প্রাগৈতিহাসিক আলো

ভালবাসি তোমায় (ফেব্রুয়ারী ২০১৪)

আশরাফ উদ্ দীন আহমদ
  • ৫৪
ভরা শীতকাল,শীত এবার বেশ গুছিয়ে জাঁকিয়ে বসেছে দীর্ঘসময়ের আশু নিয়ে, সময়টা আবার খেজুর রসের। কনকনে শীতের দাপটে জান-প্রাণ জেরবার অবস্থা, কিন্তু খেজুর গাছের বুক ভরে রসে টইটম্বুর, ষোড়শীর যৌবন যেন, কোনো বাঁধন মানে না আর, তাবৎ শরীর জুড়ে অমৃত ধারা চুয়ে-চুয়ে নেমে আসছে, শীতের কি আর সাধ্য আছে তাকে থামানোর, হয়তো সে কারণেই শীতরস মৌসুম এসেছে রস-নির্যাসে ভরিয়ে দিতে এ-ভুবন।
আমঘাটার শত-শত নাকি হাজারে হাজার খেজুর গাছ, মেরুদণ্ড উচ্চ করে দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব জাহির করছে আজ, যেন বা পোয়াতির মুখের চন্দ্রাকৃতির রমণীয় হাসি,অথবা মাতৃত্বের আস্বাদে আত্মহারা। খেজুর রসের ভরা মরসুম বলেই হাসি যেন আর ধরে না ক্যালো মুন্সীর ঠোঁটের কোণে। পান খাওয়া লাল টকটকে ঠোঁট গলিয়ে বিজলী যেন বা ঝিলিক মারে কদাচিৎ, তাও আবার দেখার মতো বটে।
ক্যালো মুন্সীর এতোটুকু ফুরসত নেই এখন, খেজুর গাছের বুকে যেমন রসের জোয়ার,যেন অপ্সরীর একহারা অঙ্গে কতো যাদু কতো রহস্য, দেখে-দেখেও আর পিয়াস মেটে না তার, এ-দেখার কোনো শেষ নেই। তেমনি আকুলি বিকুলি মনেও অফুরন্ত আনন্দ, আমঘাটার তামাম গাছের রসে তার নিকনো উঠোন সুভাষিত, মৌ-মৌ করতে থাকে চারদিক। রসে যখন জ্বাল পড়বে তখন তো মন-প্রাণ হারিয়ে যাবে সুদূর কোথাও, তখন বুকের মধ্যে কতো স্বপ্ন কতো সাধ কৈ-শিংয়ি-খলসে মাছের মতো খলবল করবে, ভালোবাসা চাক বাঁধবে মনের কোনো গোপন কোথাও, নিজেকে অন্যরকম মানুষ মনে হবে সে সময়।
সেই কোন সাঁঝ-সকালে অর্থাৎ কাক ডাকা শীতের চাদর মুড়িয়ে ক্লান্ত কুয়াশার সকালে যখন হয়তো মুয়াজিনও ঘুমের অতল গহ্বরে, ঠিকঠিক সে সময়ই ক্যালো মুন্সী তক্তপোষ ছেড়ে উঠে পড়ে, নববিবাহিতা কচি বউটার প্রতি এতোটুকু দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সময়ও যেন সে হাতে পায় না।
পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে সরস্বতীর ঘুম ভেঙে গেলে বাইরের দাওয়ায় এসে দেখে উঠোন জুড়ে রস ভর্তি মাটির ভাঁড়, মুহূর্তে মনে হয় এতো ভাঁড় কোথা থেকে এলো, কোনো অলৌকিক কাণ্ড নয় তো,আরব্য রজনীর সেই দৈত্য এসে রসের ভাঁড়গুলো রেখে গেলো কি না ! তারপর চোখ কচলাতে-কচলাতে আরো দেখে বিশাল উনুনের মস্ত তাওয়ায় রস টগবগ করে ফুটছে, আর ক্যালো মুন্সী রস ভর্তি ভাঁড় উপুড় করে ঢেলে দিচ্ছে, কাজের প্রতি যে তার এতো ভালোবাসা এতো ভক্তি দেখে সরস্বতীর মনটা ভরে যায় অকস্মাৎ, রস ঢালার দৃশ্যও ভারী অদ্ভুত, এক এক করে অত্যন্ত যত্নে মস্ত তাওয়ায় রস ঢালছে সে, রস তো নয় যেন ভালোবাসা।
