রাত প্রায় ১২টা বাজে। বেলাল নাদিরাকে নিয়ে তার ব্যাচেলর বাসায় ঢুকেই দরজাটা লাগিয়ে দিল। এ দৃশ্য দেখে তখন নাদিরার হাত পা কাঁপা শুরু করে দিল। একি হচ্ছে! এ আমি কোথায় আসলাম? একজন মেয়ে হয়ে এত রাতে একজন ব্যাচেলর ছেলের বাসায়! তা হতে পারে না। আমাকে মিথ্যে বলে সে এখানে নিয়ে আসছে কেন? কি তার উদ্দেশ্যে? - বেলাল তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে আসলে? - এটা আমার বাসা। - তুমি না বললে তোমার বোনের বাসায় আমাকে নিয়ে যাবে? - হ্যাঁ বলেছি। ওখানে এখন যাওয়া যাবে না। সমস্যা আছে। - কি সমস্যা? - সেটা এখন বলা যাবে না। - কাজটা ঠিক কর নাই তুমি। বোনের বাসার কথা বলে তুমি আমাকে ব্যাচেলর বাসায় নিয়ে আসলে কেন? - কোন কথা বলবে না। আশে পাশের মানুষজন সজাগ আছে। কেউ শুনলে সমস্যা হবে। - তুমি আমাকে এখানে নিয়ে আসলে কেন? আমাকে আমার বাসায় পৌঁছে দাও। - চুপ কর। কোন কথা বলবে না। তোমার কোন সমস্যা হবে না। তুমি শুয়ে পড়। - আমি কিভাবে একজন কুমারী মেয়ে হয়ে তোমার সাথে এ অবস্থায় একা থাকতে পারি বল? - তুমি নিশ্চিত থাক। তোমার কোন ক্ষতি হবে না। নাদিরা বেলালের এই কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হলেও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছে না। একজন যুবক ছেলে আর একজন যুবতী মেয়ে এক সাথে থাকবে আর কিছু হবে না তা কি করে সম্ভব? তারপরও ভয়-শঙ্কা নিয়ে নাদিরা খাটের উপর ঘুমিয়ে পড়ল। আর বেলাল ফ্লোরে ঘুমের ভান ধরে আছে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ নাদিরার ঘুম ভেঙ্গে যেতেই দেখে বেলাল তার পাশে! - কি ব্যাপার তুমি আমার পাশে আসলে কেন? এটাতো ঠিক হচ্ছে না। - ঠিক না মানে। এটা কোন বিষয় না। এমনটা হতেই পারে। - এসব কি বলছ তুমি? - আস্তে কথা বল। আশে পাশে সবাই ব্যাচেলর। কেউ শুনলে দু’জনেরই ক্ষতি হবে। - হোক ক্ষতি, তবুও আমি আমার সতীত্ব নষ্ট করতে দেব না। - প্লিজ নাদিরা আমাকে বুঝার চেষ্টা কর। - প্লিজ বেলাল তুমি আমাকে টাচ করবে না। - এমনটা বলে না লক্ষ্মীসোনা। তুমি আমার জান। - তুমি আমার কাছ থেকে চলে যাও। - যদি না যাই? - তাহলে আমি চিৎকার করব। - এ কাজ তুমি করবে না। - কেন করব না? - কারণ তুমি আমার প্রেমিকা। - তাই বলে বিয়ে না করে এরকম অনৈতিক কাজ করবে? - সমস্যা কি? আমিতো তোমাকেই বিয়ে করব? - তুমি যে আমাকে বিয়ে করবে তার কি গ্যারান্টি আছে? - তুমি কি আমাকে বিশ্বাস কর না? - বিশ্বাস করি। - তাহলে? - কিন্তু বিশ্বাসের মধ্যেও কিছু অবিশ্বাস থেকে যায়। কারণ ছেলেরা হচ্ছে ভ্রমর জাত। তারা একবার মধু পান করতে পারলে সহজে আর ধরা দেয় না। - এমনটা বলতে পারলে? সব ছেলেরা কি এক রকম হয়? - তা ঠিক বলেছ। সব ছেলেরা এক রকম হয় না। তুমি ঐরকম হতে কতক্ষণ? - কি করলে আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করবে? - আমার মাথায় হাত রেখে কসম কাটতে হবে। তুমি আমাকে কালই বিয়ে করবে? তাহলেই আমি তোমার সাথে এ কাজে যেতে পারব। অন্যথায় নয়। - ঠিক আছে এই তোমার মাথায় হাত রেখে বলছি, “কালই তোমাকে বিয়ে করব।” চতুর বেলাল