ঢাকা শহরে সম্ভবত এই একটি বাড়িই আছে যেটিকে কালো রঙের পেইন্টিং করা। শুধুমাত্র কালো রঙ করাই নয়। আরো নানা আজগুবি, অদ্ভুত কারনে এ বাড়িটির নামডাক রয়েছে। রাতের বেলায় এ বাড়ির ছাদ্ থেকে নানা ধরনের বিদঘুটে আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র আওয়াজ শোনা গেলেই কোন কথা ছিলনা। বাড়ি বসবাসকৃত মানুষের সাথে বিভিন্ন অস্বাভাবিক কর্মকান্ড এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। হ্যা আপনারা ঠিক ধরতে পেরেছেন। আমি অবিনাশদের বাড়ির কথাই বলছি। এ বাড়িতে দুমাশের বেশি কোন ভাড়াটিয়া থাকেনা। প্রতি রাতেই বাড়ির কারো না কারো সাথে ঘটে অস্বাভাবিক ঘটনা। অবিনাশ মন্ডল বাড়ির মালিক এদেশে থাকেনা। পরিবারসহ লন্ডনে থাকে। বাড়ি দেখাশুনার দায়িত্ব ন্যস্ত আছে হরিশ বাবুর উপর। তিনি বাড়ির কেয়ারকেটার। বাড়ির ভাড়া তুলেন আর নিচে সিড়ির ধারে ছোট একটা কামরায় থাকেন। এ বাড়িতে আমরা নতুন এসেছি। আগের বাড়িওয়ালার সাথে পানি নিয়ে ঝামেলা হওয়ার ফলে খুব তাড়াতাড়ি খোঁজ খবর না নিয়েই যেটা সামনে পেয়েছে বাবা সেটিই ভাড়া নিয়েছে। কিন্তু পরদিন সকাল বেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় পাড়ার লোকেদের অবাক চাহনি দেখে বুঝতে পারিনি কেন তারা এভাবে তাকিয়ে আছেন। আমার বাবা বিজ্ঞান মনস্ক উনি ভুত, প্রেত, আত্মা এসবে বিশ্বাস করেন না। সন্ধ্যার পর বাবা মা শপিং করতে বেড়িয়েছে। আমরা দু ভাই বাসায় কেরাম খেলছিলাম। হঠাৎ ছাদের উপর থেকে আওয়াজ আসছে মনে হচ্ছে কেউ লোহার জুতা পায়ে দিয়ে হাটছে। ঘরের সব জিনিসপত্র ভূমিকম্প হলে যেমন কেপে ওঠে সেভাবে কেঁপে কেঁপে উঠছে। আমরা দু ভাই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকলাম। বাবাকে ফোন করলাম বাবা মা তাড়িাতাড়ি বাসায় চলে এসেছে। বাবা আমাদের ধমকে বলল সারাদিন হরর মুভি দেখ তাই এমনটা হয় তোমাদের সাথে। কই আমার সাথেতো হয়না কখনো এমন।
বাবা মা ফ্রেস খাবার টেবিলে বসেছে। আমরাও বসেছি খেতে। ঠিক তখনি আবারও সেই শব্দ। লোহার জুতা পায়ে দিয়ে হাটার শব্দ। মা একটু ভড়কে গেল। ছাদের উপরটায় অন্ধকার। বাবা খাবার ছেড়ে উঠে বেসিনে হাত ধুয়েই। টর্চলাইটটা নিয়ে ছাদের উপর গেল। বাবার পিছন পিছন কেয়ারটেকার হরিশ বাবুও গেল। ছাদে গিয়ে কাউকেই দেখতে পেলেন না। কিন্তু প্লাস্টিকের পানির টাঙ্কির উপর কী যেন একটা বসে আছে বুঝা যাচ্ছে। বাবা টর্চ মারলেন ওদিকে কিন্তু কোন মানুষ বা ভুত দেখতে পেলেন না। দেখতে পেলেন বড় সাইজের একটা দাঁড়কাক বসে আছে। কাকের চোখগুলো সবুজ রঙের টর্চ লাইটের আলোতে তা ভয়ংকর রকম জ্বলজ্বল করছে। বাবা এতো সাহসী লোক হয়েও চমকে গেলেন। সে ছাদের উপর থেকে ইটের কণা কাকের দিকে ছুড়ে মারলেন কিন্তু কী আশ্চর্য