উৎকণ্ঠা

মা (জুন ২০১৪)

ওয়াহিদ মামুন লাভলু
  • 0
  • 0
  • ৮৮৫
আমার মা, বাবা, ছোট দুই ভাই শিবলী, বাদল ও আমি সিরাজগঞ্জ গিয়েছি আমার বড় ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। ভাবির বাবার বাড়ি কামারখন্দ থানার জামতৈল।

বাদলের বয়স তখন ছিল মাত্র ৫ বছর। ওর শৈশবে ও আমাদেরকে মাঝে মাঝেই ভীষণ ভয় পাইয়ে দিত। কারণ ও যখন কেঁদে উঠতো তখন মুখ হা করে অনবরত কাঁদতেই থাকতো। দীর্ঘ সময় দম বা নিঃশ্বাস ফেলতো না। ওর ঐ অবস্থা দেখে, দম যদি আর ফেলতেই না পারে এই দুশ্চিন্তায় আমরা খুবই আতঙ্কিত হয়ে ওর কাছে গিয়ে ওকে ঝাঁকাতাম আর কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতাম, ‘‘বাদল, এই বাদল!’’ অনেকক্ষণ পর ও যখন দম ফেলতো তখন আমাদের প্রাণটা যেন ফিরে পেতাম।

ভাবির বাবার বাড়িতে কয়েকদিন থাকার পর বাড়ি ফিরে আসার সময় আমরা জামতৈল রেল ষ্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, ট্রেনে চড়ে উল্লাপাড়া পর্যন্ত আসবো। তারপর বাসে পাবনায় আসবো।

নির্ধারিত সময়ের অনেক পর ট্রেন এসেছিল। যাত্রীদের প্রচন্ড ভীড় ছিল। ট্রেন থামার পর আমরা ট্রেনের কোনো দরজার কাছাকাছি যেতেই পারছিলাম না। এদিকে সময় পার হয়ে যাচ্ছিল। আমরা ছিলাম খুবই দুশ্চিন্তায় যে কিছুক্ষণ পরেই তো ট্রেন ছেড়ে দেবে!

শিবলী, বাদল তো ছোট ছিল। ভীড়ের মধ্যে ওদের নিয়ে ট্রেনে উটাটাই কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

অবশেষে বাদলকে উঁচু করে ট্রেনের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাদল ছাড়া আমরা কেউই তখনও ট্রেনে উঠি নি। এদিকে আমাদের উঠার আগেই ট্রেন চলা শুরু করে দিয়েছিল।

আমরা বাইরে ট্রেনের দরজা সোজাসুজি ট্রেনের সাথে সাথে আগাচ্ছিলাম আর চিৎকার করছিলাম বাদলের জন্য।

আমার মা তখন ট্রেনের হাতল দু’হাত দিয়ে ধরে টানছিলেন ট্রেন থামানোর জন্য ও চিৎকার করছিলেন, ‘‘বাদলকে নিয়ে গেল, আমার বাদলকে নিয়ে গেল!’’ আর ট্রেন তাকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।

আমার মা সেদিন ট্রেন থামানোর জন্য যা করেছিলেন তা ছিল পুরোপুরি হাস্যকর ও অযৌক্তিক। কিন্তু সেটা তো তিনি করেছিলেন ভয়ে দিশাহারা হয়ে যে বাদলকে ট্রেন হয়তো নিয়ে যাবে, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, সে হয়তো চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে। তার সেদিনের সেই চিৎকার আর ট্রেন থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা থেকে বোঝা যায় যে একজন মা তার সন্তানের জন্য কতটা উৎকন্ঠিত হতে পারেন।

সেদিন কিছুক্ষণ পর ট্রেনটা আপনা-আপনিই থেমে গিয়েছিল।

সামনে থেকে সকলকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে জায়গা বের করে সবার আগে ট্রেনে উঠে গিয়েছিলেন আমার মা। ছোট্ট বাদল তখন ট্রেনে অপরিচিত লোকের ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে মানুষের দেওয়াল ভেদ করতে না পেরে উপরের দিকে তাকিয়ে ফাঁক খুঁজছিল আর কাঁদছিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

১৮ আগষ্ট - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী