খেলা

অবহেলা (এপ্রিল ২০১৭)

Salma Siddika
  • ১০
  • ২২
বারান্দা ছাড়িয়ে আকাশ দেখে মনে হচ্ছে হাত বাড়িয়ে মেঘ ছোঁয়া যাবে। একটু পরেই ঝড় আসবে মনে হচ্ছে, আকাশে ঘন ধূসর মেঘ জমে অনেকটা নেমে এসেছে হাতের নাগালের মধ্যে। ঊনিশ তলার ফ্ল্যাটে থাকার এই আনন্দটা রেশমার একান্ত নিজস্ব।
খোলা বারান্দার রেলিংয়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে রেশমা। ড্রইংরুম থেকে রেশমার পেছন দিকটা দেখতে পাচ্ছে জাহেদ। তার দৃষ্টি টিভিতে কিন্তু মনোযোগ রেশমার দিকে।
রেশমার পরনে হালকা হলুদ রঙের আটসাট কামিজ। আজকাল একটু লম্বা কামিজ পরে মেয়েরা , রেশমার কামিজটা সেরকম। সাথে ঢোলা ধরণের প্যান্ট , এটাও ফ্যাশন, জাহেদ জানে। গায়ে কোনো ওড়না নেই। বাতাসে রেশমার কামিজ উড়ছে, তাতে ওর শরীরের সব ভাঁজ বোঝা যাচ্ছে। জাহেদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে আর কেমন যেন একটা যন্ত্রনা বোধ করছে। ধূসর মেঘের নেপথ্যে উজ্জ্বল হলুদে রেশমা ভয়ঙ্কর সুন্দরী।
'কি করছো ড্রইং রুমে একা ? একটু পরে ঝড় হবে, এসো না বারান্দায়। ' আদুরে আহবান রেশমার।
'নাঃ , তুমিই দেখো। আমার এসব ভালো লাগে না। '
রেশমা জাহেদের উত্তরটা শুনতে পায়নি বোধ হয়। ও জানে, জাহেদ আসবেনা। এসব রোমান্টিকতা জাহেদের নেই। কালবৈশাখী ঝড়ের আগের কালো আকাশের সতর্কতা বাণী রেশমাকে খুব টানে। কাজ ফেলে সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঝড় দেখে, বৃষ্টিতে ভেজে। জাহেদ জানে সেসব।
জাহেদ টিভি চ্যানেল বদলায়। তুমুল টক শো, হিন্দি গানের শরীরী ঝড় অথবা চোখ ঝলসানো হলিউড কোনোটাই জাহেদের মন ভোলায়না। মাথার ভেতর দপদপ করছে হিংসা আর ক্রোধ। নিজেকে নির্বোধ মনে হচ্ছে।
'এই ধরো, চা। ' রেশমা জাহেদের দিকে চা বাড়িয়ে দিয়ে মিটিমিটি হাসছে। 'কি হয়েছে তোমার বোলো তো? তখন থেকে মুখ গম্ভীর করে বসে আছো। অফিসে কোনো সমস্যা?'
আদুরে বেড়ালের মতো জাহেদের গা ঘেঁষে বসে রেশমা। জাহেদের ইচ্ছা করে এক ধাক্কায় রেশমাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলতে, 'নষ্টা -গী , সর আমার কাছ থেকে।' কিন্তু জাহেদ মাথা গরম করে বোকামি করার মতো ছেলে না। ও রেশমাকে পাকড়াও করবে বুঝে সয়ে। এভাবে ধীরে ধীরে খেলতে ওর ভালো লাগে।
'অফিসে তো ঝামেলা থাকবেই। কখনো দেখেছো কারো অফিসে ঝামেলা নেই? ওসব নিয়ে ভেবো না। থাঙ্কস ফর দা টি। '
রেশমার মুখে একটা কৌতুকের হাসি খেলে যায়। সোফা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় ও ।
জাহেদ চায়ে চুমুক দিয়ে মাথার ভেতরের ভাঙা ভাঙা চিন্তার টুকরোগুলোকে জোড়া দেয়। সে আজকে জানতে পেরেছে মৃনালের সাথে রেশমার প্রেম চলছে। মৃনাল জাহেদের খুব কাছের বন্ধু, বিবাহিত। স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে সুখী পরিবার। মাসখানেক আগেওতো এই বাসায় দাওয়াতে এসেছিলো মৃনাল, ওর পরিবারকে নিয়ে। কই , একটুও তো বুঝতে পারেনি রেশমার সাথে মৃনালের কিছু চলছে! জাহেদ চালাক মানুষ, তার সামনে কি দারুন অভিনয় করলো দুজন! অথচ মাস ছয়েক ধরে দুইজনের মধ্যে এসব হচ্ছে, একসাথে ওরা হোটেলেও নাকি.......... আর ভাবতে ভালো লাগছে না জাহেদের। ও একটা সিগারেটে ধারালো। ভয়ংকর হতাশায় ওর চোখ জ্বলছে, সাথে মনটাও।
ঠিক এই সময় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলো। সন্ধ্যার ঘন অন্ধকার মেঘে ডুবে গেলো চারদিক। তার মাঝে হটাৎ হটাৎ বিদ্যুৎ ঝলকানি ; যেন উনুনে ছাই চাপা আগুন কেউ উস্কে দিচ্ছে একটু পর পর ।
রেশমা এখনো বারান্দায়। জাহেদের ইচ্ছা করছে চিৎকার করে সব ভেঙে চুড়ে দিতে, সব ধ্বংস করে দিতে। রেশমার চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে বারান্দা থেকে ধরে এনে দেয়ালে মাথা ঠুকে দিতে।......... না, এসব করবে না। জাহেদ রেশমার ভিতরটা জ্বালিয়ে দেবে, আস্তে আস্তে প্রতিশোধ নেবে। এই প্রতিশোধের পই পই হিসাব নিকাশ করার দুর্লভ আনন্দ কিছুতেই হাত ছাড়া করবে না জাহেদ।
জাহেদ উঠে গিয়ে বারান্দায় রেশমার পেছনে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে রেশমার কোমর জড়িয়ে ধরে। বৃষ্টিতে ভিজে রেশমার কামিজটা গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। জাহেদ বুকের সব ঘৃণা এক করে আদর করতে থাকে রেশমাকে। রেশমাকে টেনে নিয়ে আসে বেড রুমে। বেপরোয়া হিংস্র আদরে রেশমার শরীরটা খুঁড়ে জাহেদ যেন নিজেকে খুঁজে পেতে চায়। উন্মত্ত শরীরী খেলায় যেন বলতে চায়, তুমি শুধু আমার-আর কারো না এই শরীর। আঁচড়ে কামড়ে নিজের প্রতিপত্তি গড়তে চায় রেশমার মধ্যে।
রেশমা হটাৎ হেসে ওঠে, যেন হাসিটা অনেক্ষন চেপে রেখে আর পারছিলোনা সামলাতে। জাহেদ স্তব্ধ হয় কিছুক্ষনের জন্য।
'কি? এমন করে কতদিন আদর করোনা আমাকে, বলোতো ? আজকে কি এমন হলো ?'
জাহেদ চোয়াল শক্ত করে রেশমার ঠোঁটে চেপে ধরে ওর ঠোঁট।
রেশমা শক্ত হাতে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে।
'নিজের সম্পত্তি অন্যের হয়েছে দেখে খুব লেগেছে, না? কেমন লাগে কাছের মানুষ অন্যের হয়ে গেলে, বুঝতে পেরেছো এখন? ' ক্রুর হাসি মেখে রেশমা বলে।
জাহেদ পাথরের মূর্তির মতো স্তব্ধ।
'দুই বছর আগে রুপার সাথে প্রেম করেছিলে। আমার চোখে ধুলো দিয়ে। হাহাহাহাহা। ভেবেছো আমি কিছুই জানি না? আমি সব জেনেছি। তারপর খুব ঠান্ডা মাথায় রুপাকে তোমার জীবন থেকে সরিয়েছি। তোমার সমস্ত ভরসার জায়গাটা তিল তিল করে আমি দখল করেছি। তারপর একদিনে সব ভেঙে দিয়েছি। আমি তোমার মতো জঘন্য লোকের জন্য যে কষ্টগুলো পেয়েছিলাম ঠিক সেই কষ্ট গুলো তোমাকে দেবো, সেজন্য কতদিন অপেক্ষা করেছি। আজকে আমার শান্তি। হাহাহাহাহা .......'