সরস্বতী বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে থাকে শুধু। খেজুর রসের সুভাষিত জ্বালের ঘ্রাণে মৌ-মৌ করছে চারদিক, ওর মনও হারিয়ে যায়, মানুষটাকে দেখে মন তার ভালো হয়ে যায়, কখন থেকে কাজ করছে একমনে অথচ সে কিছুই জানে না। বিছানা ছেড়েছেই বা কখন একটুও টের পায়নি তাও,উনুনের বিশাল তাওয়ায় টগবগিয়ে ফুটছে আর মাতোয়ারা করে তুলছে বাতাসকে, ক্রমে-ক্রমে বাতাসও যেন ভারী হয়ে উঠছে, হয়তো বাতাসও নিজের ঘ্রাণের স্বপ্ন ভুলে যায় অকপটে।
পুরোদমে জ্বালের তোড়জোড় অবলোকন করে মন ভালো হয়ে যায় সরস্বতীর,স্বামী নামের মানুষটার ওমন মাতম দেখে আহ্লাদে মন নেচে ওঠে, নিজের হাতে গাছ কেটে বাঁকে নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে রস এনে গুড়ের পাটালি বানায়। বেশি-বেশি পাটালি সে বানাতে পারে তামাম তেয়োরখালি তল্লাটে,তার হাতের পাটালির বেশ সুনাম রয়েছে চারিধারে।
গাছের মালিকদের পাটালি ভাগের ভাগ দিয়ে, নিজের ভাগের ভাগ পাটালি বিক্রি করে। ক্যালো মুন্সীর পাটালির স্বাদ সাত অঞ্চলের মানুষের ঠোঁটে জিবে। তাছাড়া বেশি-বেশি জমে যাওয়া পাটালি ক্যালো মুন্সীর কাছ থেকে নিয়ে যায় দূর দুর থেকে আসা পাইকাররা। ওর খেজুর গুড়ের পাটালির স্বাদ বোঝে... রাণাঘাট-শান্তিপুর-চন্দ্রনগর-নবদ্বীপ-কালনা-গুপ্তিপাড়া-ত্রিবেণী-বাঁশবেড়িয়া-ব্যান্ডেল-এমন কি বড় বড় শহরের সৌখিন খানেওয়ালা বাবুদের জন্যও আমঘাটার ক্যালো মুন্সীর বানানো পাটালি নিয়ে যায় পাইকারেরা, যেখানে সুখ্যাতি সেখানেই তো ব্যবসা, একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও কেনে তা ভালো জিনিসটাই।
আর অন্য দশজনের ভেজাল পাটালির সঙ্গে ক্যালো মুন্সীর পাটালি থাকলে একটু কদর বাড়ে বৈ কি ! দোকানের সুনাম বাড়ে সেই সঙ্গে, সরস্বতী আবার স্বামীর কাজে সাহায্য করার জন্য বরাবরই একটু আধটু হাত মেলায়, রস একটু-একটু করে জ্বালে-জ্বালে ঘন হয় এবং কেমন তামাটে রঙ ধরে, রঙটা ক্রমশ মিষ্টি আর সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে ওঠে, দেখতে তখন বেশ লাগে।
একসময় রসের পাক নেমে যায়,এখন হাড়ায় বীজ মেরে হাতায় ফ্যাটতে যেটুক সময়, এরই মধ্যে সরস্বতী বেশ কাজের কাজি হয়ে উঠেছে, এক ফাঁকে ছেঁড়া কাপড়ের কানি পানিতে ভিজিয়ে ডালায় বিছিয়ে ক্যালো মুন্সীর হাতে-হাতে জোগান দেয়। ফ্যাটা গুড়ের মণ্ড খানিক গরম থাকতেই ডালায় ঢালে ক্যালো, জমে ঠান্ডা হলেই ছক কেটে-কেটে তা ভেঙে বড় ধামাটায় একটা-একটা করে সাঁজায়।
আচমকা লক্ষ্য করে,সরস্বতীর ঠোঁট চিকচিক করছে মুক্তো দানার মতো উনুনের দাউদাউ আগুনের শিখার আঁচে, ক্যালো ঈষৎ হাসি ছড়িয়ে তাকিয়ে দেখে,নেশা ধরার মতো মনে হয় যেন ওর কাছে, কাছে-পিঠে একদঙ্গল পাখি ডাকাডাকি করছে তখন, দূর মসজিদ থেকে মুয়াজিনের আজান ভেসে আসছে, বড় মিষ্টি সুর, ওই সুর যেন ঘর ছাড়ার আহবান, মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায় সরস্বতীর, কিসের একটা মাদকতা ছড়িয়ে যায় বাতাসে।
ক্যালো মুন্সী ওমনি সরস্বতীর ঘর্মার্ত গালে আলগোছে একটা চুমু এঁটে দেয়। সরস্বতী লজ্জা রাঙা ঠোঁটে সামান্য একটু পেছন সরে দাঁড়ায় মাথা নিচু করে, ক্যালো আরো নিবিড় ভাবে কাছে ঘেঁষে বলে, সতী-রে তোকে বড্ড ভালো লাগছে দেখতে এখন-
যাহ্‌ বলে কপট রাগ দেখিয়ে উনুনের ওপাশে দাঁড়ায়।
সরস্বতীর চোখের তারায় চমকে থেমে যায় ক্যালো মুন্সীর চোখ, ওকে আজ অন্যরকম লাগছে। এতো লাবণ্য ওর চিবুক-ঠোঁট-ললাট স্পর্শ করে আছে, তা যেন এতদিন প্রত্যক্ষ করেনি। নতুন করে ভালবাসতে সাধ জাগে, নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে।
মহেষখালি ষ্টেশন থেকে সাত মাইল দক্ষিণে নবকৃষ্ণডাঙা, সেখানে একসময় ক্যালো মুন্সী চিমনির ভাটায় কাজ করতো,নবকৃষ্ণডাঙার নবীন স্যাকড়ার ছোট মেয়ে সরস্বতীকে কয়েকদিন দেখে ক্যালো মুন্সী, সৈয়দ বাড়ির বিশাল ওই শানবাঁধানো দীঘিতে স্নান করতে গিয়ে,সরস্বতী কোমরে কাপড় পেঁচিয়ে মাটির কলসি কাঁখে নিয়ে জল ভরতে আসতো।
সৈয়দ বাড়ির মেজো ছেলে কাশেম আলীর চিমনির ভাটায় শত-শত লোক দিন-রোজগারের কাজ করলেও ক্যালো ছিলো সবার থেকে ভিন্ন, কাশেম আলী তাকে একটু অন্যরকম ভাবে দেখতো, তা সৈয়দ বাড়ির একটা ঘরে ক্যালো দিন শেষে রাত্রিটুকু থাকতো, ওই সময় সরস্বতীর সঙ্গে মাখামাখা একটা গভীর ভাব-ভালোবাসা গড়ে ওঠে।
ক্যালো মুন্সীর সব থেকে বড় গুণ ছিলো, তার সেই মোহন বাঁশীর সুর, সুর তো নয় কৃষ্ণের বিরহে রাঁধা কেঁদে মরে বৃন্দাবনে, সুরের মোহজালে সরস্বতীর তাবৎ সত্ত্বাকে বশীভূত করে। সে উনুনের জ্বলন্ত আগুনের আঁচের ভেতর নিজেকে অন্সেসান করে, বুকের ভেতরটা জ্বলে-পুড়ে যায় ক্যালো মুন্সীর মোহন বাঁশীর সুরে।
নবীন স্যাকড়া তারপর একদিন লোক মারফতে ঘটনা বুঝতে পেরে কাশেম আলীর সঙ্গে কথা বলে ক্যালোকে নবকৃষ্ণডাঙা থেকে বের করে দেয় এবং চটজলদি ভালো ঘর-বর দেখে-শুনে সরস্বতীকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠায়।
এখানেই ঘটনা-কাহিনী-ভালোবাসার যবনিকাপাত হতো, সুখ-সংসার-বিরহ এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপারগুলো নিয়েই মানুষ ভুলে যেতো সকল কিছু, কিন্তু না, মোড়টা ঘুরে গেলো ভিন্ন পথের বাঁকে, নদী বা সাগরকে যেমন কোনোভাবেই রুদ্ধ করা যায় না, হাজার বাঁধ বা প্রাচীর দেওয়া হলেও স্রোতধারাকে স্তব্ধ করা সম্ভব যেমন হয় না,তেমনি ভালোবাসাকেও যবনিকার আড়ালে চিরতরে ঢেকে রাখা যায় না। দিন-মাস কেটে যায়,কতো স্মৃতি কতো কথা ঘুরে-ফিরে আসে নদীর বাঁকে, কেউ কথা রাখেনি বলে ক্যালোর মোহন বাঁশীতে আর সুরও খেলে না, থেমে যায় জীবনের সকল ধারাপাত।

প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে সরস্বতীর স্বামী বিশ্বরঞ্জন একদিন সর্প দংশনে দেহত্যাগ করে,সাত মাসের বিবাহিত জীবনের পরিসমাপ্তি হয়, বিশ্বরঞ্জনের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন অপয়া কুলক্ষণা অপবাদ লেপন করে বাড়ি থেকে একদিন তাড়িয়ে দেয় সরস্বতীকে, তারপর হরেপ্রসাদ বাবু ছেলেবউ সরস্বতীকে নবকৃষ্ণডাঙায় রেখে যায়,সেদিনই সরস্বতী বুঝে যায় বাসুদেবপুরের দুয়ার তার জন্য চিরকালের মতো রুদ্ধ হলো তাহলে।
কয়েকদিনের মাথায় ক্যালো মুন্সীর কাছে লোক মারফতে সরস্বতীর একটা চিঠি আসে,এর ক’দিন বাদেই সরস্বতী লাপাত্তা হয় নবকৃষ্ণডাঙা থেকে, আমঘাটার শক্ত মাটিতে চিরস্থায়ী ডেরা বাঁধে সে।
ক্যালোর কণ্ঠস্বর বুজে আসে, সরস্বতীর গায়ের সুভাসে মাতোয়ারা আজ। জীবনের পরম স্বাদ আর ইচ্ছে তার কানায়-কানায় ভরে গেছে, নতুন বউকে তামাম রাত্রি আদরে-সোহাগে ভরিয়ে দেয় সে। লাল রক্তিম ঠোঁটে চিকন হাসি ফেটে পড়ে তখন। অন্ধকার কেটে-কেটে আলোর প্লাবনে ভরে যায় ধবল বসুন্ধরা।
সজনেখালি গ্রাম থেকে কালীবালা মাসির ছোট মেয়ে আঙুর একদিন সরস্বতীর কাছে আসে। আঙুরের মা অনেকদিন আগে ক্যালো মুন্সীর বাপের ঝি-গিরি করতো, ওর মা অকস্মাৎ মরে যাওয়ার পরপরই কালীবালা কোথা থেকে এসে উদয় হয় তাদের পরিবারে। ক্যালো সেই বাল্যকাল থেকেই সরাসরি দেখে আসছে বাপের কীর্তিকলাপ, কালীবালাকে সময় সুযোগ পেলেই ক্যালোর বাপ কোলে বসিয়ে ঠাট্টা-তামাসা আদর-সোহাগ করতো, সে সবই দেখেছে লুকিয়ে-লুকিয়ে, কখনো বা কোনো কারণে কালীবালাকে রাত্রেও বাড়িতে রাখতো।
ক্যালো আজো ভেবে পায় না আঙুরের সঙ্গে চেহারা-আদলে এতো মিলই বা কেনো ? তাহলে কি তার বাপের ওরষজাত ! নিজের মধ্যে অনেক অনেকদিন প্রশ্ন করে পরাজিত হয়েছে, কোনো উত্তর আসেনি। বুকের মধ্যে তীব্র একটা দহন অনুভূত হয় এবং সে ধারাবাহিকতা চলতে থাকে।
সরস্বতীর আগমনে বাড়িটা কেমন গুম মেরে যায়। ক্যালোর বোবা ঠোঁটে বিকেলের রেশমি হাসিটুকু কেমন মিইয়ে আসে, লালচে চিবুক-ললাট মুহূর্তে ভাঁজ পড়ে বড় বিদঘুটে আকার ধারণ করে, সরস্বতীর কাছে নিজেই নিজের পরিচয় দেয়, ক্যালো হাঁপ ছেড়ে বাঁচে যেন।
সরস্বতী দুজনের দিকে খানিকক্ষণ আড় চোখে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো, দু’ভাই-বোনে তো বেশ মিল গো, পূর্ব-জন্মে মায়ের পেটের দাদা ছিলে নাকি ?
ক্যালো মুন্সী কিঞ্চিৎ বিব্রতবোধ করে পেছনে সরে যায়। এরপর এই প্রসঙ্গে আর দু’ কথাও হয়নি, আঙুর কয়েকদিন থেকে আবার ওর মায়ের কাছে প্রত্যাবর্তন করে, ক্যালো মুন্সী হাতে কিছু টাকা আলগোছে তুলে দেয় সরস্বতীর অনুপস্থিতিতে, আঙুর সে টাকা পেয়ে আনন্দে ডগমগ আর কি !
ক্যালো অনেক আগে থেকেই জানতো, আঙুরের স্বামী যৌতুকের কারণে মায়ের কাছে রেখে গেছে, সে যৌতুকের টাকার পরিমাণ ক্যালোর কাছেও ঢের বেশি।
সরস্বতীর বুক ভরা ভালোবাসা শুধু মাত্র ক্যালোর জন্য হলেও, কিভাবে যেন বা একদিন সে জেনে যায় আঙুরের সঙ্গে কি রকম একটা লতানো-পেঁচানো সম্পর্ক রয়েছে,বেখাপ্পা কথা শুনে ক্যালো আকাশ থেকে ধপাস করে পড়ে, বধির হয়ে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষ, এভাবে আরো কয়েকদিন চলে সেই কথার সন্দেহ, ওর চোখের কোণে আবছা আবরণ পড়ে।
তারপর আরো কিছুদিন সে রেশ ঘনোভূত হতে থাকে। একসময় একটু-একটু করে জমাট আচ্ছাদনে ঢাকা পড়ে তাবৎ কষ্ট-ব্যথা-যন্ত্রণা, আজ সবই কেমন হাস্যকর আর বিদঘুটে ব্যাপার মনে হয়। স্বামী নামের মানুষটাকে নিবিড় ভাবে বুকের সন্নিকটে পেয়ে সমত্ত বায়বীয় উড়ো খবর বেমালুম ভুলে যায় সরস্বতী।
সাত সকালে যতো ঝুট-ঝামেলার অহেতুক জঞ্জাল সরিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সরস্বতীর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে উড়ন্ত চুমু ছেড়ে দেয় অদৃশ্য ভাবে, মুম্বের উঠতি নায়িকাদের মতো সরস্বতীও অদৃশ্য সেই চুমু হাতে ধরে আবার পাঠিয়ে দেয় সেই একই ভাবে। এক চোখ মেরে সে আরো জানিয়ে দেয় না বলা কথা স্পষ্ট করে তারপর, দিনের আলো তাদের জন্য নয়, বারিপ্রবাহ স্তিমিত করা আবশ্যক।
আয়েসে কোমরে বাঁধা নতুন গামছাখানা খুলে ঝেড়ে মুখ-গলা মুছে মাথায় শক্ত করে বেড়ি মতো বাঁধে, পরক্ষণে পাটালির ধামাটা মাথায় তুলে ধড়ফড়য়ে নীচের ঢালু রাস্তায় নামতে থাকে,পেছন ফিরে একঝলক তাকিয়ে দেখে। খানিক হেঁটে আসে সরস্বতী স্বামীর পেছন-পেছন। একসময় নরম স্বরে বললো, আজ কোথায় যাওয়া হচ্ছে...
ক্যালো মুন্সী বুক উঁচিয়ে আশ্চর্য করে দিয়ে কোনো রকম সংকোচ ছাড়াই বলে উঠলো, নবকৃষ্ণডাঙায় যাচ্ছি গো সতী, যাবে নাকি মোকামের হাটে ?
সরস্বতীর ঠোঁট গলিয়ে সেই পরিচিত হাসিটুকু নিমেষে আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে,কোনোভাবে বিশ্বাস হতে চায় না, তারপরও কোনো কথা বলতে পারে না সে। মাথা একটু যেন কাত হয়ে যায়। স্বামীর কথার প্রতিউত্তর কি যে দেবে ভেবে পায় না আচমকা।
বাপের দেশে যাচ্ছে তার স্বামী, হয়তো কারো না কারো সঙ্গে একটু দেখা হবে, ওর সঙ্গে কথা না বললেও কেউ-কেউ তো রোশ-ক্ষোভে ফেটে পড়বে, দু’চার খানা কথাও শুনিয়ে দেবে, সাত গাঁয়ের তো বেশ মুখরোচক সংবাদ হয়েছে,সরস্বতী স্বামী ঘর থেকে পালিয়ে আসার পর বাপের বাড়ি থেকে ক্যালো নামের এক মুসলমান ছেলের সঙ্গে ভেগেছে, এখন দশ তল্লাটের লোকে সেই মুসলমানকে কি ভাবে দেখবে বুঝে পায় না সতী !
একটু খানিক পর ক্যালো বললো, গত হাটবারে বাসুদেবপুরের রাস্তা ধরে কাঙালখালি হাটে গিয়েছিলাম, তো কি কাণ্ড হলো শুনে হাসবে।
মনের ভেতর প্রচণ্ড আগ্রহ আর ইচ্ছে নিয়ে জানার জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে। শীতের তুলো ধোনা মিষ্টি রোদে ঝরঝরে পরিপাটি আকাশ, আকাশের গায়ে যেন ঝিকিমিকি করছে রোদের সোনালী ছোঁয়া, সেই সোনালী আলোর মায়াবী বন্যায় ভাসছে গাঁয়ের স্বপ্নিল সরু মেঠো পথ,এবড়ো-থেবড়ো মাঠ-ঘাট, সবুজ বনবাদাড় আর চিরসবুজ বৃক্ষের শরীর। রাত্রের আকাশ থেকে সমস্ত রাত্রি যে শিশির বিন্দু টুপটাপ করে পড়ে-পড়ে সিক্ত হয়েছে পাতা-ডাল আর বৃক্ষের গুড়ি, এখন রোদের হালকা সজ্জিত স্পর্শে ঝকমক করে উঠেছে, একটু-একটু বাতাস দিচ্ছে পাতায়-পাতায়, দু’একটা পাখি ডেকে উঠছে কোথা থেকে যেন বা।
বারোমেসে ঝাঁকড়া কুল গাছটার দিকে একবার তাকিয়ে পরক্ষণে ওপাশের ছোট ডোবাটা থেকে বিচ্ছিরি দুর্গন্ধে নাক ঝাঁঝিয়ে ওঠে। টক-মিষ্টি কুল ধরে সারাবছর আর রাজ্যের পাখি-পক্ষিণী বাসা বেঁধেছে, কুলগাছের মাথায় হলদেটে জালের মতো স্বর্ণলতার ঝাড়, সূর্যের আলোকিত উচ্ছ্বাসে স্বর্ণলতার ঝাড় আরো বেশি গৌরব ফিরে পেয়েছে।
ক্যালো মুন্সী নিবিড়ভাবে কাছাকাছি গিয়ে সরস্বতীকে বললো, বিশ্বরঞ্জনের এক দূর-সম্পর্কীয় ভায়ের সঙ্গে কাকতালীয় ভাবে পরিচিত হয়ে যায়, তা ছোড়া বেশ ভালোই বলা যায় গো...
