এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে সাকোর ব্যবস্থা থাকলেও, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হলে জলপথ অতিক্রম করতে হয়। কোন রাস্তা না থাকায় নৌকা একমাত্র যাতায়াত ভরসা। অগভীর জলমহলে শাপলা ফোটে বাড়িয়ে দেয় বিলের সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পাখিরা আসে আতিথি হিসেবে। ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের দল সূর্য উদয়ের পূর্বেই নৌকা নিয়ে পৌছে যায় মাঝ বিলে। গলা পর্যন্ত পানিতে নেমে মজা করে শাপলা তোলে ছোট্ট সোনামনিরা। ঐ শৈশবের স্মৃতি নিয়েই সোনামনিরা একদিন বড় হয়। শুকনো মৌসুমে বিলের পানি কিছুটা কমলে ধান চাষ করা হয়। এছাড়া বাকি সময়ে সমস্ত বিলে থাকে রূপালী জলের রাজত্ব। এই অগভীর বিল পরিপূর্ণ ছোট-বড় মাছে। গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে দেখা যাবে একটি করে নৌকা আর মাছ ধরার একগুচ্ছ জাল। মাছ, শাপলা গঞ্জে বিক্রি করে চলে অনেকের জীবন-জীবিকা। এখানে বুড়ো, বাচ্চা সবাই গান-বজনা পছন্দ করে। প্রতি বছরের মত এবছরও মানুষের ধৈর্যের বাধ যখন ভেঙ্গে যাচ্ছে, তখন শোনা গেল হিমেলপুরে যাত্রাপালা বসবে। যাত্রার নাম “আজ পুতুলের বিয়ে হবে”।
আমাদের গ্রামে যাত্রাপালা আসবে এক মাস পরে। তাই আমি আর সাজ্জাদ হিমেলপুরে যাব যাত্রা দেখতে। সাজ্জাদ বলল, যাত্রা দেখতে যাব ভাল কথা; টাকা পাব কোথায়? দু’জনে অনেক বুদ্ধি করে আমাদের গোলাঘর থেকে ধান চুরি করলাম। সন্ধ্যের পরে চুরি করা ধান নিয়ে একটা ছোট্ট নৌকায় উঠলাম। সাজ্জাদ নৌকার দ্বার টানছে। আমাদের দু’জনের জমানো কিছু টাকা ছিল মাটির ব্যাংকে। ব্যাংক ভেঙ্গে টাকাগুলো পোটলায় বেধে রেখে দিলাম নৌকার ভেতরে।
হিমেলপুর যেতে তিনটি বিল পারি দিতে হবে। একটা বিল পার হয়ে অন্য একটা বিলে ঢোকলাম। সামনে আর একটা বিল পার হলেই দেখা যাবে হিমেলপুর গ্রাম। নৌকাটা বেশ পুরানো, জোরো বাতাসে ডুবে যাওয়ার ভয়।তবে কোথাও কোন বাতাসের অস্তিত্ব নেই। বিলের জলরাশি ছিল একেবারে নিরব। নিঃস্তব্ধ প্রকৃতিতে মধুর জলরাশির আভায় নৌকা চলছে মৃদু গতিতে। বিলের মাঝখানে একটা উচু জায়গা আছে। গ্রামের মানুষের কাছে ’টিলা’ নামে পরিচিত। এই টিলায় বাস করে মস্তবড় তালগাছ আর দুষ্ট শিয়লেরা। আমাদের নৌকাটা টিলার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা শিয়াল লাফ দিল নৌকার উপর। ভেঙ্গে গেল নৌকার একটা অংশ। যাত্রা পিপাসু দুই বালকের সকল আশা-ভরসা নিয়ে বোকা নৌকা ডুব দিল ক্ষুধার্ত জলরাশির বুকে। অবশেষে ভয়ংকর শিয়ালের আশ্রয় ভূমি ‘টিলা’ হল আমাদের রাত্রি যাপনের ভরসা। চুরি করা ধান আর বিক্রি করা হল না এবং শত কষ্টের জমানো টাকা অথৈজলে হারিয়ে গেল।
সাজ্জাদ আর আমি নির্জণ টিলায় ভয়ে ভয়ে হাটছি। মধ্য আকাশের চাঁদ বলে দিচ্ছে রাত কয়টা বাজে। জোনাকি পোকারা আলো জ্বালিয়ে আমাদের বরণ করে নিল। এখান থেকেই শোনা যাচ্ছে হিমেলপুরের ঢোল-বাজনার শব্দ। ঈদের সময় রিকু মামার দেওয়া ঘড়িটা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেল। জ্যোৎস্না মাখা চাঁদের আলোতে জনশূণ্য স্থনে শুধু মাত্র আমরা দু’জন।
শিয়ালেরা আমাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারল না। চাঁদের আলো যখন মেঘের ডানায় ঢেকে যায়, পৃথিবী তখন সৌন্দর্য হারিয়ে হয়ে যায় বিষন্ন। তেমনিভা্বে আমাদের মন থেকে আনন্দের মুহুর্তটা হরিয়ে গিয়ে সঙ্গি হল সংকটময় জীবন। এমন সময় দুষ্ট শিয়ালেরা আমাদের তারা করল। কোন পথ খুজে না পেয়ে পানিতে ঝাপ দিলাম। আমাদের অসহায় জীবন নিয়ে শিয়াল মশাইরা মজা করে গেল। পানি থেকে উঠে এসে বসে ছিলাম একটা মস্তবড় তালগাছের নিচে। একটা একটা করে নিভতে লাগল দুরাশার প্রদীপ। জ্যোৎস্না বিছানো রাতটা ছিল আমাদের জন্য অমঙ্গল। শিয়ালের ভয়ে হৃদয় প্রখর, ভয়ার্ত রজনীর অভিশাপে বন্দি জীবন। গোটা টিলার বুকে ভয়ের ঝান্ডা হাওয়ায় আমরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। হঠাৎ শোনা গেল বিকট এক শব্দ। প্রচন্ড ভয় পেয়ে আবার ঝাপ দিলাম চেনা-জানা বিলের জলে। ভেবেছিলাম দুষ্ট শিয়ালের দল হবে, কিন্তু তা ছিল তালগাছ থেকে পাকা তাল পড়ার শব্দ। এইবার বিপদ থেকে উদ্ধার করল যাত্রাফেরৎ একটি নৌকা। অনেক কষ্ট করে একটা রাত ’সিন্দুবাদ’ -এর মত উপভোগ করে, পরের দিন বাড়ির পথে। কিন্তু, পুতুলের বিয়ে আর দেখা হল না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ সাইফুল্লাহ
আমার মা গলব্লাডারে ক্যান্সারে আক্রান্ত। আল্লাহর কাছে আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন ও আমার মায়ের শাররিক অসুস্থতার বিষটি মানবিক দিক দিয়ে বিচার করে যে যতটুকু পারেন আর্থিক সাহায্য করবেন । সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : মোঃ সায়ফুল্লাহ ,সঞ্চয়ী হিসাব নং -১০১৭৪০৪, সোনালী ব্যাংক,মাগুরা শাখা মাগুরা। যোগাযোগের ঠিকানা ও বিকাশ নং : ০১৯১১-৬৬০৫২২
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।