খালগ্রামের মাটি ফেলা আঁকাবাঁকা সড়কটা পার হয়ে ভাঙা স্কুলঘরটাকে পেছনে ফেলে আরেকটু এগুলে ছোট একটা বাজার মতো কিছু জটলা সবসময় লেগেই থাকে, কয়েকটা ছোট-বড় সড়ক এসে মিশেছে বাজারটার সঙ্গে, মহাসড়কের হাতছানিও পড়েছে এদিকে সম্ভবত, কারণ বিভিন্ন শহরের ট্রাকগুলো হরহামেশা আসছে-যাচ্ছে দ্বিধাহীনভাবে, মানুষজন এখন অনেকটা সচেতন, শুধু অন্ধকারে রয়ে গেছে সীতারাম মুচি, মহাদুর্যোগের পর এলো খরা আর এখনও সেই ধাক্কা চলছে তার ওপর দিয়ে, মানুষজন কোনো কাজ পায় না, ছুটে বেড়ায় এদিক-ওদিক, কিন্তু কে দেবে কাজ, কাজ মানে তো বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন, সীতারাম মুচিরা বংশ পরম্পরা মুচিগিরি করে আসছে, সময় সুযোগ মতো দু’ চার-দশ গ্রামের মরা গরু-ছাগল ভেড়া বা মহিষের সংবাদ পেলে ছুটে যায় এবং চামড়া খুলে নিজের ঝুলিতে ভরে তারপর ছাল ছাড়ানো পশুটাকে ভাগাড়ে ফেলে গেরস্থের সেবা করে আসে। তাছাড়া যখন নেহাৎ হাতে কোনো কাজ না থাকে তখন ঘরামির কাজ করে, কিংবা সাতগ্রামের লোকের নারকোলগাছ ঝুড়িয়ে বা ফাইফরমায়েশ খেটে চলে যায় তার জীবন। কিন্তু বছর খানিক ধরে সীতারামের কোনো কাজে মন নেই, মন কেমন উড়–-উড়–, চোখের ভেতর কষ্টগুলো জলের ধারার মতো নেমে আসে, অথচ বোবা জানোয়ারের মতো শুধুই তাকিয়ে দেখে নানান মানুষের যাপিতজীবন, খালগ্রামের ওপাশে ভাঙা স্কুলঘরটার পাশে বিশাল একটা মন্দির ছিলো, আজ তার ধ্বংসাবিশেষ কালের স্বাক্ষী হয়ে জানান দিচ্ছে, বাজারে আসা রাজ্যের লোকেরা মল-মুত্র ত্যাগের একটা স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে, বেশ কয়েকটা সাঁওতাল পরিবার এসে জুটেছে কোথা থেকে, ওরা ধেঁনো-চোলাই দেদারসে তৈরী করে বিকোয় রাত্রি একটু নামলেই, কোথাকার কতো-শত মানুষজন এদের ক্রেতা হয়েছে, কেউ কিছু তো বলার নেই, ওদের নাকি খুঁটি বেশ শক্ত, সীতারাম অতো-শত বোঝে না, শুধু বাল্যকালে সীতারাম কতোবার মা-বাবার সঙ্গে এই মন্দিরের পুজো দিতে এসেছে, কতো মানত-আরতি এখানে জমা হয়ে রয়েছে, সীতারাম যেন আজো তা দেখতে পায় এখানে এলে। চোখের মধ্যে কালের ছবি জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে, কেউ দেখতে পায় না, সেই শুধু দেখে।
বাজারে এসে এ দোকান সে দোকান ঘুরে তারপর জিলিপির দোকান থেকে ভাঙা টুকরোগুলো টোঙার মধ্যে পেয়ে আনন্দে স্কুলঘরটার পাশের ভাঙা মন্দিরের কাছে গিয়ে বসে, ভেতরের দিকে চোখ যায়, প্যালেস্তারা ক্ষয়া দাঁত বের করা আদ্দিকালের ইট বের হয়ে আসছে, সমস্ত দেওয়াল নোনা ধরে কোনো মতে দাঁড়িয়ে, কবে যে ঝড়ে-হাওয়ায় বৃষ্টির জলের তোড়ে ধ্বসে যাবে হিসেব নেই। দিনেদিন বাবুরা একেএকে চলে গেলো, সমস্ত রাজ্যপাট পড়ে রইলো, কেউ আর দেখার নেই, এখন কঠিন সময়, মানুষ হয়ে মানুষকে কেউই আর মূল্য দেয় না, বুকের মধ্যে কষ্ট বাড়ে, কলজে ফেটে যাবে কবে বা, খালগ্রাম সে আর খালগ্রাম নেই, শরীরে এখন জৌলুশ ঝরে পড়ছে, শুধু তারই চোখে আগুন, সে আগুনে সব কিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে কোনো একদিন, পোড়া চোখে বউটার মুখ ভেসে আসে, কতোদিন যেন বউকে দেখেনি, কতোদিন হবে হিসেব করতে পারে না, চোখের পাতা ভিজে যায়, এমন কেনো হয় আজকাল, আলতারাণী নামটা কে যে রেখেছিলো কোনোদিন হিসেব কষে দেখেনি, আজ আলতারাণী মহাজনের মোকামে বাঁধা ঝি’ গিরির কাজ করে, একেবারে কিছু টাকা ধরিয়ে ওমন ভালো বউটাকে মহাজন কেড়ে নিলো বছরখানিকের ভাড়ায়, দিনেদিনে কতো মাস গেলো কিন্তু সময় তো আর যেতে চায় না, মাঝে ক’ বার গেছিলো বউটাকে একপলক দেখতে কিন্তু মহাজনের লোকেরা আলতারাণীকে দেখতে দেয়নি, বলেছে মহাজনের কড়া হুকুম, সময়ের একদিন আগেও দেখতে পারে না। অনেক কান্নাকাটি করেছে তারপর ফিরে এসেছে, মানুষজন সব কেমন যেন হয়ে গেছে, কারো মনে এতোটুকু দয়া-মায়া নেই। সত্যিই কি এমনই হয় নাকি তার বেলায় বিধি এমন হুকুম বহাল রেখেছে। বাপটা যতোদিন বেঁচে ছিলো, বারবার বলতো, ওমন বউটাকে কোথায় দিয়ে এলি রে নচ্ছার, আরে বউ গেলে বউ মেলে ঠিকই কিন্তু ওমন বউ তুই কি সাতজন্মে পাবি রে...
আলতারাণীর মতো বউ সে জীবনে আর পাবে না ঠিকই, ওমন বউ লাখে এক, তার ঘরে এসেছিলো জীবনকে ভরিয়ে দিতে,কালীর থানে পুজো দেবে যদি সে ভালোয়-ভালোয় ফিরে পায় আলতাকে, সীতারাম দিন গোনে, তার দিন গোনা যেন আর শেষ হতে চায় না। একদিন ফিরে পাবে, সে দিন কবে হবে জানে না। হয়তো এভাবেই জীবন যাবে বউকে আর ফিরে পাবে না, এমনই হয় হাতের লক্ষèী পায়ে ফেললে আর ফিরে আসে না।
বাল্যকালেই আলতারাণী বউ হয়ে আসে সীতারাম মুচির, তখন ওরই বা কতো বয়স, সবেমাত্র গোঁফের একটু রেখা গজেছে, বাপ-মায়ের কি খায়েস হলো ছেলেকে বিয়ে দিয়ে বউ আনবে, বউ আর কোথায় পাবে, গোবরধনের মেয়ে আলতাই হলো তার সঙ্গি, কি নাদুস-নুদুস শরীর ওর, একবার দেখলে চোখদুটো জুড়িয়ে যায়, বাপের কথা ফেলে দেওয়ার নয়, বিয়ে হলো কিন্তু আলতা থাকলো বাপের বাড়ি, এভাবে বছর তিনেক চলে গেলো, সীতরামের মায়ের এরমধ্যে রাজরোগ ধরা পড়লো, আর বাঁচবে না কবরেজ জানিয়ে দিলো, গোবরধনের মেয়ে আলতাকে আনা হলো, কয়েকদিনের মাথায় সীতারামের মা’ টা মরে গেলো, বাপ তখন থেকেই কেমন পাগল-পাগল ভাবখানা, কোথায় কখন ছুটে যায় আবার ধরে নিয়ে আসে, কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার লাপাত্তা, তবে বাপ বড় বেশি ভালোবাসতো আলতাকে, নিজে সখ করে ছেলেবউ করেছিলো বলেই হয়তো ভালোবাসার আবেগ ছিলো একটু বেশিই। একদিন হঠাৎ বলে উঠেছিলো, ওরে কুলাঙ্গা আলতাকে তুই হারিয়ে ফেললি...
বাপের কথা শুনে সত্যিই সীতারাম কেঁদেছিলো, তারপর ছুটে এসেছিলো, কিন্তু মহাজনের লোকেরা তাড়িয়ে দেয়, বুকের মধ্যে বড় কষ্ট, সে কষ্টের রেশ তো কেউ বোঝে না, নিজের বুকের কষ্ট নিজেকেই পুঁষে রাখতে হয়, কেউই তার ভাগ নেয় না। আজ চোখে শূন্য তার, বাপ-মা চলে গেছে বউটাকে হারিয়ে ফেলেছে, চারদিকের পরিবেশ কেমন ভ্যাপসা লাগে, জীবন যেন আর চলতে চায় না, অচল ঘড়ির মতো থেমে গেছে কাঁটা।
সীতারাম একসময় হাঁটতে থাকে, কোথায় যাবে তার কোনো গন্তব্য নেই, সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, দুরে ওই নদী আর ওপরে আকাশ, দুটো যেন কেমন একসঙ্গে মিতালী পাতিয়ে থির হয়ে তাকিয়ে দেখছে তাকে, দেখার যেন কোনো শেষ নেই। অনেক
দূরের আকাশ হাত পেতে কিছু কি চাইছে, সীতারাম আকাশের কাছ থেকে কিছু কি চাইছে, হয়তো চাইছে, তার চাওয়ার ওই একটা, আলতাকে ফিরিয়ে নেওয়া, সাতজন্মে কি আর ফিরে পাবে, যে জিনিস বা রতœ একবার হাত থেকে ছুটে যায়, তা কি আর ফিরে আসে।
বাপের হাত ধরে একবার টোনাইগড়ের মেলায় গিয়েছিলো, সে অনেক দূর, রাস্তা যেন আর শেষ হবার নয়, কিন্তু মেলায় গিয়ে মন তার ভালো হয়ে যায়, বুক ভরে শ্বাস নিতে কতো ভালো লেগেছিলো, জগতে এমন সুন্দর জায়গা যে আছে সে বয়সে সীতারামের ধারণা ছিলো না। ফেরার সময় দেখে তার হাত থেকে দুটো আধুলি উধাও, ভীড়-ভাট্টার মধ্যে কোথায় যে আধুলি দুটো পড়ে গেছে বুঝতে পারেনি, অনেক খোঁজ করেও যখন পাওয়া গেলো না তখন সীতারামের সে কি কান্না, সে কান্না যেন থামতেই চায় না, তেমনিভাবে আজ তার বউ আলতা হারিয়ে গেছে, আর কোনোদিন ফিরে পাবে না, সেই কান্না চোখ থেকে উধাও হয়ে গেছে কি! ভেবে পায় না, কিন্তু আলতাকে ভুলে থাকাও তো যায় না, বুক ফেটে যায়, কাউকেই কিছু বলা যায় না, কে শোনে কার কথা, পৃথিবীর সব মানুষগুলো বধির অথবা শুনেও তারা কারো কষ্টের কথা যন্ত্রণার কথা শুনতে চায় না।
হাঁটতে-হাঁটতে খোলসি ঘাটে এসে দাঁড়ায়, নদীর পাড়ে অনেক নৌকা, সব নৌকা তো আর সবাইকে নেয় না, অধীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে চোখের সামনে অনেক দৃশ্য ভেসে ওঠে, জীবন যেন কেমন পদ্মপাতার শিশিরবিন্দুর মতো, একটা আকুতি মনের খুব কাছ নিয়ে বয়ে যায়, মন তাও ছুঁতে পারে না। সত্যি নদী আপন বেগে পাগলপারা, কোথাও