শান্তুকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছে ওঁর মা। ছেলেটা আমার বড্ড ডানপিটে স্বভাবের। ক্লাস নাইন-এ উঠার পর থেকে আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। বিচিত্র সব বায়না ধরে প্রতিদিন। ‘এটা দাও, ওটা দাও’। আর এসব বায়না পূরনে আমার ব্যর্থচেষ্টা। তবু আমার ভালো লাগে। একটামাত্র ছেলে আমার। ও বায়না ধরবে না তো কে ধরবে? বয়সটাই তো এমন! আমরা বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরতাম না বলে কি শান্তও ধরবে না এমন কোন কথা আছে? এ ব্যপারটা আমি আমার মহামতি স্ত্রী ফিরোজা রহমানকে কিছুতেই বোঝাতে পারি না। আর এ নিয়েই ফিরোজা অজস্র খুনসুটি জুড়ে দেয়। আমি পেরে উঠি না! ওঁর কাছে আত্নসমর্পণ করি সবসময়।
আমি ভাবতে পারছি না ফিরোজা কীভাবে এমন হয়ে গেল। আহা! বিয়ের আগে ও কতই না মিষ্টি ছিল! কত মধুর আলাপন করত আমার সাথে। আর এখন ওর সব মিষ্টতা কঠিন তিক্ততায় আচ্ছন্ন থাকে প্রতিনিয়ত। ওর সামনে নিজেকে অসহায় মনে হয়। পৃথিবীতে আমি যদি কোন প্রাণীকে ভয় পেয়ে থাকি সেটা হলো ফিরোজা! কারণ অল্পতেই প্রলয়ঙ্করী রুপ নিতে পারে এই মহামতি নারী!
আজ সকালেও ছোটখাটো হ্যারিকেন চালিয়েছে। তাও আবার শান্তুকে নিয়েই। আমার ছেলেটাও বড্ড অদ্ভুত! কয়েকদিন পরপর মাথায় নতুন সব ভূত চাপে, ভালোলাগা জন্মে নতুনত্বের প্রতি। এ-ই যেমন এই বয়সেও হাফপ্যান্ট পরে স্কুলে যাওয়া, খালিপায়ে হাঁটা, মেয়েদের মতো নখ বড় রাখা, চুল কালার করা ইত্যাদি ইত্যাদি। এবারের বিষয়টাও অবশ্য চুল নিয়েই। ইদানিং মেয়েদের মতোই চুল লম্বা করেছে শান্তু। আর চুলে কীসব মেখে নানান স্টাইল আনে। শান্তুকে দেখে আমি ভাবি ‘ আহা! কত স্টাইলিস্ট ছেলে আমার। বড় হয়ে বুঝি মডেল টাইপের কিছু হবে’।
তবে তা বোধহয় আর হবে না। ব্যপারটা নিয়ে ফিরোজার মাথাব্যথা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে। আর এবার আগুনে ঘি ঢেলেছেন শান্তুর স্কুলের প্রিন্সিপাল! আর কাজ পেলেন না প্রিন্সিপাল আজিজ সাহেব! চুল নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কী দরকার আমি বুঝি না। ছেলেটা আমার একটু শখ করেই না হয় চুল বড় করেছে। তাই বলে বাসায় চিঠি দিতে হবে? আমাকে ফোন করে বললেই হতো। চিঠি পাঠালো তা-ও পড়লো আবার ফিরোজার হাতে। চিঠির ভাষাও কেমন তীক্ষ্ণ। কাল রাতে ফিরোজার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পড়েছি একবার। চিঠিতে লিখেছে-
জনাব,
অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আপনার ছেলে সীমান্ত রহমান শান্তুর ব্যপারে স্কুল কমিটি ও স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন। আপনি জানেন, সীমান্ত ইতোপূর্বেও স্কুলের বহু নিয়ম ভঙ্গ করেছিলো। আর এবারের সমস্যাটি অত্যন্ত তীব্র। যা অন্যান্য ছাত্রদেরও প্রাভাবিত করছে। গতকাল স্কুলের পি.টি. শিক্ষক জনাব সোলায়মান বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে বিশদভাবে জানিয়েছেন। জনাব সোলায়মান মেপে দেখেছেন যে, সীমান্তের চুল বর্তমানে প্রায় ১১ ইঞ্চির মতো লম্বা। যা স্কুলের রুলসের প্রতি ভয়াবহ অবমাননা। বিষয়টি সম্পর্কে সীমান্তকে বহুবার সতর্ক করা হলেও কোন ফল পাওয়া যায় নি।
