তমনিদ্রা

স্বপ্ন (জানুয়ারী ২০১৮)

দীপঙ্কর
লুসিড ড্রিমিং
কথাটি বলে ডাঃ বিশ্বাস থামলেন। তার পর হা করে থাকা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, যা রতন কে দু কাপ চা করেতে বলে আয়।

-আগে গল্পটা বলও ...
-আগে, চা, বলেই বইতে মুখ গুঁজলেন।

চা এর কথা বলে ফিরে এসে দেখি, ডাঃ বিশ্বাস, হাতে একটা মূর্তি নিয়ে কিছু একটা পরীক্ষা করছে। আমাকে দেখে, বললেন

-লুসিড ড্রিমিং হল স্বপ্নের মধ্যে এমন একটি অবস্থা যখন যে কেউ তার স্বপ্ন কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। খুব ভালো ভাবে বলতে গেলে স্বপ্নে একজন কি দেখবে সেটা সে নিজেই ঠিক করবে এবং এর পর কি হবে তাও ঠিক করবে। আর এমন স্বপ্ন সাধারণত আমাদের মনে থেকে যায়। আর সব থেকে মজার কথা হল, কেউ এই লুসিড ড্রিমিং প্রক্রিয়া আয়ত্ত করলে সে তার সব স্বপ্নকেই নিয়ন্ত্রণ করেতে পারবে।

- আমি বললাম, ধুস এমন হয় নাকি। কত বার স্বপ্ন দেখেছি, কি দেখছি, কেন দেখছি, আর কি হবে তা কোন কিছুই তো আমি ঠিক করি না।

- হয় রে হয়, এটা গল্প নয়; বিজ্ঞান। পৃথিবীতে অনেক সংস্থা আছে যারা এই লুসিড ড্রিমিং এর প্রক্রিয়া শেখায় ও চর্চা করে। আর সুধু এখন নয় প্রাচীন সময়েও এই ধরনের চর্চার উল্লেখ পাওয়া যায়, উদাহরণ হিসাবে বলা চলে এই ভারতবর্ষেই প্রচলিত আছে "যোগ নিদ্রা"। তবে প্রক্রিয়া গত ভাবে কিছু প্রভেদ আছে।

চা এর পেয়ালা তুলে এক চুমুক দিয়ে, বললেন, তবে আজকের গল্প লুসিড ড্রিমিং নিয়ে নয়, আজকের গল্প ডার্ক ড্রিমিং বা তমনিদ্রা নিয়ে।

- তখন আমি, দিল্লীতে। প্রাচীন কিছু জনজাতি ও তাদের রীতিনীতি নিয়ে গবেষণা করছি। বেশ কিছু বই ঘাটাঘাটি করতে করেতে হাতে এলো একটা বই, প্রাচীন তিব্বতি ভাষায় লেখা। ভাষাটা একটু আধটু জানতাম; পড়ে বুঝলাম এক দারুণ জিনিস হাতে এসেছে। এই বইটি ছিল একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠীর, বলা চলে এরা এখন বিলুপ্ত, তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে এখনো এদের কিছু জনবসতি আছে। এই বইটি ছিল এই জন গোষ্ঠীর কিছু নিজস্ব গোপন কর্ম ও তন্ত্রের প্রক্রিয়া। সেখানেই পেলাম এই ডার্ক ড্রিমিং বা তম-নিদ্রা র কথা। খুব বিশেষ কিছু লেখা ছিল না এই তমনিদ্রার ব্যাপারে শুধু এই টুকু বুঝতে পাড়লাম এটি খুব গোপন ও জটিল প্রক্রিয়া। সেই শুরু হল আমার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু। একে একে শিখে ফেললাম, লুসিড ড্রিমিং, যোগ নিদ্রা, সমাধি, প্রচ্ছন্ন নিদ্রা ইত্যাদি; এর প্রত্যেকটির নির্দিষ্ট কিছু বিশেষত্ব আছে। কিন্তু তমনিদ্রার কোন উল্লেখ কোথাও তেমন কিছু পেলাম না।

