নবীন লেখকদের বিড়ম্বনা

বিন আরফান.
০৭ এপ্রিল,২০১২

নিজেদের পান্ডুলিপি বগলের তলে নিয়ে সমসাময়িক নবীন লেখকগণ অনাদরেই পড়ে থাকেন। আমি বিভিন্ন ব্লগে, সাহিত্য ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় সময় সুযোগ পেলেই নবীনদের সাহিত্য কর্মে চোখ বুলাই। ভালো ততটাই লাগে যতটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও হতাশ হই। মানসম্মত নবীনদের প্রকাশিত বই বাজারে খুব কম। যাদের লেখা হৃদয় ছুঁয়ে যায় তাদের বইও প্রকাশে নেই। এর কারণ দুইটি। প্রথমত প্রকাশক ও অধিকাংশ পাঠক হুমায়ুন আর মিলন বন্ধনা করে। তাদের যে কোন বই ঝাল মুড়ির মত চিবুয়। সাময়িক স্বাদ পাওয়া যায় যা স্থায়ী নয়। আমি ঝাল মুড়ি বেশ পছন্দ করি এবং প্রায়ই খাই। আগ্রহ নিয়েই খাই। ভালো লাগে তবে মুখে স্বাদ লেগে থাকেনা। অন্যদিকে, বহুদিন ধরে সেই ছোটবেলায় খাওয়া লবন মরিচ যুক্ত পাকা বেল ভর্তা খাইনা। অচ আজও অতিতের স্মৃতি মনে পড়লেই স্বাদে মুখ ভরে যায়, যেন এখনও নাকে ঘ্রাণ লেগে আছে। এরূপ স্বাদ যুক্ত অনেক নবীন লেখক আছেন বর্তমানে। যারা অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই পাচ্ছেননা। প্রকাশকগণ দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন তাদেরকে। যা’ই দুই চার জন প্রকাশ করেন , তাদের কেহ সুদে ধার করে, কেহ সঞ্চিত শেষ সম্বল প্রকাশককে দিয়ে প্রকাশ করেন। সবাই যেন হাতেগোনা দু’চার জন ছাড়া অন্যদের লেখকই মনে করেননা। আমি ছাইপাশ যা লেখার চেষ্টা করি এতে নিজেই সন্তুষ্টনা। তবুও চেষ্টা করছি। এ তথ্য আমার নিকট বন্ধুদের কয়েকজন জানেন। তারা আমার লেখা পড়ে বলেন, কী লিখিস এসব ? হুমায়ুন মিলনের মত লিখতে পারিস না ! এত উচ্চ প্রশংসা শুনলে কলম কি আর চলে ? গত বই মেলা উপলক্ষে পান্ডুলিপি নিয়ে গিয়েছিলাম কয়েকজন প্রকাশকের কাছে। তারা একে অন্যকে ইশারা দিয়ে পান্ডুলিপি না পড়েই ফিসফিস করছে তামাশার ছলে। কানে যতটুকু শুনতে পেলাম তা হলো, ‘লেখক আইছে’ কথাটি বলে আর হাসে। পান্ডুলিপি কোথায় রেখেছি ভুলা মনে আর মনে করতে পারছিনা। কথিত আছে এরূপ বিড়ম্বনার স্বীকার হয়ে এক নবীন লেখক ফেলে দেয়ার ছলে এক প্রকাশকের দোকানেই পান্ডুলিপি রেখে চলে যান। বছর খানেক পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুরপর প্রকাশকের একান্ত ইচ্ছা না হলেও পুড়ে ফোর পূর্বে পান্ডুলিপি পড়েন ও তার ভালো লাগে। ফলে বইটি প্রকাশ করেন। সেই বই এতোটাই পাঠক প্রিয় হয় যে, সরকার বাধ্য হয়ে বইটি ঐ যুগ সেরা বই হিসাবে ঘোষণা করেন এবং লেখককে মরণোত্তর সাহিত্য পদক প্রদান করেন। পরিতাপের বিষয় হলো মৃত লেখক নিজেই জানতেননা তিনি লেখক। তাই ভাবছি কথিত কিছু জনপ্রিয় লেখকদের মত লেখার চেষ্টা করব। চালিয়েও যাচ্ছি। এত কখনও যদি বড় মানের লেখক হওয়ার খেতাব পাওয়া যায় ! আবার সংশয়ে আছি, আমার অবস্থা রাজবাড়ির কুকুরের মত হবেনাতো ? রাজা মহাশয় একদিন স্ত্রীর সাথে দ্বদ্বের এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিলেন, তোকে কুকুরের সাথে থাকতে দেব। ভাষাটি ঠিক এতো রুচি সম্মত ছিলনা। আরো দুই ধাপ নিচে ছিল। আকারে লিখলাম যদিও ই কার। তবে যেনতেন ই নয় দীর্ঘ ঈ। কথাটি কুকুর শুনেছিল। এতে তার খুশির অন্ত ছিলনা। রাজাতো কথার খেলাপ করতে পারেননা। সেই থেকে কুকুর অপেক্ষায় আছে, কবে আসবে সেই সোনালী সুদিন ! বেশ কয়েক বছর পর রাজবাড়ির সামনে দিয়ে গ্রামের একটি কুকুর যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে সেখানে অবস্থানরত কুকুেেরর বেহাল দশা দেখে তার মায়া হয়। কুকুরটি একবারে শুকিয়ে মৃত্যু পথ যাত্রি। তার কাছে গিয়ে গ্রামের কুকুর জানতে চায়, সে কিছু খেতে পায়না নাকি ? উত্তরে রাজবাড়ির কুকুর জানায় এত তার কোর দুঃখ নেই। সে চান্সে আছে। কেননা রাজা বলেছে, তার স্ত্রীকে তার কাছে দেবে। জানিনা, উপমা অংশে অশ্লিলতার স্বাদ পেয়েছেন কিনা। এরূপ স্বাদ যুক্ত লেখার চেষ্টা চালাতে যেয়েও বিবেক বারবার আমার অন্তরে ঝাটা পিটায়। এত বারবার হোচট খাই। নিজে সাহিত্যিক হতে না পারি, এর বারোটা বাজানোর অধিকার আমার নেই। তাই তাও হচ্ছেনা। তুও খাপছাড়া কিছু লিখে চলছি অবিরাম। পাঠক পাশে পাব কিনা জানিনা। তবে নিরাশ নই। দুই জন সর্বদাই পাশে াকেন। একজনকে নিঃস্ব করছি, অন্যজনকে ভরাচ্ছি। তারা হলেন কলম ও কাগজ। পাঠক আরো একজন আছেন, যিনি পড়তে বাধ্য। একলাইন পড়ে চার লাইন নিজ থেকে ভূরু কুচকায়ে নাক ছিটকায়ে ফিসফিস করে বলেন। পড়া শেষ হলে অতি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলে বলে, তুমিও লেখক আর তেলাপোকাও পাখি।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শরিফ হোসাইন সেলিম বাস্তব, বাস্তব এবং বাস্তব। এর চেয়ে বেশী কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
খোন্দকার শাহিদুল হক পড়লাম। বেশ ভাল লিখেছেন। পুরোটাই বাস্তব। এটা আমাদের দেশের চিত্র্। সহমত ব্যক্ত করছি। তবে লিখে যান। একদিন না একদিন আপনার লেখা আপনার সাথে কথা বলবে। আপনার শ্রম আপনার সাথে বেঈমানী করবে না। তবে আমাদের অধিকাংশ লেখকই পরিশ্রম করতে চায় না। সবকিছুর উপরই একটা প্রশিক্ষণ থাকা ভাল্। নিজে যে কাজটাকে পছন্দ করছি সেই কাজটা সম্পর্কে অনেক খোঁজ খবর রাখার প্রয়োজন আছে। ইদানীং ছেলেরা মেয়েদের আঁচলের ছায়া থেকে বেরুতেই চায় না। গড্ডালিকা প্রবাহে সস্তা নাম কিনতে আগ্রহী। কিন্তু সুন্দরী, গুণবতী যতই বোরকার আড়ালে থাকুক না কেন তাকে সবাই চেনে। আর কুৎসিত যতই নগ্ন হোক না কেন তাকেও মানুষ সেই ভাবেই মূল্যায়ন করে। দেখুন এবার প্রিয়ার চাহনীর উপর লিখতে হবে। আসুন আমরা তাই লিখে আবার আঁচলের নীচে গিয়ে আলোর সন্ধান করি আর জ্ঞানী হই। আপনাকে ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
বশির আহমেদ প্রকাশকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য শুনার বিরম্ভনা সইতে পারবনা বলে তাদের সরনাপন্ন হই না । নিজের মত করে নিজে লিখে যাই আপনান সুখানুভুতির জন্যে । আপনার প্রকাশনার সাথে আমাকে যোগ করে নেবেন । ধন্যবাদ ।
বিন আরফান. এরূপ মতামত ই চাচ্ছিলাম. ইনশা-আল্লাহ পেনশনের সব টাকা ব্যয় করে হলেও প্রকাশনা সংস্থা দেব. আর আপনিও হবেন আমার সম মানের সদস্য. আমি সভাপতি বা এরূপ কিছুই পছন্দ করিনা. এতে কিছুই দীর্ঘস্থায়ী হয় না.
