চন্দ্রচূড়ের অপূর্ণতা

পূর্ণতা (আগষ্ট ২০১৩)

নাজিয়া জাহান
  • ১২
  • 0
  • ১২
ঘন হলুদ জ্বলজ্বলে দুপুরের রোদ,মানুষের ভিড়,উঁচু-উঁচু বাড়িঘর,কালো রাস্তা,রিকশার টুংটাং,বাস-ট্রাক,গাড়ি,বিশাল সব শপিং কমপ্লেক্স সব নিয়ে সোনালী,সবুজ,কালচে-লালচে দুপুর।সাদাকালো থ্রিপিছ,ছাইরঙা ওড়নায় একপাশে চুলের বেনী ফেলে তৃনা মেডিকেল কোচিং এর দিকে হেটে যায়।নীরব নিস্তব্ধ যেমন হাওয়ায় ওড়া শাড়ির আঁচল,তেমনি শান্ত ভঙ্গিতে অনেক কথা ভাবতে ভাবতে সামনে এগোয় সে।কোচিং ক্লাসে একদল ছাত্রছাত্রীর মাঝে শূন্য দৃষ্টিতে হালকা গভীর বিষাদ নিয়ে করুণ মুখে নির্বাক বসে কি যে ভাবে তার থৈ সে নিজেই পায়না।অনেক ভাবনার আড়াল হতে আজ অজান্তেই স্মৃতির আলোয় ঝলসে উঠে একটা স্কুল,কিছু ঝাপসা মুখ,পরিচিতির আড়ালে অপরিচিত হাসি ।অথৈ স্মৃতির গভীর হতে ক্রমেই স্পষ্ট হয় স্কুলের আব্ছা,ছায়া-ছায়া,ধূসর টুকরো অনেক মুহূর্ত।এই স্মৃতি, সেই স্মৃতি,এটা-ওটা কত কি!
অনেকদিন আগে স্কুলেই প্রথম কে যেন তৃনাকে বলেছিল তৃনা একটু অন্যরকম।তারপর কত দিন,মাস,ক'টা বছর পেরুলো।তৃনা হয়তো একটু অন্যরকমই।কতজনের কাছে সে নিজের রহস্যময়ী আচরনের অভিযোগ শুনেছে। এসব নিয়ে সে কখনো ভাবতে বসেনি।কখনো নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা মনে হয়নি তার।তৃনা স্মৃতিকাতর নয়,পিছনে ফিরে স্মৃতি মন্থরন তার স্বভাববিরূদ্ধ।তবুও আজ অদূর অতীতের হালকা হাওয়ায় গা ভাসিয়েছে সে।
যখন স্কুলে ছিল তখন তার কোন বন্ধু ছিলনা।কিছুটা সতর্কতা,একটু অন্যমনস্কতা,নিজের আলাদা জগতে অকারন ভাবনার জাল বুনে আর একাকীত্বের আবরনে সহপাঠীদের সাথে নিজের একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরী করেছিল তৃনা।সেই দেয়ালের একপাশে তার একার পৃথিবী আর অন্যপাশে বাস্তব জগৎ।দেয়ালের অদৃশ্য আস্তরন ভেদ করার সাধ্য ছিলনা কারো।একটু জেদী,শান্ত,নিশ্চুপ তৃনার এটাই কি অস্বাভাবিকতা ছিল?ভেবে পায়না সে।
তৃনার চোখের পাতায় স্মৃতির ধুলোর আস্তরনে আবছা,অস্পষ্ট হয়ে ওঠে সামনে রাখা প্রানিবিজ্ঞান বইটা। স্কুল,নবম শ্রেনী,একটা লাইব্রেরী,সারি সারি বই,সবশেষে এক আশ্চর্য ভরদুপুরবেলা। স্কুল ছিল তৃনার জন্য ভয়ঙ্কর অস্বস্তিকর জায়গা যেখান থেকে শুধু পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হতো তার।অনেক মেয়ের সামনে সহজ হতে না পারা তৃনার কোন ক্লাসেই মন বসতোনা। মন না বসা,শ্রান্ত-ক্লান্ত ক্লাসগুলো ছিল বিরক্তিকর,শ্বাস আটকে আসা,বই এর অক্ষরগুলো এক নিমিষে হয়ে যেত ভয়ঙ্কর সরীসৃপ,ছটফট করে কাটতো প্রতি ক্লাস।সেদিনের সেই ভরদুপুরে তৃনা স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে একাকী বাড়ি ফিরছিল। নির্জন রাস্তা,গনগনে ফ্যাকাশে রোদের আভায় কমলালাল দুপুর। তৃনা রিকশা না পেয়ে হাটছিল,ভাবছিল। হঠাৎ একটা অপরিচিত কন্ঠের আর্তচিৎকার,সচকিত তৃনা সামনে দৃষ্টি প্রসারিত করে,তারপর ঠায় দাড়িয়ে থাকে।দূরে একটা সবুজ গাছ তার নিচে সামান্য আড়ালে দাঁড়িয়ে একজন লোক,ফর্সা মুখ,ক্ষিপ্ত তীক্ষ্ম দৃষ্টি,উস্কোখুস্কো চুল,হাতে একটা বড়ো ছুড়ি তাতে সদ্য রক্তের প্রলেপ।নিচে মাটিতে শুয়েছিল আরেকজন লোক,আহত-রক্তাক্ত,বাঁচার জন্য আকুলিব্যকুলি নিয়ে জীবনের শেষ আর্তনাদের সাথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের প্রতীক্ষায় সে।পাশেই ক্ষীন রক্তস্রোত।তৃনার বুঝতে দেরী হয়নি তবু সে ভয় পেলনা,চিৎকার করলোনা,চলে গেলনা,অস্থির বা অবাক ও হলোনা শুধু অপলকে তাকিয়ে দেখল কিছুক্ষন।দুপুরের কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করা সেই ঘটনা তৃনার অস্বাভাবিক মনে হয়নি।ফর্সা লোকটা কাজ শেষ করে দ্রুত দৌড়ে পালিয়ে গেল,তৃনাকে সে দেখতেই পেলনা। তৃনা ধীর পায়ে গাছের নিচে যেয়ে দাঁড়ালো একবার- লোকটার গলা কাটা,প্রাণহীন চোখ বিষ্ফারিত,মুখে মৃত্যুভয়ের শেষ ছাপ তখনো মলিন হয়নি। সে যেভাবে এসেছিল সেভাবেই বাড়ির পথে হাটা শুরু করেছিল। বিপন্ন,বিষন্ন,উদ্দাম সময়ের স্রোতে তৃনা এই ঘটনা কবেই ভুলেছে। কাউকে বলার মত অবসরও তার হয়নি কখনো। শুধু আজ মনে হচ্ছে সেদিন কি তার এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে একটুও ভয় পাবার দরকার ছিলোনা,সেটাই কি স্বাভাবিক হতোনা?কেন সে ভয় পেলনা?কেন?এজন্যেই কি সে অন্যরকম?
স্কুলের লাইব্রেরীর সারি সারি বইয়ের মাঝে অনেক লেখকের চিন্তাধারায় নিজের কল্পনার জগৎ ভাসিয়ে দিয়েছিল তৃনা তাই ভাল ছাত্রী সে কখনোই ছিলনা। যারা কখনো ভাল রেজাল্ট করেনা আবার খুব খারাপও করেনা তৃনা তাদেরই একজন। স্কুলে তৃনার দুই সহপাঠী ছিল,একজন সাথী আর একজন ঈশানা। দুজনই খুব ভাল ছাত্রী ছিলো। তৃনা এই দুজনের সাত-পাঁচ কোনটাতেই ছিলনা তবুও তাদের সাথে তার এক বিরাট বিরোধ ছিলো।এই বিরোধের হেতু সে বের করার চেষ্টা করেনি।ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল সাথী প্রতিদিন তাকে ব্যঙ্গ করে প্রশ্ন করতো-"তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও মিস্ ভাবুক তৃনা,ডাক্তার?"
তৃনা উত্তর দিতনা কিন্তু উপর্যুপরি সাথীর প্রশ্নের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে বিতৃষ্ণ কন্ঠে জবাব দিত-"হু।"
-"ডাক্তার হতে চাও কেন?মানুষের সেবা করে বেড়াবে তুমি?"