প্রচন্ড বৃষ্টির কালো বলয় চিড়ে বিদ্যুতের ঝলকানিতে বোঝা গেলোনা খেলায় ঠিক কি জিতলো, জাহেদ নাকি রেশমা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Lutful Bari Panna একটু বৈচিত্র পেলাম। এ সংখ্যার যে কটা পড়লাম- বেশীরভাগের বিষয় ছিলো নিম্নবিত্তদের প্রতি অবহেলা। আর গল্পটা প্রতিশোধের হলেও অবহেলা জনিত। ছোট্ট টুইস্টটাও বেশ লাগলো।
আলমগীর কাইজার খুব সুন্দর,,, কিন্তু বিয়ের আগেই এমন গল্প পড়লে বিয়েতে অরুচি হবে। সুন্দর প্রেমের রোমান্টিক গল্প চাই যেন আমরা প্রেম করতে শিখি, অবিশ্বাস করতে নয়। যাহোক,,, শুভকামনা রইলো।
SWADESH KUMAR GAYEN বেশ জটিল লাগলো। তবে ভালো। আরও লিখুন। আমার ব্লগ পড়ার আমন্ত্রন রইলো।www.golpoporuya.in
অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা
কাজী জাহাঙ্গীর লেখাটা ভাল তাতে দ্বিমত নেই, কিন্তু বিনয়ের সাথে একটু তির্যক করে যদি প্রশ্ন করি-সুন্দরীরা কি তাহলে এমনই হয়, নিজেকে অন্যের করে ‍দিয়ে আপনজনের অবহেলার প্রতিশোধ নেয়? আর কি কোন উপায় তাদের জানা নেই, আসলে নারী পুরুষের সম্পর্কটাই বেশ জটিল। আরও প্রশ্ন কিন্তু মাথায় ঘুরছে হা হা হা...। মনে হচ্ছে মোজাম্মেল ভাইয়ের সাথে আমাকে রেসে নামতে হবে কারন আমিও আপনার কম ভক্ত নই। অনেক শুভকামনা ভোট আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান না, তেমনি সব মানুষই আলাদা। সুন্দরী অসুন্দরীর সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেকরকম। তাই সবাইকে একভাবে বিচার করা ঠিক হবে না বোধ করি। মন্তব্ব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
মোঃ আক্তারুজ্জামান খুব জটিল 'খেলা'। দুর্দান্ত হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা , ভালো থাকবেন
জসিম উদ্দিন আহমেদ ...কার প্রতিশোধ কে নিল! স্ত্রীর প্রতি অবহেলার সমুচিত জবাব দিয়েছে রেশমা। দারুন লাগল। অনেক শুভ কামনা। .. আমি লিখতে চেষ্টা করছি। অামার পাতায় আমন্ত্রণ। গঠনমূলক সমালোচনার আশায় থাকলাম।
অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী হে হে খুব মজা পেলাম। বিষয়- বস্তুর দিকে খেয়াল করে খুব ভালো লাগলো। বানানের দিকে আর একটু চোখ রাখতে হবে।অনেক শুভকামনা, ভোট আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আমি সমালোচনা পজিটিভলি নেই। কোনকোন বানান ভুল দেখেছেন জানালে উপকৃত হতাম।
আসলে বেশি কিছু না আপু, দুটো শব্দ এক সাথ হয়ে গেছে- যেমন, ভোলায়না। এমন আরও একটি আছে। আর দুটো বানান- যেমন, থাংকস ফর দা টি (থ্যাংকস ফর দ্যা টি)। যা হোক এটা সাধারন। এতে যদি আপনি রাগান্বিত হয়ে থাকেন, তাহলে আমি দুঃখিত। কারন, আমার গল্প/ কবিতায় আরও অনেক অনেক বানান ভুল আছে.....
আমি লেখক হিসেবে বলি নাই, শুধু পাঠক হিসেবে আপনার গল্পের অনুপেরনা থেকে মুগ্ধ হয়েছি বিদায় বলছি।
মোটেই রাগ করিনি, বরং খুশি হয়েছি আপনি আমাকে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন বলে। এর ফলে ভবিষ্যতে বানান নিয়ে আরো কেয়ারফুল থাকবো। সবাই ভালো ভালো বলে কিন্তু লেখকের উপকার হয় কেউ সমালোচনা করলে এবং ভুল ধরিয়ে দিলে। এতে আমি বরং উৎসাহ পাই আরো ভালো কিছু লিখবার।
মোজাম্মেল কবির গল্পটা অনেক ছোট। হলে কি হবে এতে বারুদের গন্ধ আছে। আমিই মনে হয় আপনার লেখার প্রথম ভক্ত... এই জায়গাটি আমি ছাড়ছি না অন্য কারো জন্য।
চেষ্টা করছি অল্পে অনেক কিছু বলতে। less is beautiful -এই থিওরিতে থাকার চেষ্টা করছি। আপনি আমার ফ্যান, এসি যাই থাকেন, ভালো থাকবেন সবসময়।
রাকিব মাহমুদ চমৎকার ঝরঝরে একটা গল্প। সত্যিই ধারালো লেখনী আপনার, যা বরাবর খুব ভালো লাগে। কিন্তু বিষয়বস্তু হিসেবে 'অবহেলা'-কে ছাপিয়ে যেন 'প্রতিশোধ'-টা প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে বলে মনে হয়। শুভেচ্ছা জানবেন। পাতায় আমন্ত্রণ রইলো। শুভকামনা।
সম্পর্কের অবহেলা থেকেই দূরত্ব , তারপর ঘৃণা, তারপর প্রতিশোধ--- ব্যাপারটা এভাবে দেখলে কেমন হয়? ধন্যবাদ সুচিন্তিত মতামতের জন্য।
Fahmida Bari Bipu ধারযুক্ত লেখনী যার, বিউটি উইথ ব্রেইন...এবারেও গল্প পড়ে ট্যারা হয়ে গেলাম। চলতে থাকুক জয়যাত্রা!!
অনেক ধন্যবাদ :D

২২ জানুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