কামরুল হাছান মাসুক অাপনার সাথে অামি একমত। অামার এরকম হয়েছিল। গত বছর ২০১১ সালে অামার একটি অপ্রকাশিত উপন্যাস হুজরাখানা লেখা প্রকাশে জমা দিয়েছিলাম। তারা পুরস্কার হিসেবে অামাকে কিছু বই এবং সনদপত্র দেয়। পরে অামাকে বলে তাদের কাছ থেকে বইটি প্রকাশ করতে। অনেক ধার-দেনা চেষ্টা করার পর ১৫০০০টাকা যোগার করতে পারি নি। কি অার করা রকি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলাম প্রায় দের বছর হয়ে গেছে। এখনো একটি বই প্রকাশ করতে পারি নি। পান্ডলিপ ো ফেরত অানি নি। এখন কোন প্রকাশকের কাছে গেলে বলে টাকা অানেন বই প্রকাশ করি। পরে ত নাই, নবীন লেখক হলে ব্যাঙ নিয়ে যেমন ছোট ছেলেমেয়েরা হাসাহাসি করেছিল, ইট নিক্ষেপ করেছিল তেমনি ভাবে নবীন লেখকদের প্রকাশকরা এরকম করে। প্রকাশ করুক অার নাই করুক মুখে অনন্ত ভাল ব্যবহার করতে পারে।
বিন আরফান. আমিও কবি রকি সাহিত্য পুরুস্কার পাই পরে তা প্রত্যাখ্যান করি. tara আমার নিকট হতে ২০,০০০ টাকা চায়. চেষ্টায় আছি নিজেই একটি প্রকাশনা সংস্থা দেব সকলকে সাথে নিয়ে.
banolal singh ভালো লাগলো লেখাটি। নতুন লেখকের অনেক বাস্তক অজানা কথা ও দুঃখ স্থান পেয়েছে এখানে। লেখক হাল ছাড়ার পাত্র নন। আমি আশা করি তিনি জয়ী হবেন। তার জয় হওয়ারই কথা। ধন্যবাদ।
আহমেদ সাবের নবীন লেখকদের বিড়ম্বনা নতুন ঘটনা নয়। 'এ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। তবু আপনার উদ্যোগকে শুভেচ্ছা।
পন্ডিত মাহী সত্যি কথা বলেছেন... লিখেছেনও বেশ মজার করে...
Azaha Sultan মারাত্মক সব উপমা.......আমি তবে হুমায়ূন ও মিলন তেমন একটা পড়ি নি ভাই, দেখেন আমিও সাহিত্যিক হতে চলেছি! আমার উপর থুথুর পাহাড় পড়বে না ত? মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হয় কলম ভেঙে অস্ত্র ধরি--কম-সে-কম ঘৃণার পাত্র ত হওয়া যাবে......হাতাশা নয়, লেখতে থাকেন......তবে অন্যের মতো নয়--নিজের মতো........খুব ভাল লাগল.......

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

নভেম্বর ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i