প্রেশার ইমরানের আজ উড়াউড়ির দিন। গতরাতে ঘুমিয়েছিল কিনা জানি না। খুব ভোরেই সে আজ গোসল সেরেছে। আমি যখন জাগ্রত হয়ে চোখ মেলছি, তখন সে গায়ে সুগন্ধি মাখছিল। সেন্টের ‘ছ্যাঁৎ-ছুঁৎ’ শব্দে আমার ঘুম ভেঙেছে। প্রথমে একটু বিরক্ত হয়েছিলাম। পরে চোখ মেলে দেখি, ইমরান রূপচর্চা করছে আয়না দেখে। গায়ে সবুজ পাঞ্জাবী, জিন্স প্যান্ট, পায়ে সাদা ক্যাডস। ভাগ্যিস, তার রূপচর্চার কথা মেয়েরা জানে না। জানলে তারা হিংসায় পার্লার শুদ্ধ ঘরে নিয়ে আসত।
আমার রুমমেট সোহেল একবার তাকে বলেছিল, “তোর গালে লেগে কসমেটিক্সগুলো কালো হয়ে যাচ্ছে, কসমেটিক্সগুলোর উপর অত্যাচার করে লাভ আছে?” সৌন্দর্য্য সচেতন নারী দেখেছি, পুরুষ দেখি নি -যে প্রতি ঘন্টায় একবার ফেইস ওয়াশ করে। তবে আমাদের রুমমেট ইমরান পুরুষ হলেও তা-ই করে। তার উদ্ভট চালচলনে মাঝে মাঝে হাসি পায়।
সচরাচর সে রাতের বেলায় গোসল করে। দিনের বেলায় শুয়ে শুয়ে সময় সময় কাটায়। কেউ শব্দ করলে বিরক্ত হয়ে গালিগালাজ করে। কোমল স্বরে কেউ ‘অসুস্থ নাকি’ প্রশ্ন করলে বলে, “চাপে আছি।” সব সময় মুখটাকে এমন করে রাখে যেন, ঘরে কয়েকটা বউ আছে অথচ খরচ জোগাড় করতে পারে নি। কিছুক্ষণ পর পর দুশ্চিন্তা সূচক শব্দ প্রকাশ করে পাশ ফিরে শুয়। নিজের উচ্চতা নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর আফসোস করে বলে, “ইশ্ , হাইটটা একটু বাড়তো! হঠাৎ করে উঠে সে রুম থেকে বের হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাথরুমে যাবে। বাথরুম থেকে বের হয়ে বারান্দার এ-মাথা ও-মাথা দু’একবার দৌড়াবে। আবার রুমে এসে চেয়ার টেনে বসবে। টেবিলে কনুই বসিয়ে চুল ঝাপড়ে ধরে মাথা নিচু করে বসে থাকবে। দেখে মনে হবে, শেয়ার বাজারে লোকসানে সর্বস্বান্ত হয়ে চৌদ্দ গোষ্ঠিকে ডুবিয়েছে। নতুন কেউ এ-অবস্থা দেখে প্রশ্ন করতে পারে -“ভাই কী হল আপনার?” সে উত্তর দিবে - “চাপে আছি।”
সে সব সময় চাপে থাকে। অবশ্যই কিসের চাপ তা উল্লেখ করে না। জিজ্ঞেস করলে বলে, ঝামেলায় আছি। ঝামেলাটা কী -তা কেউ কোনদিন আবিষ্কার করতে পারে নি। মাঝে মাঝে রাত হলে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে এ্যাম্বুলেন্স কল করে মেডিকেল যায়। মেডিকেল থেকে ফিরে ধপ্ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর লাফ দিয়ে উঠে ওষুধ খেয়ে রুমের বাইরে চলে যায়। লাফিয়ে লাফিয়ে বাথরুমে যায়। ফেইস ওয়াশ করে রুমে ফিরে।
তার অদ্ভুত কর্মকান্ড দেখে একবার এক অতিথি শংকিত হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল -সমস্যা আছে নাকি? আমি বললাম, ভাই, ভয় পাওয়ার দরকার নেই, ওনি সব সময় প্রেশারে থাকে। ওর আসল নাম ‘ইমরান।’ আমরা নাম দিয়েছি ‘প্রেশার ইমরান।’ ওনি একটু ভিন্ন ধরনের প্রেশারের রোগী।
প্রেশার ইমরান আমার রুমমেট হলেও কোনদিন তার প্রেশারের উৎস আবিষ্কার করতে পারি নি। কিন্তু আজকে তাকে দেখে প্রেশারের রোগী বলে মনে হচ্ছে না। উচ্চতায় খাট হলেও তাকে আজ দীর্ঘদেহী মনে হচ্ছে। তার বিছানা গোছগাছ দেখে ভাবলাম, বাড়ি যাবে মনে হয়, কিন্তু গোছগাছ ব্যাগ দেখা যাচ্ছে না। খটকা দূর করার জন্য প্রশ্নটা করেই ফেললাম - কোথাও যাবি নাকি?
সে রূপচর্চা কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমার মনে হল, প্রশ্ন শুনে তার প্রেশার বেড়ে গেছে! কিন্তু তার উত্তর শুনে বুঝলাম প্রেশার স্বাভাবিক আছে। সে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, অনুষ্ঠান আছে না? আমি বললাম, এত তাড়াতাড়ি? অনুষ্ঠান তো নয়টা থেকে! সে কিছু না বলে মুচকি হেসে মাথা দুলাতে শুরু করল। বুঝলাম না কিছু। বলল, “কারন আছে, একটা চমক আছে!” জিজ্ঞেস করলাম -কী? “বলা যাবে না, সময়মত জেনে যাবি” বলে সে মাথায় চিরুনী লাগাল।
নয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হল। দেশাত্মবোধক গান দিয়ে শুরু হল বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রেশার ইমরানেরও একটি গান পরিবেশনা ছিল। ভাগ্যিস, প্রেশার স্বাভাবিক ছিল। তার গানটাও ভাল হয়েছিল।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে মেলা বসেছে বিশাল। আমি আর ইমন মেলার স্টল গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। হঠাৎ ইমরানের ফোন। সে অনেকটা চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, তোরা কোথায়? আমি বললাম, মেলায় স্টলগুলো দেখতেছি, কেন, কোন সমস্যা? সে উত্তেজিত স্বরে বলল, “সমস্যার গোষ্ঠি কিলা, আগে তাড়াতাড়ি ‘জামতলা’ আয়!”
আমি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম, কী হল বুঝতে পারছি না। ইমন বলল, মনে হয় প্রেশার বেড়েছে, চল গিয়ে দেখি। সোহেল আর মিল্টনকেও খবর দিলাম জামতলায় আসতে। গিয়ে দেখি এলাহি কান্ড! একগাদা নাস্তার কার্টুন সামনে বসে আছে ইমরান। তার পাশে হলুদ শাড়ি পরে বসে আছে এক অপরিচিতা! ইমরান এমন ভাবে মেয়েটির হাত ধরে আছে যেন, কোন পলায়মান সুন্দরী দৈবাৎ তার নাগালে এসেছে, ছেড়ে দিলেই পালাবে! মেয়েটি কে, আর কী উপলক্ষ্যে এ-আয়োজন আমি বুঝতে পারলাম না। তার কানে কানে জিজ্ঞেস করলাম, প্রেশার ঠিক আছে তো?
১৫ জানুয়ারী - ২০১৪
গল্প/কবিতা:
৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