সাকিন কিছুক্ষন আগে টিভিতে শুনেছে ঈদের চাঁদ উঠেছে।চারদিকে আনন্দের কলরব,পটকার শব্দে দালানটা যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে।ওদের পাশের ফ্ল্যাটে রনিরা তিনভাই খুব হইচই করছে ঈদ ঈদ বলে।সাকিনের মনেও অসম্ভব আনন্দ ।কাল ঈদ,নতুন জামা জুতা পড়ে বাবার হাতধরে ঈদগাহে যাবে।নামাজ শেষে চাচার বাড়ীতে ফুফুর বাড়ীতে বেড়াতে যাবে,সময় পেলে ওর স্কুলের বন্ধুদের ওখানেও যাবে,ভাবতেই যেন ওর মনটা খুশিতে নেচে উঠল। সাকিনের বাবা তাহমীদ সাহেব ফোনে আত্নীয় স্বজদের ঈদের দাওয়াত দিচ্চেন আর মা নোভা তাহমীদ কালকে কি রান্না করবেন তা নিয়ে গল্প করছেন এক বান্ধবির সাথে।সাকিন তাহমীদ ও মিসেস তাহমীদের একমাত্র সন্তান।ওর জন্যে ঈদের অনেক কেনাকাটা করা হয়েছে।আম্মু দুটি পাঞ্জাবী, আব্বু তিন জোড়া শার্ট প্যান্ট আর তিন জোড়া জুতা কিনে দিয়েছে তার উপর বড় চাচ্চু সিংগাপুর থেকে অর জন্যে খুব সুন্দর একটি গেঞ্জি সেট এনেছে,ছোট ফুফুও অর জন্যে একটা সুন্দর সেরওয়ানী কিনে দিয়েছে।সাকিন ওর সব জামা কাপড় খাটের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে একটার পর একটা জামা নিজের গায়ের সাথে জড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দেখেই চলছে।মিসেস তাহমীদ দরজায় দাঁড়িয়ে ছেলের এমন কান্ড দেখছিলেন ।এবার নিরবতা ভেঙে বললেন আব্বু অনেক রাত হয়েছে চল খেয়ে ঘুমাবে,সকালে যেটা খুশি পড়বে কেমন?সাকিন ওর আম্মুর কথা মতো খেয়ে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়ে পড়ল।কিন্তু কিছুতেই ওর ঘুম আসছেই না,কেবল কালকে কোন জামা পড়বে?কোথায় যাবে?এমন চিন্তায় ওর ঘুম যেন হারিয়ে গেল দূর অজানায়।সকালে ওর বাবার ডাকে ঘুম ভাঙে সাকিনের।ঘুম থেকে উঠে দেখে ওর বাবা গোছল করে ফেলেছে। সাকিন ঘুম থেকে উঠেই বাথরুমে গেল গোসল করতে।আম্মু সাকিন কে ভালভানে গোছল করিয়ে দিচ্ছে আর জামিলাকে বলছে মসলা পিষার জন্যে।জামিলা ওদের বাড়ীতে কাজ করে।থাকে মহাখালি বস্তিতে।ওদের রান্নাবান্না কাপড় কাচা সব কিছুই করে দেয় জামিলা।সাকিন বথরুম থেকে সাকিন টাওল জড়িয়ে ওর নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল ওর চোখ আটকে গেল ড্রয়িং রুমের এক কোনে,ওখানে বসে খেলছে রনি।রনি জামিলার ছেলে ।সাকিনের সমবয়সী,লেখাপড়া করেনা।মাঝে মাঝেই ওদের বাড়ীতে আসে।কিন্তু আজ এসেছে কেন?আজতো ঈদের দিন,ওকি নতুন জামা পড়ে ঈদগাহে যাবেনা?এমন সব প্রশ্ন ঘূরপাক খেতে লাগল ওর মনে।ও দেখলো রনি ড্রয়িং রুমে এককোনে বসে নারিকেল পাতার পাখি নিয়ে খেলা করছে। সাকিন অর রুমে না গিয়ে রনির সামনে এসে দাড়াল। রনি সাকিন কে দেখেই দাড়িয়ে গেল।