা হটাৎ প্রস্তাব করলেন বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে, জামাই আজকে কলিদের বাড়িতে থাকুক।

রায়হান খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যায় যায়। গভীর রাতে ধুকপুক হৃদপিন্ড সামলে কলির ঘরে ঢুকে দেখলো কলি সিনেমার মতো ঘোমটা টেনে খাটের উপর বসে নেই। কলি বসে আছে খাটের পাশের চেয়ারে। তার মাথায় ঘোমটাও নেই, মুখ অন্ধকার থমথমে।

রায়হান কলির কাছাকাছি আসতেই সে চট করে দাঁড়িয়ে বললো, "আমার কাছে আসলে কিন্তু এই ব্লেড দিয়ে গলা কেটে ফেলবো। প্রথমে আপনার গলা কাটবো তারপর নিজের হাত কাটবো, বুঝতে পারছেন?"

কলির হাতে চকচক করছে নতুন ব্লেড। রায়হান হতবম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষন। তারপর নিচু গলায় বললো, "এসবের মানে কী?"
"মানে কি আপনি জানেন না? কেউ জানায় নাই আপনাকে?"
"না।"
"ওহ, অসুবিধা নাই। এখন শোনেন। আমি হাসান নাম একটা ছেলেকে ভালোবাসি। তিন বছরের সম্পর্ক। গত নভেম্বর মাসে আমরা পালিয়ে বিয়ে করি। বাসার কেউ রাজি ছিলো না। হাসানরা গরিব, হাসান পড়ালেখা তেমন করে নাই। আমরা হাসানের খালার বাসায় লুকিয়ে ছিলাম। আব্বা আর চাচা মিলে আমাকে খুঁজে বের করেছে। তারপর হাসানকে অনেক মেরেছে। জোর করে ডিভোর্সের কাগজে সাইন করিয়েছে। আমাকে জোর করে ধরে এনে বাসায় আটকে রেখেছে ছয় মাস হলো। যাকে পারছে ধরে এনে আমার সাথে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কেউ আমার আগে বিয়ের কথা শুনে রাজি হয়নি। আপনি ধরা খেয়েছেন। আমি বিয়ে রাজি ছিলাম না, সবাই জোর করে........."
সবকিছু একসাথে বলে হাপাতে লাগলো কলি। ধপ করে চেয়ারে বসে পাশে টেবিলে রাখা এক গ্লাস পানি এক চুমুকে খেয়ে ফেললো।

"আপনার সব জানা দরকার। তাই বললাম। এখন ইচ্ছা হলে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন। আমি হাসানকে খুঁজে বের করবো। অন্য কারো সাথে সংসার করবো না।"

রায়হান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। এসব জানার পরে কি প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, কিছুই বুঝতে পারছে না। কিভাবে রাত পার হয়ে ভোর হলো, জানেনা রায়হান। সে যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার ছেলে। যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি শান্ত ভাবে সামাল দেয়ার ধৈর্য তার আছে। কিন্তু এই সমস্যা কিভাবে মেটাবে কিছুই কূল কিনারা করতে পারছে না।

পরদিন সকালে বাড়িতে ফিরে আসতে চাইলেও তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি কিছুতেই যেতে দিলেন না। কলির মা রায়হানের মুখ দেখে কি বুঝলেন কে জানে। আকুল কণ্ঠে বললেন, "আমার মেয়েটা খুবই ভালো, একটু ছেলেমানুষি করে। তুমি কিছু মনে করো না বাবা। মেয়েটা খুব ভালো। খুব ভালো।"

রায়হান মাথা নিচু করে থাকলো। সারাদিন অসংখ্যবার কলির মুখোমুখি হলেও কিছুই বলতে পারলো না। রাতে কলি গো ধরলো রায়হানের সাথে এক ঘরে ঘুমাবে না।
রায়হান তার বাসায় ফিরে এলো। তার মা কি জানি আন্দাজ করে বললেন,"সব ঠিক আছে তো রায়হান? বৌমাকে কেমন লাগলো তোর?"
রায়হান অসহায় চোখ মায়ের দিকে তাকালো। মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "তাড়াহুড়ো করে ভুল করলাম না তো?"
রায়হান স্বান্তনা দিয়ে বললো, "এত চিন্তা করো না মা, সব ঠিক আছে। মাত্র বিয়ে হয়েছে। এডজাস্ট করতে তো সময় লাগবে।"

রাতে অনেক ভাবলো রায়হান। কি করা উচিত? যতবার মনে হয় কলির মুখটা দূরে সরে যাচ্ছে, ততবারই বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা লাগে। দু'দিন আগেও কত উচ্ছাস নিয়ে কলির সাথে জীবনের গাঁট বাঁধতে উন্মুখ ছিল রায়হান, আজ কি তাহলে সব শেষ ?

ঈদের দিন অনেক আশা নিয়ে কলিদের বাড়িতে গেলো রায়হান। কলি শক্ত মুখে একবার শুধু সামনে এলো। তারপর আর পাত্তা নেই। মফস্বলের বাজারে খুব ভালো কিছু পাওয়া যায়না। তারপরও জীবনে প্রথম একটা শাড়ি কিনেছে রায়হান, নীল শাড়িতে রূপালী পাড়। লজ্জায় মাকে দেখতে পারেনি, শাড়িটা কলির হাতে দিয়েছে। কলি অবহেলায় শাড়িটা পাশে রেখে দিয়েছে, খুলেও দেখেনি।

কোনো ঈদে এত বিষন্ন লাগেনি রায়হানের। তার মনে হচ্ছে একটা অন্তহীন অন্ধকার গলিতে আটকে গেছে। সেদিন বাড়ি ফিরে সিদ্ধান্ত নিলো ঢাকায় ফিরে যাবে।
ফেরার দুদিন আগেই কলির বাবা মায়ের অনুরোধে কলিদের বাড়িতে গিয়েছিলো, বিদায় নিতে। অনেক্ষন বসার ঘরে বসে থাকার পরে হটাৎ কলির আগমন। রায়হান চমকে দেখলো কলি নীল শাড়িটা পরেছে। কিন্তু মুখটা অন্ধকার থমথমে।

কলির মা হটাৎ বললেন, "তোমরা দুজন ছাদে গিয়ে কথা বলো না হয়?"
"সেটার দরকার নেই না, এখানে কথা বললে কি সমস্যা?" গম্ভীর ভাবে কলি বললো। কলির বাবা মা উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

রায়হান মাথা নিচু করে বললো, "আমি ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। পরশু।"
"ভালো। আমাকে ডিভোর্স দিবেন কবে?"
"কলি, আমি ঢাকায় ফিরে সব ব্যবস্থা করবো। তুমি চিন্তা করো না, তোমাকে জোর করে আমার সাথে থাকতে হবে না। "
"ভালো।"
ওদের মধ্যে আর কোনো কথা হলো না। রায়হানের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। সে কাউকে কিছু না বলেই সেদিন চলে আসলো।

রায়হানকে দেখে তার মা বললেন, "বিয়ের অনুষ্ঠান পরে হবে, তুই এখনই বৌকে নিয়ে ঢাকায় চলে যা।"
"না মা, আমার বাসার অবস্থা ভালো না। কলিকে নিয়ে যাওয়ার আগে একটু গোছগাছ দরকার।"
"কোনো গোছগাছ দরকার নেই। বৌকে এখনই নিয়ে যা। এভাবে বৌকে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। কিছু আজেবাজে কথা শুনলাম।..........আগে তো এত খোঁজ নেইনি। সুন্দর মেয়ে, ভালো পরিবার দেখে আগে পিছে কিছুই চিন্তা করিনি। এখন ........"
"মা, মানুষের কথা শোনার দরকার নেই। বাজে কথা বলতে সবাই ওস্তাদ। এই মুহূর্তে কলিকে নেয়া সম্ভব না। "
"অবশ্য সম্ভব। কাল তুই আমার সাথে চল, বৌকে নিয়ে আসি।"

রায়হানের কোনো মানা কানে তুললেন না তার মা। পরদিন রায়হানকে নিয়ে রওয়ানা হলেন। এদিকে রায়হানের খুব ভয় লাগলো। রাগের মাথায় কলি যদি মায়ের সামনে কিছু বলে বসে? তার মায়ের মন খুব নরম। দেখা যাবে চেয়ে দুর্ভাগ্যের জন্য নিজেকে দায়ী করে অসুস্থ হয়ে গেছেন।

কলিদের বাড়িতে গিয়ে রায়হান সবার আগে কলির সাথে কথা বলতে চাইলো। কলির মায়ের শত অনুরোধে সে রাজি হলো।

ছাদে দুইটা মোড়া পাতা। রায়হানের সামনে কলি বসে আছে। রায়হান শান্ত কণ্ঠে বললো," আমার মা পাগলামি করছে, তোমাকে আমার সাথে ঢাকায় পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু তুমি যেতে চাও না। তাই আমি সারা রাত অনেক চিন্তা করলাম। তুমি বিয়ের দিন হাসানের কথা বলার পরে আমি তার খোঁজ বের করেছি। সে ঢাকায় মগবাজারে একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করে। তুমি আমার সাথে চলো, তোমাকে হাসানের কাছে নিয়ে যাবো।"