- দুই বছর পার হয়ে গেছে, একটি বিশেষ বই এর খোঁজে তখন হিমালয়ের গা ঘেঁসে পাহাড়ের একটি মনেস্ট্রিতে আছি। জানতে পাড়লাম আরও কিছু উপরে, এক প্রাচীন জনগোষ্ঠী আছে। তারা সাধারণত, বাকি কারো সাথে মেলা মেশা করে না এবং তাদের কিছু অদ্ভুত রীতিনীতি আছে। আমি যখন সেখানে যেতে চাইলাম, কেউ আমার সঙ্গে যেতে রাজি হল না বরং সবাই যেতে বারণ করল।

- দেড় দিন চরাই উঠে পৌঁছে গেলাম একটা ছোট ভ্যালিতে, সুন্দর, কিন্তু অদ্ভুত নীরবতাময়। দেখতে পেলাম একটি অঞ্চলে বেশ কিছু ছোট ছোট ঘর আছে, তবে ২০-২৫ টির বেশী নয়। বেশ কিছু অঞ্চল পরিষ্কার করে ধাপে ধাপে চাষ করা হয়েছে, পাশ দিয়ে একটা ছোট পাহাড়ি নদী নেমে গেছে নিচে। কাছে পৌঁছে দেখলাম, দুই এক জন লোক মাঠে কাজ করছে। তাদের কেই স্থানীয় ভাষায় উচ্চস্বরে জানতে চাইলাম এই গ্রামের প্রধান কে, কোথায় তাকে পাওয়া যাবে। কেউ কিছু বুঝল বলে মনে হল না, অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

- গ্রামের ভিতরে ঢুকে দেখলাম, গ্রামের মাঝে একটি বড় পাথরের বেদী, সেখানে বেশ কিছু লোক সাধনায় ব্যস্ত। আর তাদের সামনে বসে এক বেশ বয়স্ক ব্যক্তি। তাদের সারা দেহে অদ্ভুত, সব উল্কি আঁকা। আর পোশাকের রঙ অদ্ভুত রকমের কালো। আমাকে দেখে সেই বয়স্ক ব্যক্তি এগিয়ে এলেন, স্থানীয় ভাষায় বেশ রাগান্বিত স্বরে জানতে চাইলেন আমি কে, এবং এখানে কেনও এসেছি।

- আমি বেশ শান্ত স্বরেই বললাম আমার গবেষণার বিষয়ে, এবং সেই বিষয়েই যে আমি এই জনগোষ্ঠীর রীতিনীতি নিয়ে জানতে চাই। তবু, তিনি বেশ জোর গলাতেই এখনি চলে যেতে বললেন। দেখলাম আমাদের আশে পাশে বেশ কিছু জমা হয়ে গেছে এবং নিজের মধ্যে কথা বলছে। কথা শুনে মনে হলে, আমার পুথিতে লেখা সেই প্রাচীন তিব্বতি ভাষা। তখন আমি সেই ভাষাতেই আমার কথা গুলো আবার বললাম। দেখলাম তারা নিজেদের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ই করছে।

বয়স্ক ব্যক্তিটি অদ্ভুত ভাবে শান্ত হয়ে বললেন - আমি দেউন, এই গ্রামের প্রধান।

আমি আমার পরিচয় দিলাম। এবং আরও জানালাম আমার সেই পুথির কথা, যে হেতু খুব বেশী লোক এই ভাষায় কথা বলে না তাই সেই পুথির বিশেষ কিছু অংশ পুন-উদ্ধার করার জন্য আমার যে সাহায্য দরকার তা জানালাম।

- কই দেখি পুথিটি

পুথিটি বার করে তার হাতে দিলাম। দেখলাম সেটি দেখে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে আমাকে বলল আমার সাথে আসুন। একটি ঘরে নিয়ে গেলাম দেখলাম, ঘরের একটি অংশে একটি বেদীতে পূজিত হচ্ছে একটি মূর্তি, খুব প্রাচীন। গঠন দেখে মনে হল ২০০০ বছর বা তার থেকে প্রাচীন। আর অন্য অংশে একটি তাকে থাকে থাকে রাখা পুথি তবে অদ্ভুত ভাবে সাজানো ঠিক যেন পিরামিড। সবে থেকে উপরে একটি, তার নিচের তাকে আরও একটি, তিন নম্বর তাকে তিনটি, এবং নিচের তাক গুলো তে পুথির এর সংখ্যা বেশি বেশি। দেখলাম আমার থেকে পাওয়া পুথিটি নিয়ে দুই নম্বর তাকে রাখলেন। এবং আমাকে ফিরে এসে অনেক ধন্যবাদ দিলেন, বললেন এই পুথিটি তাদের কাছে খুব পবিত্র, এবং এটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আমার যে কোন ইচ্ছে পূরণ করতে ইচ্ছুক।