সাকিন জিঙ্গেস করলো রনি আজকে তুমি এখানে এসেছ কেন?নতুন জামা পড়ে ঈদগাহে যাবেনা?রনি না সুচক মাথা নাড়ল।সাকিন যেন আকাশ থেকে পড়ল,ঈদের দিন কেউ নতুন জামা পড়ে ঈদগাহে যাবেনা এটাতো সাকিন ভাবতেই পারেনা।অবাক হয়ে বলল তোমার বুঝি নতুন জামা কেনা হয়নি? রনি উত্তর দিল- মা কইছে গরিবের কোন ঈদ নাই,গরিব মাইনসের কোন নতুন জামা কাপড় পিন্তে অয়না।একথা শুনে সাকিনের মনটা খুব খারপ হয়ে গেল।এর মধ্যেই মিসেস তাহমীদ ডাকল সাকিন তাড়াতাএই এসো আব্বুর সাথে ঈদগাহে যাবে।সাকিন বলল আসছি আম্মু,এতটুকু বলেই আবার রনিকে জিঙ্গেস করল তোমার কি বাবা নেই?রনি এবার কাদো কাদো সুরে বলল- মা কইছে বাপজান দেশে মাছ ধরতে গিইয়া ডুইবা মরছে,মা আরোও কইছে যদি তোর বাপ বাইচা থাকতো তাইলে তোরে নতুন জামা কিননা দিত।তোরতপ বাপ নাই তোর আবার কিয়ের ঈদ?সাকিন রনির কথাগুলো শুনে কেমন আনমনে হয়ে গেল।ওর নাজমুল স্যারের কথা মনে পড়ে গেল,স্যার ক্লাশে বলেছিলেন-গরিব পথ শিশুদের অনেক কষ্ট ,ঈদের সময় ওদের কেউ নতুন জামা দেয়না,ভাল খাবারও পায়না।সাকিনের ছোট্ট মনে এমন সব চিন্তার ঝড় বইতে লাগলো।ঐ দিকে সাকিনের রুমে আসতে দেরি দেখে ওর মা ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সাকিন রনির সাথে দাঁড়িয়ে আছে।মিসেস তাহমীদ ছেলেকে একটা ছোট্ট ধমক দিয়ে বলল ওর সাথে কি করছো?তাড়াতাতি এসো।আর রনির দিকে তাকিয়ে বলল যতসব ঈদের দিনেও ছেলেটাকে নিয়ে আসা লাগা?কথাটা শুনে জামিলার মনটা খারাব হয়ে গেল,মনে অনেক কষ্ট পেল।সে রনি কে ডেকে পাশে বসিয়ে আচল দিয়ে ওর মুখটা মুছে দিতে দিতে বলল-ছোট সাবের লগে কথা কইতে গ্যাছ ক্যান বাবা?রনি বলল আমি কইনাই হেইতো আমার লগে কতা কইতে আইল। জামিলা ওক্টা দীর্ঘ্য শ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করল,আর মনে মনে বলতে লাগল কেন যে আল্লায় পোলাডারে বাপ হারা করল?ওর বাপ থাকলে কি আর ঈদের দিন পোলাডারে মাইনষের বাড়িত আইন্না কতা হুনুন লাগতো?সবি আইল কুপালের দোষ।এসব ভাবতে ভাবতে জামিলার চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়ল জল।
সাকিন কিছুতেই পড়তে চাইছেনা,একদম মন খারাপ করে বসে আছে।মিসেস তাহমীদ যাদু সোনা বলে শত বার চেষ্টা করেও ওকে নতুন জামা জুতা পড়াতে পারছেননা।সাকিন কেমন যেন মনমরা হয়ে আছে।মিসেস তাহমীদ বিরক্ত হয়ে ডাকল ওর বাবাকে বললেন দেখ এসে তোমার ছেলের কান্ড কারখানা।তাহ্মীদ সাহেব ঈদের নামাজের জন্যে রেডি হয়ে সাকিনের রুমে এসে দেখেন খাটের উপর সব জামাকাপড় ছড়ানো,সাকিন এক কোনে মন খারাপ করে বসে আছে।