ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুরুলিয়া জেলায় পাহাড়ের কোলে অবস্থিত অতি মনোরম একটি জায়গা -- " বাঘমুন্ডি "। শান্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই জায়গাটি। চারিদিকে তাকালে চোখে পড়ে অযোধ্যা আর জয়চন্ডি পাহাড়ের সবুজ বনাঞ্চল। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা। বাঘমুন্ডির কাছেই রয়েছে বামনী নদী। পূর্বে এই অঞ্চলটি ছিল বেশ দুর্গম। চারিদিকে নানা ধরনের গাছ , বিভিন্ন ধরনের পাখিদের কলরব। লোকবসতি ছিল খুবই কম। সেই সময় বসবাস কারিদের মধ্যে বেশিরভাগই সাঁওতাল , কোল , ভীল প্রভৃতি উপজাতি। এই সরল সাদাসিধে মানুষগুলির রাতের বেলায় মাদল বাজিয়ে গানের আর নাচের তালের আওয়াজ দুর থেকে শোনা যেত। সেই সময় এই জায়গাটি ছিল একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। প্রকৃতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া সারা গ্রামটি জুড়ে। ধীরে ধীরে লোকবসতি শুরু হতে থাকলো। ক্রমে গ্রামটি হয়ে উঠলো সাজানো গোছানো এক মনোরম আঁধা গ্রাম শহর। এই রকম এক সুন্দর শান্ত পরিবেশে অনেক কাল আগে থেকেই মহান্ত পরিবার এখানে বসবাস শুরু করেন।
অনেক বছর আগের কথা। অবিনাশ মহান্তর জন্ম এই বাঘমুন্ডিতে। ছোট বয়সের পড়াশুনা এই গ্রামের এক পাঠশালাতে। তারপর স্কুল , কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালযের সব পড়াশুনাই কলকাতাতে। কিন্তু মনটা পরে থাকতো সেই খোলা মেলা গ্রামের পরিবেশে। ছোট বেলা থেকেই অবিনাশ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। আর পাঁচজনের মতই পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করবার জন্যে বিভিন্ন প্রতিযোগীতা মুলুক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে লাগলেন। মেধাবী ছাত্র হওয়াতে একটা সময় চাকরি পেয়ে গেলেন " বিদেশী দূতাবাস " এর অফিসে। শুরু হলো এক নতুন আধুনিক জীবন।
চাকরির প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ , মানুষজন , তাঁদের শহরের আধুনিক জীবনযাত্রা আবার কখনো দেশগুলির প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন কিংবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রভৃতি দেখবার সুযোগ হলো। কিন্তু ছুটিতে নিজের দেশের জন্মভূমি এই গ্রামের বাড়িতে এলেই মনে হতো সব আনন্দ যেন এখানেই , এই নিজের দেশের মাটিতেই। জীবনের স্থিতি যেন এই সুন্দর গ্রামটিতেই বাঁধা পরে রয়েছে।
সময় থেমে থাকে না। সে তার নিয়মেই এগিয়ে যেতে থাকে। দেখতে দেখতে অনেকগুলি বছর পার হয়ে গেছে। সময়ের সাথে অবিনাশ মহান্তর নিজের পরিবারও অনেকটা বেড়ে গেছে। তাঁর দুই ছেলেই তাদের বাবার মতই ভদ্র , সভ্য আর তেমনি মেধাবী। দুজনেই এখন নামকরা ডাক্তার। দুজনেই সুপ্রতিষ্ঠিত। বড়ছেলে পরিবার নিয়ে আমেরিকায় আর ছোটছেলে পরিবার নিয়ে লন্ডনে থাকে। ছুটিতে ছেলেরা পরিবার নিয়ে বাবা , মার কাছে আসে। বাবা , মাও ছেলেদের কাছে ছুটি কাটাতে যান।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অবিনাশ মহান্তর চাকরি থেকে অবসরের দিন এসে গেল। চাকরি জীবনে বেশির ভাগ সময়টাই তাঁকে থাকতে হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন সব অত্যাধুনিক শহরগুলিতে। সাধারন ভাবে লোকেদের ধারনা , এর ফলে তাঁর জীবন যাত্রাও নিশ্চই অনেকটাই পাল্টে গেছে। তাঁর দুই ছেলের মতামত অবসরের পর বাকি দিনগুলি বাবা যেন মাকে নিয়ে পুরুলিয়ায় ওই আধা গ্রাম - শহরে না থেকে তাদের দুজনের কাছে এসে থাকে। দুই ছেলের থেকে তাঁর অবসরের পর তাদের কাছে থাকবার জন্য প্রস্তাব কিংবা আবদারের কথা শুনে তিনি বললেন - তোমাদের মন ভাবের কথা শুনে আমি আর তোমাদের মা খুবই খুশি হয়েছি। আগামীকাল তোমাদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করবো।
