হায় আমার সুন্দরী বউটা...

রমণী (ফেব্রুয়ারী ২০১৮)

কাজী জাহাঙ্গীর
  • ২১
এক.
ল্যাপটপটা খোলা পড়ে আছে, অফিস ছুটি হয়ে গেছে ঘন্টাখানেক আগে।টেবিলটা গোছাতে হবে,বাসার উদ্দেশ্যে বেরুতে হবে এখনই।কিন্তু এখনো চেয়ারে ভাবলেশহীন অন্যমনষ্ক হয়ে বসে আছেন জসীম সাহেব। তার অফিস কলিগ দিলারা’র কথাটা বার বার তার কানে অনুরণন হতে থাকে। আসলেই পৃথিবীর সব পুরুষমানুষই একরকম কিনা কে জানে?নিজের চোখটাকেও কেমন জানি বিশ্বাস হতে চায় না, কিন্তু মনটা বড়ই আনচান করে উঠে। উপরে উপরে বেশ হাসি খুশি দেখালেও ভিতরে ভিতরে সব রাগ আর ক্ষোভটা ঝরে পরে সহকর্মী ‍দিলার’র উপর। একটা তীব্র জ্বলন যেন কুরে কুরে খেতে থাকে সারা অন্তর। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসাবে মুখটা খনিকের জন্য লালাভ হয়ে উঠে তবে কিছু করার উপায় নাই। নিজেকে সামলে নেয় জসীম সাহেব, সহকর্মীরা কতকিছুই বলবে ওগুলো কানে নিতে নেই। জীবনটা তো তার নিজের, কার কথায় কী আসে যায়? ভাবতে ভা্বতেই্ শরীরে একটা ঝাকুনি দিয়ে চেয়ারে সোজা হয়ে বসেন তিনি।


দুই.
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথের একটা ঘঠনা মনের মাঝে আবারো স্পষ্ট হয়ে উঠে জসীমের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলোর কোন তুলনাই খুজে পায়না সে। চ বি’র ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটা মজার উপাদান হলো এই ট্রেন জার্নি। শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনে যাওয়া আর ক্লাস শেষে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গান গাইতে গাইতে সেই ট্রেনে আবার শহরে ফিরে আসা। এটাযে কী একটা মনলোভা অধ্যায় সেটা যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েনি তাদেরকে কোনভাবেই বোঝানো যাবে না। সেরকম একটা দিনের ঘটনার কথা স্মৃতিতে ফিরে আসে জসীমের-
-কী ব্যাপার, তুমি এত আগে চলে এলে যে?
-আজ মনে হচ্ছে ভীড় একটু বেশীই হবে, ক্লাসও একটা হল না। তাই আগে ভাগেই বগীতে উঠে পড়লাম। চিরকুটটা অবশ্য সীটেই ছিল।
-এই চল আজ পা’দানীতে বসে যাই।
-আরে তাড়াতাড়ি বসে পড়তো, পরে এই সীটটাও যাবে।
অগত্যা জসীম বসে পড়ল লুসি’র পাশে রাখা চিরকুটটার উপর। তবুও লুসি’কে আর একটু ভোলাতে চাই্ল-
-আসলে পা’দানীতে বসে প্রকৃতি দেখতে দেখতে যাওয়ার মজাই আলাদা ।
-হয়েছে আর মজা দেখতে হবে না, এবার মজা করে খেতে খেতে যাও।
..বলেই ব্যাগ থেকে এক পোটলা বাদাম বের করে কোলের উপর রাখা ব্যাগের উপর রাখল লুসি। দেখতে দেখতে পুরো ট্রেন ভর্তী হয়ে গেল, তিল ধারনের জায়গা না থাকায় বলা যায় ভীড় উপচে পড়ছিল। যারা গাদাগাদি করে সীটে বসেছে তাদের ঘিরে অনেকগুলো দাঁড়িয়ে থাকা মুখ যেন একটা চোখাচোখি হয়ে থাকা বৃত্তের মত দেখতে। এসবের ফাঁকগলে কিছু দুষ্ট চোখও কিন্তু ইতি উতি করে সরল সোজা দৃষ্টিগুলোর মাঝে। সেরকম বাদাম চিবোনোর ফাঁকে হঠাৎ একটা বাঁকা চোখ জসীমের চোখে ধরা পড়ে গেল, যে কিনা লুসি’র দিকে তাকিয়ে নাক সিটকানোর মুখভঙ্গি করলো এবং জসীমের সাথে চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিল। সবাই বিশ্ববিদালয়ের ছাত্রছাত্রী, অনেকে অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করে থাকে নিছকই বাদানুবাদ এড়ানো বা ভদ্রতার খাতিরে। জসীমের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল তবু ভিতরে ভিতরে তার খুব লেগেছিল। কারণ লুসিকে সে পছন্দ করে, ভালবাসে সেটা সেই সময়ে দাবি না করলেও গায়ের রঙ বা চেহারার আকৃতি দেখে নয় , লুসি’র একটা সুন্দর মন আছে সেই সুন্দর মন বুঝেই লুসিকে কেন জানি তার খুব আপন আপন মনে হত। তাই ব্যাপারটা নজরে আসতেই জসীমের চোখগুলো হঠাৎ করে যেন বড় বড় হয়ে গেল। এবং বড় হওযা চোখগুলো লুসিরও চোখ এড়াল না, সে্ও বলে উঠল-
-কী হল, এমন করছ কেন ?
জসীমের কোন উত্তর না পেয়ে দাড়ীয়ে থাকা সবগুলো মুখের উপর থেকে একবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে আনল লুসি।
-এই কী হল, বলছনা যে?
- না, কিছু হয়নি। জসীম স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো।




