ত্রপা মল্লিক গায়ের নামকরা শিক্ষিকা।এই নাম করতে গিয়ে তার যৌবন কখন মধ্যগগনে পৌঁছেছে, খেয়াল করেনি।বাবা মা শখ করেই ছোট্ট নাম রেখেছিল ত্রপা।ডাইনে বায়ে আর কিছুই ছিল না।নিজে বড় হয়ে যখন শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করেছে তখন মানুষের দৃষ্টিকে থমকে দিতে নিজের বংশের মল্লিক যুক্ত করেছে।এরপর কি এক নেশায় লিপ্ত থেকে সে কিছু কিশোর কিশোরির সহজ সরল মুখ গুলোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার খেলায় মাতিয়েছে; যেখানে প্রায়সঃ সে অনুঘটক হিসাবে জ্বলজ্বল করছে।
চাকুরি জীবনের ১০ বতসর পর বাবা মৃত্যু সজ্জায় শুয়ে শুয়ে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিবাহের কথা সামনে আনে।ত্রপা বিনীত কন্ঠে বাবার হাত খানি ধরে বলে, বাবা আমি এখন চাই তোমার সুস্থ্যতা নিয়েই শুধু আলোচনা হোক, অন্য কোন কিছু নিয়ে নয়। বাবা ক্ষীন কন্ঠে বলেনঃ মারে, আমরা সবে তিন জন মানুষ পরিবারে।আমার দিন শেষ হয়ে এসেছে। আল্লাহর কাছে অনেক চেয়ে কান্নাকাটি করে বিবাহের ১৫ বতসর পরে তোকে পেয়েছি।তোর মায়ের শরীরও ভাল না। বাবা মায়ের কর্তব্য করে যেতে দে। তোর যদি কোন পছন্দ থাকে তো...
ত্রপা দ্রুত বাবার মুখে ওর হাত চাপা দেয়। বাবা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে একমাত্র মেয়ের শ্যামলা ধবল সরল ধারালো মুখের দিকে।মেয়ের দুই চোখ বেয়ে কয়েকফোটা মুক্তদানা গড়িয়ে পড়ে বাবার মুখে, লজ্জায় ত্রপা নিজেকে সামলে নিতে বাবার মুখের হাত দ্রুত সরিয়ে নিতে যায়....
বাবার মুখটি কাত হয়ে যায় চিরদিনের জন্য।আজম্ম স্নেহ ভালোবাসা বিলানো বাবাটি মুহুর্তেই ভালোবাসার কাংগাল হয়ে যায়।ত্রপা কাঁদতে পারে না।কান্নার বড় বাধ তাকে স্তব্ধ বোবা বানিয়ে দেয়। এরপরের ৫ দিন সে তেমন কিছুই করেনি। শুধু পাশের বাড়ির খালেক চাচা যেভাবে যা করতে বলেছেন, সেই কাজে সম্মতি দিয়ে গেছে।১৫ দিন নিজের স্কুলে যায় নি, এরপর ত্রপা কাজে মনোনিবেশ করেছে, দরোজার সামনের নেমপ্লেট এ নিজের নাম শুধু ত্রপা থেকে পরিবর্তন করে ত্রপা মল্লিক, সহকারি প্রধান শিক্ষিকা লিখেছে।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। এইবার কি যে হইছে বৃষ্টির ঈদ হইছে মনে হয়। স্কুলে আসতে কমপক্ষে তিনবার হাটুর উপরে শাড়ি তুলতে হয়।এই যে নিদারূন কষ্টের কারণ তিন বৎসর আগে এই গন্ড গা, পাড়া গায়েরে পৌরসভা ঘোষনা করা হয়্রছে। মেম্বার রা এখন সাহেব হয়ে কাউন্সিলর আর চেয়ারম্যান সাহ্রব হয়েছেন মেয়র। আগে চলতেন রিক্সায় এখন গাড়িতে। কিন্তু ত্রপারা যে শিক্ষক সেই শিক্ষকই আছে; শুধু স্কুলে যেতে আগে জুতো পরেই যেতে পারত, এখন হাটুর উপর শাড়ি তোলা লাগে।যদিও, এসব নিয়ে ত্রপা মল্লিকের তেমন কোন মাথা ব্যাথা নাই। সে নিমগ্ন চিত্তে শিক্ষা দিয়ে যায়। তার সহকর্মী ও হেড স্যার তাকে খুব সাহায্য করে।বৃষ্টির মুষলধারের কারনে জানালা বন্ধ করতে উঠতে হল।জানালা দিয়ে তাকাতে গিয়ে দূরে নজর পরতেই মনটা কেমন করে উঠল।