তৃনা অসহায় হয়ে সাথীর প্রতিদিন করা এই একটি প্রশ্নের মানে খুজতে খুজতে উত্তর দিত-"হু।"
সাথী তৃনার এমন নির্লিপ্ত উত্তরে দগ্ধ হয়ে তাকে আরো অতিষ্ঠ করে তুলতো। নীরব প্রতিদ্বন্দ্বীতায় কোন প্রতিযোগীতা ছাড়াই তৃনাকে হারাবার নেশা সাথীকে পেয়ে বসেছিল।পুরো ক্লাস যেথায় রূপসী,মেধাবী ছাত্রী সাথীর ন্যাওটা সেখানে শুধুমাত্র তৃনার নির্লিপ্ত আচরন কিভাবে সাথীর আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগার,ক্ষুন্ন হবার গোপন কারন হয়েছিল তৃনা তা কিছুতেই ভেবে বের করতে পারেনি। এসবের মাঝেই সাথী হঠাৎ তাকে ডেকে কেঁদেকেটে বলেছিল-'তৃনা,আমি ভীষন বিপদে পড়েছি আমাকে সাহায্য কর প্লিজ্।'
সাথীর অশ্রুভেজা চোখকে তৃনা সেদিন কটাক্ষ করেনি। যথার্থ বন্ধুর ন্যয় উপায় না থাকা স্বত্বে ও তার মায়ের দেয়া সোনার পেনডেন্টসহ চেইন সাথীকে দিয়ে তার বিপদ দূর করেছিল। দেশের বাইরে ছিলেন বলে মায়ের কাছে তৃনাকে পেনডেন্টের জন্য কোন কৈফিয়ত দিতে হয়নি।তবুও সাথী তৃনার বন্ধু হতে পারেনি।
আর ঈশানা সেই বড় বড় চোখের দুষ্টু মেয়েটা,যে তৃনাকে যতরকম অপমানে পর্যুদস্ত করা যায় তার কোনটাই বাকী রাখতোনা।প্রত্যেক ক্লাস টিচারের কাছে তৃনাকে তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ত্রুটি নিয়ে বিচার দিতে বা হাজারভাবে তাকে সবার কাছে হাসির পাত্র বানিয়ে উপহাস করতে পিছপা হতোনা কখনো সে। যতই সে তৃনাকে সমালোচনার সম্মুখীন করতো তৃনা ততই নিজের মাঝে গুটিয়ে যেত আর ঈশানা ফুসতো দ্বিগুণ উচ্ছাসে। তারপর সাথী আর ঈশানার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৃনার স্কুলজীবন হয়ে উঠেছিল বিভীষিকাময় তিক্ত। স্কুলের মন না বসা,বন্ধুহীন,একাকী দিনগুলো ভরেছিল অসহায়তার করূন সুরে।তাদের দেয়া অপমানের তীরে বিদ্ধ হবার চরম অস্বস্তি সে একাকী বহন করেছিল। সাথী আর ঈশানার হস্তক্ষেপে স্কুলে সেই সায়েন্স টিচার সালাম স্যারের মাধ্যমে শত শত ছাত্রীর সামনে তৃনার লজ্জাবনত অশ্রুসজল অপমান আর তার প্রতি এই দুজনের অকারন ক্ষোভের কারন সে খুজে পায়নি। এখন সাথী কোথায় আছে,কেমন আছে তৃনা জানেনা।জানার ইচ্ছাও তার হয়না।
এখন তৃনা কোচিং ক্লাসে বসে ভাবে।ভাবনার গভীরে অসংখ্য শাখা প্রশাখার বিস্তারে কিছুদিন আগে ছেড়ে আসা কলেজের কথা মনে আসে,কলেজে কি তার বন্ধু ছিল?হয়তো হ্যা হয়তো বা না।ক্রমাগত ভবনার পথ ধরে চলতে চলতে আনমনা তৃনা চমকে দেখে ক্লাসের লেকচার প্রায় শেষের দিকে অথচ তার মন বসেনা।লেকচার দিতে থাকা ডাক্তারের কোন কথাই তার কানে আসেনা।ছাত্রছাত্রী পরিপূর্ণ ক্লাস নির্জন,জনশূন্য মরুভূমি মনে হয়।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে,চশমার কাঁচে অল্প অল্প বাষ্প জমে,অর্থহীন খাপছাড়া ভাবনার জাল ছিন্ন হয়না সহজে।বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরনের উদ্দশ্যে কোচিং এ আসা ব্যর্থ হয়ে যায়, নিজের অকর্মন্য,লাগামহীন মনের সাথে যুদ্ধ হয় নিরন্তর।
