অনেক কথা ২১

Azaha Sultan
০৫ আগষ্ট,২০১৭

ইসলাম ও শান্তি-
শান্তিথেকে শ্রেষ্ঠ কিছু নেই এবং নেই কোন সুখসমৃদ্ধি--সুখের চেয়ে শান্তি বড়। তদ্রূপ ইনসানিত থেকে বড় কিছু নেই--নাই কোন ধর্ম। অতএব ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়।

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ নাম এবং পরিপূর্ণ জীবনবিধান। আর এই-ই পরিপূর্ণ নাম ও জীবনবিধানের মর্যাদা আজ ক্ষুণ্ন করতে নেমেছে কিছু সংখ্যক উগ্রকর্মী এবং উগ্রপন্থী! তারা কি বুঝে না? নিশ্চয় বুঝে। না বুঝে কেউ কখনো আগুনে হাত দেয় না এবং কাঁটায় পা রাখে না। তা হলে? কিছু লোকের আদত ভালকে মন্দ করা আর কিছু লোকের আদত একে অপরে দ্বন্দ্ব বাধিয়ে দেওয়া এবং কিছু লোকের আদত পায়ে পা রেখে নিজেই ঝগড়া বাধা। সবকিছু বদলানো যায় তবে মানুষের আদত বদলানো যায় না। মানুষ অভ্যাসের দাস। স্বভাবে যারা পরিশুদ্ধ তারা বুঝেও বুঝে না!

‘ইসলাম’ অর্থ শান্তি ‘ধর্ম’ অর্থ পথ, ইসলামধর্ম ‘শান্তির পথ’। মূল হতে ‘মৌলিক’ অর্থ অনার্য-অকুলীন, মৌলিক হতে মৌলের উৎপত্তি। সম্ভবত অনার্যদের হাতে ইসলাম লাঞ্ছিত আজ? মৌলিকতার হাতে ইসলাম মূলোচ্ছেদ হতে পারে একদিন? কারণ, পুষ্প যেরূপ কলিথেকে সম্প্রসারিত হয়ে আবার সঙ্কোচিত হয় তদ্রূপ ইসলামও একদিন সঙ্কোচিত হবে! মুসলিম শরিফের হাদিস “ইমান শেষ পর্যন্ত মদিনায় এমনভাবে গুটিয়ে আসবে সাপ যেমন তার গর্তের ভিতরে গুটিয়ে আসে।” শেষ জমানায় হয়ত এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, তারা উপরে ইসলামের দরদ দেখাবে ঠিক কিন্তু অন্তরে থাকবে ইসলামের ক্ষতি।

যে নবি অনেক ত্যাগতিতিক্ষা ও কষ্টের বিনিময়ে সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, সে নবি নিজজাতির কাছে কী চেয়েছিলেন? টাকাপয়সা? সোনাচাঁদি? অমূল্য সম্পদ? কিছুই ত চাননি, মৌলিক অধিকারটুকু ছাড়া। বিনিময়ে কী পেয়েছিলেন? লাঞ্ছনাগঞ্জনা ছাড়া! আজ তাদের অনুসারীরা কি পৃথিবীতে নেই? নিশ্চয় আছে। তা হলে? সবচেয়ে বড় কথা জানি, যাঁরা ধার্মিক হবে তাঁরা শান্তি ছড়াবে, অন্যকে সান্ত্বনা দেবে ও সরলতার পথ দেখাবে এবং তাঁরাই সব সময় শান্তির উদ্দেশ্যে সরলপথ ধরে চলবে। কিন্তু দুঃখের কথা এই, মানুষের চেয়ে যাঁরা সঙ্ঘ ও দলমত বড় মনে করে তাঁরা শান্তি বা সরলতার পথ ধরে চলবে কিভাবে? ধর্মান্ধার মন কখনো প্রসন্নতা লাভ করে না। যেসত্য প্রচারের জন্যে প্রাণপ্রিয় নবিকে কত দুঃখকষ্ট-অপমান-আঘাত সহ্য করতে হয়েছিল, সেসত্যের ধর্ম আজ কলঙ্কিত--অশান্তির বিরাট নাম--সন্ত্রাসী! তবে, ইসলাম পৃথিবীতে শান্তি কায়েম করতে এসেছিল--অশান্তি বা ধ্বংসের যজ্ঞ নয়। আজ যারা ইসলামের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তারা প্রকৃত মুসলমান নয়। শান্তির মহাতাপস মহানবিকে যারা একদিন অশান্তি মনে করে হত্যার প্রচেষ্টায় ওতপেতে ছিল; দুঃখের কথা এই যে, আজ তাদেরই বংশধরেরা ইসলামকে মূলোচ্ছেদ করতে নেমেছে!

শান্তির দূত, সুন্দরের প্রতিষ্ঠাতা, ন্যায়ের কর্তা মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ্ (স) অত্যাচারের প্রতিশোধ নেবে এবং স্বজাতির প্রতি এতটুকু অন্যায় অবিচার করবে থাক, কখনো বদ্দোয়া পর্যন্ত কামনা করেননি! এমন আদর্শবান মানুষ কে? মানুষের জন্যে ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। আজ যেখানেই দেখি, স্বার্থের লক্ষ্যে ধর্মের ব্যবহার! সত্যিই ইসলামের বড় দুর্দিন আজ।

ইসলাম (লা-শরিক) একক ঘোষণার নাম। শান্তি ও সৌন্দর্য ইসলামের আবরণ। সত্য ও সততা ইসলামের সরলপথ। নামাজ রোজা হজ যাকাত ইসলামের এবাদত। ইসলাম সংঘাত চায় না--চায় শান্তি, চায় সৌহার্দ, চায় ভ্রাতৃত্ব। রক্ত দিয়ে হোলিখেলা ইসলামের স্বভাব নয়। তবে, কোন্ চাঁদোয়া তুমি? ইসলাম তোমার ছায়া চাচ্ছে! কোন্ রক্ষক তুমি? ইসলামকে রক্ষা করার জন্যে লড়ছ! কোন্ সত্যপির তুমি? সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে জেহাদবাণী শোনাচ্ছ! কোন্ মহাত্মা তুমি? শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেমেছ! ইসলাম করুণা চায় না--করুণা করে। কোরআন হাদিস ইজমা কিয়াসে আদিষ্ট এক বিরাট আদর্শের নাম ‘ইসলাম’। ইসলামের প্রচারক মুহাম্মদ (স) এবং প্রসারক একমাত্র আল্লাহ্। সুতরাং ইসলামকে রক্ষা করে আসছে আল্লাহ্ এবং রক্ষা করবেই আল্লাহ্। তা হলে? এক আল্লাহ্র তামাম দুনিয়ায়, এক নবির আদর্শে এক ইসলাম চলুক। বার হাজার দল গড়ে, বারশ রাজ্যের দোহাই দিয়ে ‘জেহাদ’ ‘জেহাদ’ সবলে হাঙ্গামা কাড়া করে প্রাণ বিসর্জন দিলে শহিদ হওয়া যায় না; প্রকৃত শহিদ তাঁরা, যাঁরা দেশ ও দশের উপকারে এবং সত্য ও শান্তির লক্ষ্যে আল্লাহ্র পথে প্রাণ দেয়, স্বার্থের জন্যে নয়।

হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ ইহুদ খ্রিস্টান শিখ শিয়া জৈন--প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরা মনে করে নিজ নিজ ধর্ম বড় এবং নিজ নিজ কর্ম বড়--সঠিক পথে সকলে আছে এবং সঠিক এবাদত সকলে করছে। কিন্তু না, অনেক বিচারবিশ্লেষণে দেখা গেছে যাঁরাই সঠিক দাবি বেশি করছে আসলে তাঁরাই বেশি ভুল প্রমাণিত হয়েছে! সবাই ও সবকিছু ত আর সঠিক হতে পারে না। পারে কি? তবে হাঁ, স্রষ্টার এবাদত যেকোনভাবে করা যায়। এটা জরুরি নয় যে, কিভাবে করলাম ‘শুদ্ধ কি গলদ’ একমাত্র নিয়তই আসল। এখানে ইসলাম একটু স্বাতন্ত্র্য বটে--জিবরাইল (আ) (স্বর্গীয় দূত) মারফতে নবি মুহাম্মদ (স) মুসলিমজাহানকে একটা শিক্ষা দিয়ে গেছেন বিধায় ইসলামের একটা নিয়মনীতি হয়েছে। হতে পারে, এভাবে প্রত্যেক ধর্মের মহাপুরুষগণ এক-একটা পদ্ধতি দাঁড় করে গেছেন বলে সেটা তাঁদের রীতিরেওয়াজ হয়েছে। তা হলে ‘আমরাই সঠিক’ কে বলে? একমাত্র আল্লাহ্য় ভাল জানে শ্রেষ্ঠ কে এবং সঠিক কর্ম কারাই করছে।