অতএব, সচেতন অভিভাবক বলেই আপনাকে জানাচ্ছি যে, আগামীকাল স্কুলে আসার আগেই সীমান্তের চুল নরসুন্দর দ্বারা ৯ ইঞ্চি করে কাটিয়ে নিলে স্কুলের রুলস অক্ষুণ্ণ থাকবে। অন্যথায় সীমান্তের ব্যপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।
‘বিষয়টি অতীব জরুরী’।
গতকাল সন্ধ্যায় এ চিঠি পেয়েই হইচই শুরু। ফিরোজা পারে না তখনই কাঁচি নিয়ে শান্তুর চুল কেটে দেয়। ভাগ্যিস আমি বুদ্ধি করে বলেছিলাম-‘তুমি চেঁচিও না তো আর। হার্টে সমস্যা হবে। আমি যাচ্ছি নরসুন্দরের কাছে। কাল সকালেই এসে শান্তুর চুল কেটে দিয়ে যাবে। রাতে তো আর চুল কাটানো যাবে না। সকালেই না হয় কাটবে। তুমি শান্ত হও এখন’।
আমার কথায় কাজ হলো। ফিরোজার অগ্নিরুপ স্তিমিত হয়ে গেল।
রাতে কোনভাবে সামাল দিতে পেরে নিজেকে খুব বীরবিক্রম ভেবেছিলাম। কিন্তু আজ সকালে হলো উল্টো। সকালে ঘুমই ভেঙ্গেছে মহামতি ফিরোজার চিৎকার শুনে। সকাল সাতটায় দেখি নরসুন্দর মশায় বাসায় হাজির। আমিও বা কেমন বোকা! প্রিন্সিপাল আজিজ সাহেবের চিঠির মতোই নরসুন্দরকে বলেছিলাম ‘বিষয়টি অতীব জরুরী’। আর তাতেই এত তাড়া! কিন্তু নরসুন্দর এলে কি হবে, ছেলে আমার নাছোড়বান্দা। সে কিছুতেই চুল কাটতে দিবে না। আর এ নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধবার মতো অবস্থা। তবে শেষ জয় হলো শান্তুর। ফিরোজাকে ফাঁকি দিয়ে ও মূহুর্তেই উধাও হয়ে গেল। এরপর যা হবার তা-ই হলো। যত দোষ নন্দঘোষের মতো সব দোষ চাপলো আমার ঘাড়ে। আমি বিছানা থেকে উঠে ড্রয়ইংরুমের দরজার কাছে যেতেই ফিরোজার সেই চিরায়ত বাণী- “দাও, আরও লাই দাও। তোমার জন্যই ছেলেটা এমন বেয়াড়া হয়েছে। আমি কিচ্ছু জানি না। যাও এবার সামলাও তোমার গুন্ডামার্কা ছেলেকে। আমি আর পারব না”।
আমার দিকে এই ক্ষুব্ধ তির্যক বাণী ছুড়ে দিয়েই ফিরোজা সবেগে বেডরুমের দিকে ছুটে গেল।
ফিরোজার কথায় আমার একটুও খারাপ লাগে নি। ওর কথাটা চিরন্তন সত্য। আমার খুব ভালো লাগে শান্তুর দুরন্তপনা দেখে। ওর বীরত্ব আমাকে মুগ্ধ করে। আমি এই ভেবে আনন্দে বিলীন হয়ে যাই যে শান্তু আমার মতোই হয়েছে। ওর মাঝেই আমি আমার শৈশব-কৈশোর খুঁজে পাই। আমার সাথে কি অপূর্ব সব মিল আমার ছেলেটার। খুব মজা পাই আমি। কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!
কিন্তু যতসব সমস্যা ফিরোজাকে নিয়ে। এই ব্যপারটা ও মানতেই চায় না। ও চায় না শান্তু আমার মতো হোক। তবে আমি নিশ্চিন্তে আছি। কে ঠেকায় আমার দুরন্ত ছেলেকে?
শান্তুর চুল সংক্রান্ত সমস্যার সাথে আমার একটা ঘনিষ্টতা আছে। নস্টালজিক একটা ব্যপার। তা-ই তো এমন তীব্র সমস্যাতেও আমি খুশি। ছেলেবেলায় আমারও চুল বড় রাখার শখ ছিলো। আর এ নিয়ে বাবার হাতে কত মার খেয়েছি তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। আর এখন একই সমস্যা আমার ছেলেকে নিয়ে। আমার বেশ আনন্দ লাগছে। আমার ইচ্ছা করছে এখনই বিজয়ীর বেশে ফিরোজাকে বলে ফেলি-“আহা ফিরোজা তুমি এত বাড়াবাড়ি করো না তো। ছেলে আমার মতোই হয়েছে। বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। আমার চুল কি এখন বড়? দেখো, আর্মিদের চুলের চেয়েও আমার চুল ছোট। শান্তুও একদিন ঠিক হয়ে যাবে আমার মতো। আর স্কুল নিয়ে চিন্তা করো না। দরকার হলে চুল বড় রাখা যায় এমন কোন স্কুলে ভর্তি করাবো। এবার তুমি হার মেনে নাও ফিরোজা। শান্তু হুবহু আমার মতো হয়েছে!’’
না। কথাগুলো ফিরোজাকে এখন বলা যাবে না। যদি বলি তবে সকালের ছোটখাটো হ্যারিকেনটা ‘হ্যারিকেন আইলা’ বা ‘হ্যারিকেন ক্যাটরিনার’ রুপ নেবে অথবা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও লেগে যেতে পারে। থাক্ বলার দরকার নেই।
কিন্তু ফিরোজার মনে হুল ফুটিয়ে খোঁচা দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। ব্যপারটা ও-কে কী করে বলা যায় ভাবছি...।
হ্যা। একটা আইডিয়া পেয়ে গেছি। একদম পারফেক্ট আইডিয়া!
বাবাকে আমার চুল বিষয়ক বাস্তব উপন্যাসের নায়ক বানালে মন্দ হয় না। শুধু এই একটা মানুষকেই খুব শ্রদ্ধা করে মহামতি ফিরোজা। কাহিনীটা শুনে নিশ্চয় টলে যাবে।
বুদ্ধিটা না করেও উপায় নেই। শান্তু পালিয়ে যাবার পর থেকেই বেডরুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। মনে হচ্ছে এবারও হাংগার স্ট্রাইক ডেকেছে। আমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না। তাই সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত ফিরোজার অভিমান ভাঙ্গানোর বিফল চেষ্টা শেষে মাত্র দুটো বিস্কুট আর এককাপ চা দিয়ে সকালের নাস্তা সেরেছি। নাস্তা সারার পর থেকে ড্রয়িইংরুমের বা’দিকের সিঙ্গেল সোফায় বসে ভাবছিলাম। এই সোফার সামনের দিকের দেয়ালে একটা বড় সাইজের পেইন্টিং ঝুলে আছে। আমার আঁকা একটা দীর্ঘকেশী মেয়ের ছবি। কলেজে পড়ার সময় একেছিলাম। কিছুক্ষণ আগে যখন চিন্তামগ্ন হয়ে ভাবছিলাম ঠিক তখন ছবিটা আবার আমার নজরে আসে। আর অমনি বুদ্ধিটা মাথায় এসে হাজির হলো।
এখন ঘড়িতে প্রায় ন’টা বাজে। আজ অফিসে যাওয়া হবে না আর। এ অবস্থায় অফিসে যাই কীভাবে?
দুপুরের আগে যদি ফিরোজার অভিমান না ভাঙে তাহলে মরেছি। ঘাটে মরার মতো অবস্থা হবে। হোটেলের খাবার খেয়ে না আবার ডায়রিয়া বা কলেরা হয়ে বসে আগের মতো।
না হবে না। এবার হবে না! আমার বুদ্ধিতে কাজ হবেই এবার। যাই বুদ্ধিটা কাজে লাগাই।
আমি বেডরুমের দিকে যাচ্ছি। একটু ভয় ভয় লাগছে। কারণ আমি গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারি না। বলার সময় গলা কাপে। না এবার গলা কাঁপলে চলবে না। এবারেরটা ফরয কাজ হয়ে গেছে। দেরি না করে যাই উপন্যাসটা শুরু করি....
ওহ! ফরয কাজে বাধা দেয় কে? এ সময় আবার মোবাইল বাজে কেন?