ক্লাস শেষ হলে তৃনা বাইরে আসে।তখনই দেখতে পায় তাকে,হ্যাঁ সেই ঈশানা। ইউসিসিতে ভার্সিটি কোচিং করতে আসা ঈশানাকে প্রথমদিন দেখে তৃনা হয়তো একটু চমকে গিয়েছিল,এখন আর চমকায়না। চোখে বিতৃষ্ণা ফুটিয়ে তৃনা নিজের পথ ধরে সামনে এগোয়। ঈশানা তৃনার মুখের দিকে তাকিয়ে সংকুচিত হয়,অনুতপ্ত হয়। কিন্তু তৃনার মুখের নির্লিপ্ত,কঠোর,কঠিন অপরিচিত ভাব দেখে ধাক্কা খায় সে।ভাবে থাক,এখন আর কি প্রয়োজন। তৃনা কোন ভাবাবেগ দেখায়না,বিদ্বেষ,রাগ,ঘৃনা কিছুইনা। ঈশানা বারবার তৃনার দিকে তাকাতে তাকাতে পাশ কাটিয়ে চলে যায়,অব্যক্ত কিছু গুন্জন শুধু রেখে যায় যার অর্থ তৃনা কখনো খুঁজেনা।
রোদের রং ঘন হয়,ঝকঝকে গরমে ছিন্ন মেঘের ঘনঘটায় ব্যর্থতার হা-হুতাশে তৃনার আরো একটা দিন আস্তে আস্তে মরে যায়।চারদিকে মানুষ,গাড়ি-বাসের হর্নের শব্দ,কয়েকজন ছন্নছাড়া ভিখারী,অনেক লোকের ভিড়ে তৃনা আরেক সৃষ্টিছাড়া রৌদ্র ঝলমলে দুপুরের অস্তিত্বের টানে বিলীন হয়।অসংখ্য মুখের ভিড়ে তৃনা হঠাৎ একটা মুখের ছায়া খুঁজতে থাকে।যে মুখের প্রতিরেখা তার অস্তিত্বের গভীরে বৈশাখী মাতম তোলে।দিশেহারা হয়ে যায় এমন অসংখ্য রোদ ঝলমলে দুপুর কিংবা চন্দ্রজোছনা উপছে পড়া রাতে যার কথা ভাবলেই চন্দ্র বুঝি চূর্ন চূর্ন হয়ে কোটি হীরকখন্ডে বিভক্ত হয়ে চন্দ্রচূড়ের মায়ায় অবিভূত করে তৃনার শত কষ্টে আগলে রাখা স্বপ্নময় রাত।সেই মুখে সে প্রেম খুঁজে, আশ্রয় খুঁজে। তার কাছে শত লজ্জার অবগুন্ঠন লুপ্ত করে নিজেকে সে পরাজিত করে প্রতিমুহূর্তে। রবীন্দ্রনাথের কিছু লাইন তখন মনে পড়ি পড়ি করে মনে পড়েনা। লাইনগুলো মনে করার চেষ্টা করতে করতে তৃনা ওভারব্রীজ ধরে উপরে উঠতে থাকে। কতগুলো নারী-পুরুষ পিছনে ফেলে,একটা দুইটা করে সিঁড়ি ভেঙে ওভারব্রীজের উপরে এসে দাঁড়ায় সে।নীচে গাড়ি-বাস অনবরত চলছে,মাথার উপর দিয়ে দুটো কি পাখি যেন উড়ে গেল, বিশাল সব বিল্ডিং-কমপ্লেক্সের ফাঁকে একটুকরো রোদ্দুরঘেরা আকাশে দৃষ্টি রাখে সে,রবীন্দ্রনাথের লাইনগুলো মনে পড়ে যায়- 'আমি বিশ্বাস করিতে চাই, নির্ভর করিতে চাই, পূজা করিতে চাই।' সামনে এখন তার অন্যরকম,অবাস্তব এক শহর। চারপাশে কারা যেন সব, ধোঁয়া-ধোঁয়া ,অচেনা,অদ্ভূত রোদেলা জগৎ, তার হয়তো নয়,এই জগৎ যেন অন্য কারো অথবা সকলের।
