তুষারের চাদরে ঢেকে গ্যাছে পুরো লন্ডন সিটি, চারিদিকে চোখ ধাঁদানো লাইটিং। ক্রিস্টমাস আর উইন্টার ভ্যকেশন এর জন্য ইউনিভারসি্টিতে ছুটি চলছে। প্রিথা দুপুরে একটা লম্বা ঘুম দিয়েছে। ঘুম ভেঙ্গে দেখে সন্ধ্যা নেমে এশেছে, জানালা দিয়ে আকাশ টাকে ঠিক ঢাকার আকাশটার মতোই দেখায়।পৃথা চোখ বন্ধ করে প্রিয় ঘটনা গুলোর মাঝে ডুবে যায়। ভীষণ ব্যস্ততায় দিন কাটছে পৃথার।সারাক্ষন পিকনিকের চিন্তা তার মাথায় ঘুরছে।আগামি পরশু পচিশে ডিসেম্বর, ঐ দিন পিকনিক করার জন্য সবাই রাজি হয়েছে।পিকনিকে খাবারের মেনু ঠিক হয়েছে মোড়গ পোলাও আর ডিমের কোড়মা। চাঁদা ধরা হয়েছে এ্কশ টাকা আর প্রত্যেকে বাড়ি থেকে যার যার ডিম আনবে।পৃথা কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পাড়ছেনা।বার বার একই লাইন পড়ছে “সে অনেক অনেক দিন আগের কথা ।চারদিক তখন কি সুন্দর….”।কারও অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই । পৃথারা তাদের নানা বাড়িতে ভাড়া থাকে।ওর নানা মযিদ সাহেব চড়ম ক্রিপন একজন লোক। ব্যাংক লোন নিয়ে একটি বাড়ি করেছেন, প্রতি মাসের ত্রিশ তারিখ রাত বারোটার সময় তিনি ভাড়টিয়াদের দরজার নিচ দিয়ে ভাড়ার স্লিপ দিয়ে আসেন। একদিন এক ভাড়াটিয়া তাকে অন্ধকারে দরজার কাছে দাড়াতে দেখে চোড় ভেবে জাপ্টে ধড়েছিলেন।এর পর থেকে তিনি অবশ্য একজন কেয়ারটেকার রেখেছিলেন । উনি বাচ্চাদের সাথে একদম বন্ধুত্ত করতে পারেন না, তবে চেস্টা করেন।ওনার সবচেয়ে গন্ডোগল লাগে নিজের নাত্নি দের সাথে ।ওনার নাত্নিরা সংখ্যায় চার জন , এরা নাকে, চোখে ,মুখে মিথ্যা কথা বলে। একদিন মাগ্রিবের আজানের সময় ওনার নাত্নিরা ডোরেমন দেখছিল উনি এই অনাচাড় সয্য করতে না পেড়ে টিভির সুইচ অফ করেছিলেন, ওই সময় ওরা প্রত্তেকে তাদের মাকে ফোন করে বলেছে মা নানাভাই আমাদের থাপ্পর দিয়ে ঘর থেকে বেড় করে টিভি অফ করে দিয়েছে। এর পর আর মজিদ সাহেবকে কে রক্ষা করে? ওনার চা্র কন্যা একে একে এসে তাদের মেয়েদের নিয়ে যাবার সময় বাবাকে নানা ভাবে তিরস্কার করে যায় ।উনি খুবি ছেচড়া প্রকৃতির মানুষ ।কয়েক ঘন্টা বাদেই হামিলনের বাসিওয়ালার মত ফ্লাটে ফ্লাটে গিয়ে অতি সস্তা চকলেট আর আমসত্ত নিয়ে নাত্নিদের সাথে আবারও খাতির করে আসেন। এভাবে সব সময়েই তার বাসাটা নিজের নাত্নিদের আর ভাড়াটিয়ার বাচ্চাদের মিটিং প্লেসে পরিনত হয়। সারা বিল্ডিং ওনার নাত্নিসহ মোট তেরটি বাচ্চা আছে।সবাই তাদের বাড়ি থেকে একশ টাকা আর একটা করে ডিম এনেছে । মজিদ সাহেবের বাড়ির ছাঁদটা বাচ্চাদের পিকনিকের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।বাচ্চারা গত তিন দিন যাবৎ খেলা বাদ দিয়ে শুধুই পিকনিকের কথাই আলোচনা করছে।