অবিনাশ মহান্ত তাঁর দুই ছেলেকে বললেন - তোমরাতো জানোই আমার জন্ম পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডি গ্রামে। ছোট বয়সের দিনগুলি আমি কাটিয়েছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড়ের কোলে এই সুন্দর গ্রামটিতে। সেই সোনালি দিনগুলির কথা এখনও আমার মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। চাকরির সূত্রে আমি পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে সর্ব সুবিধা প্রাপ্ত হয়ে দিনগুলি কাটিয়েছি। সত্যি কথাটা হলো আমার জন্ম ভিটের গ্রামটির কথা আমি কোনো দিনও ভুলতে পারিনি আর ভুলতেও পারব না। এই দেশের মাটিতে আমি এমন একটি আনন্দের অনুভূতি অনুভব করি যেটা তোমাদের বলে বোঝাতে পারবো না। এখনও আমার এই জন্মভূমির দেশের মাটির থেকে সেই বহু পূর্বের মতই আমার ছোটবেলা সময়ের এক অতি পরিচিত সুমধুর গন্ধের ঘ্রাণ পাই। মনে পড়ে আদিবাসী মহিলারা সারাদিন জঙ্গলে শুকনো গাছের পাতা কুড়িয়ে দিনের শেষে আপন মনে নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে লাল মাটির কাঁচা রাস্তা ধরে ঘরে ফেরা। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে রাখাল বালকদের মাঠে গরু চড়ানো। জিনিসপত্র বোঝাই করে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কাঁচা রাস্তা ধরে গরুর গাড়িগুলির বোঝাই মালপত্রের উপরে চালক বসে এক অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ করতে করতে গাড়িগুলি চালনা করা। এই মাটি , এই দেশ আর গ্রামের লোকজনদের নিঃস্বার্থ অন্তরের ভালোবাসা আমার এই দীর্ঘ জীবনে অন্য কোথাও পেলাম না। এখানকার স্থিতিশীলতা আমাকে যেভাবে জড়িয়ে রেখেছে সেটা আমি অন্য কোথায় গেলে পাব না।
আমাদেরকে নিয়ে তোমাদের চিন্তা ভাবনার কথা জানতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমার অবসরের পর তোমাদের জায়গায় থাকতে বলেছ এতে আমরা আনন্দিত হয়েছি। সময় সুযোগ মত তোমাদের কাছে আমরা নিশ্চই বেড়াতে যাবো। কিন্তু অবসরের পর আমার জন্ম ভিটে সেই বাঘমুন্ডি গ্রামেই পুরোপুরি স্থিতি হয়েই আমি আর তোমাদের মা আমাদের বাকি জীবনটা কাটাবো বলে মনস্থির করে ফেলেছি। তোমাদের মায়েরও সেটাই ইচ্ছে। তোমরা সবাই ভাল থেকো।
কবি - সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় --
..... মধুর চেয়েও আছে মধুর
সে এই আমার দেশের মাটি,
আমার দেশের পথের ধুলা
খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি। .....
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
মানুষের জন্মভূমি কিংবা মাতৃভূমির মাটির টানের আকর্ষণের মধ্যে এক অন্য ধরনের অনুভূতির আবেশ বিরাজ করে , সেই নিয়েই এই গল্পটি লিখবার চেষ্টা করেছি।
১২ আগষ্ট - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৪৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।