আমার কাছে পুথিটির হাতে করা নকল আছে তাই, আমি যাতে এখানে থেকে কিছু জানতে ও শিখতে পারি তার ইচ্ছে প্রকাশ করলাম। তিনি রাজি হলেন ও বললেন, শুধু মাত্র তাদের অবস্থান যেন আমি আর কাউকে না জানাই। তারা একান্তে তাদের জীবনযাত্রা চালিয়ে যেতে চান।

তার পর সবার সাথে কথা বলে অনেক কিছু জানলাম, এদের সমাজ, রীতিনীতি ও জীবন যাত্রা। বুঝলাম এদের সমাজে দুটো অংশ আছে কিছু মানুষ আছে যারা চাষ বাস করে বা সাধারণ জীবন ধারণ করে আর কিছু মানুষ আছে যারা সাধনা ও বিভিন্ন চর্চা নিয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ সাধারণ পোশাকে আর বাকি তারা সবাই একটি ধরনের


সন্ধের সময় আমাকে নিয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষ যেখানে থাকে সেখানে একটি কুঠি তে। একটি পরিবার আমাকে স্বাগত জানালেন, একটি পুরুষ, একটি মহিলা সম্ভবত তার স্ত্রী ও দুটি বাচ্চা। রাতে খাওয়াতে অংশ গ্রহণ করে মনে হল এরা বেশ গরীব, বাচ্চা দুটোকে যে পরিমাণ খাবার দিয়েছে তাতে তাদের পেট ভরার কথা নয়। তাদের মা বাবা একটু বাইরে গেলে, তাদের সাথে কথা বলে বুঝলাম আমি এসে পরার জন্য এদের রোজকার খাবারের ভাগে কম পরে গেছে, আজ তাদের বাবা ও মা কিছু না খেয়েই থাকবে। খুব খারাপ লাগলো, আমার ব্যাগে কিছু শুকনো খাবার আছে যা আমার বেশ কিছু দিন খোঁড়াক দেবে। তার থেকেই বেশ কিছুটা আমি পরিবারটির হাতে তুলে দিলাম। প্রথমে না নিতে চাইলেও যখন, দেউনের কথা বললাম তখন তারা জিনিস গুলো নিলাম।

তাড়াতাড়ি শুয়ে পরলাম রাতে। বেশ গভীর রাতে ঘুম ভাঙল, মৃদু গুঞ্জনের শব্দে মাথা ভার হয়ে আছে। ঘুম ভেঙ্গে গেলো। শরীর ক্লান্ত থাকার জন্য স্বপ্ন প্রক্রিয়ার কিছু করিনি, তাও মনে হচ্ছিল সে যেন স্বপ্ন দেখছে। হাতের কাছে রাখা টর্চ টা জ্বালতেই সে দেখল তার সব ব্যাগ খোলা, জিনিসপত্র সারা ঘরে ছাড়ানো ছিটানো। কে করল এই সব, এই ভাবতে ভাবতে ই জানালার ফাঁক দিয়ে দেখল, দূরে সে বেদীটার কাছে আগুন জ্বলেছে আর সেখান থেকেই ভেসে আসছে সেই গুন গুন শব্দ। সে আবার ঘুমে ঢলে পরল।

সকালে জিনিসপত্র গোছাচ্ছে, এই সময় দেখল বাচ্চা দুটি দরজার কাছে দাড়িয়ে। সে দুটি চকলেট খুলে তাদের দিকে এগিয়ে দিলেন। এ ওর দিকে তাকা তাকি করতে করেতে সে দুটি হাতে তুলে নিলো। এক জন এসে জানিয়ে গেলো দুপুরে দেউন তাকে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছে।

একটু আগেই পৌঁছে গেলাম, দেখলাম বেদী মঞ্চ ঘিরে সবাই বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া ক্রমাগত করে যাচ্ছে। বেশ কিছু নোট নিলাম। দুপুরে খাওয়ার সময়ে দেখলাম বেশ কিছু শুকনো খাবার আমিও আমার গৃহকর্তা কে দিয়েছিলাম, সেগুলো এখানে। দেউনের সাথে কথা শুরু করে আমি তমনিদ্রার কথা তুললাম, দেখলাম তার মুখ থমথমে হয়ে গেল। তার পর সে নিজেকে সংযত করে বলে উঠল