কলি কপাল কুঁচকে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বললো, "আমাকে কি একটা বলদ মনে হয় আপনার? হিন্দি সিনেমা মনে করছেন? আমার প্রেমিকের কাছে নিয়ে যাবে আমার হাসব্যান্ড! কি আনন্দ! শোনেন, এসব হিন্দি সিনেমা গল্প আমাকে শোনাবেন না, আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না। "
"তুমি যেতে না চাইলে যাবে না। আমি কিন্তু একবার তোমার সাথে জোর করিনি। আচ্ছা, আমি আসি।"

নিজের বোকামিতে নিজেরই হাসি পাচ্ছে রায়হানের, দুঃখের হাসি। তার মনে হচ্ছে কলির চেহারাটা আর কখনোই দেখতে পাবে না।
রাতে ফিরে আসার সময় কলি কিছুই বললো না। কিন্তু রায়হানকে অবাক করে আজকে ভোর বেলা ব্যাগ নিয়ে রায়হানদের বাসায় হাজির হয়েছে কলি! তার সাথে ঢাকায় যাবে।

প্রথমে বিশ্বাস হয়নি কলি সত্যি সামনে বসে আছে। একটু পরে টুং টুং করে রায়হানের ফোনে একটা ম্যাসেজ -"ভাববেন না আপনার সাথে সংসার করতে ঢাকায় যেতে রাজি হয়েছি। আমি যাচ্ছি হাসানকে খুঁজতে। ও সত্যিই ঢাকায় আছে, জানতে পেরেছি। আমার সাথে এখনো ব্লেড আছে।"

ম্যাসেজটা পড়ার পর থেকেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। এতদিন মাথা ঠান্ডা রেখে আজকে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ঢাকায় গিয়ে কি হবে? ও তো হাসানের কোনো খবর জানে না। কী বলবে কলিকে ?

"এত ভাইবেন না স্যার। সব সমস্যার সমাধান আছে। আপনেরে আরেকটা জিনিস দিতেছি। এইটা হাতের মধ্যে নিয়ে কলি ম্যাডামের কাছে যান। উনি প্রথম স্বামীকে ভুইলা আপনার কাছে চইলা আসবে।"

রায়হান এবার আরো বেশি চমকৃত হলো! কলির প্রথম স্বামী ছিল, সেটা লোকটা কি করে জানলো ?
"আপনি কলিকে চিনেন?"
"হাহাহাহা , না স্যার। আমি দুনিয়ার কাউকে চিনি না এখন। খালি চিনি মানুষের বিপদ। যেমন আপনে এখন একটা বিপদে আছেন। মনের দুঃখে আছেন। আমি সেইটাই চিনি। হাতটা দেন স্যার।"

রায়হান অনুগত শিশুর মতো হাত বাড়িয়ে দিলো। মোকাদ্দেস তার পকেট থেকে একটা পাথর নিয়ে রায়হানের হাতে দিলো। পাথরটা দেখতে সাধারণ। রেল লাইনের উপর এমন অজস্র পাথর পড়ে আছে।