নাদিরাকে বশে আনার জন্য বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মিছে মিছি নাদিরার মাথায় হাত রেখে কসম কেটে নেয়। তারপর তাদের দু’জনের মধ্যে যা হওয়ার তাই হলো। নাদিরা ছিল বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। তার বাবা নাসির উদ্দিন ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবি। চাকুরির কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় বদলি হতো। নাসির উদ্দিনের সাথে মা ও মেয়ে থাকত। এভাবে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করায় নাদিরার পড়াশুনা ক্ষতি হচ্ছে। তাই নাদিরা যখন এসএসসি পাশ করে তখন তারা ঢাকায় চলে আসে। নাদিরার মা নাসিমা আক্তার তাকে নিয়ে ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া থাকে। আর নাসির উদ্দিন বর্তমানে সিলেটে কর্মরত আছেন। নাদিরা বর্তমানে ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি হয়েছে। পাশাপাশি একটি কোচিং সেন্টারেও ভর্তি হয়েছে। কোচিং সেন্টারের শিক্ষক বেলালের সাথে তার পরিচয় হয়। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। নাদিরা সপ্তাহে তিনদিন বেলালের নিকট পড়তে যায়। নাদিরাকে পড়ানোর সুবাদে বেলাল তাদের বাসায় আসা যাওয়া করে। নাদিরার যে কোন সমস্যায় বেলাল এগিয়ে আসে। এক সময় বেলাল নাদিরার প্রেমে পড়ে যায়। সেটা কিছুদিন যেতে না যেতেই নাদিরার মায়ের নজরে পড়ে যায়। তবে বেলালকে অসম্ভব ভালোবাসতো নাদিরার মা। নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসত। তার কথাবার্তা চাল চলন সবই নাদিরার মায়ের পছন্দ ছিল। তাই মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হওয়াতে কিছু বলতেন না তিনি। বরং তিনি মনে মনে জামাই হিসেবে কল্পনা করতেন। বেলালও নাদিরার পড়াশুনার ব্যাপারে যেখানে যেটা সাহায্য করার লাগে সেটা করে। সেদিন বেলাল নাদিরাকে নিয়ে তাদের বাসায় যাবে বলে তার মায়ের অনুমতি নিয়ে তাকে নিয়ে যায়। নাদিরার মা তাতে কোন আপত্তি করে নাই। কিন্তু বেলালের মনে ছিল অন্য মতলব। অনেকদিন যাবত সুযোগ খুঁজছে প্রেমের ছলে নাদিরার সাথে দৈহিক সর্ম্পক করবে। তাই সে আজ নাদিরাকে ফাঁদে ফেলে কৌশলে তাদের বাসায় না নিয়ে নিজের ব্যাচেলর বাসায় নিয়ে আসে। বেলাল সবসময় নাদিরাকে মিথ্যে বলত। সে যে আলাদা বাসায় ব্যাচেলর হিসেবে থাকে সেটা কখনও নাদিরাকে বলেনি। সবসময় তাদের বাড়িতে থাকত এটাই বলত। ঢাকায় তাদের বাড়ি আছে সেটা বলত। কিন্তু আজ নাদিরা আবিষ্কার করলো না, সে বাসায় থাকে না। সে ব্যাচেলর বাসায় থাকে এবং ঢাকায় তাদের কোন বাড়ি নেই। এমনকি তাদের কেউ ঢাকায় থাকেও না। ভোর পাঁচটা বাজে। কেউ এখনও ঘুম থেকে উঠেনি। নাদিরা ঘুম থেকে উঠে চিন্তায় পড়ে গেল। এটা আমি কি করলাম। এ অন্যায়। এ পাপ। এ অন্যায়ের ক্ষমা নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে বিয়ে করতে হবে। তা না হলে এ অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই করতেই হবে। নাদিরা মৃদুস্বরে কাঁদতে লাগল। বেলালের ঘুম ভেঙ্গে গেল। - কি ব্যাপার তুমি কাঁদছ কেন? - এটা তুমি কি করলে? একবারও কি তোমার মধ্যে পাপবোধ জাগ্রত হয় নাই। তোমাকে আমি ভালোবাসি বলে বিয়ের আগে আমার সাথে এসব অনৈতিক কাজ করাটা কি ঠিক হয়েছে? - তুমি টেনশন করবে না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। - আমিতো সেটা মেনে নিতে পারছি না। - আমিতো আছি। সারাজীবন তোমার পাশেই আছি। তুমি আমার প্রতি বিশ্বাস রাখো। - ঠিক আছে তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। চল আমরা আজ বিয়ে করে বাড়ি ফিরব। - আজ নয় কাল করব। - কেন? তুমি না রাতে আমাকে বললে আজ করবে? - হ্যাঁ বলেছি। একটু ভাবতে দাও। বিয়ের জন্য প্রস্তুতির ব্যাপার স্যাপার আছে না। হুট করে বিয়ে করা ঠিক না। - আমি অতসব বুঝি না। তুমি রাতে আমাকে কথা দিয়েছ আজ বিয়ে করবে। আমি আজই বিয়ে করব। - প্লিজ মাথা গরম কর না। আমাকে একটু সময় দাও। - তুমি যদি আজ আমাকে বিয়ে না কর তাহলে এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাকে ভোগ করতে হবে। - আজ বাসায় যাও। কালই সব ঠিক করে তোমাকে জানাব। - এ অবস্থায় আমি বাসায় যাব না। যেতে হলে তোমাকে বিয়ে করেই যাব। - তুমি কি জোর করে আমাকে বিয়ে করবে? - প্রয়োজনে তাই করব। - পারবে না। তার চেয়ে বরং মাথা ঠান্ডা করে বাসায় যাও। আমি সব কিছু ঠিক করে তোমাকে জানাব। - না আমি বাসায় যাব না। - আর শুনো এখন কিন্তু বাইরে বের হবে না। - কেন? - এত সকালে তোমাকে বাসা থেকে বের হতে কেউ দেখলে সমস্যা হবে। দশটার পর আমি তোমাকে সুবিধামতো সময়ে বের করে নিব। নাদিরা অনেক চেষ্টা করেও আজ বিয়ে করার জন্য বেলালকে রাজি করাতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে না করেই তাকে বাসায় ফিরতে হয়েছে। বিকাল বেলা নাদিরা বেলালকে ফোন দেয়। - হ্যালো নাদিরা কি মনে করে? - কাল রাতের ঘটনার পর থেকে একটি বারের জন্যও তোমাকে আর ভুলে থাকতে পারছি না। - ভুলে না থাকতে পারলে চলে আস আজও। - এসব কি বল তুমি? - খারাপ কিছু বললাম নাতো। - কাল রাতের কথা মনে আছে? - কোন কথা? - ঐ যে বিয়ের কথা। - এখন কি বিয়ের সময় হয়েছে? - হয়েছে না মানে! রাতেতো এ কথা বলনি? - রাতে কি বলেছি তা মনে নেই। - মনে থাকবে কেন? - এগুলো মনে রেখে লাভ নেই। তার চেয়ে বরং এভাবেই চলুক। তারপর দেখব কি করা যায়। - তোমার এসব আবোল তাবোল কথা শুনতে চাই না। তুমি বিয়ে করবে কিনা সেটা বল। - এখন বিয়ে করলে তোমার আমার পরিবারের কেউ এ বিয়ে মেনে নিবে না। - পারিবার মেনে না নিলেও কোন সমস্যা নেই। আমরা অন্য জায়গায় বাসা নিব। - বাসা নিয়ে তোমাকে খাওয়াব কি? কোচিং থেকে যা পাই তা দিয়ে কি সংসার চলবে? - আমি কাজ করব? - এখন এসব আবেগে বলছ। পরে পস্তাবে। - আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না। সেদিনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিন নাদিরা বেলালের সাথে ফোনে বিয়ে নিয়ে ঝগড়া হয়। বেলালকে বিয়ের কথা বললেই সে এড়িয়ে যায়। বেলাল তাকে এ বায়না ও বায়না দিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে। আজ প্রায় এক মাস হতে চলল কিন্তু এখনও বেলাল বিয়ের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। ইতোমধ্যে নাদিরা তার শরীরে বড় ধরনের পরিবর্তন টের পেল। কিছুদিন যাবত তার পেটে খুব ব্যথা করছে। তার ভয় হচ্ছে সে হয়তো প্রেগন্যান্ট। কি করবে বুঝতে পারছে না নাদিরা। আজ নাদিরা হঠাৎ বমি করল। নাদিরাকে বমি করতে দেখে তার মা চিন্তায় পড়ে গেল। তাকে দ্রুত ডাক্তারের নিকট নিয়ে গেলেন। ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করলেন। পরে নাসিমাকে তাঁর চেম্বারে নিয়ে বললেন- আপনার জন্য একটি সু-খবর আছে? নাসিমা আক্তার আশ্চর্য হয়ে বললেন, আমার জন্য আবার কি সুখবর! - আপনি নানী হতে যাচ্ছেন। আপনার মেয়ের জামাই কোথায়? এ মুহূর্তে তার পাশে থাকা খুবই প্রয়োজন। ডাক্তারের মুখে মেয়ের এ খবর শুনে নাসিমা আক্তারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এ আমি কি শুনছি। না না এখানে এসব কথা প্রকাশ করা যাবে না। এক্ষুণি মেয়েকে নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে হবে। তারপর বাসায় গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করব। - কি ব্যাপার আপনি খুশি হননি? নাসিমা আক্তার অনেক কষ্টে মুখে হাসি এনে বললেন, খুশি হয়েছি। এমন সংবাদ শুনে কি কেউ খুশি না হয়ে পারে? আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে ম্যাডাম। বলেই তিনি ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরই নাসিমা আক্তার নাদিরাকে নিয়ে বাসায় ফিরলেন। নাসিমা আক্তার রাগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বললেন, আচ্ছা নাদিরা এ কাজ তুই কার সাথে করলি? নাদিরা লজ্জায় মথা নিচু করে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। কি হলো বল, কার সাথে করছিস? এবার নাদিরা মুখ খুললো- বেলালের সাথে। - বেলালের সাথে! ছি: তোর বিবেক কি একবারও বাধা দেয়নি? কিভাবে তুই এ কাজ করলি? - মা আমি ইচ্ছে করে এ কাজ করিনি। আমার বিবেক বাধা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু বেলালের বিবেক বাঁধা দেয়নি। - এক হাতে তালি বাজে না। নিশ্চয় তোর সম্মতি ছিল? - বিশ্বাস কর মা। আমার এখানে কিছু করার ছিল না। - কবে এ কাজ করলি? - তাদের বাড়িতে যেদিন গেলাম। তখন বেলাল আমাকে তাদের বাড়িতে না নিয়ে তার ব্যাচেলর বাসায় নিয়ে যায়। - এ কথাতো তখন আমাকে কেন বলিসনি? - বললে আর কি হতো যা হওয়ারতো হয়েই গেছে। তাছাড়া এমন কিছু হয়ে যাবে তাতো ভাবিনি। - তোর বয়সটাতো আমি পার করে আসছি। তখন হয়তো কিছু একটা ব্যবস্থা করতাম। আর তোর বাবা শুনলে তিনি মারা যাবেন। - প্লিজ মা বাবাকে এখন বল না। - কতদিন না বলে থাকতে পারবি? - বেলাল বলছে আমাকে সে বিয়ে করবে। বিয়ে হয়ে গেলে কোন সমস্যা হবে না। - প্রায় এক মাস হয়ে গেল এখনওতো বেলাল তোকে বিয়ে করেনি। - সেটাইতো চিন্তা করছি। সে আমাকে ঐদিন রাতে কথা দিয়েছে পরের দিনই বিয়ে করবে। কিন্তু সে আমাকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এতদিন পর্যন্ত রেখেছে। তাইতো ভয়ে তোমাকে কিছু বলিনি। ভাবছিলাম বিয়ে হয়ে গেলে ব্যাপারটা কেউ জানবে না। কিন্তু আমার সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গেল। প্লিজ মা কাউকে কিছু বলনা। তুমি বেলালকে বল আমাকে বিয়ে করতে। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। - সে এখন কোথায়? - জানি না। - তার সাথে আমি কথা বলব। তাকে ফোন দেতো। ঘটনাটি মা জেনে যাওয়ায় বেলালের প্রতি প্রচ- ক্ষোভ ও ঘৃণা জন্মেছে নাদিরার। তাই আজ প্রচ- রাগ নিয়ে নাদিরা বেলালকে ফোন দেয়ার জন্য তার নম্বরটি ডায়াল করল। অপর প্রান্ত থেকে মেয়েলি কণ্ঠে ভেসে আসল- “আপনি যে নম্বরে কল করেছেন সেটি বন্ধ আছে অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।” বেলালের মোবাইলটি বন্ধ পেয়ে এ মুহূর্তে তার রাগ চরমে উঠেছে। বার বার চেষ্টা করেও সংযোগ পায়নি। এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। - মা তাকেতো ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। - কি বলিস! তাহলে কিভাবে যোগাযোগ করবি? - তাইতো ভাবছি। - আজকে চেষ্টা করে দেখ তাকে ফোনে পাস কিনা। যদি ফোনে না পাস তাহলে কাল আমি তার বাসায় যাব। - ঠিক আছে। নাদিরার শারীরিক সর্ম্পকের বিষয়টি তার মায়ের কানে গেলে যতটা কঠোর হওয়ার কথা ছিল ততটা কঠোর হয়নি নাসিমা আক্তার। এই ভেবে নাদিরা এখন কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। আজ সারাদিন চেষ্টা করেও বেলালকে ফোনে পাওয়া যায়নি। সারারাত চিন্তায় নাদিরার ঘুম হয়নি। তাহলে কি বেলাল আমাকে ধোঁকা দিয়েছে? না বেলাল এমন হতে পারে না। বেলাল এতটা পাষাণ হতে পারে না। অবশ্যই বেলাল বিয়ে করবে। হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে তাই সে ফোন বন্ধ রেখেছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মা মেয়ে দুজনেই বেলালের ব্যাচেলর বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। বাসায় গিয়ে দেখে অন্য একটি ছেলে বসা। ছেলেটিকে বেলালের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল, সে এখান থেকে কিছুদিন আগে চলে গেছে। আর এখানে আসবে না। এমনকি তাদের কাছে বেলালের কোন ঠিকানাও নেই। এক কথা শুনার সাথে সাথে নাদিরা ও তার মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এখন কি উপায় হবে? তাকে কোথায় খুঁজে পাবে? এমন প্রতারণা করবে বেলাল তা দু’জনের কেউ ভাবতে পারেনি। বাসায় এসে বেলালের চিন্তায় নাদিরা কাঁদতে লাগল। তার কান্না দেখে নাসিমা আক্তার বললেন, কি হবে আর কেঁদে? যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন কিভাবে লোকজন জানার আগে এই আপদ দূর করা যায় সে চিন্তা করতে হবে। - এসব কি বলতে চাচ্ছ মা? - বেলাল তোকে কোনদিন বিয়ে করবে না। সে একজন প্রতারক, বেইমান। সে কোনদিন তোর কাছে আসবে না। তার অপেক্ষায় থাকলে আমার মান সম্মান সব যাবে। তার চেয়ে বরং এখন এই অবৈধ সন্তান নষ্ট করতে হবে। - না মা এ আমি পারব না। একবার ভুল করে যে পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত আমাকে সারাজীবন ভোগ করতে হবে। দ্বিতীয়বার ভুল করে আরেকটা জীবন আমি নষ্ট করতে