হাতে সময় খুব কম। কারও মাধ্যমিকের প্রস্তুতি। কারও আবার সেমিস্টার ড্রপ হওয়ার রিক্স। কিন্তু শান্তিতে পড়াশোনার জো আছে? বাড়িতে যে হামেশাই খিটমিট। মা-বাবা যে বাড়িটাকে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে রেখেছে। এ অবস্থায় কী করে পড়ায় বসবে মন!
টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে, আশানুরূপ ফল আসেনি। ঠিক করেছিল দিনে কম করে ১৪-১৫ ঘণ্টা টানতেই হবে। ছিটকিনি লাগিয়ে একমনে নোট, সাজেশানসে মুখ গুঁজে ক’দিন বেশ ভালোই চলল পরীক্ষার প্রস্তুতি। ইচ্ছে ছিল এই রুটিনটা পরীক্ষা অবধি চালিয়ে যাওয়ার। কোনও কমতি ছিল না সংকল্পে। তবে ব্যাঘাতটা ঘটতে লাগল মনঃসংযোগে। অংকগুলো আর কিছুতেই মন দিয়ে করা হয় না। টেস্টপেপার আর গ্রামার বইয়ের পাতাগুলো খোলাই থাকে। খাতায় একবিন্দুও আঁচড় কাটতে পারে না কলমটা। সেই চনমনে মন আর নেই। সারা বাড়িতে কেমন যেন একটা থমথমে ভাব। না চাইতেই কাটাফল, চা, কফি, দুধ সবই চলে আসছে পড়ার টেবিলে। মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। বাবা বলেছেন প্রয়োজনে আরও একটা টিউশনও দেবেন। তবু প্রশমিত হয় না চাপা ক্ষোভ। সবাই নিজের ইগো নিয়েই ব্যস্ত। কেউ একবার ভাবছেও না যে পরীক্ষার্থী ছেলেটার ওপর দিয়ে কী যাচ্ছে! গড়পড়তা বাঙালির জীবনে দাম্পত্য কলহ নতুন কিছু নয়। হানিমুন পিরিয়ডটা যতটা ক্ষণস্থায়ী, ‘দা-কুমড়ো’-টা ততটাই দীর্ঘ। তরকারিতে লবণ কম থেকে নাক ডাকা _ এজেন্ডার টেম্পলেট রেডি করাই আছে। দু’জনের কোনও একজন উদ্যোগী হলেই শুরু হল লঙ্কাকাণ্ড! কারও মাথাতেই আসে না যে, এইসব তুচ্ছ ব্যাপারে ম্যারাথন ঝগড়াঝাঁটি বাড়ির ছেলেমেয়েগুলোর ওপর কী বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাওয়া মন প্রথমটায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। কিছুতেই কিছু মেলাতে পারে না। শুধু একটাই প্রশ্ন মনটাকে কুরে কুরে খায়_ কেন মা-বাবা আজকাল কথায় কথায় ঝগড়া বাধায়? বড়রা যতই বলুক ‘যাও নিজের রুমে গিয়ে পড়াশোনা করো’, নীরব-নির্বিকার থাকাও সম্ভব নয়। বাড়ির সমস্যা তো নিজেরই সমস্যা। মা-বাবার মধ্যে রাতদিন পানিপথ, বক্সার চলবে। আর পাশের ঘরে ছেলে বা মেয়ে এক চিত্তে ‘কপোতাক্ষ নদ’ মুখস্থ করবে, তা সম্ভব নয়। মন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে পড়ায় কেন, খেলাতেও মনঃসংযোগ করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই সময়গুলোতে ছেলেমেয়ের মস্তিষ্ক থেকে কর্টিসল নামক হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। ফলে স্মৃতিশক্তি ব্যাহত হয়। এত মুখস্থ করার চেষ্টা করেও খুব কমই মনে থাকে। প্রভাব পড়ে বাহ্যিক আচরণেও। কথা বলতে বলতে একটুতেই উত্তেজিত হয়ে পড়া। অথচ মোটেই এমন খিটমিটে স্বভাবের ছিল না। সবার সঙ্গে হাসিমুখেই কথা বলত, যথেষ্ট বিনয়ীও ছিল। তবে কি পড়াশোনা, আচার-ব্যবহার সব গোল্লায় যাবে, এমন একটা কারণে যার জন্য তুমি কোনোভাবেই দায়ী নয়?
কখনই নয়। এখন তোমার উচিত বিষয়টাকে অন্যভাবে দেখা। যে সমস্যা তোমার জন্য তৈরি হয়নি সেটা নিয়ে দিনরাত ভেবে ভেবে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটানোর কোনও মানে হয় না। যেহেতু নিজের বাড়ি, নিজেরই মা-বাবা, তাই টেনশন আসাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটাই যদি দিনরাত চিন্তা-চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রাখে তবে আদতে ক্ষতি তোমারই। সরাসরি মা-বাবাকে বুঝিয়ে দেয়া যে, ঝগড়া-ঝাটির মধ্যে তোমার পড়াশোনার কতটা ক্ষতি হচ্ছে। কেসস্টাডি দেখাও বাড়িতে অশান্তির জন্য কত মেধাবীর করুণ পরিণতি হয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে তো তোমার পড়াশোনা, আচার-ব্যবহার_ সবকিছুই উচ্ছন্নে যাবে। এতে কাজ হলে ভালো। না হলে মনকে বলো_ চারপাশে তো কত সমস্যাই আছে। একটা আমাদের বাড়িতেও আছে। সেটা নিয়ে ভেবে ভেবে সময় ব্যয় করা তো আখেরে নিজেরই ক্ষতি। আবার ছিটকিনি লাগাও। অনেক পড়া বাকি আছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।