তৃনা দুহাত দিয়ে চোখ ঢাকে, বহুকষ্টে আটকে রাখা অশ্রুবিন্দু উথলে উঠে চারদিক ভাসিয়ে দিতে চায়,কন্ঠরোধ হয়,বুকের পুরোটা বিশাল শূন্যতার গহ্বরে তলিয়ে যায়। কাকে বিশ্বাস করবে সে, কার উপর নির্ভর করবে, কাকে পূজা করবে??তার চোখের অশ্রুর স্পর্শে আর নিষ্ফল জিজ্ঞাসায় শহরের ক্লান্তি আর শব্দবহুল বায়ু নিঃশব্দ হয়ে যায়। বহু অভিমান আর চাপা কষ্ট, বিষাদ,অসুখ মুক্তি পায়, হৃৎপিন্ড ভেদ করে ঠেলে উঠে আসে গলার কাছে। এখন সে আর তৃনা নয়, তার ভেতর লক্ষ তৃনা এখন তাকে চিড়ে চিড়ে চন্দ্রচূড়ের ন্যয় অনুতে পরমাণুতে ছড়িয়ে দেয়।
আবার লেক-ড্রাইভ রোডে হাটতে হাটতে "রঙ" এর শোরুম দেখে অযথাই তৃনা থমকে যায়,চমকে যায়। ধমকে হাওয়া এসে কানে কানে তাকে বলে যায়-'তৃনা, তুমি পরাজিত।' "রঙ" এর সামনে বড় করে চারটা রঙমাখা হাতের ছবি দেখে তারও ইচ্ছে করে অনেক রঙ হাতে মেখে কালো রাস্তার উপর বিশাল কিছুর ছবি এঁকে দিতে। বহুদিন আগে দেখা সেই গলাকাটা লাশটা অদূরে দাঁড়িয়ে তাকে রক্ত হাতে মেখে কিছু একটা আঁকার আহবান জানায় যেন। ডেকে বলে জড়তা ভাঙতে,মূঢ়তা ভাঙতে। বিশাল জগৎ বিন্দুসম হয়ে যায় তার।
তৃনা একটা নির্ভরতার হাত খোঁজে,ভীষন ভালবাসায় জড়িয়ে ধরা হাত, একটা চেনা স্পর্শ, স্বপ্নময় মুহূর্ত,সুখের কিছু উদ্ভ্রান্ত ক্ষন। রাস্তার পাশে বিশাল বিলবোর্ডে দেয়া একটা পায়েলের ছবি, কতগুলি চুড়ি, ব্রিসলেট, তৃনার অস্তিত্বে ভাঙ্গনের সুর, ভীষন তৃষ্ণা,পড়ন্ত দুপুর,চোখের সামনে কুয়াশা নামে,বিশাল শহর, কালো রাস্তা,লোকজন মিলিয়ে যায় সব।
শূন্য ফুটপাতে একলা তৃনা, রিনঝিন পায়েলের নিক্বন,চুড়ির টুংটাং কোথা হতে ভেসে আসে যেন।নিদারূন অভিমান, ছায়া-ছায়া বিকেলের স্পর্শ,গোপন-লুকানো অপ্রকাশিত অনুভূতির আলোড়নে দগ্ধ হৃদয়। বহুদূরের, কাছে না পাওয়া, ভুলতে না পারা মানুষটি সামনে দাঁড়ায়। বাতাস চন্ঞ্চলা হয়, বিকারগ্রস্থ-অসুস্থ তৃনাকে আবারও চুপিচুপি বলে যায়,-'আমি বিশ্বাস করিতে চাই,নির্ভর করিতে চাই, পূজা করিতে চাই।'
ক'দিন পর তৃনার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হবে।তারপর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাসহ অনেক ভর্তি পরীক্ষার ক্রমাগত অত্যাচার,কিছু অপূর্ণ প্রচেষ্টার অবশেষ হবে হয়তো ব্যর্থতা। বাবার কাছ থেকে শোনা ডাক্তারদের গল্পের মাধ্যমে তৃনার ডাক্তার হবার স্বপ্নের পথ ধরে চলা।কখন,কবে,কিভাবে যে বাবার স্বপ্নের সাথে নিজের স্বপ্নটাকে একাত্ম করে ফেলেছিল সে, নয়তো সে বিশাল একটা ক্যানভাসে বিশাল একটা আকাশের ছবি আঁকতো।মধ্যরাতের ছবি। আলো-জোছনায় ভরা মায়া মায়া অন্ধকারে একটা,দুইটা,তিনটা না অনেকগুলো চন্দ্রের সমারোহে জোছনা চন্দ্রচূড় হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তো।অসম্ভব আকুতি ছাড়িয়ে অসস্পূর্ণ সুখের সম্পূর্ণ,পরিপূর্ণ পূর্ণতার আবেশে ভেসে যেত তৃনার খুব সংকীর্ন ছোট্ট পৃথিবী।


