নিজেদের পান্ডুলিপি বগলের তলে নিয়ে সমসাময়িক নবীন লেখকগণ অনাদরেই পড়ে থাকেন। আমি বিভিন্ন ব্লগে, সাহিত্য ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় সময় সুযোগ পেলেই নবীনদের সাহিত্য কর্মে চোখ বুলাই। ভালো ততটাই লাগে যতটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও হতাশ হই। মানসম্মত নবীনদের প্রকাশিত বই বাজারে খুব কম। যাদের লেখা হৃদয় ছুঁয়ে যায় তাদের বইও প্রকাশে নেই। এর কারণ দুইটি। প্রথমত প্রকাশক ও অধিকাংশ পাঠক হুমায়ুন আর মিলন বন্ধনা করে। তাদের যে কোন বই ঝাল মুড়ির মত চিবুয়। সাময়িক স্বাদ পাওয়া যায় যা স্থায়ী নয়। আমি ঝাল মুড়ি বেশ পছন্দ করি এবং প্রায়ই খাই। আগ্রহ নিয়েই খাই। ভালো লাগে তবে মুখে স্বাদ লেগে থাকেনা। অন্যদিকে, বহুদিন ধরে সেই ছোটবেলায় খাওয়া লবন মরিচ যুক্ত পাকা বেল ভর্তা খাইনা। অচ আজও অতিতের স্মৃতি মনে পড়লেই স্বাদে মুখ ভরে যায়, যেন এখনও নাকে ঘ্রাণ লেগে আছে। এরূপ স্বাদ যুক্ত অনেক নবীন লেখক আছেন বর্তমানে। যারা অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই পাচ্ছেননা। প্রকাশকগণ দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন তাদেরকে। যা’ই দুই চার জন প্রকাশ করেন , তাদের কেহ সুদে ধার করে, কেহ সঞ্চিত শেষ সম্বল প্রকাশককে দিয়ে প্রকাশ করেন। সবাই যেন হাতেগোনা দু’চার জন ছাড়া অন্যদের লেখকই মনে করেননা। আমি ছাইপাশ যা লেখার চেষ্টা করি এতে নিজেই সন্তুষ্টনা। তবুও চেষ্টা করছি। এ তথ্য আমার নিকট বন্ধুদের কয়েকজন জানেন। তারা আমার লেখা পড়ে বলেন, কী লিখিস এসব ? হুমায়ুন মিলনের মত লিখতে পারিস না ! এত উচ্চ প্রশংসা শুনলে কলম কি আর চলে ? গত বই মেলা উপলক্ষে পান্ডুলিপি নিয়ে গিয়েছিলাম কয়েকজন প্রকাশকের কাছে। তারা একে অন্যকে ইশারা দিয়ে পান্ডুলিপি না পড়েই ফিসফিস করছে তামাশার ছলে। কানে যতটুকু শুনতে পেলাম তা হলো, ‘লেখক আইছে’ কথাটি বলে আর হাসে। পান্ডুলিপি কোথায় রেখেছি ভুলা মনে আর মনে করতে পারছিনা। কথিত আছে এরূপ বিড়ম্বনার স্বীকার হয়ে এক নবীন লেখক ফেলে দেয়ার ছলে এক প্রকাশকের দোকানেই পান্ডুলিপি রেখে চলে যান। বছর খানেক পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুরপর প্রকাশকের একান্ত ইচ্ছা না হলেও পুড়ে ফোর পূর্বে পান্ডুলিপি পড়েন ও তার ভালো লাগে। ফলে বইটি প্রকাশ করেন। সেই বই এতোটাই পাঠক প্রিয় হয় যে, সরকার বাধ্য হয়ে বইটি ঐ যুগ সেরা বই হিসাবে ঘোষণা করেন এবং লেখককে মরণোত্তর সাহিত্য পদক প্রদান করেন। পরিতাপের বিষয় হলো মৃত লেখক নিজেই জানতেননা তিনি লেখক। তাই ভাবছি কথিত কিছু জনপ্রিয় লেখকদের মত লেখার চেষ্টা করব। চালিয়েও যাচ্ছি। এত কখনও যদি বড় মানের লেখক হওয়ার খেতাব পাওয়া যায় ! আবার সংশয়ে আছি, আমার অবস্থা রাজবাড়ির কুকুরের মত হবেনাতো ? রাজা মহাশয় একদিন স্ত্রীর সাথে দ্বদ্বের এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিলেন, তোকে কুকুরের সাথে থাকতে দেব। ভাষাটি ঠিক এতো রুচি সম্মত ছিলনা। আরো দুই ধাপ নিচে ছিল। আকারে লিখলাম যদিও ই কার। তবে যেনতেন ই নয় দীর্ঘ ঈ। কথাটি কুকুর শুনেছিল। এতে তার খুশির অন্ত ছিলনা। রাজাতো কথার খেলাপ করতে পারেননা। সেই থেকে কুকুর অপেক্ষায় আছে, কবে আসবে সেই সোনালী সুদিন ! বেশ কয়েক বছর পর রাজবাড়ির সামনে দিয়ে গ্রামের একটি কুকুর যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে সেখানে অবস্থানরত কুকুেেরর বেহাল দশা দেখে তার মায়া হয়। কুকুরটি একবারে শুকিয়ে মৃত্যু পথ যাত্রি। তার কাছে গিয়ে গ্রামের কুকুর জানতে চায়, সে কিছু খেতে পায়না নাকি ? উত্তরে রাজবাড়ির কুকুর জানায় এত তার কোর দুঃখ নেই। সে চান্সে আছে। কেননা রাজা বলেছে, তার স্ত্রীকে তার কাছে দেবে। জানিনা, উপমা অংশে অশ্লিলতার স্বাদ পেয়েছেন কিনা। এরূপ স্বাদ যুক্ত লেখার চেষ্টা চালাতে যেয়েও বিবেক বারবার আমার অন্তরে ঝাটা পিটায়। এত বারবার হোচট খাই। নিজে সাহিত্যিক হতে না পারি, এর বারোটা বাজানোর অধিকার আমার নেই। তাই তাও হচ্ছেনা। তুও খাপছাড়া কিছু লিখে চলছি অবিরাম। পাঠক পাশে পাব কিনা জানিনা। তবে নিরাশ নই। দুই জন সর্বদাই পাশে াকেন। একজনকে নিঃস্ব করছি, অন্যজনকে ভরাচ্ছি। তারা হলেন কলম ও কাগজ। পাঠক আরো একজন আছেন, যিনি পড়তে বাধ্য। একলাইন পড়ে চার লাইন নিজ থেকে ভূরু কুচকায়ে নাক ছিটকায়ে ফিসফিস করে বলেন। পড়া শেষ হলে অতি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলে বলে, তুমিও লেখক আর তেলাপোকাও পাখি।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।