তিন.

বিশ্বাবিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে দুজন দুজনকে ভালবাসে বলে ঘর বেঁধেছে। তারা এখন দুসন্তানের জনক-জননী। মধ্যবয়সী দুজন শত সমস্যা বাধা বিপত্তি সবকিছুকে ছাপিয়ে তারা জীবন তরী ঠিকই চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নির্বিবাদে। এসব ব্যাপারে তাদের নিজেদের মধ্যে কখনো কোনো আক্ষেপও দেখা যায়নি। দুজনেই কাছাকাছি বয়সের, বলা যায় সমবয়সী। তাই বাহ্যিক দৃষ্টিতে লূসিকে একটু বয়স্ক লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা জসীমের ভিতরে কখনো কাজ করেনি বা ভাবায়নি, কারন বাস্তবতাকে জসীম ভালই বোঝে। নিজের ভালবাসা আর পৃথিবীর বাঁকা দৃষ্টি পৃথক করতেও তার কষ্ট হয় না। কিন্তু মাঝে মাঝে অন্যান্যদের চাওয়া পা্ওয়ার হিসেব মিলাতে দেখে খুব উপভোগ করে জসীম। তাই সেদিন সহকর্মী দিলারা জিজ্ঞেস করেছিল-
-কী রকম ?
-না ভাই, তেমন কিছু না। ভাবীকে একটু বয়স্ক লাগছে এই আর কি।
-ও তাই। ক্লাসমেট বিয়ে করেছি না ? বয়সতো একটু হবেই।
-জসীম ভাই, ক্লাসমেট হলেই বয়স্ক হতে হবে নাকি ?
-আচ্ছা, তুমিই বল তাহলে কী হতে হবে ?
-না, সব পুরুষই ত চায় তার বউটা একটু সুন্দর হউক, অন্যরা সবাই বউ হিসাবে তাকে পছন্দ করুক…
-হাঁ এটা ঠিক বলেছো। তোমার কোথায় আমি পুরোপুরি একমত। বউটা অবশ্যই সুন্দর হওয়া দরকার।তার মানে এই নয় যে বউটা বুড়ো হবে না। বউটা ত স্বামীর কাছেই সুন্দরী হওয়া জরুরী তাই না। আচ্ছা বলোতো স্বামীরা কি বুড়ো হয় না?
এবার দিলারা কেমন যেন একটু চুপসে গেল। আর কোন উত্তর না দিয়ে শুধুই হা হা হা.. হাসতে হাসতে আড্ডা থেকে উঠে গেল।




চার.
‘গল্পে পড়ে জেনেছিলাম লাইলি নাকি রূপবতি বা সুন্দরী ছিলো না, দেহের গড়ন ছিলো কালোমত। সেটা কিন্তু কোন পাঠকের মনেই প্রশ্ন হয়ে আসেনি। প্রশ্ন এসেছে কী দেখে কায়েস মজনু উপাধিতে ভুষিত হয়েছিল। সেটা হচ্ছে প্রেম অর্থাৎ তাদের প্রেম ভালবাসার নিবিড়তাই ছিল তাদের সম্পর্কের মুখ্যবিষয়। রূপলাবন্যকে পেছনে ফেলে প্রেম কতটা আত্মিক হতে পারে আর প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেখিযেছে লাইলি-মজনু।’- এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন জসীম সাহেব অফিস ছেড়ে। সারাটা পথ নানান রকম উঠকো ভাবনায় কেমনজানি কখনো আনমনা, কখনো বেশ কৌতুহলী আবার কখনো বেশ দৃঢ়তায় নিজের ভাবাবেগ নিয়ন্ত্রনের কসরত করতে করতে আনমনেই হেসে উঠেন তিনি।আর নিজের অজান্তেই কেমন যেন বিড়বিড় করে বলে উঠেন-
-পৃথিবীর সব পুরুষই একরকম হউক, সারা দুনিয়ার রমণীরা সুন্দরী হয়ে লাভ নেই।
তবে সব পুরুষের কাছে তার বউটাই সুন্দরী হউক যার সাথে যে জীবন কাটাবে।
আর আমার বউটা আমার কাছেই সুন্দরী হউক।
যেন কী একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন তিনি, তখনই বেরসিক টেক্সিঅলাটা ব্রেক কষে বলে উঠলো-
- ভাই, কোনদিকে গাড়ী থামাবো…
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মৌরি হক দোলা খুব ভালো লাগল... গল্পের থিমটা বেশ সুন্দর....
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক অনেক ধন্যবাদ। অনেক শুভকামনা।
সালসাবিলা নকি চমৎকার লিখেছেন। বর্ণনাভঙ্গীর প্রশংসা করতে হয়...
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন নিরন্তর।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী চমৎকার একটি গল্প যে তা আর বলার লাগে না। গল্পের কাহিনীটা বেশ ভালো লাগলো। ১ম প্যারাতে মনে করেছি গল্পটি জসীমকে নিয়ে একটু অন্যমনস্ক হবে, কিন্তু তা আর হলো না। কিন্তু চবির বর্ননা আর ট্রেনের ভিতরে তুলে ধরা চিত্রটি অবাক করে দেয়, তবে জসীম তো সেখানে এ সমবয়সী দু'জনের প্রেম আলাপ দেখেছিল, কিন্তু সেইটুকু জসীম নিজের উপরে টেনে এনে তার বন্ধুকে বলার স্বার্থকতা কতটুকু তা আর বুঝে উঠতে পারিনি! তবে যাই বলি না কেন, স্বামীর কাছে প্রতিটি নারী-ই সুন্দরী হওয়া দরকার' এ কথাটি খুব ভালো লেগেছে। গল্পের শিরোনাম দেখে অনেক হাসি পাইছি, যা লেখার সাথে পুরোপুরি টেনে ধরেছে। অবশেষে বলবো→ খুব দারুণ ও মনকড়া এমন সুন্দর গল্পের জন্য কবিকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক অনেক শুভকামনা ও বসন্তের আগমনে ফাগুনের শুভেচ্ছা রইল....
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক অনেক শুভেচ্ছা সিদ্দিকী। ভাল থাকুন নিরন্তর।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া টেক্সিওয়ালা না হয় ব্রেক কষল; কিন্তু গল্পটা থামিয়ে দিলেন কেন? আরও জানার ছিল পাঠকের। আর এতেই ছোট গল্পের স্বার্থকতা। স্বার্থক একটি গল্প লিখেছেন বন্ধু। শুরুটা ভালই ছিল। আমারও বার কয়েক ট্রেনে চেপে যাওয়া হয়েছিল চবি’তে। প্রেমে পড়ার সব উপকরণই আছে সেখানে লাইলী-মজনুদের। চবি’র মায়াবী প্রকৃতিতে সব রমণীরাই সুদর্শনা। ভালো লাগল গল্পের জন্য এমন একটি প্লট বাছাই করার জন্য। পছন্দ, ভোট ও শুভকামনা রইল। সময় পেলে আমার ‘ভয় ফ্রেন্ড’ গল্পটি পড়ে মন্তব্য জানালে অনুপ্রাণিত হবো।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক শুভেচ্ছা সময় দেয়ার জন্য। ব্যস্ততায় বসা হয়না অনেক দিন। তবুও শুভকামনা জানাচ্ছি ।
ইমরানুল হক বেলাল ব্যক্তিত্ব এবং সৌন্দর্য দুটি জিনিসই ভিন্ন বস্তু। ব্যক্তিত্ব হলো একটি সামাজিক অংশ। নারীরা শুধু রূপে বর্ণে সুন্দরী হলেই চলেনা। তাঁর ভেতরের সৌন্দর্যটা সুন্দর হওয়া ভীষণ জরুরী। এই বিষয়টি গল্পকে বিশ্লেষণভাবে রুপান্তরিত করেছেন প্রিয় লেখক কাজী জাহাঙ্গীর ভাই। হৃদয়গ্রাহী গল্পটির জন্য ভোট এবং মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক অনেক ধন্যবাদ বেলাল ভাই, ভাল থাকুন নিরন্তর।
মোঃ মোশফিকুর রহমান ভালো লাগলো, শুভকামনা আপনার জন্য সেইসাথে ভোটটাও দিলাম!
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
অনেক শুভেচ্ছা, ভাল থাকবেন।

২৪ আগষ্ট - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৪৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