- তমনিদ্রার কথা তুমি নিশ্চয় মহান পুথি থেকে পেয়েছ; ও বিষয়ে ভুলে যাও। ও জিনিস সুধু মাত্র, আমাদের মতন সাধক দের জন্য।

কিন্তু আমি জেদ নিয়েই এসেছি, আর এখানে এদের কিছু মন্ত্রোচ্চারণের মর্ম উদ্ধার করতে পেরেছি। তাতে যত দুর বুঝতে পারছি, তমনিদ্রাতে আমি অন্য কারো স্বপ্নের মধ্যে প্রবেশ করে তাকে দিয়ে পছন্দ মতন কাজ করাতে পারবো। এমন কি কাল রাতে যে তমনিদ্রার প্রয়োগ আমার উপর হয়েছে তা আমি বেশ বুঝতে পারছি। আমার স্বপ্নে প্রবেশ করে আমাকে দিয়েই আমার সব ব্যাগ পরীক্ষা করা হয়েছে। তাই আমি আবার কিছু বলার জন্য উদ্বেগ নিতেই ... দেউন আমার দিকে বেশ ক্রদ্ধ ভাবে তাকালেন। আমি চুপ করে গেলাম।

সন্ধের সময় ফিরে আসছি, দেখলাম আমার গৃহকর্তা ও তার পরিবার তখনও মাঠে কাজ করছে। সন্ধের সময়, আবার খাবার টেবিলে তাদের সঙ্গে দেখা। খাবারের পরিমাণ কালকের থেকে বেশী। শুধু, বাচ্চা মেয়েটিকে দেখতে পেলাম না, জানতে চাইলাম; তারা বলল তার শরীর আজ কিছুটা খারাপ তাই শুয়ে আছে।

রাতে একটু শুয়ে ভাবতে লাগলাম, আজও যদি আমার উপর তমনিদ্রার প্রয়োগ হয় তা হলে কি ভাবে তা ধরা যায়। পাশের ঘর থেকে তখন শুনতে পেলাম বাচ্চা মেয়েটি বেশ কষ্ট পাচ্ছে। আমি উঠে গেলাম তাদের কাছে।

মেয়েটিকে ঘিরে পরিবারের সবাই বেশ উদ্বেগ নিয়ে বসে আছে। আমি তাদের বললাম আমি কি কিছু করতে পারি। তারা বলল, তারা মেয়েকে নিয়ে দেউনের কাছে গিয়েছিলেন, দেউন কিছু গাছগাছড়া বেটে দিয়েছে কিন্তু এখনো ঠিক হয়নি। দেখে মনে হল মেয়েটির খুব বেশী জর আছে। আমি আবার ফিরে এলাম।

রাত বেশ গভীর; আবার সেই গুনগুন মন্ত্র উচ্চারণ শুরু হয়েছে, আমি লুসিড ড্রিমিং এর একটি পদ্ধতির মাধ্যমে স্বপ্নের পুঙ্খানু পুঙ্খ মনে রাখছি। বেশ একটি কান্নার শব্দ, ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

পাশের ঘরে গিয়ে দেখি, মেয়েটি বেশ নেতিয়ে পরেছে; তার মা কাঁদছে। আমি আর দেরি করলাম না, আমার ব্যাগে কিছু সাধারণ ঔষধ ছিল, প্যারাসিটামল ছিল, সেটাই, গুড়ো করে এক চামচ জলে গুলে নিলাম। মেয়েটি কি খাইয়ে দিলাম। বুঝলাম আগুনের মতন গরম তার দেহ। জলপট্টি করার জন্য, তাদের কে জল আর টুকরো কাপড় আনতে বললাম।

রাতটা, না ঘুমিয়েই কেটে গেল, টান মাথায় জল দেওয়া ও সঠিক সময়ে ওষুধ পড়ার জন্য সকালে মেয়েটি কে বেশ সুস্থ মনে হলে। রাত থেকে দুটি প্যারাসিটামল দেওয়া হয়েছে, আরও তিনটি গুড়ো করে তার মায়ের হাতে দিলাম। বললাম, দুপুরে, বিকেলে ও রাতে খাইয়ে দিতে। পরিবারটি যে আমার প্রতি কৃতজ্ঞ তা দেখেই বুঝতে পারছিলাম।

