মাস্টারমশাই

কোমলতা (জুলাই ২০১৫)

কবিরুল ইসলাম কঙ্ক
  • ২৪
  • ১৪
পারতপক্ষে কেউ তার সামনে যায় না । খুব দরকার হলে দূর থেকেই কাজ সেরে নেয়। মেজাজি কিংবা বদরাগী বলতে যা বোঝায় তিনি হচ্ছেন তাই । কারও গাফিলতি বিন্দুমাত্র বরদাস্ত করেন না তিনি। সুতরাং সবাই ত্রস্ত থাকে। তাঁর নজরদারিতে কোথাও পান থেকে চুন খসার উপায় নেই । তিনি ইংরেজির শিক্ষক অভয়বাবু । ছাত্ররা তো বটেই বাকি শিক্ষকেরা, এমন কি হেডমাস্টারও তাঁকে ভয় করেন । কারণ তাঁর স্পষ্টবাদিতা । সত্য এবং ন্যায়কে তিনি সামনে তুলে ধরতে পিছপা হন না ।

ইংরেজি একে বিদেশি ভাষা, তাতে আবার ছেলেপিলেদের অনীহা -- দুই মিলে পাঠকে দুর্বল করে দেয় । ফলে ক্লাসে যে তার প্রতিফলন ঘটবে তা বলাই-বাহুল্য । একে ইংরেজির ভয় তার উপরে অভয়বাবুর উপস্থিতি ছাত্রদের ভয় আরও বাড়িয়ে দিত । তারা চেষ্টা করতো অন্য পড়া না হোক ইংরেজি পড়াটা করে আসতে । কারণ তারা জানতো অভয়বাবু একেবারে হৃদয়হীন । পড়া না পারলে হাড়মাস এক জায়গায় রাখবেন না । যারা পড়া একেবারেই পারতো না তারা ক্লাসে থাকতো না । পাশের আমবাগানে ওই পিরিয়ডটা কাটিয়ে আসতো ।

ছাত্রদের এই ভয়ের কথা অভিভাবকরা জানতেন । ছাত্রদের মারধর করা আইন বিরুদ্ধ কাজ সেটাও তারা জানেন । কিন্তু ডানপিটে ছেলেগুলোকে শায়েস্তা করার ওষুধ যে অভয়-মাস্টার তাতে সন্দেহ নেই । তাই তারা অভয়-মাস্টারকে অভয় দেন, "মাস্টার, মেরে হোক ধরে হোক আমার ছেলেটাকে একটু মানুষ করে দেন ।" অভিভাবকদের এমন সমর্থন পেয়ে অভয়বাবু হয়ে উঠেছিলেন আরও ভয়ংকর । সুতরাং ছাত্ররা তো বটেই অন্য শিক্ষকেরাও তাঁকে বিশেষ ঘাঁটাতেন না ।

এহেন ব্যক্তিত্বের কাছে সবাই মুষড়ে থাকতেন । কেউ কোনদিন তাঁর কোমল হৃদয়ের স্পর্শ পেয়েছে কিনা সন্দেহ । এ নিয়ে চর্চাও কম নয় । সবাই জানেন অভয়বাবুর হৃদয়ে কোমলতা বলে কোনও বস্তু নেই । মাস্টারমশাই নিজেও এব্যাপারটা অনুভব করেন । কিন্তু এ নিয়ে তাঁর কোনও হেলদোল আছে বলে মনে হয় না । তিনি যেমন ছিলেন তেমনই রয়ে গেছেন ।

সেবার বর্ষায় খুব বৃষ্টি । বৃষ্টির দাপটে ঘর থেকে বের হওয়াই দায় । পথে ঘাটে জল জমে গেছে । মাঠে ধানের শীষটুকু শুধু দেখা যায় । গ্রামের পাশে নদীর বাঁধের অবস্থা ভালো নয় । নদীর জলের তোড়ে বাঁধের কিছু কিছু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে । বাঁধ ভেঙে গেলে বন্যা অবশ্যম্ভাবী । গ্রামের মানুষজন খুব দুশ্চিন্তায় আছে । বিগত বন্যার অভিজ্ঞতা তাদের মোটেই ভালো না ।

অবশেষে সবার আশংকা সত্যি করে বন্যা এলো । গ্রামের মানুষদের দুর্দশার শেষ নেই । ক্রমাগত বৃষ্টি বন্যাকে আরও ঘোরালো করে তুললো । মানুষজন সাতদিন ধরে ঘর-বন্দি । সবার ঘরেই দেখা দিল খাদ্যাভাব । মজুত খাদ্য শেষ হতেই মানুষেরা জলের মধ্যেই বেরিয়ে পড়ল খাবারের সন্ধানে । বড়রা খিদে সহ্য করতে পারলেও ছোটরা পারে না । নিজের ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তারা আর ঘরে থাকতে পারল না । কিন্তু বেরিয়েই কিছু হল কই ? আশেপাশের দশ বারোটি গাঁ ভেসে গেছে । সবার ঘরেই এক অবস্থা । গ্রামের যারা একটু অবস্থাপন্ন লোক তাদের ঘরে টাকা আছে কিন্তু খাবার নেই । এই জলের রাজ্যে টাকা দিয়ে কি হবে ? দরকার তো খাবার ।

গ্রামের মধ্যে অভয়-মাস্টারের বাড়ি একটু উঁচু জায়গায় । বন্যার জল সবার বাড়িতে ঢুকলেও মাস্টারের বাড়িতে ঢুকতে পারেনি । বন্যাতে স্কুল বন্ধ । বাড়িতেও কাজকর্ম কিছু নেই । মাস্টারমশাই দুপুরে বারান্দায় চেয়ারে বসে একটা উপন্যাস পড়ছিলেন । বারান্দার নীচে রাস্তা । রাস্তা এখন জলে ভর্তি । রাস্তার জল ঠেলে আসছিল বারো-চৌদ্দ-জনের একটি দল । পাংশু তাদের মুখ । বোঝা যাচ্ছে যে উদ্দেশ্য নিয়ে তারা বেরিয়েছিল, সে উদ্দেশ্য তাদের সফল হয়নি । তারা বারান্দার কাছে আসতেই অভয়-বাবু জলদগম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমাদের কি ব্যাপার ?" তারা তাদের কথা বলল । গ্রামের মানুষের দুর্দশার কথা শুনে মাস্টারমশাই একটু ভাবলেন । তার ঘরে যথেষ্ট চাল-ডাল-তেল মজুত আছে । সবই নিজের জমি থেকে আসে । বাড়ির পিছনে সবজীর জমিতেও জল ওঠেনি । তিনি লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বললেন, "তোমরা এক কাজ করো । চাল ডাল আমার বাড়িতে প্রচুর আছে । সবজীও পাওয়া যাবে । এখানেই খিচুড়ি রান্না আরম্ভ করো । আর গ্রামে সবার বাড়িতে খবর দাও এখানেই সবাই খেয়ে যাবে ।" মাস্টারের কথা শুনে অভুক্ত মানুষগুলো হাতে যেন স্বর্গ পেল । তারা মহানন্দে রান্নার কাজে লেগে পড়ল ।

রান্না শেষ হতে বেলা প্রায় গড়িয়ে গেছে । অভয় মাস্টারের বাড়ির উঠোনে প্রায় তিনশো লোকের পাত পড়েছে । মা-বাবাদের সাথে অনেক ছাত্রও আছে । মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে তারা বেশ আড়ষ্ট । মাস্টারমশাই হাসিমুখে সবার খাওয়াদাওয়া তদারকি করছেন । মাস্টারমশাইয়ের মুখে বিরল হাসি দেখে ছাত্ররা অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে খাচ্ছে । অভয়-মাস্টার সবার উদ্দেশ্যে বললেন, "সবাই পেট পুরে খাবেন । যতদিন জল নেমে না যায় আমার বাড়িতে সবার নিমন্ত্রণ রইলো ।"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি তিনি লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বললেন, "তোমরা এক কাজ করো । চাল ডাল আমার বাড়িতে প্রচুর আছে । সবজীও পাওয়া যাবে । এখানেই খিচুড়ি রান্না আরম্ভ করো । আর গ্রামে সবার বাড়িতে খবর দাও এখানেই সবাই খেয়ে যাবে ।" মাস্টারের কথা শুনে অভুক্ত মানুষগুলো হাতে যেন স্বর্গ পেল । তারা মহানন্দে রান্নার কাজে লেগে পড়ল । ....যতদিন জল নেমে না যায় আমার বাড়িতে সবার নিমন্ত্রণ রইলো ।"........// কবির ভাইকে ধন্যবা......জীবন ধরমী একটি ছোট গল্পের জন্য......আপনাকে ধন্যবাদ......খুব ভাল......।
আপনার মন্তব্য অনুপ্রেরণাদায়ক । আপনার প্রতিও শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো ।
Joudul shaikh ভালো লাগালো গল্পটি পড়ে। অনেক শুভকামনা রইলো ।
টোকাই ভালো লাগলো সাথে ভোট রইলো ।
ধন্যবাদ । আপনাকেও ভোট দিয়েছি ।
সৌরভ হোসেন আপনার গল্প পড়ে আনন্দ পেলাম । অনেক ভালো লাগা রেখে যেতে হল । ভালো থাকুন, ভালো লিখুন ।
পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
আল্ আমীন ভাল লাগলো...ভোট দিয়ে গেলাম..
ধন্যবাদ । আপনি যখন আমাকে ভোট দিয়েছেন, তখন আমার ভোটও আপনি পাবেন ।
কবিয়াল বেশ জমাট গল্প । অতিকথন নেই । শুরু থেকে শেষ টানা পড়া যায় । ভোট ও শুভেচ্ছা থাকলো ।
পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
মোহাঃ নুরুল ইসলাম মিয়া খুব ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে। ভোট ও শুভেচ্ছা থাকলো। পরে সংখ্যায় আমি লিখবো। সবার ভালবাসা আশা করি।
পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
রাজকুমার শেখ অভয়মাস্টারের মনের কোমলতা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে । ভালো লাগা ও শুভেচ্ছা থাকলো ।
পাঠ এবং আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ।
দিপেশ সরকার ভালো লাগলো বললে কম হয়ে যাবে সত্যিই খুব ভালো উপস্থাপন।
পাঠ এবং আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ মানুষের বাইরে দেখে ভেতরের সঠিক চিত্রটা অনুমান করা যে কঠিন সেটাই সুন্দর করে তুলে ধরেছেন । বেশ ভাল লাগল । ভোট রেখে গেলাম ।
পড়া, মন্তব্য এবং ভোটের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ । আপনার লেখা পড়েছি ও মন্তব্য করেছি । ভোট হয়তো দেওয়া হয়নি । এখন আবার আপনার পাতায় গিয়ে ভোট দিয়ে দিচ্ছি ।

১৪ অক্টোবর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী