অবারিত আকাশের মেঘমালার ছন্দপতন কখনো শুনেছ?''কথাটা বলে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম,কিন্তু পেছন ফিরে তাকালাম না,একটু পর জবাব এলো,
;মেঘমালার ছন্দপতন শুনতে পাওয়াটা অনেক কষ্টকর,সবাই তা সহ্য করতে পারেনা।
আমি সামনে তাকিয়ে থেকেই বললাম,
;তুমি তা সহ্য করতে পারনা?
;নাহ,পারিনা।তবে বুঝতে পারি।
জানালা থেকে সরে এলাম আমি,হাতের কাজ গুলো দ্রুত শেষ করতে হবে কারন একটু পরই প্রচন্ড বাতাস শুরু হবে তার পর মেঘ ডাকবে তার পর অঝোর বৃষ্টি......
আজ সারা রাত জেগে থাকবো আমি,অবারিত মেঘমালার ছন্দপতন শুনব...
হঠাত কারেন্ট টা চলে গেল,কি করব এখন?!!কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলাম,রাত অনেক হয়েছে বাসার সবাই শুয়ে পড়েছে সুতরাং আলো জ্বালাবার কোন দরকার নেই।বাহ...!আজতো সোনায় সোহাগা তাহলে...
নিসীম অন্ধকারের মাঝে মেঘমালার ছন্দপতন শুনতে পারা...সে এক অন্যরকম ব্যাপার...
জানালা খুলে দিলাম,আলোহীন পরিবেশেই নিজের ঘরটাকে দেখলাম একবার...
পাখীর বাসার মতো ছোট্ট একটা ঘর,তার পাশে তার থেকেও ছোট্ট একটা বারান্দা,সেখানে ছোট্ট একটা সবুজ রাজ্য...
খালি পায়ে,খোলা চুলে ধীরে ধীরে বারান্দায় যেয়ে দাড়ালাম,নীরব শহরে সরব প্রকৃতি...আর তার মাঝে আমি...
মেঘের ডাক শুনে তাকালাম তার দিকে,
;তুমি এসেছ?!!
আমি স্মিতি হেসে বললাম,
;হুম,তোমার ডাক শুনে আর চুপ করে থাকতে পারলাম না,তাই চলে এলাম।
মেঘ খুশি গলায় বলল,
;তোমার মনতো অনেক খারাপ,দ্রুত মন ভালো করে ফেল,নাহলে বৃষ্টির কান্নার মাঝে তোমার কান্না বরাবরের মতোই অদৃশ্য রয়ে যাবে...
;ঠিক আছে ভালো করে ফেললাম মন,আজ কাঁদবনা...
আমার আর মেঘের মাঝখানে তখন বাতাস প্রকৃতিকে আপন মনে সাজাচ্ছিল,আচানক আমাকে ছুঁইয়ে দিয়ে সে বলল,
;সুপ্ত প্রজাপতি কে উড়িয়ে দিচ্ছ না কেন?
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
;তুমি কোথায় দেখলে সুপ্ত প্রজাপতিকে?!!
;কোথায় আবার?তোমার মাঝে,ডানা ভাঙ্গা পাখীর মতো বেঁচে থাকা তোমার,জানি কোন দিনই আর তোমার ডানা ঠিক হবেনা,কিন্তু ভেতরের প্রজাপতিটা কে কেন বন্দি করে রেখেছ?তাকে উড়িয়ে দিচ্ছ না কেন?
আমি কোন উত্তর দিলাম না,চুপ করে রইলাম।আমার নিরবতা দেখে মেঘ বলল,
;দেখেছ বাতাস?কেমন চুপ হয়ে গেছে সে...সে জানে চুপ করে থাকলে তার কষ্ট বেশি হয় তবু সে চুপ করেই থাকে...সে চুপ করে থাকে তখনও যখন তার প্রজাপতি ডানা মেলার জন্য ছটফট করতে থাকে...যখন বৃষ্টি তার কান্না ছুঁইয়ে যাবার কষ্টে ঝরে সে তখনও চুপ থাকে...তার দীর্ঘশ্বাস শূন্যে ডুকরে কাঁদে আর সে...?তখনো চুপ করেই থাকে...
বাতাস বলে উঠে,
;দেখছি মেঘ,দেখ,তার চোখ তার গল্প বলছে...তার দৃষ্টি দিয়ে তার কথা ঝরছে...অঝোরে...দেখেছি আমি,আর তাইতো সান্তনার পরশ দিতে চাইছি...
আমি অশ্রু ভরা চোখে তাকালাম মেঘের দিকে,বললাম,
;মেঘ,আমি আমার অশ্রু মুছতে চাইনা...তাকে ঝরতে দিতে চাই...আমার নিরবতা হয়তো তাকে সযত্নে ঝরতে দিবে...আমি আমার প্রজাপতি কে হারাতে চাইনা আর তাই তাকে বন্দি করে রেখেছি,আমি চাইনা সে উড়ুক...আমি বৃষ্টির মাঝে হারাতে চাইনা,আর তাই নিজের কান্নায় নিজেকে বেঁধে রাখি...শুকনো পাতা কখনো ভিজেনা,তার গায়ে পরা জলের ফোঁটা হাওয়ায় শুধু উড়ে যায়...শুকনো পাতা কখনো তার গন্তব্য খুঁজে পায় না,শুধু বাতাসে ভেসে বেড়ায় অজানার রাজ্যে...
রাত্রীর অনন্য সে প্রহরে আমার অশ্রু ছঁইয়ে আবারো ভালোবাসার পরশ একেঁ দিল বাতাস আর মেঘ...
আর আমি......?
মনে হয় অনন্ত কাল ধরে অপেক্ষা করছি কোন এক অযাচিত প্রহরের...অনাকাঙ্খিত কোন গন্তব্যে আমার হারিয়ে যাওয়ার অশ্রু ঝরাতে...অথবা,ছিড়ে যাওয়া জাল বুনে যাচ্ছি কোন পূর্নিমার হাতছানির অপেক্ষাতে...
ধীর পায়ে নিজের ঘরে এসে জানালার পাশে দাড়ালাম...নিজের কথা ভাবতে ভাবতে মেঘমালার ছন্দপতন শুনা ভুলেই গিয়েছি...সব ভাবনাকে ছুটি দিয়ে তাই শুনতে লাগলাম...
০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী