আমার অন্ধকার ভবিষ্যত

আঁধার (অক্টোবর ২০১৭)

সাদিয়া সুলতানা
আমি আত্মহত্যা করতে চাইনি। আমি বরাবর উঁচু কোথাও দাঁড়ালে নিচে তাকাতে ভয় পাই। উঁচু থেকে নিচের দিকে তাকালে আমার বুকের ভেতর কেমন করে ওঠে। মাথার ভেতরটা ফাঁকা লাগে। মনে হয় এই বুঝি কেউ আমাকে ঠেলে ফেলে দিল। বন্ধুরা বলে, তুই একটা ভীতুর ডিম। আসলেই আমি খুব ভীতু ছেলে। আমার বন্ধু রায়হান আমার ঠিক উল্টো। খুব সাহসী। ওর প্রিয় চ্যানেল ন্যাশনাল জিওগ্রাফি আর ডিসকভারি। রায়হান বিয়ার গ্রিলসের সার্ভাইভাল সিরিজ ‘বর্ন সার্ভাইভাল’ আর ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ এর কোনো পর্ব দেখা বাদ দেয় না। ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ বন্ধ হবার পর পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম আর প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার টেকনিক শিখতে ইউটিউবে এর পুরানো সব পর্বগুলো ও বার বার দেখে। ও বিয়ার গ্রিলসের মতো গহীন জঙ্গলে গিয়ে থাকতে চায়। সাপ, পোকামাকড়, কাঁচা মাছ খেয়ে বেঁচে থাকতে চায়। যখন আমরা আড্ডা দেই তখন রায়হান হাত পা ছুঁড়ে দেখাতে থাকে ও কীভাবে হিমালয়ে হাইকিং করবে, মাউন্ট এভারেস্টে উঠবে, কীভাবে সুউচ্চ জলপ্রপাত থেকে ঝাঁপিয়ে পড়বে, বাঁশ দিয়ে ভেলা বানাবে। ও বলে, ‘এ প্লাস পেয়ে কী হবে বল, আমার জীবনের লক্ষ্য তো আলাদা। কেবল জিপিএ টু-থ্রি পেলেই হলো।’

রায়হান জিপিএ টু পেয়েছে। ওকে রেজাল্টের পর ওর বাবা জুতা ছুঁড়ে মেরেছে আর বলেছে, ওর ভবিষ্যত অন্ধকার। তাই ওকে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসবে। গতকাল রাতে রায়হান ফোনে কথা বলতে বলতে খুব হেসেছে। ওর ধারণা ডিসকভারি দেখে দেখে জঙ্গলে থাকার প্রশিক্ষণ ওর পুরোপুরিভাবেই আয়ত্ত্বে এসে গেছে। তবে এটা সত্যি যে রায়হানের বাবা ওকে জঙ্গলে ছেড়ে আসবে না। আবার এটাও সত্যি যে, রায়হানকে ওর বাবা পর্বতারোহণ ক্লাবেও ভর্তি হতে দিবে না। ওর আর আমার বাবা কেবল আমাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিবে।

রায়হানের মতো আমিও বাবা-মায়ের কাছ থেকে জীবনে সবচেয়ে বেশিবার যে কথাটি শুনেছি সেটি হলো ‘আমার ভবিষ্যত অন্ধকার।’ নিজের বর্তমান খুব সুখকর না দেখে তিনি আমার ভবিষ্যতকে অালোকিত করতে চান। বাবা জীবনে খুব বড় ব্যবসায়ী হতে চেয়েছিল। যদিও এখন পর্যন্ত হতে পারেনি। বাবা দাঁতের ডাক্তারদের যন্ত্রপাতি সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করত। বাবার বন্ধু মিলন আংকেল ব্যবসার টাকা মেরে দিয়ে থাইল্যান্ড চলে যাবার পর বাবা এই মাস থেকে জুটের ব্যবসা শুরু করেছে। কিন্তু সুবিধে করে উঠতে পারছে না দেখে বাবার মেজাজ-মর্জি খুব খারাপ থাকে। মায়েরও মন ভাল নেই। আমার মা আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে মাঝে মাঝে কাঁদে।

আচ্ছা, এই যে আমি নামছি, নামতে নামতে কি মাকে দেখতে পাবো? মা নিশ্চয়ই এসময় বারান্দায় কাপড় মেলতে আসবে। আমাকে উপর থেকে নামতে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকবে। বিশ্বাসই করবে না, তার মিশু এভাবে উপর থেকে নিচে নামতে পারে। সত্যি আমি উঁচু জায়গাতে থাকলে নিচে দেখতেই খুব ভয় পাই আর তো নামা!

একবার রোকনের পাল্লায় পড়ে দিলু আপাদের বাড়ির সীমানা প্রাচীরে উঠেছিলাম। খুব অপমান করছিল ও। বার বার বলছিল, ‘মিশু তুই একটা মাইগ্গা ছেলে। যা মায়ের কাছে গিয়ে দুদু খা।’ রোকন তরতর করে দেয়ালে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে কুৎসিতভাবে হাসছিল। তীব্র অপমানে আমার কান ঝাঁ ঝাঁ করছিল। তাই আমি মাথা গরম করে রাজী হয়ে গিয়েছিলাম। আপাদের বাড়ির পিছনের দিকটায় একটা নারকেল গাছ কেটে ফেলে রাখা ছিল, সেই গাছের ওপর দাঁড়িয়ে প্রাচীরে ওঠার সময় সহজেই উঠেছিলাম কিন্তু নামার সময় কিছুতেই লাফ দিতে পারছিলাম না। দিলু আপার দজ্জাল মা রান্নাঘরের জানালা দিয়ে ময়লা ফেলতে এসে আমাকে দেখে ফেলেছিল। রোকন আমাকে রেখে ততক্ষণে নিচে নেমে গেছে। রোকন একটু নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছেলে কিন্তু বন্ধুকে একা রেখে ও যেতে পারছিল না। নিচে নামতে না পেরে আমি তখন কান্না শুরু করেছি। বিপত্তি দেখে দিলু আপা আর তার মা নিজে এসে আমাকে নামিয়েছিল। এরপর জীবনেও এমন করবো না বলে আমি কানে ধরবো কী, রোকনই সেদিন কানে ধরে দিব্যি কেটেছিল আমাকে নিয়ে কোথাও যাবে না।

সত্যি আমি উঁচু জায়গা খুব ভয় পাই। সবাই জানে। আমার বন্ধুরাও। আরেকবার আরেক ঘটনা হয়েছিল। বাবা একবার ডিসেম্বরের ছুটিতে আমাদের সবাইকে নিয়ে বান্দরবান গিয়েছিল। মা আমাকে নিয়ে পাহাড়ে যেতে চাচ্ছিল না। কিন্তু বাবা বলল, কিছু হবে না, বরং ছেলের ভয় কেটে যাবে। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। মনে আছে আমার, চান্দের গাড়িতে যতবার পাহাড়ের উঁচু রাস্তায় উঠেছি ততবারই বমি করে বাবা-মাকে অস্থির করে ফেলেছি। বাবা সেদিনও বার বার বলেছে, ‘এই ছেলেকে নিয়ে আমি কী করবো! এর ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার!’ শেষ পর্যন্ত সেবার ট্যুরের চারদিনের মধ্যে তিনদিন হোটেলেই সময় কাটিয়েছিলাম আমি আর মা। তাই আমাকে বাবা আর পাহাড়ে বেড়াতে নেয়নি। মা বলে, ছোটবেলায় দুএকবার যখন খুব আনন্দে আদরে বাবা আমাকে শূন্যে তুলে ধরতো তখন আমি কেঁদে ফেলতাম। বড় হতে হতে ভয়ও বড় হচ্ছে।

ভয় পাই বলে আমি কখনো একা ছাদে আসি না। কারো সাথে অাসলেও রেলিং এ ঝুঁকে নিচে তাকাই না। আমি আজ যখন ঘর থেকে বের হচ্ছিলাম তখন মা তাই ভাবতেও পারেনি কী ঘটতে যাচ্ছে। শুধু আমার দিকে না তাকিয়ে ভারি গলায় বলেছিল, ‘তাড়াতাড়ি ফিরিস।’ মায়ের কণ্ঠ শুনে বোঝা যাচ্ছিল মাও আমার উপর রেগে আছে। রাগারই কথা। আমার মতো একটা ছেলেকে পেটে ধরার জন্য মাকে নাকি যা তা শুনতে হয়। অথচ নিশির জন্য নিশির বাবা মায়ের সেই কী গর্ব! নিশি গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া ছাত্রী। বরাবর ও ভালো রেজাল্ট করে। ওর বাবা মা চায় ভবিষ্যতে ও ডাক্তার হবে। আমার মাও বলে, অনেক উপরে উঠবে নিশি। নিশি উপরে উঠছে অার অামি নামছি।

আমি আজ বড্ড তাড়াতাড়ি নামছি। এই যে আজ নামছি, প্রথমে কী ভয়ই না করেছে! বার বার মনে হয়েছে, আহা! এই বুঝি মায়ের হাতের বেলি ফুলের মতো দশটি আঙুল নিচ থেকে আমাকে লুফে নিবে! তারপর মা মিথ্যেমিথ্যি বকাঝকা করতে করতে আমাকে কোলে তুলে নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দিতে নিয়ে যাবে। এখন অনেক বড় হয়ে গেছি। মায়ের কোলে উঠতে পারি না। মায়ের পেটের উপর উপুড় হয়ে শুতে পারি না। কিন্তু মায়ের হাতে মাখা ভাত খাবার লোভ ছাড়তে পারিনি আজো। দিনে অন্তত একবার এই আহ্লাদটুকু না করলে আমি আর মা দুজনই ভাবি, দুজনের মালিকানা স্বত্ব বুঝি বা হুমকির মুখোমুখি।

অথচ মায়ের স্বত্ব-দখল ছেড়ে আমি আজ কেমন উঁচু থেকে লাফ দিয়েছি। আমি যখন ছাদে দাঁড়াই তখন ছাদে কেউ ছিল না। আমি যখন সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম তখন অপরাজিতা দিদির সাথে দেখা। এই বিল্ডিং এর সবাই ডাকে অপু আর আমরা ছোটরা ডাকি অপু'দি। অপুদি কথা বলতে পারে না। কেবল অপুদির পোষা বেড়াল ভোমলার সাথে দিদি কথা বলে। কোলে তুলে আদর করতে করতে শব্দহীন বিড়বিড় করে। ওসব কথা আমরা কেউ বুঝি না। অপুদি আমাকে খুব ভালোবাসে। রোজ স্কুল আর কোচিং সেরে ফিরে দিদিকে না দেখলে আমার ভালো লাগে না। অপুদি আমাকে দেখলেই কিছু না কিছু দেয়। দিদির বিয়ে হয় না। কোনো ভালো ঘর-বর দিদির জন্য আসে না। বাবা বলে, ‘ওমন বোবা-কালা মেয়েকে কে বিয়ে করবে!‘ আমার মনের একটা গোপন ইচ্ছে ছিল। আমার গোপন ইচ্ছে ছিল, ভবিষ্যতে চাকরিতে ঢুকলে আমি দিদিকে বিয়ে করবো। কিন্তু আমার সে ইচ্ছেপূরণ হলো না।

আমি যখন সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠছি দিদি তখন স্নান ছেড়ে ছাদে কাপড় মেলে দিয়ে ফিরছিল। আমাকে দেখে হেসে আমার ডান হাতের মুঠোয় একটা পেয়ারা গুঁজে দিয়েছিল। দিদির শরীর থেকে কী যে সুন্দর সুগন্ধ আসছিল! আর দিদির ভেজা ভেজা মুখটা দেখে ভীষণ মায়া হচ্ছিল। হঠাৎ মনে হয়েছিল, মরে গেলেতো আর দিদিকে দেখতে পাবো না, দিদিকে আমার বিয়ে করাও হবে না। এসব ভেবে দু সিঁড়ি নিচে নেমেও গিয়েছিলাম অপুদির পিছু কিন্তু হঠাৎ বাবার মুখটা মনে পড়ায় ফিরে এসেছি।

আমার বাবা খুব নীতিবান মানুষ। নীতিবান মানুষেরা খুব রাগী হয়। আমাদের অংক টিচার মুবিন স্যারের মতো। অংক না পারলে ডাস্টার হাতে নিয়ে তেড়ে মারতে চলে আসেন স্যার। কিন্তু সামনে এসেই থমকে গিয়ে মাথায় আলতোভাবে ডাস্টার ছুঁইয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলেন, ‘আজকালতো আবার আইন জারি করে রেখেছে, ছাত্র মারা যাবে না। এগুলোকে পিটিয়ে লাশ করে ফেলা দরকার। কৃষ্ণ পন্ডিতের মার একবার পিঠে পড়লে সব কয়টায় দাঁত কেলানি বের হয়ে যেত!’ মুবিন স্যারের ক্লাসে আমরা কোনো ছাত্রই ভয়ে হাসি না তবু কেউ একটু ঠোঁট নাড়লেও স্যারের ধারণা হয় সে স্যারের কথা শুনে হাসছে। তবে স্যারের ক্লাস শেষ হলে আমাদের হাসি আর দেখে কে! স্যার কী করে ক্লাসে নাকের লোম ছেঁড়ে সেটা দেখাতে দেখাতে রায়হান যা অঙ্গভঙ্গি করে না যে হাসতে হাসতে আমাদের পেট ব্যথা হয়ে যায়। রায়হান বলে, ‘মুবিন স্যারকে আমাজানের জঙ্গলে ছেড়ে আসা উচিত।’ আমাদের এসব হাসি-তামাশা দেখলে আমাদের ক্লাসের গুড বয় মারুফ রেগে যায়, বলে, ‘স্যারদের নিয়ে ফাজলামো করতে হয় না।’

মারুফ আমাদের ফাস্ট বয়। অংকে ওর দারুণ মাথা, দু’দুবার ও গণিত অলিম্পিয়াডে গেছে। দুবারই পুরষ্কার পেয়েছে। আর আমি নয়নের ঠিক উল্টো। অংকে আমি একেবারে খারাপ। সায়েন্সেও। প্রি-টেস্টে আমি অংকে আর সায়েন্সে ফেল করেছিলাম। প্যারেন্টস মিটিং এ প্রিন্সিপাল স্যার বলেছিলেন, আমাকে এস.এস.সি. বোর্ড পরীক্ষায় বসতে দিবেন না। স্কুলের বদনাম হবে। বাবা-মা মুচলেকা দিয়ে স্যারকে রাজী করিয়েছিলেন যে, আমি টেস্টে উৎরে যাবো। গিয়েছিলামও। বিকালে খেলার মাঠ, স্টার মুভিজ চ্যানেল বিসর্জন দিয়ে বোর্ড পরীক্ষায় বসার অনুমতিও পেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

আমি গতকাল বাবার পায়ে ধরে বলেছি, ‘এবারের মতো আমাকে ছেড়ে দাও, আগামী বছর আমি আবার পরীক্ষা দিবো। আমি পাস করবোই।’ আমার কান্না দেখে মা বাবাকে বলছিল, ‘ছেলেটাকে আর গালিগালাজ করো না, একটু স্বাভাবিক হও।’ কিন্তু প্রতিবেশীরা তা হতে দিচ্ছিল না। তারা একের পর এক মিষ্টি নিয়ে উপস্থিত হচ্ছিল আর নিজের সন্তানদের গৌরবগাঁথা বর্ণনা করতে করতে আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। কেউ কেউ মুখে চুকচুক করে আওয়াজ করে সহানুভূতি দেখাচ্ছিল। এরা চলে যেতেই হঠাৎ বাবার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। বাবাও আমাকে আরো বেশি গালিগালাজ করতে শুরু করেছিল, ‘এই ছেলের ভবিষ্যত অন্ধকার। রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা কইরা খাইব একদিন।’

টিভিতে তখন সংবাদ হচ্ছিল। সংবাদ পাঠিকা মিষ্টি হেসে সংবাদ পাঠ করছিলেন, ‘এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ১০ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ১০ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন পরীক্ষার্থী। এই সংখ্যা গতবারের চেয়ে পাঁচ হাজার কম। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে রাজশাহীতে গড় পাসের হার সবচেয়ে বেশি আর পাসের হার সবচেয়ে কম কুমিল্লা বোর্ডে।’ ছেলে-মেয়েরা দু’আঙুলে ভিক্টরি চিহ্ন দেখাচ্ছে আর একে-অন্যকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে, পাশে তাদের গর্বিত বাবা-মা হাসোজ্জ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এমন প্রতিবেদন দেখাচ্ছিল। আর আমার বাবা-মা! আমার কারণে আজ তাদের মুখে কোনো হাসি নেই।

যে মা দুপুরে আমার মাথায় হাত রেখে বলছিল, ‘চিন্তা করিস না, সামনের বার আবার পরীক্ষা দিবি, বছর যেতে আর কয়দিন।’ সেই মা’ই হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। বাবা যখন আমাকে জুতা দিয়ে পিটালো তখন মা শোবার ঘরে বসে রইল। একবারও বাবার কাছ থেকে আমাকে বাঁচাতে এলো না। আমার যে কী কষ্ট হচ্ছিল তখন! আমি রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তখনো জানতাম না সকালে কী অপেক্ষা করছে আমার জন্য। মা আমাকে ডেকে নাস্তা দিয়েছিল। আমি দেখেছি, মায়ের চোখ-মুখ ফোলা। আমার ভেতরটা মুচড়ে যাচ্ছিল। মা খুব কষ্ট পেয়েছে আমি ফেল করেছি বলে? নাকি বাবা আমায় মেরেছে বলে? এসব ভাবতে ভাবতে যখন আমি রুটি ছিঁড়ে মুখে তুলতে যাবো তখনই বাবা কোথা থেকে এসে আমার নাস্তার প্লেট ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো, ‘সোহাগ কত! এই ফেল করা ছেলেরে আবার খাইতে দাও! এই ছেলের ভবিষ্যত অন্ধকার।’