সে থামতে জানে না, সীতারাম থেমে আছে শুধু, ওর থামা আর না থামা নিয়ে কেউ মাথা ব্যথা করে না, আলতাকে পাবে কি পাবে না তাও সে জানে না, বুকের মধ্যে একটা ব্যথা বড় বেশি চিনচিন করে, সাত পুরুষের ব্যথা নিয়ে সীতারাম যে আজো বেঁচে আছে এটাই এখন ঢের ওর কাছে। কিন্তু বেঁচে থেকে কি লাভ, এভাবে কেউ কি বাঁচে, নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে ইচ্ছে হয় না। একে-একে মানুষ চলে যায়, মানুষের ঘটি-বাটি পুরানো হয়ে যায়, উজান-ভাটির এই দেশে কতো রূপ বদলাতে দেখেছে, তার জীবনটাও বদলে গেছে সময়ের হাত ধরে, আজ তার সামনে-পেছনে কেউ নেই কিছু নেই আর, অন্ধকারের ভেতর দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা সে নিজেই জানে না। মহাজনরা সব ওই একই, গনগনে আকাশের সূর্যের মতো, মনে কোনো দয়া নেই মায়া নেই, যেন তাদের মনটা কঠিন পাথর দিয়ে তৈরী করা। ভালোবাসা লেশমাত্র নেই, দুনিয়া ছাড়খার হলেও তাদের মন গলবে না কোনোদিন।
একসময় মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করে, থাকবে না সে এদেশে আর, আলতারাণীকে হয়তো আর কোনোদিন ফিরে পাবে না, কি হবে ওষ্টপ্রহর নিজের সঙ্গে ব্যর্থ লড়াই করে। লড়াই যে কার সঙ্গে করতে হয় তাও ভুলে গেছে, জীবনে শুধুই ঠকে গেলো জিততে পারলো কই, হয়তো কেউ-কেউ ঠকতে-ঠকতে একদিন না একদিন জিতে আসে কিন্তু তার বেলায় বিধি মুখ ফিরিয়ে বসে থাকে, জিততে দিতে চায় না, তারা তো বংশ পরম্পরা মুচিগিরি করে আসছে, কারো চোখের দিকে সেভাবে কোনোদিন তাকাতে পারেনি, কারণ তারা ধেঁনো-পচানি বাংলামদ খেয়ে এখানে-ওখানে পড়ে থাকে যাচ্ছেতাইভাবে, কেউ তাদের মানুষ বলে জ্ঞান করে না, বংশ পরম্পরা দেখে দেখে বড় হয়েছে, আর মহাজনেরা তাদের চুষে-শুষে খেয়েছে, দেবতার কাছে প্রার্থনা করেছে কিন্তু দেবতাও যে নির্বিকার, দেখেও দেখে না, একসময় বাপ বলতো, পূর্বজন্মে অনেক পাপ করেছিলাম বলেই না আমাদের হরিজন করে পাঠিয়েছে বিধি, পূর্ণজন্মে আমরা এই সমস্ত হরিজন বা নমোশূদ্ধরা পূর্ণতা নিয়ে জন্মাবো, তখন দেখিস আমরা মানুষের মর্যাদা পাবো। বাপের সেই কথা এখন সীতারামের স্মরণে আসছে, বাপটা মানুষের মর্যাদা পায়নি বলে কখনো ক্ষোভ প্রকাশ করেনি, ভেবেছিলো হয়তো জীবনটাই এমনই। জীবনের মানে তার কাছে যেমনই থাকুক না কেনো মানুষের প্রতি বিশ্বাস ছিলো এবং সে বিশ্বাস গুণটা পেয়েছে তার ছেলে সীতারাম। কিন্তু মানুষ তো বিশ্বাসের মূল্য দিতে জানে না। সবখানে ফন্দিবাজ বাস করে আছে, পাখির নীড়ে যেমন ওরা আছে আবার সাপের বাসাতেও ওদের হাত রয়েছে, তবে কি বাপের কথা ভুল ছিলো, সারাজীবন ভুলের সঙ্গে বাস করে বাপটা মরলো।
আজ বাপের কথা বেশি মনে পড়ে, কোথায় চলে গেলো, পাগল-পাগল মানুষটা কোথায় পড়ে আছে নাকি নালা-ডোবায় হেজেমজে গেলো জানে না কিছুই, শেষকালে বাপটা ওই একটা গানই শিখেছিলো,‘ হরি দিন তো গেলো, সন্ধ্যে হলো পার করো আমারে/ পাড়ের কড়ি নেই তো বিধি, কোথায় পাবো তারে----বাপের কণ্ঠের গান শুনে মনটা তখন থেকেই উদাস-উদাস হয়ে যেতো। মানুষ কি কখনো-সখনো সত্য কথাটাই বলে ফেলে, কে বলায় তারে, মানুষের ভেতরের আরেক মানুষ কি সত্য বলবার জন্য সত্যকে আশ্রয় দেয়। বাপের চারপাশে কতো সত্যবান ছিলো সীতারাম জানে, কিন্তু তারপরও বাপ মিথ্যের সঙ্গে আপোস করেনি, তার মাসুল তো কড়ায়গন্ডায় দিচ্ছে সে, আর কতো দূর যাবে, যাওয়ার তো কোনো শেষ নেই।
হাঁটতে-হাঁটতে অনেক দূরে এসে গেছে, পথ না ফুরোলেও শরীর আর পারে না, বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে, একটু জল পেলে তৃষ্ণা মিটতো, জলটা জীবকে অনেক কষ্ট থেকে বাঁচায়, কিন্তু কে দেবে তারে এক বিন্দু জল, সামনে একটা বিশাল অশ্মথগাছ, সেখানে বসে পড়ে, আর দাঁড়াতে পারে না, মাথা ঘুরতে থাকে ভনভন করে, শরীর যেন আর চলতে চায় না, মুখ হা করে মাটির ওপর শুয়ে পড়ে, কথা বের হয় না, আশ্বিন-কার্তিক মাসের রোদের তীব্র তেজ মাটিকে করেছে আরো গনগনে অগ্নিচুল্লি, সেই চুল্লির বুকে সীতারাম সেধিঁয়ে যায়। মুখ ওর আকাশটাকে ছুঁতে চায়,আলতার মুখ ভেসে আসে ওই ঘোলা চোখে, কি যেন বলতে চায় বলা হয় না, তারপরও অস্পষ্টস্বরে বলে ওঠে, আমি তোর অপেক্ষায় আছি রে...
তারপর আর কোনো কথা হয় না, একটা ছায়ার মতো অশরীরি কিছু ছুটে চলে যায়, আলতারাণী খিলখিল করে হেসে ওঠে যেন, সীতারাম খুঁজে যায় কান্নাসিক্ত চোখ ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে কিন্তু কোথায় আলতা, কোথায় যে দাঁড়িয়ে, বুকের ভেতরটা ফাঁপিয়ে ওঠে, সীতারামের ঠোঁট ফাঁক হয়, তখনো একটা মাছি মুখের ভেতর ঢুকে পড়েনি কিন্তু মুখের কাছে ভনভন করতে থাকে।