কৃষি নির্ভরশীল এখানকার মানুষ । জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে উল্লেখযোগ্য হারে ।  জমিতে বাড়তি মানুষের বাসস্থান তৈরি  হচ্ছে । ফসলের জমিও কমে যাচ্ছে । দলে দলে গ্রামের মানুষ শহর মুখী । শুধু জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রিয় গ্রাম ছেরে শহরের পথে তারা  ।  এরকম এক সংসারের জন্ম হয়েছে রাকিবের ।  অভাব অনটনের সংসার ।
  নদীর ধারে  এল সাইজের  স্কুল ঘরটি অবস্থিত । বড় একটি বট গাছ সেখানে ঋষির মত ছায়া বিতরণ করে ।   তখন  ডিসেম্বর মাস বার্ষিক পরিক্ষা শেষ । হয়তো দুই – একদিনের মধ্যে স্কুলে রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে । রাকিব  এবার ক্লাস  টু –তে উঠবে  । রেজাল্টের দিন প্রধান শিক্ষক সকল ছাত্রকে স্কুল ঘরের সামনে দাঁড় করিয়ে একে একে নাম ডেকে রেজাল্ট ঘোষণা করেন । সবার সাথে রেজাল্ট নেওয়ার জন্য লাইনে দাড়িয়ে আছে রাকিব ও  । সকলের  মন উদ্বিগ্ন । শিক্ষক মহাদয়  প্রথমে রেজাল্ট ঘোষণা করবে রাকিবদেরই। সবার আগে রাকিবের নাম ঘোষিত  হল ।   সে ফার্স্ট হয়েছে,  মনে আর আনন্দ ধরে না তার । মায়ের কাছে না বলা পর্যন্ত সে আর স্থির থাকতে  পারে না  ।  মাকে রেজাল্টের কথা বললে,  মা  তাকে বুকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলল । মা  বলে  –
 দেখেতেই পারছু তোর  বাবার সংসারে মন নাই ,  অভাব অনটন আরও লোকটাকে  উদাসী করেছে । দেনা করে চাষ করে কামলার মজুরী আর দেনার টাকা শোধ করতেই সব শেষ ,  তার উপর তো  বন্যা , খরা,  ঝড় হলে  তো কথাই নাই । আমি বলি কি বাবা মন যোগ দিয়ে লেখা- পড়া করবি  । মানুষের মত তুই মানুষ হলে আর আমাদের দুঃখ থাকবে না  ।
হ্যাঁ মা আমি মানুষের মত মানুষ হব , আমাদের  অভাব অনটন ঘোচাবই – রাকিব বলে ।
 একটা কথা দেশটাকে মন দিয়ে  ভালোবাসবি । যে দেশকে ভালবাসে না , সে মাকে ভালবাসতে পারেনা- মা বলে ।  
মা দেশকে ভালবাসে কেমন করে, বড় বড় বক্তা না হলে কি দেশ প্রেমিক হওয়া যায়   ? - রাকিব বলে ।
 মানুষের কোন ক্ষতি কর না, কোন অন্যায় মেনে নিও না , সবাইকে অন্তর থেকে ভালবাসলে দেশকে  ভালোবাসা হয় । মানুষ নিয়েই  তো দেশ হয়  - মা বলে । 
   
 মা আমিতো  তোমারই  ছেলে,  আশীর্বাদ কর  আমি যেন তোমার সকল  আদেশ যথাযথ ভাবে পালন করতে পারি – রাকিব বলে ।   
সে দোয়াই তো করি বাবা – মা বলে ।
 রাকিব যখন ক্লাস নাইনে পড়ে , তখন  ক্লাস এইটের  ছেলেদের প্রাইভেট পড়ায় । দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সে একদিন সফলতার সাথে এম, এস,  সি পাশ করে । তার  চারকুলে কেউ  চাকরী করে না । এ যুগে মামা, খালু , টাকার জোর , দলের জোর না হলে সোনার হরিণ  চাকরি জোটে না । 
রাকিবের তো মেধার জোর ছাড়া আর কিছুই নাই ।
 বিসিএস  পরীক্ষা দেয় । প্রিলি , রিটেনে পাশ করে । সামনে  ভাইভা   এবার কি করা যায় এই নিয়ে ভাবতে থাকে রাকিব । একটা লাইন ও  পেয়ে যায় । বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই সে সন্ধান দেয় । 
রাকিব তোমাকে ১০০%  নিশ্চয়তা দিচ্ছি, কিন্তু একটু বেশি টাকা দিতে হবে  – বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই বলে ।
ভাই আমাদের তো কয়েক বিঘা  জমি ছাড়া আর কিছু নাই, কত লাগবে ? – রাকিব বলে । 
১৫ লাখ টাকা, কয়েক দিন পরে সকল চাকরী জীবিদের বেতন দ্বিগুণ হবে,  তখন   ৩০ লাখের নিচে কোন কাহিনী নাই - বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই বলে । 
 তা বুঝলাম, কিন্তু এতো টাকা পাব কোথায়  ?  – রাকিব বলে । 
একবার  চাকরী হয়ে গেলে তখন তোমায় ধরে কে ?  টাকার উপর তখন  ঘুমাবে বলে দিলাম ।  মানুষ  তোমার একটু কৃপার জন্য  অপেক্ষা করবে,ব্যাগ ভর্তি  টাকা   নিয়ে । চিন্তা কর-   সুন্দরী মেয়ের বাবারা তোমাকে মেয়ের জামাই করতে প্রতিযোগিতা করবে । আহ কি অবস্থা ভাবতেই অন্য রকম লাগে । ভেবে দেখো  সামাজিক বড় বড় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হবে । প্রশংসায় পঞ্চমুখ বক্তারা মুল বিষয় বাদ দিয়ে শুধু তোমারই বন্দনা করবে । ভাল করে ভেবে দেখ , সুযোগ বার বার আসে না - বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই  বলে । 
রাকিবের মাথা আসলেই ঘুরছে  । একদিকে সোনালী ভবিষ্যৎ , প্রতিষ্ঠা অন্য দিকে ঘৃণা , অপমান অবহেলা, ধ্বংস  । তার কাছে মনে হয় –  টাকাই যেন পৃথিবীর  সবচেয়ে শক্তিশালী জিনিস  ।  তার প্রতিষ্ঠা অথবা ধ্বংসের মাঝখানে একটাই অসম্ভব  ব্যবধান । আবার অন্যভাবে  চিন্তা করে  কিভাবে বাবাকে বলবে ঘুষ দিয়ে চাকরী নেওয়ার কথা । তাহলে এতো দিনের শিক্ষা,  নীতি, সাধনা-   প্রতিষ্ঠার আশায়  জলাঞ্জলী দিতে হবে । আর্থিক  দারিদ্রকে তার ভয় নেই , ছোট বেলা থেকেই  তার চির সঙ্গী কিন্তু মনের  দারিদ্র বড়ই ভয়ানক । এভাবেই চিন্তা করতে  থাকে। কি করবে সে !  বাবার কাছে টাকা চাইবে ?     ঘুষ না দিয়ে ভাইভা দিতে যাবে ?   নাকি ভাইভা দেবেই না ............।
            
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ০৯ নভেম্বর  - ২০১৩ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ৩৪ টি
                        
                    
            
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                     
 
     
    
        
        বিজ্ঞপ্তি
        “নভেম্বর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
        প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী