ভালবাসা ও ঘৃণা--
* চট করে রেখে যাওয়া ভাল না তবে চট করে দুর্বল হওয়াও মারাত্মক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আত্মগৌরব ধরে রাখা সম্মানের আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া গৌরবের। ঘৃণায় সকল অপরাধের উৎস এবং ঘৃণায় সবকিছু ধ্বংস। অতএব ঘৃণার কাছে কোনকিছু উচ্চ নয় এবং ভালবাসার কাছে কোনকিছু তুচ্ছ নয়। আমি একটি ভালবাসার স্থান পাইনি বলে মোটেও অসুখী না; কিন্তু এই বলে দুঃখিত হাঁ, আমি একটি শান্তির আশ্রয় এবং অহিংস পরিবেশ পাইনি। তবে কারও প্রতি দুঃখ নেই, অভিযোগ নেই; দুঃখ সব নিজের প্রতি এবং অভিযোগ নিজের করোটির প্রতি।
আমি মানুষ সৃষ্টির সেরা--শোকরিয়া...কত যে মহান কথা। কিন্তু, আমার অন্তরে কী গুজরে জানে আমার অন্তর্যামী। তবে এই আমি ভাব করছি অন্তরের বিরাট অধিকারী! না, ভুলে যাওয়া একদম ঠিক না--এখানে কেউ চিরদিন থেকে যেতে পারে না। যতই প্রতিষ্ঠিত আর বিখ্যাত হবে, যতই রাজত্ব কায়েম করবেনা কেন, স্থায়ী হওয়া যাবে না। খালি হাতেই যখন আসা, খালি হাতেই আবার চলে যেতে হবে। তবে? এই যে পাওয়া-না-পাওয়ার এবং আনন্দ-বেদনার মধ্যে কিছু সময় এটাই ত প্রতিষ্ঠার জিন্দেগি। এ জিন্দেগিকে অমর করবে তোমার কর্ম এবং বিনাশ করবে তোমার কর্ম।
ঘৃণা করা সহজ কিন্তু ভালবাসা কঠিন। দুনিয়াটা ঘৃণায় পড়ে না থাকলেও তবে ভালবাসায় জড়াজড়ি করেও নেই। আলোর পাশাপাশি আঁধার থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আঁধারের সঙ্গে আলোর কোন সংযোগ থাকবে এটা অস্বাভাবিক। স্বভাব এবং স্বাভাবিক এক নয়। স্বভাবে কেউ মজবুর হতে পারে কিন্তু স্বাভাবিকভাবে কমজোর হওয়া ঠিক না। কৃপণতা এমন এক জিনিস যা স্বভাব নষ্ট করে এবং স্বাভাবিকতা অতিক্রম করে। তাই কৃপণতাকে এড়িয়ে চলা ভাল। যারা অন্যের পকেটে চেয়ে থাকে তারা অধম। দুনিয়াতে আমি কারও কাছথেকে কিছু খেতেও আসিনি এবং কিছু পেতেও আসিনি। আমি এসেছি দুনিয়াকে কিছু দিতে এবং দিতে। কৃপণ এবং কার্পণ্যকে ঘৃণা করতে না পারলেও তবে ভালবাসতে শিখিনি। আমার মালিক কী উদ্দেশ্যে আমায় দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন জানি না। তবে, মালিকের আশা-আকাঙ্ক্ষা যে পূর্ণ করতে পারিনে--এটা নিশ্চিত।
দুনিয়া থেকে কিছু পাওয়া বা নেওয়া আমার উদ্দেশ্য হতে পারে না, দুনিয়ার জন্যে কিছু করে যাওয়া আমার কর্তব্য ছিল এবং আছে। তাই, দুনিয়া থেকে আমি কিছু নিতে পারিনি বলে দুঃখিত নই, দুঃখিত--দুনিয়াকে কিছু দিতে পারিনি বলে। আমার স্রষ্টা আমায় শ্রেষ্ঠত্বদানে সৃষ্টি করেছেন ঠিক কিন্তু আমি স্রষ্টা এবং সৃষ্টির কী উপকারে এলাম! আফসোস এ জীবনের প্রতি, আফসোস আমার কর্মের প্রতি, কী করেছি এবং কী করছি! সৃজকের প্রতি শোকরগুজার হব থাক, পরিবর্তে বদনাম করছি তাঁর শ্রেষ্ঠতার! হাতেপায়ে মানুষ যদিওবা হই--হলাম কিন্তু বিচারবুদ্ধিতে মানুষ কি হতে পারলাম? ভালবাসা পেলাম না বলে ভালবাসা দিব না এমন ত হওয়া মানবীয় যুক্তি না। মানুষ ত সকলে হয় কিন্তু মানুষের গুণে গুণান্বিত সকলে হয় না। আমার কথা হল, আমার যাকে ভাল লাগল না তার থেকে আমি শত গজ দূরে থাকলাম কিন্তু তার পিছু লেগেপড়ে গর্ত খোঁড়া আমার কর্ম বা ধর্ম হওয়া অনুচিত। আমার শত্রু সব সময় আমার অনিষ্ট কামনা করে--করুক, কিন্তু আমি তা পারি না, আমার কাম্য হওয়া উচিত, শত্রুর ভাল করা। না হলে শত্রু আর আমার মধ্যে পার্থক্য কী! শত্রুকে ভালবাসা অতি মহতী লক্ষণ কিন্তু সকলে তা পারে না বিধায় পৃথিবীতে আজ এত অশান্তি, এত রক্তারক্তি, এত খুনোখুনি ও এতই অপরাধ! সকল ঘৃণা যদি ভালবাসায় পরিণত হয়, তা হলে পৃথিবীটা শান্তিপূর্ণই নয়, একেবারে স্বর্গের মতো সুন্দর হয়। সত্য ও সুন্দরের সঙ্গে পথ চলা মহামানবীয় গুণ।
চলবে...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।