বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আমি একজন আপাদমস্তক পুরুষ মানুষ। আর পুরুষ মানুষের স্বভাব হচ্ছে কুকুরের মতো ছোঁ ছোঁ করে বেড়ানো। হ্যাঁ, আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমিও সুযোগ পেলেই মেয়ে মানুষের অন্তরঙ্গ সঙ্গী হই। হাট বাজারে কিংবা জনাকীর্ণ জায়গায় মেয়ে মানুষের গা ঘেঁষে দাঁড়ানোই আমার মূল লক্ষ্য। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে তাদের শরীরের সঙ্গে নিজের শরীর ঘেঁষাঘেঁষি করে কামনা-বাসনার নিরঙ্কুশ আনন্দ লাভের সিদ্ধি সাধন করাই আমার কাজ। ওহো আমিতো আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি, অবশ্য ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণ মাথার মধ্যে তো শুধু মেয়ে মানুষ। যাই হোক, আমার নাম আব্দুল বারেক। তিনকুলে আমার কেউ নেই। ছোট বেলায় মাকে হারাই আর বাবাকে তো দেখিইনি। এক কথায়-আমি এতিম-অসহায়। সে যাই হোক, আমার নাম আব্দুল বারেক হলেও এলাকাবাসী আমার নাম দিয়েছে ‘লুইচ্চা বারেক’ অবশ্য এ নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। আমার কাজ আমি করবো তাতে লোকের কি আসে যায়। মানুষের লাথি-গুঁতা আর গাল-মন্দ খেয়েই বড় হয়েছি। কেউ কখনো সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়নি। সে সব দুঃখের কথা আর বলতে চাইনা। দুঃখের কথা বলতে ভাললাগে না। তাই কোথায় একটু আনন্দ-বিনোদন পাওয়া যায় আমার দৃষ্টি থাকে সেদিকেই। একটি কথা না বললেই নয়- আমি লুইচ্চা হলেও আমার নীতি ঠিক আছে। আমি কখনো চোরা কারবারি বা অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করিনা। শরীর ঘামিয়ে বা পরিশ্রম করে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করি। আর সম্পদ বলতে ঐ ভিটেমাটিটুকুই। এ ছাড়া আর কিছুই নেই। আমাদের এলাকাটি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। নাগরিক জীবনের সুবিধা এখানে নেই। আজ পর্যন্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থাই হয়নি। হ্যারিকেন আর বাতির আলোয় আমাদের রাত পার করতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে সন্ধ্যার পর গ্রামে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। আর এই অন্ধকারেই আমি আমার মনের একান্ত চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে নেমে পড়ি। কোনো বাড়িতে মেয়ে থাকলেই সেখানে আমি ছুটে যাই। আর ফাঁকা বাড়ি হলে তো কথাই নেই। দিনের বেলা আমি যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটি তখন আশে-পাশের বাড়ীর দিকে দৃষ্টিপাত করি। বাড়ির দেউড়ীর ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করি মেয়েরা কি অবস্থায় আছে। তারা যখন ঘরদুয়ার ঝাড়– দেয় তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদেরকে একটু ঝুঁকতে হয়। সে সময় কিন্তু তাদের বুকের বসন ঠিক থাকে না । আমি পৃথিবীর অন্য কিছু ভুলে গেলেও সে দৃশ্য দেখতে ভুলি না। আমি অসহায়ের মত হা করে চেয়ে থাকি সেদিকে। তারা যখন গোসল করে তাদের অর্ধনগ্ন শরীর দেখে আমি তৃষ্ণা মেটাই। এলাকার কোন মেয়ের বুকের সাইজ কতো, কোন মেয়ের মাজার সাইজ কতো তা সবই আমার মুখস্থ। এমনকি কোন মেয়ের গোপন অঙ্গে কয়টা দাগ আছে বা সেখানকার রং কেমন সবই আমার নখদর্পণে। (এতক্ষণ আপনাদের আর বোঝার বাকি নেই যে আমি একটা ইন্টারন্যাশনাল লুইচ্চা)। গ্রামের মেয়েদের আমি বিভিন্নভাবে পটানোর চেষ্টা করি। মেয়ে পটানোর সকল কলাকৌশল আমি রপ্ত করে নিয়েছি। মাঝে মাঝে তারা যখন নদীতে বা পুকুরে গোসল করতে নামে, আমি দুর থেকেই সে দৃশ্য উপভোগ করি চুপিচুপি। তারা যখন শরীর কচলায় আমার মনটা ভীষণভাবে আনচান করে। মনটা তখন অকপটেই বলে ওঠে ইস পড়নের কাপড়টা যদি হাঁটুর আর একটু উপরে ওঠতো! তারা যখন বাথরুমে ঢোকে তখনও আমার দৃষ্টি এড়ায় না। গ্রামে বাথরুমের