শহরের দুই নামকরা গুণ্ডা তুফান ও সীজার । সাধারণত বিপরীত পক্ষ পরস্পরের মিত্রপক্ষ হয় । কিন্তু এখানে তা নয় ।দুজনে দুজনের চরম স্ত্রু । কে কাদের কত লোক মারতে পারে-- এই নিয়ে প্রতিযোগিতা হরদম লেগেই থাকে । পুলিস তুফানকে আবার অ্যারেস্ট করল । এই নিয়ে তুফানের ত্রিশবার জেল যাওয়া । কিন্তু প্রতিবারই তুফানকে জেলে ঢোকাতে না ঢোকাতেই মন্ত্রীর ফোন আসে তাকে ছাড়ার জন্য । সীজার কিন্তু তুফানের থেকে কম জেলে গেছে । প্রতিবার পুলিস অ্যারেস্ট করার জন্য সীজারের কাছে যেতেই মন্ত্রীর ফোন আসে না অ্যারেস্ট করার জন্য । যদি ফোন না আসে তাহলে মন্ত্রী নিজে জেলে যায় সীজারকে ছাড়াতে । শহরে আবার তুফান তোলাবাজি শুরু করেছে । ভয়ে সবার দোকানপাট বন্ধ করে রেখেছে । কিন্তু দোকান বন্ধ করে কি তুফানকে আটকানো যায় ?তুফান সবার বাড়ি গিয়ে শুরু করল তোলাবাজি । যাদের দোকান আছে, কিন্তু বন্ধ করে রেখেছে, তাদের জন্য ডবল । তুফানের খিদে মিটতেই চায় না । দিন রাত খুন, তোলাবাজি, অপহরণ করেও শান্তি নেই । কেন যে মনে হয় সীজার কওনও না কওনও দিক দিয়ে তুফানের আগে বেরিয়ে যাচ্ছে । সাধারণ মানুষের কাছে সম্মান বাড়ানোর জন্য তুফান ঠিক করল শহরের রাস্তায় একটা বিজয় মিছিল করবে । কিন্তু বিজয় কোন কারণে---তা বোঝা গেল না । যেমন কথা তেমনি কাজ । পরেরদিন বিজয় মিছিল বেরল ।সারা রাস্তা ঘেরা চলছে প্রতিটা মানুষকে জোর করা বলেন হচ্ছে “তুফানভাই জিন্দাবাদ” । সবাই তুফানের নামি জয়জয়কার উচ্চারণ করলেও একটি মেয়ে সেই বাণী উচ্চারণ করল না । রক্ষীরা ধরে তাকে তুফানের গাড়ির সামনে ফেলে দিল । তুফানও বহুবার চেষ্টা করল, কিন্তু তাতেও কোনো ফল না হতে সে রক্ষীদের আদেশ দিল-একে গাড়িতে তোল । দেখি কোন সাহসে আমার বিরোধী হচ্ছে । সীজারের লোক হয় ত ? তুফানের ডেরায় তুফানের সামনে মেয়েটিকে বসানো হল । মাঝে একটা গোল টেবিল । -তোর নাম কী ? -রীনা দাস। -তুই সীজারের লোক ? -না। ঐ ফালতু লোকটাই দলে আমি নিজেকে কোনোদিন ভাবতেও পারিনা । -তাহলে তুই আমার বিরুদ্ধে যাচ্ছিস কেন ? জানিস, আমি তোকে এখুনি খুন করে লাশ ঠিকানে লাগিয়েও দিতে পারি । -তুই তো তাই পারিস । খুন ছাড়া জীবনে আর কী করেছিস ? মানুষ খুন করা সহজ , কিন্তু মানুষ বাঁচানো যা কত কঠিন , তা জানিস ?আমার জাস্ট ঘেন্না করে তদের মট লাককে । তোরা মানুষ মেরে নিজেদের বীরত্ব দেখাচ্ছিস মনে করিস । কিন্তু তোরা আসলে কাপুরুষ । মানুষের মাঝে দুঃখ কষ্টে বাঁচতে পারিস না বলে ভয়ে তাদের মেরে তাদের ভয় দেখাস । মানুষের মনে তোর ভয় ঢুকিয়েও ভাবছিস বহু মানুষ তোকে মনে রাখবে ? মনে তো রাখবেই, কিন্তু মানুষ হিসাবে হয় ; নিকৃষ্ট মনুষ্যেতর পশু হিসাবে ।... -এই!!! লম্বা চওড়া ভাষণ দিচ্ছিস যে । লাস্টে কী একটা শব্দ বললি ? কি মনুষ...না কি ? -ওহ্ ! আমি তো ভুলেই গেছি । তোরা তো এসব ভাষা জানবি না । তদের ভাষায় ওটাকে জানোয়ার বলে । টেবিলে থাপ্পড় মেরে তুফান উঠে দাঁড়ালো । তার চোখদুটো লাল হয়ে উঠেছে । রাগে ফুঁসছে তুফান । সজোরে রীনার কানের কাছে থাপ্পড় মারল তুফান । রক্ষীদের হুকুম দিল”একে বেঁধে কাল-কুঠুরিতে বন্ধ করে রাখ । জল ছাড়া আর কিছু দিবি না । মাথা ঠিকানে না এলে ঐ ভাবেই রেখে দিব্বি । দু-দিন পরে... -কী রে কী ভাবলি ? রীনার মুখে জলের ঝাপটা দেওয়া হল । -কী রে ? -ভাবার কী আছে ? দু দিন আগেও যা বলছিলাম তাই আছে । -তোকে আবার একটা চান্স দিচ্ছি । সাধারণত আমি কাওকে এরকম চান্স দিইই না । কিন্তু তকে দিচ্ছি । -সময় নষ্ট করছিস কেন ? আমি তো বললাম । এবার আমাকে খুন করবি ত / তাহলে দেরি করছিস কেন ? রক্ষীদেরকে আদেশ –দু দিন ধরে এ কিছু খায়নি একে খেতে দে । আবার শহরে লড়াই লেগেছে । সীজারের লোক তুফানকে মারতে এসেছে । পরিস্থিতি খারাপ হতে তুফান বেরিয়ে এল । হাতে একটা লম্বা ছুরি । সামনে যাকে পাচ্ছে তাকে কোপাতে কোপাতে এগিয়ে যাচ্ছে সীজারের দিকে । বাঘের মত খুনে চোখ । সীজারও তৈরি । তার হাতে পিস্তল । পিস্তল তাক করার আগেই তুফানের চুরির এক জোরালো ঘা লাগল সীজারের হাতে । পিস্তল হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল । সেই ছুরি সীজারের গলায় রাখল তুফান । -এবার কী করবি ? রোজ রোজ ভালো লাগে না এই লড়াই । আজ শেষ করে দিই । কি বল ? -আমাকে ছেড়ে দে প্লিজ । আমি আর তোকে জ্বালাত ল করব না । ঠিক সেই সময়ই তুফানের চোখের সামনে ভেসে উঠল------- খুন ছাড়া জীবনে—কী করেছিস?---মানুষ খুন করা---কিন্তু মানুষ বাঁচানো যে--- তোরা মানুষ মেরে---দেখাচ্ছিস---কিন্তু তোরা--- কাপুরুষ।---পশু হিসেবে--- হাত থেকে ছুরি খসে পরে গেল । -ছাড় । রোজ মানুষ মেরে মুড খারাপ হয়ে গেছে । চল আজ তোকে বাঁচাই । -আমাদের শত্রুতা কি তাহলে শেষ ? -না, না । তা কেন শেষ হবে । কিন্তু শত্রুতাকে নেগেটিভ না ভেবে একটু পজিটিভ ভাবেও ভাবা যায় তো । শত্রুতাকে নষ্ট করা উচিত শত্রুকে নয় ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।