মানুষ হোক অথবা অমানুষ প্রত্যেক কিছুরই একটা ধর্ম আছে, ধারা আছে, ন্যায় আছে, নীতি আছে। স্রষ্টা ভাগ্যলিপি লিখেন তবে কোন সৃষ্টির কপালে চিহ্ন এঁকে দেন না যে, তুমি এ ধর্মের অনুসারী। বিশেষ করে মানুষ যা ভাল মনে করছে সেটাই তার ধর্ম হয়েছে। বাতাসবায়ু সাগরনদী ফুলফল পশুপাখি যে যার ধর্মমতে চলছে এবং আবহমানকাল ধরে তাদের এধারা অপরিবর্তনশীল হয়ে অপ্রতিহত আছে। কিন্তু, মানুষের ধর্ম যুগেযুগে ব্যাহত হচ্ছে আর সংঘাত ঘটিয়ে আসছে। মানুষ ধর্মকে বড় দেখিয়ে ভুলে যাচ্ছে মনুষ্যত্ব এবং প্রতিটি মুহূর্তে হত্যা করে চলছে মানবতার। তাদেরকে মানুষ ত বলা যায় তবে প্রকৃত ধার্মিক বলা যায় না। প্রত্যেকটা ধর্ম শান্তির কথা বলে, সততার কথা বলে, মানুষের কথা বলে এবং মনুষ্যত্বের কথা বলে। ধর্ম প্রত্যেক ধার্মিকের প্রাণ। ধর্মের অশান্তি মানে প্রত্যেক ধার্মিকের অশান্তি। ধর্মকে আঘাত করা মানে প্রত্যেক ধার্মিককে আঘাত করা। প্রায়ই ধর্মের ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, ধর্ম নিয়ে মানুষ কমবেশি বাড়াবাড়ি করেননি এবং মানুষের রক্ত পৃথিবীতে কমবেশি ঝরেনি। আজ জঙ্গি-জেহাদি-সন্ত্রাসী বলে ইসলামকে খাটো করে দেখা হচ্ছে! কেন? কী দোষে? কোন্ অপরাধে আজ আফগান, ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়া, ফিলিস্তেন, বশনিয়া--সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে? বার দিনের শিশুথেকে আরম্ভ করে বার বছরের কিশোর-কিশোরী পর্যন্ত কেউ হত্যা হতে বাদ পড়েনি! এ নিষ্পাপ সন্তানগুলোর কী দোষ ছিল? আবালবৃদ্ধবণিতা--এমন কোন স্ত্রীলোক নেই ধর্ষণ হয়নি! হত্যা হয়নি! এ অবলা নারীদের কী অপরাধ? বাবরিকে ঘিরে হিন্দু-মুসলিমের এত দাঙ্গার কারণ কী? মন্দির যদি আরাধনালয় হয়, মসজিদ কি তা হলে খোদার ঘর নয়? কার দোষে আজ ধর্ম বিতর্কিত? নিশ্চয় আমাদের মতো কিছু উগ্র অনুসারীর মুদ্রাদোষে? তবে, কর্মাকে ছেড়ে ধর্মকে কেন দোষারোপ? ধর্মকে কেন কটাক্ষ? ইসলাম মহান একটি ধর্ম। (লা-ইলাহা) সাক্ষ্য প্রদান নামাজ রোজা হজ যাকাত পাঁচ স্তম্ভে প্রতিষ্ঠিত ইসলাম। নম্রতা-সততা-শান্তি-উদারতা-আখলাকে একজন মুসলিমের পরিচয়। আর এই-ই শান্তির মহানধর্ম কেন অশান্তির তকমা নেবে? ভালমন্দ বিচার করার বিবেক সবার আছে। অধর্মীকে চিহ্নিত করতে হবে, যাদের কাছে ধর্ম একটা মুখোশ। তারা ধার্মিকতা দেখাবে ঠিক অথচ কাজ করবে অধার্মিক!
চলবে...

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

অক্টোবর ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i