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিদিশা চট্টপাধ্যায় তোমার ভাবনার ব্যাপ্তি আছে। কখনো লেখা ছেড়ো না।
অদিতি ভট্টাচার্য্য ভাল লা্গল আপনার গল্প। লিখতে থাকিন, আরো গল্প পড়ার আশায় রইলাম।
মিলন বনিক খুব সুন্দর গল্ল্পের থিম...তবে গল্পের মুল কাহিনীর চাইতে বর্ণনাটা বেশী হয়ে গেছে মনে হচ্ছে আর লেখার সাথে গল্পকারের নিজস্ব মতামত প্রাধান্য পেয়েছে বেশী....ভালো লাগলো...আর শুভকামনা...
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি সোনালী,সবুজ,কালচে-লালচে দুপুর // দুপুরের এত সুন্দর রঙের বর্ণনা পেলাম সত্যি অদ্ভুত ভাবনা.......খুব ভাল লাগলো গল্প.....অনেক ধন্যবাদ নাজিয়াকে.................
জায়েদ রশীদ কিছু আসাধারন কথামালা, দারুন বর্ণনাভঙ্গী। তবে সামগ্রিক সমন্বয়তা নিয়ে কাজ করলে হয়ত আরও ভাল হবে।
আমি এখনো লেখায় দক্ষ নই..মাত্র শুরু করলাম।আরো ভাল করার চেষ্টা করবো।পড়ার জন্য ধন্যবাদ.......
কবি এবং হিমু আপনাদের লেখা গল্পগুলো পড়ে ভালই লাগে।আর কিছু না হওক আমার বিরক্তিকর সময়গুলো কেটে যায়।আমি আবেগহীন মানুষ।আর গল্পগুলো আবেগে ঠাসা।ভালই।প্রথম লেখা।আপনার লেখা আর ও সুন্দর হবে এই কামনা রইল।
গল্পটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ........।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন তৃণাকে চমতকার ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ...........................
মৌ রানী সুন্দর একটি গল্প। যেহেতু প্রথম লেখা সে তুলনায় বেশ সুন্দর।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ............
নাফিসা রাফা সোনালী,সবুজ,কালচে-লালচে দুপুর-----------এই লাইনটা প্রথমে পড়ে আমি হতবাক হয়ে নিজের অজান্তেই গল্পটা পড়া শুরু করি।আমার মতে এই গল্পটা এখানে শেষ না হলে ভালো হতো।আরো লিখতে,আরো লিখতে আর আমি পড়েই যেতাম।আমি এক্কেবারেই মনোমুগ্ধ হয়ে পড়ছিলাম।এখন থেকে তোমার লেখার অপেক্কায় থাকতে হবে।প্রকৃতির বর্ণনা অচিন্তনীয় সুন্দর।আমি উপমা খুঁজে পাচ্ছিনা।অসাধারন,অসাধারন এবং অসাধারন।
তোমার এত প্রশংসার জবাব কিভাবে দিব আমিও বুঝতে পারছিনা।আমি কি এতটা পাবার যোগ্য হয়েছি না কি??তবে তোমাকে হতাশ করবোনা, এখন থেকে নিয়মিত লিখবো.....।

১৮ জুলাই - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