আমার অন্ধকার ভবিষ্যত নিয়ে আমি তাই আরো আঁধারে চলে যাচ্ছি। এই তো আমি মাটির কাছাকাছি চলে এসেছি। খালি একটা বিষয়ই বাকি থাকলো, কোনো সুইসাইড নোট লেখা হলো না। গতকাল বাবা আমার বই খাতা সব ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছিল। আমার স্কুল ব্যাগ, কয়েন অ্যালবাম, ডাকটিকেট অ্যালবাম, টেবিল ঘড়ি, ফেবার ক্যাসেল রঙ, তুলি, বোর্ড, মায়ের হাতের নকশি করা এ বি সি ডি তোলা ওয়াল ম্যাট সবকিছু। সবকিছু আমার পড়ার ঘরে ছড়ানো-ছিটানো থাকায় আমি পেন্সিল-কলম কিছুই পাইনি। তাই আমার কোনো সুইসাইড নোট লেখা হয়নি। অসুবিধা নেই। আগামীকাল সকালে পত্রিকা দেখলেই সবাই নিচের সংবাদটি জানতে পারবে।
‘দুদিন আগে এস.এস.সির রেজাল্ট দিয়েছে। কুমিল্লা বোর্ডের সুইসাইড করা পাঁচ জন অকৃতকার্য ছাত্রের মধ্যে এক জনের কোনো সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি।’

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিনায়ক চক্রবর্তী আপনার গদ্যনির্মাণ আর খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণের দক্ষতা জমিয়ে হিংসে করার মতো। একই সাইটে সহলেখক হিসেবে থাকতে পারছি ভাবলেই বেশ গর্ব হয়। :)
অশেষ ধন্যবাদ ভাই। অনেক বড় স্বীকৃতি দিলেন
এশরার লতিফ অগভীর বোধ-বুদ্ধি চালিত শিক্ষা-ব্যবস্থা-প্রসূত, সুদূরপ্রসারী চিন্তাহীন প্রতিযোগিতা আর বাবা মা'র সন্তানদের কাছে থেকে অতি-আকাঙ্ক্ষা ছেলেমেয়েদের শৈশব কৈশোর দুর্বিষহ করে দিয়েছে। বিষয়টার অন্তিম ফলাফল এই গল্পে চমৎকার ভাষায় উপস্থাপন করেছেন অনেক শুভেচ্ছা
গল্পকবিতার অন্যতম লেখকের কাছ থেকে এত সমৃদ্ধ একটি মন্তব্য পাওয়া নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয়। ভালেঅ থাকবেন ভাই।
মোঃ মোখলেছুর রহমান সাব্যসাচি বটে ।
হাহাহা। ধন্যবাদ ভাই
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী দারুণ বিষয় গুলো তুলে এনেছেন, খুব ভালো লেগেছে। মাঝে মাঝে আলাদা একটা স্বাদ পেয়েছি, যেটা সব গল্পের মাঝে থাকে না.....
Salma Siddika খুব ভালো হয়েছে গল্পটা। পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হোক, বাবা মা সন্তানদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলুক। এমন পরিণতি যেন কারো না হোক , এমন গল্প আরো দরকার, এই গল্প পড়ে একটা বাবা মা যদি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবে, তাহলেও অনেক।
মৌরি হক দোলা চমৎকার গল্প। পড়ার সময় কিছু কিছু জায়গায় মনে হল পরোক্ষভাবে অনেকগুলো বাস্তব কথা ফুটে উঠেছে। এ বিষয়টা বেশি ভালো লেগেছে। অনেক অনেক শুভকামনা রঈল।
Fahmida Bari Bipu চমৎকার বাস্তব একটা সমস্যাকে তুলে এনেছেন। ভালো লাগলো বেশ। একটা জায়গাতে মারুফের জায়গাতে নয়ন হয়ে গিয়েছে মনে হলো। একটু দেখে নিয়েন। শুভেচ্ছা রইলো।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
এক বসায় লেখা গল্প। অনেক ত্রুটি আছে। ধরে দেবার জন্য ধন্যবাদ। এখন গল্পটা আরো সম্পাদনা করেছি, দীর্ঘও হয়েছে। যদিও এখানে সম্পাদনার সুযোগ নেই। ধন্যবাদ আপা।

১৯ অক্টোবর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