একটু বেলা হলে আবার গেলাম দেউনের কাছে, উদ্দেশ্য, যদি তমনিদ্রা শেখা যায়। গিয়ে দেখলাম, সেখানে কিছু লোকের দেহে উল্কি আঁকা হচ্ছে। উল্কি গুলো বেশ অদ্ভুত, বেশীর ভাগ ই শিকার বা হিংস্র জন্তুর যুদ্ধ। বেশ অবাক হলাম, বেদির উপরে দেখলাম দুটি চিতাবাঘের মৃত দেহ যেন নিজেদের মধ্য মারামারি করে মারা গেছে। কিছু বোঝা যাচ্ছে না, দেউন ছাড়া এখানে কেউ আমার সাথে কথা বলে না; আজ দেউন ও বেশ ব্যস্ত। তার পাশে বসেই, আমি তার কাজ কর্ম দেখতে লাগলাম। তার দেহেও বেশ কিছু উল্কি চোখে পরল, কয়েকটি ভয়ঙ্কর। মানুষ মানুষের যুদ্ধ, খুন, আত্মহনন।

বিকেলের দিকে, দেউনের সাথে দেখা হলে আমি খানিক উষ্মা প্রকাশ করেই বলে ফেললাম, আমি যতদূর তমনিদ্রা বিষয়ে জানি। অন্ধকারে তার চোখ জ্বলে উঠল, সে বলে উঠল তুমি বুদ্ধিমান, অনেক কিছু শিখে গেছো ... ঠিক আছে কাল তোমাকে তমনিদ্রা শিখিয়ে দেবো।

বেশ আনন্দের সঙ্গেই, ফিরলাম ঘরে। যদিও আমি যতদূর বুঝতে পেরেছি তা দিয়ে শুরু করলে আমিও হয়তো দু'চার বছরে শিখে যাবো।

ঘরে বাচ্চা মেয়েটি শুয়ে, তার পাশে তার ভাই বসে। তাদের বাবা মা কোথায় জানতে চাইলে বলল, তারা দেউনের কাছে গেছে।

রাতে খাওয়ার সময়ে দেখলাম, তারা সবাই বেশ চুপচাপ, কিছু একটা হয়েছে। আমি বেশ কিছু কথা বললাম, তারা উশখুশ করছিল, আমি তাদের শুভ রাত্রি বলে নিজের ঘরে এলাম।

একটু পরে দেখলাম গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী এলেন, ভাঙাভাঙা শব্দে আমাকে বার বার পালিয়ে যেতে বলল

- কেন, কেন ...

- দেউন আজ আপনার উপর চড়াও হবে, ওরা বলছিল, আপনি অনেক বেশী জেনে গেছেন। তাই আপনাকে আজ রাতেই ...

- মানে, কি বলছ ...

- তারা যা বলল, তাতে বুঝলাম, এরা সবাই দেউন কে ভয় পায়। কেউ যদি দেউনের বিরোধিতা করে তা হলে তাদের কে পরের দিন মৃত অবস্থায় পাওয়া পায়। তাদের কাছে এমন কিছু ক্ষমতা আছে যাতে যখন কেউ ঘুমায় তখন তার শরীরে প্রবেশ করে তাকে বা অন্য কাউকে মেরে দিতে পারে। এমন কি এরা যে কোন জন্তুর শরীরেও প্রবেশ করতে পারে। মৃতদের ঘটনা এরা শরীরে উল্কি করে রাখে।

বুঝতে পাড়লাম বিপদ, বেশ ভয়ানক বিপদে পরেছি। আমি না ঘুমলে আমার উপর তমনিদ্রার প্রয়োগ করে মারতে পারবে না কিন্তু খালি হাতে চিতা বা অন্য কোন জন্তুর সাথে পারা যাবে না।

আমার মুখ দেখে, তারা বললেন আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন এখান থেকে চলে যান, কারণ কোন এক প্রাচীন অভিশাপের কারণে এরা এই অঞ্চলের বাইরে থাকা কারো উপরে এই বিদ্যার প্রয়োগ করে না। বুঝলাম, যদি বাইরেও প্রয়োগ করে তা হলেও মরবো এখানে থাকলেও মরবো। কিন্তু সব জেনে এখানে বসে থাকাটা বোকামি।