সরস্বতীর বুকের ভেতরটা একটু যেন কেঁপে ওঠে। কি একটা কথা মুখের কাছে এসেও কেমন করে যেন বা আটকে যায়, কোনো ভাবেই বলতে পারে না সে তখন। আবার ক্যালো বলে ওঠে, তোমাকে বিয়ে করেছি আমি, এ’ কথা তো বেশ রটনা হয়ে গেছে।
সরস্বতী মাথা নিচু করে বলে, রটনা কি বলছও, এটা তো সত্যি ঘটনা !
ক্যালো একটু মিচকি হেসে ওঠে মুহূর্তে, হ্যাঁ তা তো অবশ্যই, হিঁদুর মেয়ে মুসলমানের ছেলের সঙ্গে, তার চেয়ে বড় কথা কি জানো, ওরা বলছে সদ্য স্বামী মরা মেয়ে কি না পালিয়েছে-
সরস্বতী কেমন একটু হাসতে গিয়ে বলে ওঠে, সদ্য স্বামী মরেছে বলে যেন পালাতে নেই, কি কথা গো, শুনে পিত্তি যে জ্বলে যায়, ওই মরার সৎকার...
ক্যালো বলে,কিন্তু যাই বলো না কেনো খবরটা বেশ মুখরোচক হয়েছে বোঝা গেলো।

তা অবশ্যই হতেই পারে গাঁ- গ্রামে অনেক কিছুই তো দারুণ খবর হয়।
মুহূর্তে যেন সরস্বতী গম্ভীর হয়ে যায়, কিন্তু সে গম্ভীর্যতা পরিপক্বতা পায় না, প্রত্যুষের এই সাময়িক মান-অভিমান কঁচুপাতায় শিশির কণার মতো একটু ছোঁয়ায় আবার গড়িয়ে যায়।
ক্যালো মুন্সী রসিকতা ঝরিয়ে বলে, অথচ বে-রসিকরা তো জানে না বিশ্বরঞ্জনের সঙ্গে বিয়ের আগে পূর্ণ মাত্রায় প্রেম ছিলো, আমার সঙ্গে সরস্বতীর- নবকৃষ্ণডাঙার মাটির সঙ্গে আর...
তারপর দুজনের মধ্যে হাসাহাসি আর মিষ্টি স্পর্শ হয়।
একসময় সোনালি রোদের সঙ্গে বুক মিলিয়ে ক্যালো সরু মাটি ফেলা সদ্য রাস্তা ধরে হেঁটে চলে যায়। হাওয়ার ঝড়ো দাপটে পরনের লুঙি-শার্ট সেঁটে যায় শরীরে,ক্যালো ইচ্ছে করেই রাস্তা সংক্ষিপ্ত করার জন্য কিছুক্ষণ মেঠো পথ ধরে হাঁটার পর বাঁশ বাগানের ভেতর দিয়ে চিকন রাস্তায় ঢুকে যায়। সময় বাঁচাতে দূরের ওই লম্বা দীঘিটাকে পাশ কেটে কোনাকুনি পাড়ি জমায়। সরস্বতী নিস্পলক চোখে যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ তাকিয়ে থাকে, গোবেচারা একজন মানুষের জন্য বুক ভরা যতো ভালোবাসা, নিরুত্তর-অনাসক্ত সরস্বতী দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন অন্সেসান করে।

নিকোনো উঠোনে দাঁড়িয়ে সরস্বতী শেষ বিকেলের বিদায়ী সূর্যকে প্রত্যক্ষ করে,রক্তিমাভা পশ্চিমাকাশের বুকে ঝুলে আছে এক খণ্ড লাল টকটকে ডিমের কুসুম। আর কয়েক মুহূর্তে পরেই পথহারা ওই পথচারী গন্তব্য খুঁজে পাবে। অসীম আকাশের গহ্বরে নিজেকে হারিয়ে অভিভূত হবে, সরস্বতীর মনটা উত্তাল হয়ে ওঠে দীর্ঘদিন পর বিশ্বরঞ্জন নামের ওই লোকটার কথা শুনে। হাহাকার করে ওঠে বুকের ভেতরটা, সাত মাসের বিবাহিত সেই জীবনের কথা এভাবে আজ আচমকা মনে আসবে ভাবেনি সে কখনো। সাত-সাতটা মাস সে ওই লোকটার বউ ছিলো, হয়তো ভালবাসতে পারেনি স্বামী বলে স্বীকার করতে চায়নি মন থেকে। কিন্তু লোকটার তাতে বা কতোটুকু অপরাধ ছিলো তাকে বিয়ে করে, সমস্ত মন-প্রাণ ক্যালোকে দেওয়ার ফলেই হয়তো বিশ্বরঞ্জন শরীরী সুখটুকু ইচ্ছের বিরুদ্ধে পেয়েছে, অথচ মনটুকু কোনোভাবেই পায়নি। ক্লান্ত পথিকের মতো যতোটুকু আনন্দ-সুখ পেয়েছে, তাতেই হয়তো সন্তষ্ঠ থাকতে হয়েছে, এর বেশি চাওয়ার কোনো দাবীও সে কস্মিনকালেও করেনি।
কতদিন আর কতো রাত ওই পাংশু রঙা নির্লিপ্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে নদী আর সাগরের মোহনা খুঁজেছে, নিঃসঙ্গ চাঁদ নিরিবিলি ওই আকাশপথে দাঁড়িয়ে সরস্বতী নামের এক মেয়ের চোখের স্নিগ্ধ দৃষ্টি অনুধাবন করেছে, ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে ব্রজের রাখাল বালক কৃষ্ণও যেন নির্বোধ হয়ে গেছে, কন্ঠিনলী রুদ্ধ হয়ে এসেছে কখনো। অথচ আজ সবই কেমন ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত। বুকের বাম পাশটা বড় মোচড় দিয়ে ওঠে, নিজেকে হয়তো অসহায় মনে হয়, ভারবাহী গাধার মতো এই সময়ের সে এক সরস্বতী। রাত্রের পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে ভারিক্কি এক নক্ষত্রের বুকে বুক মিলিয়ে নষ্ট সময়ের গল্প করে। কেউ কি শোনে সে পুরানো গল্প, ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত তামাম বনভূমি-মনোভূমি,এরই মধ্যে এক কৃষাণ বঁধু দৌঁড়ে যায় আদ্যিকালের সেই সড়ক ধরে, সে যে কোথায় যায় জানে না কিছুই, তারপরও সে যেতে থাকে, যেতে-যেতে হয়তো খুঁজে পাবে পথের দিশা, সেই অগাধ স্বপ্ন নিয়ে দলছুট সেই মেয়েটি একসময় দাঁড়িয়ে দেখে দূরের আকাশে আজ রঙ ধরেছে কেমন যেন।

দিনান্তে ক্যালো মুন্সী ঘরে ফিরে এসে নিবিড় বন্ধনে হারিয়ে ফেলে নিজেকে, তখন হয়তো সরস্বতী দীপ্যমান দিনমণির মতো একটু-একটু আপন অস্তিত্ব উন্মোচন করে,স্বামী নামের মানুষটার বুকের সান্নিধ্যে খুঁজে পায় ভালোবাসার উপাখ্যান।

হঠাৎ একদিন ক্যালো মুন্সী তিনদিন পর বাড়ি আসে অপরিচিত এক মেয়ে লোককে সঙ্গে নিয়ে, সরস্বতী প্রথম ধাক্কায় হোঁচট খায়।
রাত্রের বিদঘুটে অন্ধকারে মেয়েটা সম্পূর্ণ অবয়ব স্পষ্ট চেনা না গেলেও সরস্বতী আন্দাজে অনুমান করে মেয়েটি ওর সতীন। কিন্তু নিজেকে কোনো ভাবেই সংবরণ করতে পারে না। বুক ঠেলে বীতশ্রদ্ধ জেগে ওঠে, ক্যালো একসময় জ্যোৎস্নাময় বিতিকিচ্ছি হাসি ছড়িয়ে বললো, মেয়েটা বড় অসহায়, ওকে তুমি আপন করে নাও...
ঘরের ভেতর সাতদিনের জমা খেজুরগুড়ের পাটালীর মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ-মৌ করছে, নতুন বউয়ের দিকে একটুখানি তাকিয়ে সরস্বতী বুঝে যায় মতিভ্রম হয়েছে বটে তার স্বামীর,সমস্ত চিন্তার শেকড় উপুড়ে যায়। ধোঁপদুরস্ত একজন মানুষের পাশে দণ্ডায়মান যে মেয়ে লোক, সে তার সতীন,বুকের মধ্যে তামাম দুনিয়ার ধ্বংসলীলা ঘনায়মান । স্বামী নামের তুখোড় প্রেমিক পুরুষটির দিকে একবার তাকিয়ে তিরিক্ষি ওঠে মন-প্রাণ। তেরছা চোখে শুধু একবার বিষণ্ণ কণ্ঠে বলে, তাবৎ অসহায় মেয়ের দায়িত্ব তোমাকে !

মুহূর্তে তুষানলের মতো হয়ে ওঠে, দোলায়মান কণ্ঠে সরস্বতী বললো, তুমি বড় তালেবর হয়ে গেছো ?
কাককন্ঠের চিৎকারে বাড়িটা কেমন কেঁপে-কেঁপে ওঠে,রাত্রের আকাশ স্তদ্ধবিধুর। পাথর সময় থমকে আছে পাথুরে মূর্তির মতো, কাঠমলি­কার গাছটা ঠাঁই এক পায়ে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে, গাছে-গাছে বন-বাদাড়ে নিশাচর প্রাণীদের কল-কাকলী স্পষ্ট শোনা যায়। সময়ের প্রতিবিম্ব পরে গাঢ় ওই তামস পৃথিবীতে।
কয়েকদিন পর শীতের হালকা সকালে সরস্বতী জানালার ফাঁক গলিয়ে চোখ নিক্ষেপ করে আতঙ্কে আর্তনাদ করে ওঠে। দুঃস্বপ্নে কেঁদে ওঠার মতো হিতাহিত বোধ-বুদ্ধি হারিয়ে চিৎকার করেই উঠোনে ধপাস করে পড়ে যায়। ঘরের ভেতর সর্পনাগিন জড়িয়ে আছে তার স্বামী ক্যালোকে।
সর্পনাগিন সংসারের সমস্ত প্রেম-ভালোবাসা চুষে খায়। ক্যালো মুন্সী তখন শুধু নির্বাক-নিথর এক মানুষ আর সরস্বতী ঘোলাটে চোখে ফেলে আসা সেই নবকৃষ্ণডাঙার জীবন প্রত্যক্ষ করে,আজকে সে আমঘাটার আকাশে-বাতাসে যে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ছড়িয়েছে, বাসুদেবপুরের সেই মানুষটার জন্য একটু যেন ভালোবাসা ছলকে ওঠে। বিশ্বব্রক্ষান্ডের ধ্বংসলীলা স্পষ্ট অনুধাবন করে বিমূর সরস্বতী, ক্যালো প্রেম-ভালোবাসা এভাবে রাতারাতি শুকিয়ে যাবে কখনো সে ভাবেনি, বিকৃত ক্যালোর কাছে ওমনি ভাবে প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে ওর, নির্মীয়মাণ ভালোবাসা ভেঙে যায় নির্নিমেষ।
ক্যালো নির্বাক এক প্রতিচ্ছবির মতো ঘরের ভেতর, চারদিক থেকে শত মানুষ ছুটে আসে, সবাই দেখছে। পরম বিস্ময়ে অনাগত এক দৃশ্য অবলোকন করছে,কারো মুখে সারা-শব্দ নেই। ডালিম গাছের ডালে ছোট-ছোট পাখিরা কিচিরকিচির করছে বড় বেশি। দীঘির ওপারে খেজুর গাছের বুকে বসে কয়েকটা পাখি রস নাকি অন্য কিছু খাচ্ছে এখন। সকালের মিষ্টি রোদ খড়ের বেড়ার মাথায় চিকচিক করছে, সরস্বতীর আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরে আসে, একটু-একটু করে জটলা আরো গাঢ় হয়, চড়–ঁই পাখিদের মাতামাতি চলছে ঘরের চালের কুমড়োর পাতায়-ডালে। সারা বাড়িতে খেজুর রসের পাটালির ঘ্রাণে মৌ-মৌ করছে এখন,গেরস্থবাড়ির উঠোন জুড়ে মানুষের ঢল। নবীনা স্বপ্ন দোল খায় সরস্বতীর চোখে মুখে। ক্যালো মুন্সীকে একসময় সর্প নাগিনী ছেড়ে দেয়, মুক্ত-স্বাধীন ক্যালো এখন ঘর ছেড়ে বাইরে এসে সকালের রাঙা রোদের বুকে বুক মিলিয়ে চৈতালি বাতাসে হারিয়ে ফেলে নিজেকে, তারপর চিরাচরিত নিয়মে খেজুর গুড়ের পাটালির ধামা হাতে বাড়ির উঠোনের সবাইকে মিষ্টি মুখ করায়, কৃষ্ণচূড়া গাছে বসা একটা কোকিল মুহূর্তে ডেকে ওঠে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সকাল রয় জানিনা ভালোবাসা কেমন? তবে আপনার গল্প সাবলীল উপস্থাপনা চমতকার
ভালো লাগেনি ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
আল জাবিরী ভালো লিখেচেন চমত্কার
ভালো লাগেনি ৩১ জানুয়ারী, ২০১৪

১৭ অক্টোবর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