তাহমীদ সাহেব ছেলের সামনে গিয়ে বললেন বাবু তোমার কি হয়েছে? এ কথা বলতেই সাকিন ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দিল।একমাত্র ছেলের এমন কান্না দেখে তাহমীদ সাহেবের মনটাও যেন কেদে উঠল।আদর করে ছেলেকে বলল আব্বু তুমি কাঁদছ কেন?সাকিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল আব্বু রনির বাবা নেই ওরা অনেক গরিব তাই ওর ঈদের জামা কিনা হয়নি।আমি ওর সাথে কথা ব্লছিলাম দেখে আম্মু বকেছে ।আব্বু রনির জন্যে আমার অনেক মন খারাপ হচ্ছে,ওর নতুন জামা নেই ভাবতেই আমার কান্না পাচ্ছে।তাহমীদ সাহেব স্ত্রী কে বললেন ছেলেটাকে বকেছ কেন? মিসেস তাহমীদ উত্তর না দিতেই সাকিন বলল আব্বু আমার ইচ্ছে হচ্ছে রনিকে এক সেট জামা জুতা দিতে,আমারতো অনেক জামা ওকে একটা দিলে ওর মনটা ভাল লাগবে।এক নাগারে কথা গুলো বলে থামল সাকিন।তাহমীদ সাহেব ছেলের কথা শুনে ভাবলেন ঠিকইতো জামিলার ছেলের জন্যতো কোনো নতুন জামা কেনা হয়নি।ওতো আমাদের বাসায় কাজ করে ওর ছেলেকে একটা নতুন জামা কিনে দেওয়া তো আমাদের উচিত ছিল।মিসেস তাহমিদ ও ছেলের কথা শুনে লজ্জা পেলেন।ছোট্ট ছেলের মুখে ওমন ভালবাসার কথা শুনে মিসেস তাহমীদ বললেন আব্বু ঠিক আছে তোমার ইচ্ছে মতো তুমি জামা জুতা রনি কে দিয়ে এসো। সাকিন ওর মার কথা শুনে যেন আনন্দে হেসে উঠল।ফুফুর দেওয়া সেরওয়ানিটা আর এক জোড়া জুতা নিয়ে ছুটল রান্না ঘড়ের দিকে।তাহমীদ সাহেব ও মিসেস তাহমীদ আসলেন ছেলের পিছু পছু।সাকিন জামিলার পাশে বসা রনি এই নাও তোমার নুতুন জামা জুতা।নাও তাড়াতাড়ি পড়ে নাও।আব্বুর সাথে তুমিও ঈদ্ গাহে যাবে।সাকিনের কথা শুনে রনি চোখে মুখে খুশির জোয়ার বয়ে গেল।জামিলা ছেলের হাসি মাখা মুখের দিকে একবার তাকায় আর একবার সাকিনের মুখের দিকে তাকায়।সে এতো খুশি হলো যে খুশিতে একবারে কেদেই ফেলল।জামিলা দু’হাতে সাকিন আর রনি কে জড়িয়ে ধরল।এমন আবেগ ঘন দৃশ্য দেখে দরজায় দাঁড়ানো ত্তাহমীদ সাহেবের চোখেও জল এসে গেল।ছেলের এমন মহনুভবতায় তিনি যারপর মুগ্ধ হলেন।মনে মনে এমন ছেলের জন্যে নিজেকে গর্বিত পিতা ভাবতে ভাবতে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেল জামিলা তাড়াতাড়ি রনি কে গোসল কিরিয়ে নতুন জামা পড়িয়ে দাও ঈদ গাহে যাবে।নতুন জামা পড়ে সাকিন আর রনি তাহমীদ সাহেবের দু’হাত ধরে ঈদ গাহে চলল জামিলা খুশিতে বার বার কাপড়ের আচল দিয়ে চোখ মুছছিল আর মনে মনে আল্লাহর কাছে বলছে হে মহান খোদা তুমি প্রত্যেক ঘরে ঘরে সাকিনের মতো সন্তান দাও।
২৯ জুলাই - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