বড় কবি, নামী কবিদের মধ্যে অনেকেই আমার প্রিয়। তাঁরা শুধু একা আমার নন অনেকেরই প্রিয়- সবাই তাঁদের লেখার সাথে পরিচিত। কিন্তু এইসব প্রিয় কবি, প্রিয় মুখের বাইরেও এমন সব কবিরা আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছেন, ছড়িয়ে থাকেন যাদের আমরা চিনি না। তাঁরা প্রকাশিত নন। তাদের কোন বই নেই, প্রকাশনা নেই। একটি মোডেম, একটি কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষীণ ছিদ্রপথ দিয়ে মাঝে মাঝে তাঁরা উঁকি দিয়ে যান, নিজেকে মেলে ধরেন আমাদের মননের দরজায়, মুগ্ধতার বিন্দুতে। আমার এমন এক প্রিয় কবি "বিনয়ভূষণ মিত্র"। অসম্ভব ভার্সাটাইল হাত, সব্যসাচী। সব ধরনের লেখায় সমান চলে, হোক সে বিবিধ ধরনের গল্প কিংবা বিচিত্র ধারার কবিতা। ছন্দে অসম্ভব রকম তীক্ষ্ণ, হোক সে চেনা বৃত্তে অথবা একেবারেই মুক্তক ছন্দে। অন্ত্যমিলে তুখোড় একটা হাত। কত বিচিত্র ধারার অন্ত্যমিলে যে লেখেন। আর আগেই বলেছি লেখাগুলো বিচিত্রমুখী। কখনো জলের মত সরল, কখনো কাফকার মত ধূয়াসায় আবৃত, কখনো দুইয়ের সমন্বয়। পরিচিত হয়েছিলাম স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে। আসলে প্রতিদিন একটা সাইটে লিখতে লিখতে পরিচয়ের বীজ এমনিতেই বুনে ফেলেছিলাম। ষাটের কাছাকাছি বয়সের একজন মানুষ। অবাক হলাম- লেখা ভরা তার তুমুল তারুণ্য। সরাসরি পরিচিত হবার আগে তাঁর বয়সের ব্যাপারটা বুঝতেই পারিনি।
এখানে আজ তাঁর একটা কবিতা দিলাম যা পড়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
কফি হাউস-দুই
বিনয়ভূষণ মিত্র
একপাশে বসেছেন প্রাজ্ঞ দলপতি
দশটি পাথরে মাপা রত্নগর্ভা ভাগ্যটুকু বসে আছে দুহাতে আঙুলে
প্যাসিভ স্মোকিং তাঁর অ্যাজমার ক্ষতি করছে জেনে তবু তিনি
বাধ্য ঋজু বসেছেন ধোঁয়ার সাগরে,
ডান হাতে ইনহেলার বিশল্যকরণী
ডিম ভেঙে সদ্য ফোটা চার ফর্মা কবিতার ছানা
ওড়াউড়ি করছে খুব ভক্ত করতলে
নার্ভাস তরুণী কবি দু’ঘন্টায় নয়খানা সিগারেট ফুঁকে
প্রত্যেক শেষাংশগুলি বিলোলেন অর্থহীন শব্দশিকারিকে
ডায়রির ভাঁজ থেকে উঁকি মারল নবজাতকেরা
এর মাঝে তাড়া খেয়ে দু’দুবার কালো সাদা
শর্করার মাত্রা মাপা কফি ... এলো উদ্ভিজ্জ পকোড়া
এই কোলাজের মধ্যে আমি কই?
গডফাদারের বাঁ কাঁধের পেছনে চেয়ারে ওই যে সামান্য আবছা
অর্ধেক মুখ ঢাকা বোকা বোকা সংশয়ের চোখ ...
কেন আসা নিজেই জানিনা ... বসে আছি প্রসাদের দুরূহ আশায় ...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।