"স্যার, ওই যে বললাম, আমার ভিতরের উনি আমারে মানুষের বিপদের কথা বলে। তার সাথে এইটাও বলে দেয়, কিভাবে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যাইবো। সবই আল্লার ইশারা। না হইলে আমার ভেতরে কেমনে একজন কথা বলবো? এইযে কিছুক্ষন আগে আপনারে একটা গোলাপ দিলাম, সেইটাও কিন্তু উনি বলে দিসে। ওই গোলাপের জাদুতে কলি ম্যাডাম আপনের হাত ধরছে।"
"কিসের গোলাপের জাদু! গোলাপের মধ্যে পোকা ছিল, সেটা নাকে ঢুকে........"
"হাহাহাহাহা, কোনো পোকা না স্যার। সবই উছিলা। জাদু। উনার জাদু। এইযে পাথরটা ধইরা আছেন সেইটা সব মুশকিল আসান করন পাথর। অনেক খুঁজে এই পাথর পাওয়া যায়। এইযে সামনে রেল লাইনে দেখেন কত পাথর। কিন্তু আপনি দেইখা কিছু বুঝবেন কোনটা ইস্পিশাল? বুঝবেন না। বুঝবো আমি। আমি যখনি রাস্তায় হাঁটি, মাথা থাকে মাটির দিকে। আমি এমন পরশ পাথর দেখি, তুইলা পকেটে রাইখা দেই। যখনি উনি কারো বিপদের কথা ইশারা করে, আমি পরশ পাথর বাইর কইরা দেই। "
"কি বলেন এসব ফালতু কথা বার্তা।"
"স্যার, আমি তো বলছি , কথায় বিশ্বাস করবেন না, বিশ্বাস করবেন কর্মে। পাথরটা নেন স্যার। তবে.........."
"তবে কি?"
"লজ্জার কথা কি বলবো স্যার। লজ্জার মাটিত মিস্সা যাই। মানুষের বিপদে উদ্ধার করলে কি হইবো, আমার বিপদে কে উদ্ধার করবে? মানুষের সাহায্য করা ছাড়া আল্লাহ কোনো কাজের ক্ষমতা দেয় নাই। একদিন উনি আমাকে উপায় বইলা দিলেন। উনি বললেন পাথরগুলা বিক্রি করতে। তাই লজ্জা শরম ভুইলা এই পাথরগুলা সামান্য টাকার বিনিময়ে বিক্রি করি। আচ্ছা স্যার বলেন, যখন আপনার অসুখ হয়, টাকা দিয়া ফার্মেসী থেইকা ওষুধ কিনেন না? সবচেয়ে ভালো আর দামি ওষুধ খুঁজেন না? তাইলে বিপদের ওষুধ আমার এই পাথর বিক্রি করলে সমস্যা কি?"
"এইবার আসছো বাবাজি লাইনে", মনে মনে ভাবলো রায়হান। কৌতুকের স্বরে বললো, "কত দাম আপনার এই স্পেশাল পাথরের?"
"বেশি না স্যার, মাত্র দুই হাজার। বিফলে মূল্য ফেরত। একেক বিপদে একেক রেট। রেট উনি ফিক্স করে, আমি কিছু না। "

রায়হান মানিব্যাগ থেকে দুই হাজার টাকা বের করে মোকাদ্দেসের হাতে দিলো। হয়তো টাকাটা জলে গেলো, কিন্তু মানুষ প্রবল স্রোতে ভেসে যেতে যেতে অসহায়ের মত খড়কুটো আঁকড়ে ধরে, রায়হানের অনেকটা তেমন বোধ হচ্ছে।

মোকাদ্দেস হাসি মুখে টাকাটা বুক পকেটে রেখে বললো, "পাথর নিয়া যান স্যার, আমি এইখানেই আছি। পাথর কাজ না করলে টাকা ফেতর নিবেন সাথে গালে দিবেন জুতার বাড়ি হাহাহাহা। "

রায়হান পাথরটা নিয়ে আবার ওয়েটিং রুমে ঢুকলো। কলি এখন ফোন নিয়ে ব্যস্ত না। মাটির দিকে তাকিয়ে গভীর মনোযোগে কি যেন ভাবছে। তার পা দুলছে অচেনা ছন্দে। রায়হান ধীর পায়ে কলির সামনে এসে দাঁড়ালো।

মাথা তুলে কলি জানতে চাইলো, "ট্রেন আসতে আর কত দেরী?"
"আমি জানি না, কেউ কিছু বলতে পারছে না।"
"ওহ" বলে একটু থামলো কলি তারপর অদ্ভুত শান্ত স্বরে বললো, "আচ্ছা, আজকে সকালে হটাৎ আপনার বাসায় চলে এলাম, আপনার সাথে ঢাকা যেতে রাজি হলাম, এতে আপনি অবাক হননি? ভাবেননি কেন আমি আপনার সাথে আসতে রাজি হলাম?"
"অবাক হয়েছি প্রথমে। পরে বুঝলাম হাসানকে খুঁজতে যাচ্ছ। "
"আমি হাসানকে খুঁজতে যাচ্ছি না। ও কোথায়, আমি জানি না। বাবার দুইটা থাপ্পড় খেয়ে ওই গাধা কোথায় জানি পালিয়ে গেছে। আমি অনেক ভাবে ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। ও বারবার আমাকে এড়িয়ে গেছে। ভীতু কোথাকার!"
"তাহলে আমার সাথে ঢাকায় যাচ্ছ কেন?"

একটু বিভ্রান্ত দেখালো কলিকে।
"আমি জানি না............আপনি যখন কাল রাতে হুট্ করে চলে গেলেন, দেখে মনে হলো আপনাকে এভাবে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না। আপনার তো কোনো দোষ নেই। তাই ভাবলাম ঢাকায় যাই, দেখি কি হয়। তবে আগেই বলে রাখছি, ভালো না লাগলে কিন্তু আমি চলে আসবো। আরেকটা কথা বলি?"
"বলো।"
"আপনি মিথ্যা কথা বলতে পারেন না, তাই মিথ্যা বলার চেষ্টা করবেন না। খুবই হাস্যকর লাগে। কালকে বলছিলেন না, হাসানকে খুঁজে পেয়েছেন, শুনেই বুঝেছি মিথ্যা বলছেন।"
"আচ্ছা, বলবো না।"
"আমি চা ছাড়া কিছুই বানাতে পারি না, আগেই বলে রাখলাম। আর সিগারেটের গন্ধ আমার সহ্য হয় না। "

কলির মুখের কাঠিন্য মুছে গেছে। তার মুখে স্নিগ্ধ হাসি। যেন খুব আনন্দময় কিছু ঘটতে যাচ্ছে আর কলি উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছে। রায়হানের মনে হলো সত্যিই কি পরশ পাথরের কোনো জাদুকরী ক্ষমতা আছে?

"একটা কথা বলেন তো। আপনি এতক্ষন হাকিম পাগলার সাথে কী কথা বলছিলেন?"
"হাকিম পাগলা কে?"
"ওই যে, এতক্ষন বাইরে যার সাথে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছিলেন। ওই ব্যাটাও তো কত কিছু বলছিলো আপনাকে।"
"তুমি চেনো ওকে?"
"ওকে কে না চেনে! বিরাট ধরণের বাটপার। মানুষকে কিভাবে পটিয়ে টাকা খসানো যায়, সব ফন্দি ও জানে। চুরি করতে গিয়ে কতবার যে ধোলাই খেয়েছে। তাও লোকটার শিক্ষা হয়না। আপনার কাছ থেকেও কিছু খসিয়েছে নাকি?"

রায়হান হা করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। ওর বারবার মনে হচ্ছিলো লোকটার মাঝে গন্ডগোল আছে। তবুও রাস্তা থেকে কুড়ানো একটা পাথরের জন্য কি অবলীলায় দুই হাজার টাকা গচ্চা দিলো!

"না না, আমার কাছে কিছুই খসায়নি। ইয়ে , হাকিম পাগলা কি তোমাকে চেনে?"
"হুম, ও হাসানের কেমন জানি দূরের আত্মীয়। আমাদের বিয়ের কথা জানে। আপনাকে কিছু বলেছে?"
"নাহ , কিছুই বলেনি। "
"এক কাজ করি, বাইরে গিয়ে চা খাই। আমার কেমন খিদে পাচ্ছে।"

রায়হান জানে বাইরে মোকাদ্দেস ওরফে হাকিম পাগলাকে দেখা যাবে না। তবুও কলির সাথে বাইরে এসে ইতিউতি খুঁজলো, মোকাদ্দেস ততক্ষনে পাগার পার! রায়হানের অবশ্য সেজন্য খুব আফসোস হলো না। কলি তার গা ঘেঁষে বসে চা খাচ্ছে। দুই হাজার টাকা জলে ফেলার দুঃখ এই মুহূর্তে রায়হানকে স্পর্শ করছে না।
দূরে কু-ঝিকঝিক শব্দে সুবর্ণা এক্সপ্রেসকে আসতে দেখা গেলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী জাহাঙ্গীর অনেক অভিনন্দন
মাইনুল ইসলাম আলিফ অনেক অনেক অভিনন্দন আপু।
Jamal Uddin Ahmed দুনিয়ার অনেক বিষয়ই রহস্যময়। খুব কম সুযোগ হয় গক'র আঙিনায় আসার। সত্যি বলতে কি, বিজয়ীর গল্প পাঠ করতে গিয়ে মনে হল যেন রহস্য ভেদ করেছি। হুমায়ূনীয় চমক থাকলেও খুবই সুখপাঠ্য, সুবিন্যস্ত, মৌলিক গল্পটি পড়ে অভিভূত হলাম। উঁচুমানের রচনা। অনেক অভিনন্দন।
Fahmida Bari Bipu অভিনন্দন সালমা।
শামীম আহমেদ আপনার লেখার ভাবটা খুব চমৎকার। সহজে বলবো,অনেক ভালো হয়েছে, শুভ কামনা এবং ভোট রইল আমার পাতায় নিমন্ত্রন!!

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

বিপদে অসহায় হয়ে অলীক শক্তির কাছে সাহায্য চাইতে যাই আমরা, সত্যি কি অলীক কিছু আমাদের সাহায্য করতে পারে? মোকাদ্দেস নামের রহস্যময় মানুষ দাবি করে রায়হানকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবে। সত্যি পারবে কিনা সেটা জানা যাবে গল্প থেকে।

২২ জানুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৫ টি

সমন্বিত স্কোর

৬.১৫

বিচারক স্কোরঃ ৩.৫৫ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৬ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