জনপ্রিয় পত্রিকা "দেশ" এ এ যাবত কালে অনেক জনপ্রিয়, অনেক নবীন কবি লিখেছেন। কেউ কেউ একটা ধারা তৈরী করেছেন। কেউ কেউ সেই ধারা ভেঙ্গে নতুন করে কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তাদের প্রত্যকের লেখার সাহিত্য মান প্রশ্নাতীত। সে "দেশ" পত্রিকার (১৯৮৩-২০০৭) এর একটি সংকলন এখন আমি পড়ছি। আর ইচ্ছে হলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি সেগুলো। পর্যায়ক্রমে বেশ কিছু ভালো লেখা নিয়মিত এখানে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো। এটি শুধুমাত্র এখানের কবিদের কিছু জানার উদ্দেশ্যেই প্রকাশ করা হচ্ছে।
সূর্য-ডোবা দেখতে গিয়ে
অনিতা অগ্নিহোত্রী
সেই মেয়েটি গেছে সিঁথির মোড়ে
সূর্য-ডোবা দেখতে গিয়ে। সেই মেয়েটি
ক্রন্দসী-তীর ছাড়িয়ে গেছে মেঘান্তরে।
ঘাসের ঘুঙ্গুর লোটায় পায়ের। রুপোর কাঠি
শিয়র বাগে। কে আর তাকে মধ্যরাতে
জাগায়, সে তো ছাপিয়ে গেছে এই সময়ের
দ্বন্দ্ব-দোলন। বনের দু'হাত জ্যোৎস্না-পাতে
পিছল, তাকে ডাকতে পিছু শঙ্কা পথের।
মা সেধেছে। পা ধুবি আয়, বাবা সাঁকোর
কাছেই ছিলো, হাত ধরবে। ভাই জানলায়
দাঁড়িয়ে ভাবে, গল্প বাকি। বোনটি তো ওর
এলই না আর; শিহর ওঠে রাত-ইঁদারায়।
নৈঋতে চুল শুকাচ্ছিল লাল-রঙ্গা রোদ,
ঝাপটে ছিল পাখা কিছু উদ্বাহু গাছ;
দিক হারানোর ঝঞ্ঝাবায়ে ও কোন অবোধ
ছাড়িয়ে গেল আকাশ রোদের আনাচ-কানাচ,
সূর্য-ডোবা দেখতে গিয়ে রাতের তোড়ে
সেই মেয়েটি তলিয়ে গেছে সিঁথির মোড়ে।।
বর্ষ ৬১ সংখ্যা ২৪ । ৭ আশ্বিন ১৪০১ । ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪
মেঘদুত
অংশুমান কর
একে বিরহ বলব না?
এই যে তুমি মাইল মাইল দূরে চলে গেছ
এই যে তোমার হালকা ওডিকোলনের গন্ধ
সমুদ্রের ওই পারে বিশ্রাম নিচ্ছে--
একে?
তবে শোনো; শান্ত মেঘের মতো এক জ্বর
তার ডালপালা
আমাকে ছাপিয়ে রেখেছে
আমি ক্রিকেট বলের মতো
এই ব্যাট থেকে ওই ব্যাট
এই হাত থেকে ওই হাত
উড়ে উড়ে সেলাই ফাটিয়ে ফেলেছি
আমার ত্বক, তার নীল হয়ে আসা শিরা
ছিঁড়ে ছিড়ে তোমার নাম ছিটকে উঠেছে বারান্দাময়
দেখো; রোদ্দুর কীরকম ম্লান হ'য়ে গেছে
আর তুণ গুছিয়ে অর্জুনও ফিরে আসছেন ঘরে...
... ভাসতে থাকা অল্প মেঘ। লক্ষী সোনা আমার, বলো
একে বিরহ বলব না, একেও?
বর্ষ ৬৪ সংখ্যা ১৩ । ২০ বৈশাখ ১৪০৪ । ৩ মে ১৯৯৭
তোমাদের তারামৈত্রী হয়ে যাক
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
খুব ভোরের দিকেই ডাকহরকরা হয়ে বেরিয়ে পড়ো, চিঠি না থাকলেও কিছু
যায় আসে না।
মাদার তেরেসার তন্বী ভিক্ষুনীরাও তো সুস্নিগ্ধ আক্রোধে ঐ সময়
নিখিলভুবনের দিকে
বেরিয়ে পড়ে, তাদের শাদা শাড়ির স্নেহনীল জমিন তা বলে কি আকাশের
সঙ্গে
মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় না?
যুক্তি ও প্রতিযুক্তির দরকার নেই। যখনই ডায়মন্ড হারবারে কবিসম্মেলনের
সময় স্থির হয়েছে কাকদ্বীপ থেকে উড়ে-আসা জলচ্যুত প্রতিটি স্নাইপের
ডানায় আজকের তারিখের ছাপ মেরে দাও
তোমারই ঝোলার মধ্যে দাকঘর, আজ এইখানে
পরশু বুঝি অন্যতর পরগনার
কোথায় তোমার চিঠি বিলি হবে সে কথা জানে না পাখিরাও
জয়শ্রী বোস্টুমি সেজে এসেছিল। পোস্ট গ্রাজুয়েট সেরে
প্রতিনাগরিকতার চোরা টানে। সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে
শেষ পাঠ না চুকিয়ে তার এই গ্রামবাংলায়
ফিরে আশা
তুমি তাকে একবার সহ-ডাকহরকরারদের দলে গন্য করো,
তোমাদের তারামৈত্রী হোক।
না, সুমন্ত, সে তোমার পদবী চায় বা, সে নিজেই স্বপর্যাপ্ত
তাকে পেলে তোমার ডাকঘর চলবে ভুবনে ভুবনে
মাঝে মাঝে এমন-কী ভোরের বেলায় ঘুম পেলে
তাকে তুমি বদলি-খেলোয়াড় করে ছেড়ে দিতে পারো
সে নিজেই চিঠি লিখবে বিলি করবে গ্রামে ও শহরে।
বর্ষ ৫৪ সংখ্যা ২৩ । ২০ চৈত্র ১৩৯৩ । ৪ এপ্রিল ১৯৮৭
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।