তারা বলল আমারা দেউনের কাছে যাচ্ছি, আমরা বলব আপনি শুতে গেছেন, এর মধ্যে আপনি চলে যান।

বেড়িয়ে এলাম, এরা ঠিক বলছে না ভুল বলছে, কি হবে বোঝার ক্ষমতা ছিল না

দুই দিন পর নেমে এলাম নিচের শহরে, দুই দিন রাতে না ঘুমানো, খাওয়া বলতে কিছুই হয়নি, খুব অবস্থা খারাপ ছিল কিন্তু বেঁচে গেলেও অনেক দিন আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি। ভয়ে থাকতাম, কিন্তু কিছুই হয়নি কেন বলতে পারবনা।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------


আমি চুপ করে শুনছিলাম, জানতে চাইলাম আর ওই ফ্যামিলির কি হল।

ডাঃ বিশ্বাস মাথা নিচু করলেন, বললেন, গৃহকর্তার নাম ও জানা হয়নি, আমি চলে পরার দিনই তাকে দেউন মেরে ফেলে আমাকে পালাতে দেওয়ার জন্য।

আমি বললাম আপনি কি করে জানলেন?

- ওই স্বপ্নে, ওর মেয়ের স্বপ্নে একদিন গিয়ে ছিলাম, খুব খারাপ লাগলো কিন্তু কিছু করার নেই।

আর তমনিদ্রা?

- হ্যাঁ ওটাও, আস্তে আস্তে ভয় কাটার পর, শিখতে শুরু করলাম, সময় লাগল কিন্তু হল।

আমি হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে ডাঃ বিশ্বাস বললেন, বুঝলাম বিশ্বাস কে বিশ্বাস করছিস না ...। এক কাজ কর এ দিকে আয় ...

আমি তার দিকে এগিয়ে যেতেই এক ঠাশ করে চড় লাগালেন ... উফফফ ...

---------------------------------------------------------------------------------------------------------------


- ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মোবাইল বাজছে ... একে তো এই স্বপ্ন তার উপর এই সকালে কে ফোন করল। মোবাইল উঠিয়ে দেখি, এ তো ডাঃ বিশ্বাস! ফোনে ধরা গলায় বলল, এখনো ঘুমচ্ছিস, আজ না তোর আমাকে ষ্টেশনে নিতে আসার কথা। আসবি? না আবার একটা চড় লাগাবো ...

গাল টা এখনো টনটন করছে ...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
দীপঙ্কর মাইনুল ইসলাম আলিফ , আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, ভালো থাকবেন
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮
দীপঙ্কর ধন্যবাদ মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী, আপনার অনুধাবন আমাকে আরো ভালো লিখতে সাহায্য করবে
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮
মাইনুল ইসলাম আলিফ দারুণ।একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৮
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্প দারুণ হয়েছে, কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু লাইন গুলো এলোমেলো বোধ হচ্ছে। যেমন- #পুথিটা বার করে তার হাতে দিলাম→ পুঁথিটা বের করে তার হাতে দিলাম। #একটি ঘরে নিয়ে গেলাম দেখলাম→ একটি ঘরে নিয়ে গেলে আমি দেখলাম.... #তখন তারা জিনিস গুলো নিলাম→ তখন তারা জিনিস গুলো নিলো..... এমন আরও অনেক আছে। আর দ্বিতীয়ত আপনার কমার (,) ব্যবহারে সমস্যা আছে, যেখানে দরকার সেখানেও ব্যবহার করেন, আবার যেখানে দরকার নেই সেখানেও ব্যবহার করেছেন..... যাক গে গল্প সুন্দর হয়েছে, শুভকামনা রইল।
দীপঙ্কর অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই মৌরি হক দোলা, এ. আর. কায়রন । খুব ভালো থাকবেন।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৮
%3C%21-- %3C%21-- Onek bhalo laglo. A dhoronorer topic amar khub pochondo :)
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১৮
মৌরি হক দোলা খুব সুন্দর গল্প...অনেক অনেক ভাললাগা রইল....

০৩ অক্টোবর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