কাকটা একচুলও নড়লো না জায়গা থেকে। বাবা বাসায় চলে আসলেন। কিন্তু মা বাবার মাথার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন। রক্ত তোমার মাথায় রক্ত কেন? বাবা মাথায় হাত দিয়ে দেখলেন আসলেই অনেক রক্ত। কাকে ঠোকর দিলে যেমন রক্ত ছুটে তেমন। কিন্তু কাকটাতো জায়গা থেকে নড়েনি। তাহলে ঠোকর দিল কে? পাড়ার মোড়েই একটা ক্লিনিক আছে ওখান থেকে মাথায় ছোট ব্যান্ডেজ করে নিয়ে আসলেন।
এ দুদিন রাতে কোন শব্দ হয়নি। কিন্তু একটা আজব ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে। টাঙ্কিতে পানি থাকা সত্বেও আমাদের কল থেকে পানি পড়ছিল না ভেবেছিলাম ছাদের ওপর দেখে হয়তো কেউ টাঙ্কির সাথে লাগানো মেইন কলটা বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু ছাদের উপর গিয়ে চেক করে দেখা গেল সব ঠিক আছে। তারপর হঠাৎ করেই। কল থেকে টাটকা গরম জল বের হতে লাগলো। আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম। প্রায় আধ ঘন্টা লাগলো স্বাভাবিক পানি আসেতে। উল্লেখ্য এ বাসায় ট্যাপে জল গরম হওয়ার কোন সিস্টেম ছিল না।
এক সপ্তাহ মোটামুটি ভালো কাটলো কিন্তু এরপর দেখা গেল আরেক বিপত্তি। মা প্রতি রাতেই ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছে আর ঘুম থেকে উঠে দেখছে তার পায়ে বণ্য জন্তুর মতো আচড়ের দাগ।
বাবাও বিষয়টা দেখে ঘাবড়ে গেলেন। কিন্তু তিনি যে আসলেই ঘাবড়ে গেছেন বিষয়টা কাউকে বুঝতে দিলেন না। উনি এখানেও বৈজ্ঞানিক যুক্তি খুঁজছেন। কিন্তু মাকে কোন কিছু দিয়েই সান্ত্বনা দেয়া যাচ্ছেনা। বাবার টেনশনে ঘুম আসছিল না। বিছনার কাছাকাছিই ছিল জানালা। বাবা জানালার দিকে তাকাতেই আবিষ্কার করলেন কেউ একজন জানালায় ঝুলছেন। জানালার গ্রিল হাত দিয়ে ধরে বাইরের দিকে সমস্ত শরীরটাকে ঝুলিয়ে রেখেছেন। বাবা চিৎকার দিতে চাইলেন কিন্তু ভয়ে তার কণ্ঠ অবরুদ্ধ হয়ে এলো।
পরদিন ছিল শুক্রবার মা একটু সকালে উঠলেন। তিনি শুনলেন রান্নাঘরে কেউ একজন বেসিনের কল ছেড়ে থালাবাসন ধুচ্ছেন। আজতো কাজের মেয়ের ছুটি। এতো সকালেতো ওর আসার কথা না। তাহলেকে এলো। মা রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো কল থেকে পানি পড়ছে আর থালাগুলো সব ধোয়া পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। কীভাবে সম্ভব এটা। বাবাকে এবং আমাদেরকেও জিজ্ঞাসা করা হলো। আমরা কেউই ধুইনি তাহলে কে ধুলো? ওইদিন রাতেই বাবা ঘুমিয়ে আছেন। বাবা স্বপ্ন দেখেছেন কেউ একজন কোকড়া চুলের লোক গলা দিয়ে গরগর শব্দ করছে। সে কাঠের আলমারিটি খোলার চেষ্টা করছে। তারপর বাবার বালিসের কাছে এসে গরগর শব্দ করে বিছানায় আচড় কাটছে আর মোবাইলটা নিতে চাইছে। বাবার ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো। বাবার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। আলমারিতে চাবি লাগানো চাবির ঘোছাটা দুলছে। বাবা মোবাইল হাতে নিলেন। মোবাইল অফ হয়ে আছে অনেক চেষ্টা করেও অন করা গেলো না।
কেয়ারটেকার হরিশ বাবুকে ঘটনাগুলো বললে উনি বলেন সবই মনের ভুল। আগের ভাড়াটিয়া নাকি এ বাসায় একটি পরিকে ধরেছিল রাতের বেলায়। ভদ্রলোক রাতের বেলায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছিলেন।হঠাৎ দেখতে পান পরি তার পাশে দাড়িয়ে আছেন। সে পরির হাত ধরেছিল। সে পরির হাত ধরে তার বৌকে ডেকেছিল। বউ তাড়াতাড়ি আসো পরি ধরছি দেখো। পরি লোকটিকে ধাক্কা মেরে বারান্দার গ্রিল ভেদ করে উড়ে গেল। জানালার গ্রিলগুলো অস্বাভাবিক রকমভাবে বেঁকে গিয়েছিল। সেই ঘরটাতেই আমি থাকি। বাবা আশপাশের লোক থেকে বাড়ি সম্পর্কে নানা ঘটানা শুনতে পান। এ বাড়ির করার পূর্বে পাইলিং করার সময় অনেক মানুষের মাথার খুলি পাওয়া গেছে। বাড়ি করার সময় এক মিস্ত্রি ছাদের উপর থেকে পড়ে মারা গিয়েছিল।
আমরা মোটামুটি মানিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু আরো কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার কারণে আমরা এ বাড়িটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। একদিন দরজায় কলিংবেল বাজলো। এক ময়লা পোশাক পড়া কোকড়ানো চুলের ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইছেন। আমার ছোটভাই ভিক্ষার চাল আনতে ভিতরে গেল কিন্তু আসার পর যে ঘটনা দেখলাম তা অবর্ণনীয়। লোকটার চোখের মনি নেই পুরোটাই সাদা। চাল না নিয়ে সে হাসতে হাসতে ছাদের উপর চলে যাচ্ছিল। আমরা তিনতলায় থাকতাম তার উপরেই ছিল ছাদ। ছোটভাই চিৎকার দিয়েই জ্ঞান হারালো। মা সাথে সাথে উপরে গিয়ে দেখলো কেউ নেই ছাদে তালা লাগানো।
সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটলো আমার সাথে। আমি ঘুমিয়ে আছি। স্বপ্নের ভিতরেও দেখছি যে ঘুমিয়ে আছি। এরকম অবস্থায় বিষয়টাকে বাস্তব মনে হয়। আমার দুই পাশে দুটি লাশ সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো। আমি যেদিকেই কাত ঘুরবো সেদিকেই লাশ। লাশের মুখমন্ডল পোকায় খাচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ একজন আমার পা ধরে নিচের দিকে টানছে। আমি খাট থেকে পড়ে গেলাম। স্বপ্ন ভেঙে যা দেখলাম তা আরো ভয়াবহ। দেখলাম ছোট একটা বামুন সাইজের মোটা লোক বারান্দার দিকে দৌড়ে চলে গেল। আমি যেদিকেই চোখ ফেলছি সেদিকেই লাশগুলোকে দেখছি। মসজিদের হুজুরের কাছ থেকে আমাকে পানি পড়া এনে খাওয়ানো হলো। ভয়ে আমার জ্বর চলে আসলো। বাবা নতুন ফ্ল্যাটে এ্যাডভান্স করে এসেছে। আমরা পরের মাসেই নতুন বাসায় উঠবো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।