বুঝতে পেরেছি। এটা আমার কলিগ আরিফ সাহেবের কল্। আমি দ্রুত ড্রয়িংরুমের দিকে দৌড়ে এলাম। সোফার উপর থেকে বাজনারত মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি আমার অনুমান সত্যি। আরিফ ভাই কল্ করেছে। আমি ঈষৎ বিরক্তি নিয়ে কল্ রিসিভ করলাম...
“হ্যালো, আরিফ ভাই”
“হ্যালো, কল্লোল ভাই আপনি কই? অফিস তো শুরু হয়ে গেল। জ্যামে আছেন নিশ্চয়?’’
“না, আরিফ ভাই। জ্যামে না, নরকের দরজায় আছি!’’
“কী বলেন ভাই? অফিস ছেড়ে নরকের দরজায় কী কাজ?”
“ফরজ কাজ করতে যাচ্ছি ভাই। দোয়া করেন। আমার হাতে একদম সময় নাই। কাল অফিসে আসলে বলব সবকিছু”
“তাহলে আপনি অফিসে আসবেন না আজকে?”
“না ভাই, আপনি একটু বসকে ম্যানেজ করে নেন। আমি বড় বিপদে পড়ে গেছি”
“ঠিক আছে কল্লোল ভাই। চিন্তা করবেন না। নিশ্চিন্তে ফরয কাজ সারেন। আমি রাখি”
“থ্যাংক ইউ আরিফ ভাই। কালকে দেখা হবে। গুডবাই”
যাক, অফিসে যাবার ঝামেলাটা মিটলো। যাই এবার মহামতির কাছে। দরজায় নক্ করে দেখি।
বেডরুমের দরজায় কয়েকবার নক্ করলাম। না, কাজ হলো না। এবার অন্য কায়দায় বললাম...
“ ফিরোজা.. জানপাখি ফিরোজা। দরজাটা খোলো প্লিজ। শোনো, আমি ঘটনা আবিষ্কার করে ফেলেছি। আর একটা সমাধানও পেয়ে গেছি। প্লিজ দরজাটা খোলো”
ফিরোজা ভেতর থেকে রাগান্বিত কন্ঠে বলল...
“এই তুমি আমাকে জানপাখি ডাকবা না। ঢং যত্তসব”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে ফিরোজাপাখি বলে ডাকব। ফিরোজাপাখি শোনো...”
ফিরোজা এবার আরো রাগান্বিত কন্ঠে বলল....
“বললাম না ঢং বন্ধ করতে”
“ঠিক আছে করলাম। এবার দরজাটা খোলো প্লিজ। খুব এক্সাইটিং একটা স্টোরি ফিরোজা, শোনো প্লিজ”
“কী স্টোরি? বলে ফেলো। আমি দরজা খুলব না”
“জানো? আমাদের শান্তু কার মতো হয়েছে?”
“কার মত? বলে ফেলো”
“তুমি দরজা না খুললে বলব কীভাবে? মুখোমুখি বসে বলতে দাও প্লিজ..”
এবার কাজ হয়েছে। ফিরোজা দরজা খুলল। আমি দ্রুত ভেতরে গিয়ে ফিরোজার পাশে বসে গেলাম। সাথে ফিরোজা অগ্নিমাখা কন্ঠে বলল...
“কোন ঢং টং চলবে না। তাড়াতাড়ি বলো কী স্টোরি?”
“ঠিক আছে। বলছি শোনো। ঘটনা হলো আমাদের শান্তু হয়েছে বাবার মতো। হুবহু বাবার মতো”
ফিরোজা বিস্মিত হয়ে বলল-
“মানে? ফাযলামো করো? শান্তু বাবার মতো হতে যাবে কেন?”
“আহা, আগে ঘটনাটা শোনো”
“ঠিক আছে। বলো কী ঘটনা”
“ঘটনাটা আমি দাদীর কাছ থেকে শুনেছিলাম ছোটবেলায়। বাবার দুরন্তপনার কাহিনী! বাবা তখন শান্তুর বয়সী, মানে পনের কি ষোল বছর হবে এমন। দাদা তখন বার্মায় ছিলেন। আর এই সুযোগে বাবা সব ধরণের দুরন্তপনায় মেতে উঠেছিলেন। জানো? ঐ সময় বাবাও শান্তুর মতো লম্বা চুল রেখেছিল”
“সত্যি? কী বলছ তুমি? ইন্টারেস্টিং তো! তারপর কী হলো?”
