নীচে আবুল হাসানের দুটো কবিতা দিলাম এবং শুধু একটি প্রশ্নঃ আমরা যে আধুনিক কবিতাগুলো লিখছি তা কী আবুল হাসানের কবিতাগুলোকে 80 বছর পরও ভাব কিম্বা ভঙ্গীতে অতিক্রম করতে পেরেছে?
আবুল হাসান
সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে, উজ্জ্বলতা ধরে আর্দ্র,
মায়াবী করুণ
এটা সেই পাথর নাকি? এটা তাই?
এটা কি পাথর নাকি কোনো নদী? উপগ্রহ? কোনো রাজা?
পৃথিবীর তিনভাগ জলের সমান কারো কান্না ভেজা চোখ?
মহাকাশে ছড়ানো ছয়টি তারা? তীব্র তীক্ষ্ণ তমোহর
কী অর্থ বহন করে এইসব মিলিত অক্ষর?
আমি বহুদিন একা একা প্রশ্ন করে দেখেছি নিজেকে,
যারা খুব হৃদয়ের কাছাকাছি থাকে, যারা এ ঘরে ও ঘরে যায়
সময়ের সাহসী সন্তান যারা সভ্যতার সুন্দর প্রহরী
তারা কেউ কেউ আমাকে বলেছে-
এটা তোর জন্মদাতা জনকের জীবনের রুগ্ন রূপান্তর,
একটি নামের মধ্যে নিজেরি বিস্তার ধরে রাখা,
তুই যার অনিচ্ছুক দাস!
হয়তো যুদ্ধের নাম, জোৎস্নায় দুরন্ত চাঁদে ছুঁয়ে যাওয়া,
নীল দীর্ঘশ্বাস কোনো মানুষের!
সত্যিই কি মানুষের?
তবে কি সে মানুষের সাথে সম্পর্কিত ছিল, কোনোদিন
ভালোবেসেছিল সেও যুবতীর বামহাতে পাঁচটি আঙ্গুল?
ভালোবেসেছিল ফুল, মোমবাতি, শিরস্ত্রাণ, আলোর ইশকুল?
(১৯৭২)
সেই মানবীর কণ্ঠ
প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম –কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরণ দাহ, হয়েছি বিজন ব্যথা, হয়েছি আগুন !
আমি এ আঁধার স্পর্শ করে কেন তাকে বলেছি হৃদয়,
তৃষ্ণায় তাড়িত তবু কেন তাকে বলেছি ভিক্ষুক
আমি এ জলের পাত্রে জল চাই না, বিষ চাই বিষও তো পানীয় !
প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম, কেন আমি
এ বুক স্পর্শ করে বলেছি একদিন গ্রীস, কলহাস্য, অদিতি উৎসব !
আমি তাম্রলিপি আমি হরপ্পার যুগল মূর্তির কার কে ?
কী আমার অনুভূতি ? কোনোদিন কোনোই নারীকে
কেন আমি বলিনি মাতৃত্ব ? কেন বলেছি নির্জন ?
প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম, সঙ্ঘমিত্রা নাকি সে সুদূর
সভ্যতাসন্ধির রাণী, অন্য কোনো অশোকের বোন,
হয়েছি এখন আমি কেন বা এমন প্রবাহিত ?
(১৯৭৪)
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।