সে ছিল জাহাংগীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্জন সবুজ পরিবেশ টাই সবার তরুণ জীবনকে ভালবাসতে শিখায় এবং ভালবাসতে বাধ্য করে। ত্রপা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় এক্টু আল্লাদিও ছিল।ক্লাশের ঝাকরা চুলের অমিত চৌধুরি খুব টেনে টেনে অমিত্রাক্ষর ছন্দে হুগলির বাংলা টানে কথা বলত।নাটক করত, আবৃতি করত আবার পড়ালেখাও করত। অমিত কে ক্লাশের অনেকের ভাল লাগত। কিন্তু সনাতন ধর্মের কাতনে অনেকেই গা ঘেষে মিশলেও একটা মানসিক দুরুত্ব বজায় রাখত। কিন্তু বড় আদর আর সীমাহীন স্বাধিনতায় বড় হওয়া ত্রপা এই মানসিক ব্যবধান গড়ার বিষয়টি বুঝত না। তাই একদিন হলের এক অনুষ্ঠানে যখন অমিত কবিতা পাঠ করে স্টেজ থেকে নেমে বারান্দায় এল, ত্রপা তার সুন্দর বিগলিত টেপা গালের হাসিতে অমিত কে অভিনন্দিত করেছিল।
"অমিত, তুমি তো হৃদয় কারা আবৃতি করেছে, ওরে বাপ আমার দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, মনে হচ্ছিল আর এক্টু লম্বা করলে আমি মরেই যেতাম ! " ত্রপার অভিব্যাক্তি এক শ্বাসে বলে ওর চোখে তাকিয়ে থাকে।
সাহিত্য অংগনে বড় হওয়া অমিতের নজর এড়ায় না, সে তার চাহুনীর গভীর তলদেশ নিমিষেই পড়ে ফেলে, বলেঃ ত্রপা তুমি কি যাবে আমাত সাথে সালেক মামার চায়ের দোকানে? চল চা খাই, গলাটা শুকিয়ে গেছে।
ত্রপা এক্টু আগেই এক মগ চা রুমে বানিয়ে খেয়ে এসেছে। বাইরের ফুল টাকায় হাফ কাপ চায়ে তার মন ভরে না, তাই সে রুমে বানিয়ে খায়। কিন্তু অমিতের গলা শুকিয়ে যাওয়ার কথায় তার মন কেন যে আদ্রতায় ভরে যায় বুঝেনা, বলেঃ চলো।
এই যে চলার শুরু তা আর থেমে থাকেনি....
গাছ গাছালি পাখির বন্যার মত প্রেম সাগরের পরিবেশে এই দুই ধর্মের দুই তরুণ তরুণীর ছন্দময় সুরা বেসুরা চলায় অনেকেই বাকা চোখে দেখলেও, কেউ কিছু বলতে পারেনি। কারন তারা যে বড্ড পুর্ণ বয়স্ক ! ত্রপা আর অমিত ক্যাম্পাসের সেরম জুটি। কেউ কাউকে ছাড়া একদন্ড থাকতে পারেনা। মাঝে মাঝে ক্লাস অবসরে তারা পিছনের ঝাউ বনে বা পুকুর পাড়ে বসে থাকে। ত্রপা কোনদিন খালি গলায় গান ধরে....
আমারো পরানে যাহা চায়, তুমি তাই তাই গো....
অমিত কানের গোড়ালির কাছে দুই ঠোট লাগিয়ে চুমু দেয় আর বলে সত্যিতো?
অথবা কোনদিন শরতের স্নিগ্ধ বিকেলে জাতীয় স্মৃতি সৌধের সাইকাস গাছে কাঠের লাকড়ি দিয়ে দুইজনে স্মৃতি চিহ্ন আকে "ত্রপা+অমিত"। হয়ত ভরাট গলায় কবিতা উচ্চারিত হয় অমিতের গলায়....
আমি ভালোবাসার রং মেখে তোমায় বুকে আকি
জম্ম জম্মান্তরের তুমি থাকবে কি
বেদনা আশা এবং ভালোবাসায়, কুহেকিনী?
ত্রপা চেহারায় রাগের ভান করে বলেঃ আমি কুহেকীনি?তুমি আমায় এসব বলতে পারলে? এই কি তোমার ভালোবাসার স্মরূপ?