ব্যবস্থা খুবই নাজুক। ছনের বেড়া দিয়ে তৈরি করা। যাদের সামর্থ্য নেই তারা পুরনো কাপড় চারদিক ঘিরে কোন রকমে কাজ চালিয়ে নেয়। সে দিকে একটু দৃষ্টি প্রতিফলিত করলেই চোখে পড়বে দৃষ্টিকটু ব্যাপার। আমি যখনি কোন মেয়ের সঙ্গে কথা বলি তখনি আমার ‘টেনডেন্সি’ থাকে কিভাবে তাকে আয়ত্তে আনা যায়। এই সমস্ত কাজ করতে গিয়ে গ্রামের মানুষের কাছে আমি ঘৃণিত। সবাই আমাকে ঘৃণার চোখে দ্যাখে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। বেশ কিছুদিন হলো আমি একটা নতুন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। আর তা হচ্ছে পাশের বাড়ীর শিল্পী ভাবী। নতুন বিয়ে হয়ে এসেছে। তবে এরি মধ্যে তার সঙ্গে মিল-মহব্বত করে নিয়েছি। শিল্পী ভাবীর স্বামী কাজকর্মের কারণে বেশীরভাগ সময়ই বাইরে থাকেন। এই সুযোগটা কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটাই আমার মুখ্যচিন্তা। শিল্পী ভাবীর গায়ের রঙ শ্যামবর্ণের তবে শ্যামবর্ণের হলেও শরীরের ফিটনেস চমৎকার। তাকে দেখলেই আকর্ষিত না হয়ে উপায় নেই। একদিন সন্ধ্যার পর তার ঘরে ঢুকি। ঘরে সে ছাড়া আর কেউ কেউ নেই। চিন্তা করলাম এটাই মোক্ষম সময়। যেই কথা সেই কাজ। আমি অন্ধকারের মধ্যে তাকে জাপটে ধরি। সে একটু ইতস্তত বোধ করে বলে- ‘‘বারেক ভাই এসব ইয়ার্কি করবেন না, বাড়িতে কেউ নেই, আপনি এখন যান। কিন্তু আমি নাছোড় বান্দা। আমি তাকে আরো শক্ত করে ধরে বিছানায় নিয়ে যেতে উদ্যত হই আর তখনি সে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। তার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আশে-পাশের সবাই ছুটে আসে এবং ঘরের ভেতর জড়ো হন। আমি এই অবস্থা দেখে পালানোর চেষ্টা করি কিন্তু উপস্থিত অনেকেই আমাকে ধরে ফেলে। শক্ত দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেধে আমাকে প্রচণ্ড মারধোর করে আর বলে ‘‘শালা লুইচ্চা তোকে এমন মার দেবো যাতে আর কোন দিন লুচ্চামি করতে না পারিস।’’ শুধু মারধোর করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। সালিশ-বিচার বসিয়ে তারা আমাকে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করে। আমার মতো দরিদ্র মানুষের কাছে বিশ হাজার টাকা মানে অনেক টাকা। আমি কোন উপায়ন্তর না দেখে শেষমেশ ভিটেটুকু বিক্রি করে সেই জরিমানার টাকা পরিশোধ করি। আর আমি হয়ে যাই নিঃস্ব। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয় সেই জরিমানার বিশ হাজার টাকা দিয়ে তারা গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করে। গ্রাম্য সালিশে জরিমানার টাকা সাধারণতঃ বিচারকেরাই ভাগাভাগি করে নেয় কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে। গ্রামে বিদ্যুৎ আনার মতো একক কোন সামর্থ্য ছিল না। তাই আমার জরিমানার টাকা দিয়ে তারা সে ব্যবস্থা করেছে। বিদ্যুতের নানামুখী সুবিধা গ্রামের মানুষ ভোগ করছে। ছেলে মেয়েরা বিদ্যুতের আলোয় লেখাপড়া করছে। ঐ ঘটনায় আমাকে জুতোর মালা গলায় পড়িয়ে সারা গ্রাম ঘোরানো হয়। আর আমি ক্ষোভে-দুঃখে গ্রাম ছাড়ি। আজ আমি নিতাš—ই সহায়হীন। নিঃস্ব অবস্থায় পথে পথে ঘুরি। যেখানেই রাত সেখানেই কাত। দুমুঠো খাবার যদি জোটে তাহলে খাই না হলে উপোষ থাকি। কিন্তু তাতে আমার কোন দুঃখ নেই। আমি আমার শেষ সম্বল ভিটেমাটি হারিয়েছি তাতেও আমার কোন দুঃখ নেই। আমার এই ভেবে ভাললাগে যে, আমারই কারণে গ্রামের মানুষ আজ আলোর মুখ দেখতে পেয়েছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রজ্ঞা মৌসুমী
গল্পের থীম যা ছিল পড়তে কীরকম একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। কে জানে কত পুরুষের মধ্যে গোপন থেকে এইসব কামনা... গল্পের পরিণতি সুন্দর। 'ক্ষোভে-দুঃখে গ্রাম ছাড়ি" মানে কি! ক্ষোভ-দুঃখের চেয়ে লজ্জা শব্দটাই থাকা উচিত ছিল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।