“দাদী তো মহাচিন্তিত বাবাকে নিয়ে। বাবার চুল কীভাবে ছাটবেন এ চিন্তায় বিভোর হয়ে পড়লেন। বাবাও কিছুতেই ধরা দেয় না। এক বন্ধুর বাড়ি থেকে অন্য বন্ধুর বাড়িতে, এভাবে পালিয়ে দিন কাটাতে লাগলেন। আর দাদীও সুযোগ খুঁজছিলেন বাবাকে ধরার। পেয়েও গেলেন শেষে। একরাতে দাদী গিয়ে বাবার বন্ধু রশীদ চাচার বাড়িতে হাজির। বাবা তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। আর সেই সু্যোগে দাদী কেঁচি দিয়ে বাবার চুল ছেটে দিলেন”
“হাঃ হাঃ। খুব মজার তো! এরপর বাবা কী করলেন?”
“বাবা পরদিন সকালে উঠেই অজ্ঞান। আয়নার সামনে নিজেকে চিনতে পারছিলেন না। বাবার চুল ইঁদুরে কাটা কাপড়ের মতো দেখাচ্ছিল। আর সেই লজ্জায় বাবা সেদিনই ন্যাড়া হয়ে গেলেন”
“হাঃ হাঃ। থ্যাংক ইউ কল্লোল। হ্যাবি মজা পেলাম আর সাথে বুদ্ধিও পেলাম”
“কী বুদ্ধি পেলে আবার?”
“দাঁড়াও। আমি একটু পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর কাছে যাই। তুমি অপেক্ষা কর”
“সুমনা ভাবীর কাছে? কেন?”
“আরে দাঁড়াও না। একটু পর বুঝবে”
ফিরোজা দশ-বারো বছরের বালিকার মতো হনহন করে ছুটে পাশের ফ্ল্যাটে গেল। আমি অবুঝ বালকের মতো ওর ফিরে আসার অপেক্ষায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
কয়েকমিনিটের মধ্যেই ফিরোজা ফিরে এল। একটা চুল কাটার মেশিন হাতে। যন্ত্রটা দেখেই আমি বুঝতে পারলাম, ফিরোজা কী বুদ্ধি পেয়েছে। তবুও বোকার মতো প্রশ্ন করলাম-
“এটা কী? কেন আনলে এটা?”
“হুহ! কিচ্ছু বুঝে না! ন্যাকামি হচ্ছে? এটা হলো চুল কাটার মেশিন। সুন্দরভাবে চুল কাটা যায় এটা দিয়ে! বুঝলে?”
“বুঝলাম। কিন্তু এটার কী দরকার? বাসায় তো রেজার আছে! একেবারে এয়ারপোর্ট বানিয়ে দিলেই পারো”
“হয়েছে। তোমাকে আর বুদ্ধি দিতে হবে না। যা করার আমিই করব। এখন যাও, যেখান থেকে পারো আসামীকে ধরে আনো। ব্যাটার সাহস কত! আর শুনে রাখো, আসামী ধরা না পরা পর্যন্ত ঘরের চুলো জ্বলবে না”
“মানে। তুমি আবারও হাংগার স্ট্রাইক ডেকেছ?”
হ্যা, শান্তুকে খুঁজে না আনা পর্যন্ত চলবে। ব্যাটাকে আজ রাতে বোঝাব লম্বা চুল রাখার মজা কত! যাও তাড়াতাড়ি যাও...”
“ঠিক আছে... যাচ্ছি..”
আমি ভারাক্রান্ত হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটা এবার সত্যিই লেগে যাবে। শান্তুর কথা ভেবে আমার খুব মায়া লাগছে। আহারে! আমার অমন স্টাইলিস্ট মডেলরুপী ছেলেটার কী বারোটাই না বাজাবে মহামতি ফিরোজা রহমান! বিধাতাই ভালো জানেন।
আর ভাবতে পারছি না। আমিও কেমন বোকা! ফিরোজাকে বোকা বানাতে গিয়ে নিজেই ধরা পড়ে গেলাম। শান্তুকে খোঁজার দায়িত্বটাও পড়লো আমার উপর। আমি কোথায় খুঁজব আমার বীর সন্তানকে? বোধহয় এবারও ডায়রিয়া বা কলেরা লেখা আছে কপালে! হায়! এ আমি কী করিলাম?
এখন ভাবছি চুল বিষয়ক অতিবাস্তব উপন্যাসটা রচনা না করলেই পারতাম!
৩১ আগষ্ট - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