অমিত হাসে সেই হাসিতে পদ্মপাতায় চানক্য ঔজ্জ্বল্যতায় ভেসে উঠে প্রেম, ভক্তি শ্রধা এবং দীর্ঘদিনের পথ চলার সাহস।ত্রপা ওর চোখে তাকিয়ে নিমিষেই ভুলে যায়...জড়িয়ে ধরে অমিত কে নির্দিধায়।জীবনের এই ছন্দ চলে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা বা হেমন্তের দিন গুলোতে.. বড়ই ছান্দিসিক আনন্দে।
শেষবর্ষে ওরা যখন শেষ সেমিষ্টারের দিন গুলোতে পৌঁছায় জীবনের স্বপ্ন গুলোতে রংগের তুলির শেষ আচর কাটায় ব্যস্ত, এমন সময় অমিতের চলনে বলনে খাপ ছাড়া লক্ষণ স্পষ্ট হতে থাকে। ত্রপা সরল সহজ সাহসি মেয়ে, অমিতের এই অমিত্রাক্ষর ছন্দ বোঝে না। কিন্তু বোঝে অমিত তাকে অবহেলা করছে....
সে পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায় অবহেলা কখনো সহ্য করতে পারেনা। নিজেকে খুব অপাংতেও মনে হয়। সহজ সরল ভাষায় অমিত কে জিজ্ঞাসা করে তার প্রতি কেন অমিত এই অবহেলা করছে?
অমিত তেমন করে কোন কিছুই বলে না। শুধু বলে জীবনের আয়ু যত কমছে জীবনের অর্থ তত বদলে যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে ধর্মই এখানে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। বাবা মা আত্মিয় অনাত্মিয় বন্ধুবান্ধব কেউ এই অসম সম্পর্ক মেনে নেবে না।
ত্রপা ম্রিয়মান সুরে মনে করিয়ে দেয় যে সে কেন এতদিন নিজেই দুজনে এক সাথে থাকার জন্য ধর্মকে ত্যাগ পর্যন্ত করার কথা বলত?
অমিত সেইরূপ ভাবানন্তর না দেখিয়ে বলে যায়ঃ বলেছিনা, বয়স যত বাড়ছে তত এই ধর্মের টান বাড়ছে।তাছাড়া রাজনীতির উচ্চপদে যেতে গেলে এই অসমতা সমস্যা করছে। ত্রপা ফ্যাল্ফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। নিজের আর অন্যের স্বাধীনতাকে ভীষণ মূল্য দেয় বলেই ত্রপা আর কথা বাড়ায় নি, এমন কি আর কোন্দিন অমিতের ছায়া মাড়ায় নি।এই সেই ত্রপা যে নিজেকে গড়ে শুন্য থেকে বারবার, কোন হতোদ্যম তাকে বিচলিত করেনা।
চুড়ান্ত পরীক্ষা শেষে ত্রপা বাসায় একাকি চুপচাপ সময় কাটায়। বাবা মা মেয়ের এই নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা হতোদ্দম হয়ে যায়। মেয়ে বড় হয়েছে ফলে সব কিছু সহজ ভাবে জিজ্ঞাসাও করা যায় না। মেয়ে ঘরে বসে রবীন্দ্র সংগিত বা পুরোনো দিনের বাংলা গান শোনে।কখনো সেই গানের শব্দে বৃদ্ধ বাবার সকালের ঘুম ভেংগে যায়।মেয়ের কথা মনে পরে যায়, তাহলে কি মেয়ে সারারাত ঘুমায় নি?
আবার কোনদিন গান শুনে ভাল লাগে
" তুমি যে আমার সাত সমুদ্র তের নদি পাড়ের রাজপুত্র, চেয়ে চেয়ে জীবন পাড়ি দেই, আমি অতি নগন্য অতি ক্ষুদ্র! "
অথবা
নজরুলের অতি জনপ্রিয় গান "পথ চলিতে যদি চকিতে কভু দেখা হয়, পরানো প্রিয়...!"
বারবার এক গানে কি পায় এই মেয়ে? তাহলে কি মেয়ে কোন বিদেশির প্রেমে পরেছে? হায় হায় একমাত্র মেয়ে বিদেশে চলে গেলে তাদের সময় কাটবে কি ভাবে?
ত্রপার পরীক্ষার ফল বেড়ুয়। প্রথম শ্রেনীতে দ্বিতিয়। ইংরেজিতে এই ফল ঈর্ষনীয়। সেই ত্রপা উপজেলা লেভেলের স্কুলে সহকারি হেড মাস্টারের পদে চাকুরীর দরখাস্ত করে। স্কুল ব্যবস্থাপক কমিটি শুধু এক্টি প্রশ্ন করে, চাকুরি পেলে কত দিন এখানে থাকবেন? ত্রপার বলিষ্ট উত্তর ছিল, আমৃত্যু থাকার ইচ্ছায় এসেছি, যদি সুযোগ পাই।এরপর চাকুরিতে যোগদান এবং নির্মোহ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারেনি। এমনকি কোন সখের বসেও না।
আজ ত্রপা কালো পাড়ের লাল সবুজ স্ট্রাইপ শাড়ি পরে স্কুলে এসেছে। অন্য পুরুষ ও মহিলা সকল শিক্ষকেরাই বিষয়টি গভীরভাবে অবলোকন করেছে।আজ স্কুলের এক বিশেষ দিন। স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৯ বৎসরের ইতিহাসে এইবার জেএসসি পরীক্ষায় ত্রপার স্কুলথেকে দেশ সেরার মুকুট ছিনিয়ে এনেছে।সবাই ত্রপাকে এই সাফল্যের পিছনের গুরু ভাবছে। যদিও ত্রপা বিনয়ের সাথে তা এড়িয়ে গিয়ে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বলেই আনন্দ ভাগাভাগি করছে। ত্রপা স্কুলের এই ফলাফল আনা সেই ক্ষুদে কিশোরীকে চিনতে পারছে না বলে অস্বস্থিতে আছে।পিয়ন কে ডেকে স্কুলের ভর্তি রেজিষ্টার দেখতে থাকে। প্রথম হয়া রোলধারি মেয়েটির সকল তথ্য দেখে।
নামঃ ত্রপা
পিতাঃ এ. চৌধুরি
মাতাঃ স্বর্গীয় রাজস্রি অধিকারি
ঠিকানাঃ বাঘ মারা, পাংসা, রাজবাড়ি।
স্থানিয় অবিভাবকঃ রত্না বালা সাহা........
আর বেশি কিছু দেখতে সময় পায় না। হেড স্যার ডেকে পাঠিয়েছেন।যাবার আগে চোখ পরে মেয়েটি ভর্তি হয়েছে মাত্র ৫ মাস আগে। রুম থেকে উঠতে উঠতে ত্রপা ভাবে তার নিজের নামে নাম এই মেয়েটি ৫ মাস হলো স্কুলে ভর্তি হয়েছে, এত বুদ্ধিমতি যে স্কুলের সম্মান আকাশে উঠিয়েছে, তাকে ব্যক্তিগত ভাবে সে চেনেনা...
এ তার জন্য লজ্জার এবং কর্তব্যে অবহেলার নামান্তর! হেড স্যারের রুম থেকে ফিরেই সে মেয়েটিকে ডাকবে তার রুমে।
প্রায় আধা ঘন্টা সময় ধরে ত্রপা মল্লিকের রুমে দেশ সেরা ছাত্রি ত্রপা বসে আছে। কতই বা বয়স কিন্তু বেশ চাতুর্যের সাথে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।জীবনের সমন্ধে তার অগাধ জ্ঞান।ত্রপা মল্লিক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনে তার কথাঃ ত্রপার মা মারা যায় তাকে জম্ম দেবার সময়।দাদির কাছে বড় হয়েছে প্রায় ১০ বৎসর বয়স পর্যন্ত। এরপর রোড এক্সিডেন্টে একসাথে দাদা দাদির মৃত্যুর পর তার বাবা এ চৌধুরি তাকে নিয়ে বাবার দূর সম্পর্কের এক বোনের বাসায় ওঠে। ত্রপা বাবাকেও তেমন কাছে পায় নি। বাবা রাজনীতি ও সাংবাদিকতা করার জন্য প্রায়স পালিয়ে বা জেলে বা কাজে বাইরেই থাকে। তবে মাঝে মাঝে যখন এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় বাড়িতে থাকে তখন ত্রপা বাবার বুকে ঘুমায়।বাবা তাকে গল্প বলে ঘুম পাড়ায়। সেই গল্পের নায়িকা প্রায়সঃ খুব বুদ্ধিমতি এক সাহসি স্বাধিনচেতা নারী।ত্রপা যখন কিছুটা বুঝতে শেখে তখনই দাদাদাদির অন্তর্ধানে সে তার বাবাকে খুব মুষরে পরতে দেখে।এরপর রাজনীতির কারনে কিম্বা কোন এক রিপোর্ট করার কারণে তাকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েই বেশি থাকতে হয়।