ভালমন্দ ও সুন্দর-অসুন্দর--
মানুষ পৃথিবীতে অবতরণ করছে সুন্দর থেকে বিচ্যুত হয়ে তাই সুন্দরের সঙ্গেপথচলা মানুষের পক্ষে অসম্ভব! মন থাকাসত্বেও যেমন সকলে মনস্বী হতে পারে না, তেমনি মেধাশিক্ষা থাকাসত্বেও কিন্তু সকল মানুষ ভাল করে অর্থাৎ গোছালোকথাবার্তা বলতে পারে না। এখানে আশ্চর্যের কিছু নেই। শিক্ষাদীক্ষায়জ্ঞানেগুণে একজন মানুষের চাতুর্য দেখা গেলেও যে মুখ চলে এমন কথা না; বহুনজির আছে, অনেক অচতুর মানুষের মুখ চলছে কিন্তু দেমাক চলছে না। তাই বোধহয়শরৎচন্দ্র বলতেন ‘যাদের মগজ চলে তাদের মুখচলে না আর যাদের মুখ চলে তাদের মগজ চলে না’ এ লিখাটা তবে চলাচলের ভিত্তিতেনয়, এ লিখাটার মূল অর্থ ভালমন্দ ও সুন্দর-অসুন্দর।
বিকৃত মস্তিষ্ক নিয়ে যারা জন্মগ্রহণ করে তাদের আচরণ সব সময় বিকৃতই হয়, এটাযেমন স্বাভাবিক বিষয় তদ্রূপ সুন্দর মনের অধিকারীরা অসুন্দরকে ভেঙেচুরে সবসময় সুন্দর করতে চেষ্টা করবে এটাও স্বাভাবিক।
ভারতীয়দের মতোবাংলাদেশেও আজকাল বিশেষ একটা ধূর্তামি দেখা যাচ্ছে : কথায় কথায়--সো, সুইট্, হেল্প্, হোয়াট্, বাট্, বেস্ট, দ্যন্, দিস্, লিস্ন্, লিগ্ল্, হাই, হ্যালো, ইয়েস্, নো, হ্যাপি, গুড্, গেট্, ব্যাড্, বার্থ্, পেইন্, ফাইন্, নাইস্, নেক্সট্, কাট্, কিউট্, ওকে, ওহ্নো, ওহ্ গড্, সীজন্, সামার, ওয়িন্টার, মর্নিং, ডে, নাইট, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার, ফান্, ফানি, ফ্রেন্ড, হাজব্যন্ড, ওয়্যইফ্, গার্ল, বয়, ব্রাদার, সিস্টার, মিস্টার, মিস্, ম্যডাম্, ম্যম্, মাম্মি, মম্, ড্যাডি, ড্যাড্...ইংরেজদের নিত্যব্যবহারিক এরকম অসংখ্যশব্দের ব্যবহার বাংলা ভাষাভাষির মধ্যেও প্রায় শোনা যাচ্ছে! খারাপ না।চেয়ারটেবিলের মতো হয়ত বাংলা শব্দভাণ্ডারে তারাও একদিন পাকাপোক্ত আসন দখলকরে নিবে! নিক, তাতে ক্ষতি নেই; বাংলা শব্দভাণ্ডার এমনিতেই বিভিন্ন ভাষাথেকে আগত শব্দৈশ্বর্যের সমাহার। তবে একটি কথা বলা দরকার, কিছু ক্ষেত্রেসৌন্দর্য প্রতিষ্ঠার চেয়ে শোনার মাধুর্য রক্ষা করা জরুরি। ‘আমি ভাত খাব’সবাই বলবে কিন্তু ‘আমি রাইচ খাব’ নিশ্চয় কেউ বলবে না? এখানে প্রথম খাবারেসৌন্দর্যের চেয়ে শোনার মাধুর্য রক্ষিত। তবে দ্বিতীয় খাবারে সৌন্দর্য আরমাধুর্য দুটোই কদর্য। তদ্রূপ বাক্যে-অবাক্যে সবকিছুতেই ভালমন্দ ওসুন্দর-অসুন্দর মিশে আছে এবং অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে থাকবেই এটাও সন্দেহাতীত।
যেকোন পোশাক-আশাকের মাধ্যমে যেকারও বাহ্যিকরূপ পাল্টান সম্ভব; কিন্তু, যেকোন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেও কারও ভিতরের রূপ পাল্টানো সম্ভব নয়। যেভাষাসাধুচলিত মিশ্রণে ‘গুরুচণ্ডালী’ দোষে দুষ্ট, সেভাষা ‘বাংলা-ইংলিশ’ মিশ্রণেকেমন শিষ্ট জানি না! বোকা হয়ে পরিহাসের পাত্র হলে তবে দুঃখ নেই, কিন্তুবুদ্ধিমান সাজতে গিয়ে বোকার তকমা মারাত্মক দুঃখের। ‘...কর্ম হোক ভাল’ ঠিকআছে, তবে এমন কর্ম হয়ত মোটেও ভাল না, যার ফলাফল শতভাগ নিষ্ফল! মনে রাখতেহবে, বিশ্রীকে ছেঁটেছোঁটে শ্রী করা উত্তমের কাজ তবে শ্রীকে কেটেকুটে বিশ্রীকরা নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। আমরা ইংরেজচর্চা অবশ্যই করব তবে নিজেরসৌন্দর্যকে নষ্ট করে নয়, না নিজের পরিচয়কে ছোট করে। আগে আমার পরিচিতি তারপরঅন্যের গীতি। মানতে হবে, নিজের প্রতিবিম্বের কাছে কোন ছবি স্পষ্ট না। আমারসংস্কৃতি, আমার ভাষা, আমার দেশ, আমার পরিচিতি আমার জন্যে অনেক বড়; যারপরিচয়ে আমি আজীবন পরিচিত। তবে, নিজের অরূপে নিন্দিত হাওয়ার মধ্যে যত গৌরব, পরের মুখোশশ্রীর বাহবাতে তত মর্যাদা নেই।
চলবে...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।