
প্রায় দেখা যায় আলসেমি কিংবা অবহেলা করে আমরা ঠিক সময়ে ঠিক কাজটা করে উঠতে পারি না। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার একটা আলাদা দাম আছে_ কারণ, ‘টাইম ইজ মানি’। তাগাদাা থাকে ‘শুভস্য শিঘ্রম’। তাই শুধু ভালো কাজ নয়, সময়মতো ভালো কাজ করা প্রয়োজন।
বিলম্বের আবর্তনে জীবন
যে কোনও কাজে আত্মতৃপ্তি একটা বড় ব্যাপার। জীবনের চলার পথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেলফ মোটিভেটেড হয়েও অনেক সময়ই জীবনের কাজের ছন্দকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে বিলম্বিত করে ফেলি। কত শত প্রতিজ্ঞা হয়ে গেল ‘আগামীকাল থেকে টাইম ওয়েস্ট’ করবো না। কিন্তু সেই ‘আগামীকাল’ আর আসেনা। সেই চিরাচরিতচিত্র ‘আজ’ ‘কাল’ করে যাচ্ছে জীবন।
আমরা কি ‘লেট লতিফ’?
একটু করে চিন্তা করে দেখলে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাই_ ইন্টারনাল টাইম ওয়েস্টার। অ্যাসাইনমেন্টটা ঠিক সময়েই হাতে এসেছিল, একটা ডেডলাইনও ছিল, কোন আসমানি জমিনি বলামুসিব্বত আসেনি, কিন্তু তবুও সময় মতো কাজটা শেষ হয়নি। ফলে আবার ডেডলাইন ওভার, একরাশ হতাশা আর আবার ফেলিওর-এর মুখোমুখি। এই তো চলছে, কিন্তু তবু ‘ইগো সাহেব’একথা মানতে নারাজ। সে উর্বরমস্তিষ্ক দিয়ে ভাবাবেই দোষটা অন্য কারোরই। শুরু হয়ে যায় ‘স্কেপ গোটিং’ বা একে অন্য কে দোষারোপ করা। এই ধরনের তর্ক বিতর্ক থেকে শেষমেশ আসলে সেই নেগেটিভিটিই উঠে আসে আর তাতে পুনরায় স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশন ছাড়া আর নতুন কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না।
যে কারণে বিলম্বিত লয়
ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্ন রকম হতে পারা। যেমন:
● অ্যাসাইনমেন্টটা পছন্দের নয়।
● একার পক্ষে পুরো অ্যাসাইনমেন্টটা সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়।
● সিনিয়র, কলিগ বা সাবঅর্ডিনেটরা সহযোগিতা করে না।
● ‘হান্ড্রেট পারসেন্ট পারফেকশনিস্ট ’ বলে অ্যাসাইনমেন্টটাকে যথাসম্ভব ভালোভাবে তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে।
● নিজস্ব ক্ষমতা সম্পর্কে যথেষ্ট কনফিডেন্ট ছিল না, তাই একটু ইমপালসিভ হয়েই দায়িত্বটা কাঁধে নিয়ে পস্তাতে হচ্ছে।
● যে কোনও নতুন বা অজানা অচেনা কাজে হাত দিতে প্রাথমিক ভাবে একটা ভয় কাজ করা।
● কম্পিটিশনের বাজারে ‘শো অফ’ করে বেশি পরিশ্রম করছি দেখাতে গিয়েই ধরা। কিন্তু সমস্যা হল, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কারণ বিভিন্ন হলেও ময়নাতদন্তের ফলাফল কিন্তু সেই একটাই আর তা হল ‘বিলম্বিত লয়...’
মুক্তির পথ
এক্ষেত্রে সব থেকে প্রয়োজনীয় হল অন্যকে দোষারোপ না করে নিজেকে প্রশ্ন করা। যাকে আমরা বলি অন্তর্দর্শন। খুঁজে বার করা যে ঠিক কোন কোন কারণগুলির জন্য আমার এই আলসতাজনিত দেরি। নিজের ভুল স্বীকার করাটাও একটা মহৎ গুণের মধ্যেই পড়ে। আর নিজেকে শোধরাতে পারলে সেলফ এস্টিম বাড়বে।
স্লিসিং টেকনিক: যে কোনও অ্যাসাইনমেন্টকে ছোট ছোট পর্বে ভাগ করে নিয়ে প্রত্যেকটি ভাগের জন্য একটি নির্দিষ্ট টাইম স্লটে ভাগ করে সম্পূর্ণ করা। এতে অনেক সংশোধনের জন্য অনেক সময় পাওয়া যায়।
ব্যালেন্সিং এসপেক্ট টেকনিক: অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শুরু করার আগে তার একটি সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করা যাতে বোঝা যায় যে, যে কাজটিতে হাত দিয়ে চলেছি তার নানা ‘পজিটিভ অ্যান্ড নেগেটিভ অ্যাসপেক্ট’ গুলো কী কী হতে পারে। সেই লিস্ট অনুযায়ী এগোলে ভুলভ্রান্তি কম হয় আর ‘সাকসেস রেট’ও বাড়ে।
ইনসেনটিভ টেকনিক: নিজেকেই নিজে রিওয়ার্ড দেওয়া। এক্ষেত্রে মোটিভেশন ধরে রাখার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে নির্বাচন করা যে রিওয়ার্ড ‘এপিসোডিক ’ হবে না ‘এন্ড বেসড’ হবে। আর ইনসেনটিভ বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও যার যা ভালো লাগে তাই সিলেক্ট করা যেতে পারে, সেক্ষেত্রে একটি চকোলেট খাওয়া থেকে শুরু করে আরও একটি নতুন একটি অ্যাসাইনমেন্টের রেসপনসিপিবিটি ঘাড়ে নেওয়াও হতে পারে।
গ্রুপ টেকনিক: বিশেষভাবে পারদর্শী বা সমমনস্ক মানুষদের মধ্যে কাজটা ভাগ করে নেওয়া। এ ক্ষেত্রে কাজের রেজাল্টের গুণগত তারতম্যের সাথে একটা অ্যাডজাস্টমেন্টের প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে তাই সঠিক দক্ষ রিসোর্স খুঁজে বের করাটাও একটা এমার্জেন্সি ডিসিশন মেকিং।
এই বিষয়গুলো ঠিকমত রপ্ত করতে পারলে ‘স্যরি ফর লেট’ তারপর কারণদর্শানো এই বিড়ম্বনা থেকে অবশ্যই মিলবে মুক্তি। সুতরাং আর বিলম্ব নয় ...।