দূর সম্পর্কের এই পিশি ত্রপাকে খুব আদর করে। কিন্তু গত কয়েকমাস আগে বাবাকে অব্যাহতভাবে হত্যার হুমকি আসতে থাকায় অমিত চৌধুরি ঘাবরে যায়। এবং একদিন সন্ধ্যায় মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলেঃ মারে তোর ভবিষ্যত নিয়ে আমি খুব চিন্তিত। মা হারিয়েছিস, দাদা দাদি হারিয়েছিস, বাবা থেকেও নাই। কিন্তু তোর জীবন গড়ার জন্য একজন সাহসি, সুমতি বুদ্ধিমতি স্বাধিনচেতা নারী আছে। আমার ওপর তার খুব অভিমান বা রাগ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে যেটুকু আমি জানি তার নজরে যদি কোনদিন আসতে পারিস, তবে তোর আর কোন চিন্তাই করতে হবে না।আমার জীবনে সে বেগম রোকেয়ার মত হলেও তোর জীবনে সে সাক্ষাত মাদাম তেরেসা হবে। এরপর বাবা আমাকে এই স্কুলে ভর্তি করিয়ে স্কুলের পাশে বাসা নিয়ে পিশিকে সহ চলে আসেন। এর সাতদিন পর বাবাকে কিছু পুলিশের লোক উঠিয়ে নিয়ে যায়....ছোট্ট কিশোরি মেয়ে এতক্ষনে হু হু করে কেঁদে ওঠে।নির্বাক ত্রপা মল্লিক কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। টেবিলের টিসু এগিয়ে দেয়। ও নীরবে নিজের চোখ মুছে যায়। এমন সময় ত্রপা মল্লিক উঠে মেয়েকে বুকে জড়ায়, বলেঃ তুমি কি তোমার বাবার সেই গল্পের নায়িকাকে খুঁজেছ?
ত্রপা মাথা নাড়ায়। বোঝায় না।
ত্রপা মল্লিক এইবার প্রশ্ন করতে চায় কেন? না করে বলে আচ্ছা তোমার বাবা তোমার নাম শুধু ত্রপা রেখেছিল কেন, কিছু কি বলেছে?
এইবার ত্রপা উত্তর দেয়ঃ না। তবে আমার মনে হয় বাবা এই নামের কাউকে খুব পছন্দ করত।
ত্রপা মল্লিক আরো কিছু বলতে যায়, কিন্তু বলতে পারে না। স্কুলের সভাপতি এলাকার সংসদ সদস্য এসে পৌছেছেন। স্কুলের অনুষ্ঠান এক্ষুনি শুরু হবে।ত্রপাকে তার ক্লাসের মেয়েদের দিকে যেতে বলে হেড স্যারের রুমের দিকে দ্রুত পা বাড়ায়।
হেড স্যারের রুমে সংসদ সদস্য সহ ব্যবস্থাপনা সভার সকল সভ্য উপস্থিত। হেড স্যার ইশারায় পাশের চেয়ারে বসতে বল্লে ত্রপা মল্লিক চেয়ারের দিকে এগিয়ে যায়।সে দেখে সবার চোখ টিভির ৭১ চ্যানেলের দিকে। সেখানে লাইভ দেখাচ্ছে প্রখ্যাত রাজনিতিবিদ ও সাংবাদিক অমিত চৌধুরি ওরফে এ. চৌধুরীর লাশ পাট ক্ষেতের মধ্য থেকে পুলিশ উদ্ধার করছে।টেলপে দেখাচ্ছে কমপক্ষে তিন দিন আগে তাকে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছে। এই সুনামধন্য সাংবাদিক এর কোন শত্রু ছিল না।একমাত্র মেয়েই ছিল তার সম্বল। মেয়ের জীবন গড়ার স্বপ্নই ছিল তার একমাত্র দুর্বলতা....
পুলিশের প্রধান বলছে প্রায় সাতদিন হল অমিত চৌধুরি নিখোঁজ ছিল। তার একমাত্র মেয়েকে খোজা হচ্ছে কোন তথ্য পাওয়া যায় কি না...
ত্রপা মল্লিক চিৎকার করে ওঠেঃ না, না এসব মিথ্যা কথা। ওকে পুলিশই তুলে নিয়ে গিয়েছিল।এখন ওর মেয়েকে গুম করার জন্য খুঁজছে....
ত্রপা মল্লিক দ্রুত উঠে যায় এবং চলমান অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষন ত্রপাকেও সম্বর্ধনা নিতে পাওয়া যায় না।ত্রপাকে বুকে জড়িয়ে ত্রপা মল্লিক অজানা উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে...প্রেমের উৎপত্তির স্থল রক্ষা করতে না পারলেও প্রেমের প্রবাহের সঞ্চালন যেন রক্ষা পায়, সেই দুর্বলতা তাকে হটাৎ করেই বিদ্রোহী করে তোলে।ত্রপারা জানে না কি তাদের ভবিষ্যত কি তাদের ভরষা !