প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল শুধু বাচ্চারাই পিকনিক করবে , কিন্তু বাদ সাধল আদনানের আম্মু ।উনি সাফ জানিয়ে দিলেন যে আদনান ছোট তাই উনি ওর সাথে আসবেন। তবে উনি কোন বাড়তি চাঁদা দেবেন না।তারা মা ছেলে মিলে একশ টাকা আর একটা ডিম দেবেন।বাচ্চারা তার সাথে কথায় পেড়ে না উঠে শেষ পর্যন্ত তাকে নিতে রাজি হল। এর পর ঝামেলা বাধাল দোতালার নানু। উনি বললেন আমি কোনদিন পিকনিক খাইনি, আমিও তোমাদের সাথে পিকনিক খাব।প্রিথা বিরক্ত মুখে বলল নানু পিকনিক কোনো খাবার জিনিষ না।আপ্নারা ছোটবেলায় গ্রামে চরইভাতি করেছেন না আমরাও সেটাই করব, আমাদের টার নাম ছাঁদ ভাতি ।বোঝাতে পেরেছি? কিন্তু কিছুতেই ওনাকে বোঝান যাচ্ছিল না, শেষে পৃথার বান্ধবি তীর্থ বুদ্ধি করে বলল নানু আমাদের সাথে পিকনিকে জয়েন করলে কিন্তু লুঙ্গি ডান্স করতে হবে।আপনি নাচলে অবশ্য সে্টা হবে পেটিকোট ডান্স । আচ্ছা যাই হোক আপ্নাকে হাটুর উপ্রে সাড়ি তুলে প্রতি স্টেপ এ দুবার করে কোমড় ঝাকিয়ে নাচতে হবে।আপ্নি রাজি আছেন? রাজি থাকলে কুইক প্রাক্টিসে চলে আসেন ছাদে ।আর সঙ্গে নাপা বা পারাসিটামল নিয়ে আসবেন।উনি পান চিবাতে চিবাতে বললেন আমারে নাচনের ভয় দেখাইওনা ।তোমরা আমার একশ টাকা আর একটা ডিম নিয়া যাও, আমি প্রকটিসে আসতাছি। বাচ্চারা বিরাট সমস্যায় পড়ল, সব বাড়ির বড়রাও পিকনিকে জয়েন করতে চায়। পিকনিকের মজাটা মনে হচ্ছে আঙ্গুলের ফাক দিয়ে বড়দের হাতে চলে যাচ্ছে।এভাবে বড় ছোট মিলিয়ে সংখ্যা দাড়াল সাতাশ জানে। চব্বিশ তারিখ বিকেলে প্রিথার নানু মি্টিং ডাকলেন, বাচ্চারা আর বড়রা সবাই মিলে মিটিংয়ে বসলো। তারপর বড়রাই সব আলোচনা সেড়ে ফেলল্, তাড়াই ঠিক করল কতটা চাল, কতটা মাংস কিনতে হবে। এদিকে এক তলার সোমা আন্টি আর চার তলার সেজুতির মামা চুপি চুপি প্রেম করেন পৃথার বান্ধবিরা সবাই ঘটনা্টা জানে আর বিশস্ত অনুচর এর মতো ফুল আর কার্ড পৌছানোর কাজটা তারা দায়িত্ব সহকারে পালন করে। বিনিময়ে অবশ্য বেশ কিছু কিটক্যট না চাইতেই সেজুতির মামা দিয়ে দেন। সোমা আন্টি বাচ্চাদের ছাদে নিয়ে নাচের প্রাকটিস করায় আর সেজুতির মামা নানা অসিলায় ছাদে এসে সোমা আন্টির সাথে কথা বলে।পুরো ঘটনা টাই বড়দের চোখের আড়ালে রয়ে গেল। অবশেষে পচিশে ডিসেম্বর সকালে বড়রাই রান্নার সব আয়োজন করল, আর বাচ্চারা নাচ, গান, খেলে আর খেয়ে পিকনিক করল।সন্ধে বেলা সবাই আনন্দে বাড়ি ফিরে গেল। পৃথা চোখ মুছতে মুছতে বিছানা ছাড়ল।সন্ধ্যেয় রাইসা আন্টির বাসায় পার্টিতে যেতে হবে। ক্রিসের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে কৈশোরের সৃতিকে পাশ কাটিয়ে বাস্তবে ফিরে অসে পৃথা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।