পারব না। - কার পরিচয়ে তোর সন্তান বড় হবে? - আমি বেলালকে খুঁজে বের করবই। - পারবি না। তারচেয়ে বরং আমার কথা শুন। - না মা। আমার বিবেক এখন জাগ্রত হয়েছে। আমি আমার সন্তান মারতে পারব না। যতদিন বেলালকে না পাব ততদিন তার অপেক্ষায় বসে থাকব। - পাড়া প্রতিবেশীকে কি বুঝ দিবি? - জানি না। তারা যা বলার বলবে। - তোর বাবাকে কি বুঝ দিবি? তোর বাবা কি এ অন্যায় অপমান মেনে নিবে? - মা তুমি যাওতো আমি আর এখন কিছু বলতে পারছি না। আমাকে একা থাকতে দাও। কিছুদিন পরে সিলেট থেকে নাদিরার বাবা হঠাৎ করে বাড়িতে আসে। বাড়িতে এসেই স্ত্রীকে বললেন, নাদিরার জন্য একটি ভাল পাত্র পেয়েছেন। তাকে ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চান। এ কথা শুনার পর নাসিমা আক্তার ভাবলেন, এইতো সুযোগ। এই সুযোগে যদি মেয়েকে বিয়ে দেয়া যায় তাহলে কুল রক্ষা হবে। তাই তিনি আর বিয়ের ব্যাপারে কোন আপত্তি করলেন না। পরদিন নাসির উদ্দিন এক পাত্র নিয়ে আসলেন নাদিরাকে দেখানোর জন্য। কিন্তু নাদিরা কিছুতেই ঐ ছেলের সামনে যাবে না। তার মা বার বার বুঝানোর চেষ্টা করছে। দেখ না মা যা হবার হয়ে গেছে। বাবার কথায় রাজি হয়ে যা। তোর বাবার মনে কষ্ট দিছ না। নাদিরা বলল, মা আমাকে এসব বলে কোন বুঝ দিবে না। আমি এক পাপ করে এখন প্রায়শ্চিত্ত করছি। আবার কেন বার বার আমাকে পাপ করতে বাধ্য করছো। বিয়ে যদি করতেই হয় আমি বেলালকেই করব। যতদিন সে না আসবে ততদিন আমি তার অপেক্ষায় থাকব। - আচ্ছা ঠিক আছে সেটা পড়ে দেখা যাবে। এখন যা ছেলেটা বসে আছে। মাইন্ড করবে। - মাইন্ড করলে আমার কিছু বলার নেই। - যা না এখন ছেলের সামনে গেলেইতো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। - ঠিক আছে তোমার কথায় আমি যাচ্ছি কিন্তু মনে রাখবে আমি কিন্তু বেলালকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করব না। তারপর যথারীতি ঐ ছেলে নাদিরাকে দেখে চলে গেল। কিছুদিন পর ঐ ছেলের সাথে নাদিরার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করল। এই খবর যখন নাদিরা জানতে পেল তখন তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এ হতে পারে না। অন্যের সন্তান পেটে নিয়ে বিয়ে করে নিষ্পাপ ছেলেটাকে ঠকাতে পারব না। তাই সে বাবাকে সত্যি কথাটা বলার সিদ্ধান্ত নিল। পরে যা হবার হবে। নাসির উদ্দিন সোফায় বসে পানি খাচ্ছেন। ঠিক এই মুহূর্তে নাদিরা তার বাবাকে বলল, বাবা আমার পেটে সন্তান। আমি ঐ ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না। মেয়ের মুখে এ কথা শুনার সাথে সাথে নাসির উদ্দিনের হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে ভেঙ্গে গেল। তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। কি বললি তুই? তোর পেটে সন্তান! কার সন্তান? - বেলালের সন্তান। - তাকে কবে বিয়ে করলি? - বিয়ে করিনি বাবা আমি পাপ করেছি। আমার পেটে তার পাপের ফসল। - একি করলি তুই? তোর কি কোন বিবেক বুদ্ধি নেই? - বাবা আমি নির্বোধ। আমাকে তোমরা যত পার শাস্তি দাও। তবুও ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে আরেকটা পাপ করতে বাধ্য করো না। - তোর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আর কোন সন্তান নেইনি। সারাজীবন তোকে ভালোবেসেছি। আর তুই কিনা এমন পাপ কাজ করলি! - বাবা যত পার তুমি আমাকে শাস্তি দাও। কিন্তু ঐ ছেলেকে বিয়ে করে আর কোন পাপ করতে চাই না। - ছিঃ নাদিরা ছিঃ আমি আর তোর মুখ দেখতে চাই না। দূর হ আমার সামনে থেকে। এ কথা শুনার আগে আমার মরণ হলো না কেন? এ আমি মেনে নিতে পারছি না বলেই বুকে হাত দিয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। হঠাৎ করে একমাত্র মেয়ের এমন জঘন্য অপরাধের কথা শুনে তিনি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি বলে মাটিতে পড়ে একটি কথাই বলতে পারলেন, “হে আল্লাহ কেন আমাকে এমন শাস্তি দিলে?” তারপর কোন সাড়া শব্দ নেই। তিনি হার্ট অ্যাটাক করলেন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হল। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার জানালেন তিনি আর বেঁচে নেই। নাদিরা যখন ভুল করেছে তখন অন্য কেউ না জানলেও সে নিজে জানে সে কি ভুল করেছে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তাকে শাস্তি না দিলেও প্রতি মুহূর্তে বিবেক তাকে শাস্তি দিচ্ছে। তাইতো একটি ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে নিজের মান সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিল। অন্যের সন্তান তাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। একটি পাপকে ঢাকার জন্য অন্য আরেকটি পাপ সে করতে চায় না। তার পাপের শাস্তি সে নিজেই বয়ে বেড়াতে চায়। অন্যকে এই শাস্তি ভোগ করতে দিবে না বলেই সে বিয়েতে অমত করেছিল। আর এর জন্য উল্টো তাকে আরো কঠিন শাস্তি পেতে হলো। এই শাস্তি হিসেবে সে তার বাবাকে হারালো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহা রুবন
নিত্য ঘটনাগুলোর একটি। কিন্তু অসাধারণ কথন ভঙ্গির কারণে গল্পটি পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
সেলিনা ইসলাম
নাদিরাদের জন্য কষ্ট হয়...মিথ্যে ভালবাসার বলিদান হচ্ছে প্রতিনিয়ত নাদিরারাই! অথচ বেলাল নামের নরপশুরা ভালবাসাকে করছে স্বার্থ রক্ষায় সস্তা বেচাকেনা। নাদিরা'রা ভুল করে শাস্তি ভোগ করে কিন্তু বেলালেরা শিক্ষা পায়না। কষ্টটা এখানেই...। মায়েদের আরও অনেক সচেতন হবে সন্তানের ব্যাপারে। গল্পের থিম সমসাময়িক। তবে গল্পে আরও একটু সময় দেয়া প্রয়োজন ছিল। নাদির বেলাল নামগুলো বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। যেখানে সে,তারা,তার,তিনি,ও ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত হত বলে মনে হয়। গল্পের ধারাবাহিকতা ছিল চমৎকার...! সব মিলিয়ে বেশ ভালো গল্প হয়েছে। শুভকামনা রইল।
কেতকী
মাথায় হাত রেখে কসম কাটলেই কি বেলালের মতো শ্বাপদেরা কথা রাখে? বোকা নাদিরারা এভাবেই ধোকা খায় জীবন ভর। নাসিমা আক্তারকে অবশ্যই আদর্শ মা বলবো না আমি। মেয়ের ব্যাপারে উনার আরো দূরদর্শী হওয়া উচিত ছিল।
গল্পে ভোট রইল
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।