সাঁঝ বেলার নওশা

নতুন (এপ্রিল ২০১২)

আহমাদ মুকুল
মোট ভোট ৪৫ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৬.১
  • ৩৯
  • ৩২
ভোরের আলো-আঁধারি কাটিয়ে সকাল হচ্ছে আস্তে আস্তে। চোখ ছলছল করছে তার। এত লোক আশেপাশে, প্রকাশ্যে কান্নার উপায় নেই। বয়স্ক লোক কাঁদছে, মানুষ বলবেই বা কি? আজ কেন যেন স্মৃতিরা সব স্রোতের মত আসছে। সেই কবেকার কথা! স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসছে, ছোটবেলার খণ্ড খণ্ড সময়। মা কাঠের আলমিরা থেকে একটা সাদা শার্ট, নীল প্যান্ট, জুতা বের করলেন। নতুন পোষাকের আনন্দে উচ্ছল বাকী ভাই-বোনেরাও। মনে পড়ে, বন্ধুরা বলেছিল-‘‘আরে, ঈদের দিন তুই স্কুল ড্রেস পরেছিস!”

স্কুলে তখনও যাওয়া হয় নি তার, স্কুল ড্রেস কেমন জানত না। এক মাস পর নতুন বছরে স্কুলে ভর্তি হয়। সেই ঈদের পোষাক পরেই যায়। গিয়ে বন্ধুদের পরণে একই কাপড় দেখে ঈদের দিনের মন্তব্যের অর্থ টের পায়। নাহ্, মন খুব একটা খারাপ হয়নি। নতুন স্কুলের আনন্দ, আর বাবা-মায়ের সামর্থ্য বিবেচনা- দুটোর মিশেলে নিরানন্দ ভাব টেকে নি।

ফেলে আসা পুরণো দিন, তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা মনে পড়ছে। ছেড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেলে ফিতা লাগানো, ডাংগুলি খেলায় ডাং-এর এক আঘাতে টুক্কি পুকুরের ওপারে পাঠানো, নাড়া ক্ষেতে গোল্লার ভো-ছুট…..। বাবা মা ভাই-বোন, বাল্যবন্ধুদের ছেড়ে এই একলা ভূমে এতদিন কিভাবে ছিলেন-এই ভাবনাটি নতুন করে আসছে।…..অনেক দিন নতুন জামা গায়ে দেয়া হয় না। গায়ের ঈষত ছাই রঙা জামাটা রঙ চটে ফিঁকে হয়ে গেছে। পরণের নীল লুঙ্গিটি হয়ে গেছে কালচে। চকচকে কিছু গায়ে দেবার উপলক্ষই ছিলনা অনেক দিন, তাই খুঁজে পেতে পরার তাগিদও ছিল না। নিরানন্দ অপেক্ষার প্রহরগুলো কোনভাবে কাটানোই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।

পাশেই পড়ে আছে দাবার বোর্ড, ঘুটিগুলো এলোমেলো। ওপাশে খেলোয়াড় না থাকায় একা একাই নাড়াচাড়ার দীর্ঘদিনের অভ্যেস, নিজের সাথে নিজের কৌশল বদলের খেলা। পাশে খোলা বইটার পাতা উড়ছে। কাউকে বলা দরকার, একটা পাতা-চিহ্ন দিয়ে বন্ধ করে রাখতে। সূতো ছেড়া সব ভাবনার ঘোরাঘুরি, বইটার মতই বাতাসে যেন একেকটা পাতা খুলছে।….কবে যেন কৈশোরে চকিতে দেখা- সাঁঝ বেলায় ভাঙা হাটে না-বিকা পণ্যের ঝাঁকা নিয়ে বিক্রেতার অনিচ্ছায় উঠে পড়া, পাকা ফসলের মাঠে চিটা ধানের গোছায় হাত দিয়ে কৃষক আত্মার ব্যর্থতার হা-হুতাশ। মাঞ্জার ভুলে এক রিল সূতাসহ চাপলাশ ঘুড়িটা বাকাট্টা। পছন্দের নীল-সাদা গিরিবাজটা হঠাৎ দুপুরে উড়াল দিয়ে আর ফিরলো না!

হিসাব-কিতাব লেখার ডাইরিটা একপাশে অযত্নে পড়ে আছে। কাল বিকেল পর্যন্ত কালির চিহ্ন পড়েছে। শেষ পাতাগুলো যেন একটা অসম্পূর্ণ ব্যালেন্স শিট। দায় সম্পদের পাল্লা সমান করা যায় নি। গলদ বোধহয় গোড়াতেই রয়ে গেছে। একে একে দুই, দু’য়ে দু’য়ে চার- এভাবেই যোগের খাতা এগিয়ে যাওয়ার কথা। সেখানে সরল অঙ্কের যোগফল তো ‘এক’ই রয়ে গেছে। জীবনের প্রাপ্তি এবং খরচের হিসেবেও বোধহয় রয়ে গেছে গড়মিল। ঘাটতি, উদ্বৃত্ত, নাকি সমান সমান সমান- অমিমাংসিত রয়ে গেল সব। ভাল একজন হিসাববিদ হয়তো মিলিয়ে দিতে পারতো! সময়টুকু বিধাতা দিলেন কই!

পরিচিত কিছু মুখ দেখা যাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানেই এসেছে। পোশাক-আশাক, মুখভঙ্গি তাই বলে। এরা অনেক নিকট সময়ের মানুষ। কিন্তু তিনি আজ শুধু পুরণোদের কথাই ভাববেন। এদেরকে নিয়ে কোন স্মৃতি মস্তিষ্কও জড়ো করছে না। তাই তো! ডক্টরাল গবেষণায় অসামান্য কীর্তি, সমাবর্তনে বিশেষ সম্মাননা, জাতীয় পদক প্রাপ্তি- কিছুই মনে পড়ছে না। মনে পড়ছে শুধু প্রাইমারিতে বৃত্তি পেয়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে মহল্লায় ঘুরে বেড়ানোর কথা। অন্তরের বিরাগ মগজেও ছড়িয়েছে। সামনে দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে প্রজন্ম, আর যত উপকারভোগী স্বজন। ওদের নিরব সম্ভাষণের জবাব দেবার কোন ভাষাও তার মুখে নেই। চোখে চোখ রেখে খুঁজতেও গেলেন না সেখানে কোন মমতার চিহ্ন আছে কি না।

একটু শীত শীত করছে। এ কয়দিন গায়ে কম্বল ছিল, আজ কখন যেন সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মাথার নীচে বালিশটাও নেই, কেউ হয়তো খেয়াল করেনি। বহুদিন এত মানুষের সামনে আসা হয় না। আসবেন কি করে, শেষবার পাওয়া দাওয়াত কার্ডটির উপর যে পুরু ধুলো জমেছে! অচল যন্ত্র আর ভাঙা কুলো ভাণ্ডারে থাকে, ছুড়ে ফেলার অপেক্ষায়। উৎপাদনশীলতা থেকে অবসরের পর পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত, পৃথিবী যে এতদিন জায়গাটুকু দিয়ে রেখেছে তাই বুঝি বেশী। আজ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। উপস্থিত মানুষের মধ্যে যত আগ্রহ দেখছেন, সব তাকে ঘিরেই। ….ময়লা পুরণো কাপড়ে আড়ষ্ট লাগছে। গোসল করে একটু ভাল কাপড় পরতে হবে। একটু গরম পানি হলে ভাল হত।

আজ আর কারো সাহায্য চাওয়া লাগলো না। না চাইতেই সব পাচ্ছেন। কয়েকজন পরম স্নেহে তাকে উঠতে সাহায্য করলো। গোসল হলো, পানি ঠাণ্ডা না গরম টেরও পেলেন না। একটুও শীত করলো না। ধবধবে সাদা নতুন পোষাক দেখে মনটা ভরে গেল। সেলাইবিহীন! কতদিন ধরে এটার অপেক্ষা! আশে-পাশের মানুষের আলোচনা থেকে বুঝলেন- তার জন্য নাকি আনকোড়া একটি ঘরও তৈরি করা হয়েছে। ভাবগম্ভীর আনুষ্ঠানিকতার কমতি রাখছেন না আয়োজকরা। অনেকদিন যা ঘটেনি, আজ সবকিছুই তার রুচিমাফিক। শ্বেতশুভ্র নিরাভরণ।

ভব নামের এই কারাগার থেকে আপাত মুক্তির প্রশান্তি। এক বিছানায় শুয়ে শুয়ে তিতিবিরক্ত। তাই বিছানা বদলের তীব্র আকূতি! “বড্ড ঘুম পাচ্ছে মা, তাড়াতাড়ি বাড়ি নিয়ে চলো….’’ মায়ের ঝাপসা ছায়ামূর্তির আঁচল ধরে নেওটা ছেলের আসর ত্যাগ। সারা জীবন প্যাকেট আর বাক্সবন্দি উপহার নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

গতরাতের শেষ প্রহরে চিরতরে নিভে যাওয়া আলোর জগতে বাড়তি অন্ধকার যোগ হল। আজ নিজেই বাক্সবন্দি হয়ে নতুন জীবনের পথে গ্রামের বাড়ি রওনা হলেন তিনি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সৈয়দ ইফতেখার আলম এটা পাক্ষিক পত্রিকা. অধিকরণ ( adhikaran_shishu@yahoo.com ) Lika din. Adhikaran akti Pakkhik potrika. Last 22 years a Potrika Published hoccha. A ber e First Adhikaran nea alo Shishu bre jonno akti purnanga Page. Sa page ar jonno lika r aobbhan kora hoccha apnader sokol ar kasa. Please lika din amader. Apnar lika published hoya Powsa jabe apnar Address a. Lokar sate apnar name,phone number,address lika patate vulban na. ( adhikaran_shishu@yahoo.com ) Ai mail id te lika patan Please Please> Ahsa kori amader ai Shishu der nea new ai Page ar pothchola te amnader Every 15 din porpor pobo... ( iftekhar - 01816493064 , Page Editor , Adhikaran )
রস্বই অনেক দেরীতে আমার ভাগ্য প্রসন্নতার হাসিটা হেসেছে । অনেক দেরীতে হলেও এটুকু আমার অপার পাওয়া । এমন অসাধারন কিছু লেখকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য শামছুল আরেফিন কে ধন্যবাদ দিলে কম হয়ে যাবে । এমন গল্পকারকে মূল্যায়ন করার জন্য অনেক বেশি জানার দরকার । জ্ঞানের গভীরতা দরকার । যা নিতান্ত্যই অপ্রতুল । আপ্নারাও আমাকে লেখক বলেন । এখন বুঝতে পারছি , কতখানি বিনয় থেকে এসব বলেন । দীর্ঘায়ূ হউক আপনার লেখক জীবন ।
বিষণ্ন সুমন গল্পকবিতায় অলরাউন্ডারদের মাঝে তুমিই যে সেরা এটা আবার প্রমান করে দিলে ! অভিনন্দন আবারো!
তানি হক অনেক অনেক অভিনন্দন ভাইয়া !
sakil onek onek ovinondon ebong prandhala shuvechcha
রওশন জাহান ম্যালানকলি বসত করেছে আমার মধ্যে তাই তো অনেকদিন ধরে লেখাও হচ্ছেনা এবং পড়াও হচ্ছেনা । একটা সময় ছিল সবার আগে আপনার লেখা পড়তে পারলে আনন্দিত হতাম। অনেকদিন তা আর হয়ে উঠেনি। এখন শেষে গল্প পড়ে আপ্লুত হলাম । অভিনন্দন অনেক ! অনেক !
সূর্য শ্রদ্ধা এবং ভালবাসায় অভিনন্দিত করছি তোমাকে।
সালেহ মাহমুদ মুকুল ভাই, আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন। অনেক ভাল লাগল।
আহমেদ সাবের অভিনন্দন ভাইজান।
ভাই, অনেক আবেগ জড়িত লেখাটিতে....লেখার পড়ের আবেগটি বেশী। ফলাফলের পর সেটি আরো বাড়ল।
sakil amader somajer chena golpo.uposthapona ebong lekha besh akorshonio.shotot shuvokamona

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৩ টি

সমন্বিত স্কোর

৬.১

বিচারক স্কোরঃ ৪.৬ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ১.৫ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