কেড়ে নিও না প্লীজ

শৈশব (সেপ্টেম্বর ২০১৩)

ইসহাক খান
  • 0
  • ২৫
আসাদ দরজাটা আলগোছে ফাঁক করে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলো, বাবু ঘুমিয়েছে?
নাজমা বাবুর পাশেই বসে ছিল। উঠে এলো। তার স্বরও নিচু, বলল, হ্যাঁ।
পাশের ঘরে একটু আসবে?
চল, যাচ্ছি।
নাজমা সন্তর্পণে দরজাটা টেনে দেয়। তারা দু’জন ধীরে ধীরে পাশের ঘরে গিয়ে বসে।

অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না। নীরবতা ভাঙতে চাইছে দু’জনই, কিন্তু কী বলে শুরু করবে দিশা পাচ্ছে না। নাজমা হাতের চুড়িগুলো মিছেই ঠিকঠাক করার চেষ্টা করলো, আসাদ বারদুয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেললো এবং আরেকটু গম্ভীর হয়ে গেল।
নীরবতা ভঙ্গ করলো আসাদই। বলল, কিছু ঠিক করলে?
নাজমা বলে, যা বলার তা তো বলেছিই। আমার আর কিছু ভাবার নেই।
একটু সময় নিলে হতো না?
সময় নিয়ে কী লাভ? তুমিও তো বলেছ, এটাই তোমার সিদ্ধান্ত।
কিন্তু, বাবু ... ...
হ্যাঁ, সে-ই একমাত্র সমস্যা।
বলেই নাজমা চুপ হয়ে যায়, মাথা নিচু করে ফেলে। মা হয়ে নিজের একমাত্র সন্তানকে “সমস্যা” বলাটা কেমন যেন বেখাপ্পা শোনায়।
আসাদ হঠাৎই যেন বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠে, সামনের দিকে ঝুঁকে এসে বলে, আবারো বলছি। একসাথে থাকার একটা শেষ চেষ্টা করা যায় না? আমাদের কথা বাদ দিলাম, শুধু বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে।
নাজমাকে দুঃখী দেখায়। চোখের কোণে কিছু একটা চিকচিক করছে তার। আলগোছে শাড়ির আঁচলের কোণায় মুছে ফেলে ভেজা কণ্ঠে বলে, যত সময় এভাবে কাটাবে, ততই তো ভার বাড়বে।
আবার নিভে যায় আসাদ। শরীরটা পেছনে, চেয়ারের গদিতে ছেড়ে দেয়। ওর স্ত্রী ঠিকই বলেছে। এত বিতৃষ্ণা, এত দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে এক ছাদের নিচে হয়তো থাকা যায়, দিন পার করা যায়, কিন্তু বড় অসহনীয় হয়ে ওঠে। তার চেয়ে সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলে ভারমুক্ত হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।
স্ত্রী? হ্যাঁ, আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরই তাদের পথ আলাদা হয়ে যাবে, পরিচয় ভিন্ন হয়ে যাবে। এতদিনের পথ চলা মাত্র একটা কাগজে সই করেই অস্বীকার করে ফেলা হবে।
সন্তানকে আর ক’দিন কাছে পাবে? প্রশ্নটা মাথার ভেতর ওকে কুরে কুরে খেতে থাকে। আহ, আমার অস্তিত্ব, আমার স্বত্বার অংশ। সে দূরে চলে যাবে? সবসময়, ইচ্ছেমত দেখতে পাবো না, কোলে নিয়ে আদর করতে পারবো না?

নাজমা আবার বলে, রাত হয়েছে, ঘুমোতে চল।
আসাদের বুক ভেঙে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে, বাবুর সাথে একটা অবিচার করতে চলেছে ওরা।


পাশের ঘরে বাবু ঘুমোয় নি। একটুখানি খোলা দরজা দিয়ে “আব্বুনি” আর “আম্মুনির” কিছু কথা কানে এসেছে। কিছুদিন ধরেই দু’জন গম্ভীর হয়ে আছে, ঠিকমতো হাসছে না, ওর সাথে খেলছে না। আব্বুনি গল্প বলছে না, আম্মুনি গান গাইছে না। যেন কিছু একটা ঘটতে চলেছে। যেন দু’জন খুব জটিল কিছু একটা নিয়ে ভাবছে।
না, ডিভোর্স, বিচ্ছেদ, ভাঙা-গড়া – এসব জটিল কথার অর্থ বোঝার বয়স বাবুর এখনো হয় নি। তবুও সে তার ছোট্ট বুকটার ভেতর একটা কেমন দুরুদুরু অনুভব করে। আবছা-আবছা টের পায়, ওর স্বপ্নমাখা শৈশবের দিকে একটা ঘোর দুর্বিপাক ঘনিয়ে আসছে, যেটা ওর জন্য খারাপ হবে, খুব খারাপ।
আচ্ছা, আব্বুনি আর আম্মুনি কি আলাদা হয়ে যাবে? ধ্যাৎ, তাই হয় নাকি? দু’জনের একজনকেও তো সে ছেড়ে থাকতে পারবে না।
ইস, আব্বুনি আর আম্মুনির সাথে যদি এটা নিয়ে কথা বলা যেত, তাহলে কত্ত ভাল হতো। কিন্তু ওরা যে “বড়”। ওরা শুধু নিজের মধ্যে কথা বলে, কখনো ওকে জিজ্ঞেস করে না, তুমি কী চাও? যদি জিজ্ঞেস করতো, তাহলে অবশ্যই সে বলতো, আর যা-ই কর, এভাবে আমার শৈশব কেড়ে নিও না প্লীজ, তোমাদের পায়ে পড়ি। না, এতটা গুছিয়ে বলতে পারতো না, আধো আধো মুখে যা পারতো তা-ই না হয় বলতো।

বাবু একপাশ ফিরে বুক ফেটে আসা কান্নাটা বালিশের ওপর চেপে রাখতে চাইলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাজাফী কখনো কখনো কিছু কিছু লেখা পাঠককে মোহের মধ্যে ফেলে দেয়। আপনার লেখাটা ঠিক তেমনই। শুভকামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
পাঠকের এই মন্তব্য আমাকে আরও লেখার উৎসাহ যোগাবে। অনেক কৃতজ্ঞতা।
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
মিলন বনিক ওহ! অসাধারণ সুন্দর একটা ভাবনার প্রকাশ...খুব ভালো লাগলো...শুভ কামনা....
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
পাঠককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
জাকিয়া জেসমিন যূথী ছোট্ট গল্পটা সুন্দর এবং শিক্ষণীয়।
ভালো লাগেনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা পাঠকের জন্য।
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
আলী হোসাইন বাবু একপাশ ফিরে বুক ফেটে আসা কান্নাটা বালিশের ওপর চেপে রাখতে চাইলো। এই শেষ লাইনটা অনেক ভাল লাগলো
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
পাঠকের ভালোলাগা আমার পরম পাওয়া। অনেক ধন্যবাদ পাঠককে।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
মোঃ সাইফুল্লাহ খুবই সুন্দর। আমার মা গলব্লাডারে ক্যান্সারে আক্রান্ত। আল্লাহর কাছে আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন ও আমার মায়ের শাররিক অসুস্থতার বিষটি মানবিক দিক দিয়ে বিচার করে যে যতটুকু পারেন আর্থিক সাহায্য করবেন । সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা : মোঃ সায়ফুল্লাহ ,সঞ্চয়ী হিসাব নং -১০১৭৪০৪, সোনালী ব্যাংক,মাগুরা শাখা মাগুরা। যোগাযোগের ঠিকানা এবং বিকাশ নং :০১৯১১-৬৬০৫২২।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
এশরার লতিফ বাবা মার ডিভোর্স তো শিশুদের শৈশব কেড়ে নেয়ার মতই, কিন্তুএখন অনেকেই সেটা নিয়ে মাথা ঘামে না. সুন্দর একটা দৃষ্টিভঙ্গী তুলে আনলেন আপনার গল্পে. ভালো লাগলো.
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
দৃষ্টিভঙ্গিটি প্রিয় পাঠকের ভাল লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম। শুভেচ্ছা জানবেন।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

২৯ জুন - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