জীবন এত ছুটন্ত যেন অধরা প্রায়! অথচ জীবনের জলছবিরা কিন্তু স্মৃতিতে অমলিন। ছেলেবেলার ছবি অথবা কৈশোরের ছবিরা মুহূর্তে ক্যামন বাঙ্ময় হয় যখন স্মৃতির পাতারা এসে হৃদয়ে কড়া নাড়তে থাকে। কৈশোর আমার সবচে' প্রিয় স্মৃতির উপচানো ভান্ডার। যেন পুরনো জং লাগা ট্রাংক হতে নামানো এক একটা দারুণ মুহূর্ত। আজ আমার তেমন একটা স্মৃতি কথাই লিখতে বসেছি।
সেই সময় আমাদের শহর কুমিল্লার প্রধান আকর্ষণ বলতে মহারাজা বীরচন্দ্রের স্থাপিত ধর্মসাগর পার। বিকেল হলেই লোকজনের আনাগোনায় মুখরিত ধর্মসাগর। আমিও বায়না ধরতাম ছুটির দিনের বিকেলে মা-বাবার / ভাইবেরাদরের সঙ্গে ধর্মসাগর পারে বেড়াতে যাওয়ার। আমার ঝোলাঝুলির কারণে অবশেষে যাওয়া হতো। সেথায় উদাস বাতাসে ঘুরে বেড়াতো রাজারাজরাদের কত কি অজানিত গল্পকাহিনী। ধর্মসাগরের গোড়াপত্তন ঘটেছিলো তখন যখন কুমিল্লা শহরের নামকরণ জনিত দুইবাংলা বিভাজিত হয়নি। তখন ত্রিপুরা রাজ্যাধীন আমরা। অবিভাজিত সেইকালে হঠাত রাজ্য জুড়েই জলাভাব প্রবল হওয়ায় মাণিক্যরাজ সাধারণ প্রজার দুঃখে কাতর হয়ে তাতক্ষণিক নির্দেশ দেয়ায় মাত্র কয়েক দিনেই খনন কাজ সম্পন্ন হয় এবঙ "ধর্মসাগর" নামকরণ বীরচন্দ্র মাণিক্যরাজের নিজের। তারপর সকল প্রজাসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন ধর্মসাগরকে। জলকষ্টভোগ দূরীকরণে প্রজা বাতসল্যের এই বিরল কাহিনী আমায় খুব আপ্লুত করে আজও। আমার কৈশোর দিনে ধর্মসাগর পারে গেলেই অই অবিস্মরণীয় কাহিনী জীবন্ত হয়ে ঘুরতো আমার ভাবজগতে। আমি তখন রাজরাজরাদের দারুণ সুসজ্জিত মনিমাণিক্য শোভিত রূপটি কল্পনার চোখেই দেখতে পেতাম। কি দারুণ হীরেখচিত শিরোস্ত্রাণে বসন-ভূষণে টগবগানো দয়ার সাগর মহারাজা মাণিক্যরাজ যার একটা নির্দেশে উজির আর রাজন্যবর্গ প্রজাদের সকল কষ্ট ঘোচাতে একপায়ে দাঁড়িয়ে যান। আজতো সেই রাজাও নাই রাজ্যও নাই। কেবল রাজার কীর্তি দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই। সেইখানে আমার কৈশোর দাঁড়িয়ে। আজ মধ্যবয়স ছুঁয়ে যদিও জানিনা ক্যামন আছে ধর্মসাগর, প্রিয় স্মৃতির শহর কুমিল্লা, তবু স্মৃতিতো আর প্রতারক না। তাই কৈশোর মনে এলেই স্মৃতির জলছবিরা ওড়ে উড়ালপঙ্ক্ষী প্রায়। জীবন যতই ছুটন্ত হোক, অধরা হোক, কৈশোর কাছে আসে ও দাঁড়ায় স্মৃতির জানলায়। শুনতে পাই যোজন কন্ঠস্বর তাহার শুধোচ্ছে বাতাসে -
"কিগো মনে পড়ে?"
আমার তখন হৃদয় ঝরে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।