নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে নিজেকে মুক্ত করে ‘আসছি’ বলে দু একদিন বেরিয়ে পড়া সত্যিই মুশকিল । মিসেস জানে গোপলার যা কাজ তাতে অফিসের কাজে যাচ্ছি বলা যাবে না । বেড়াতে ছেলেসহ যেতে হবে । তবুও একা বেরিয়ে পড়ে গোপলা । নিজের গ্রামে রাতের শেষ বাস থেকে স্টপেজে নেমেও কিছুটা পেছনে হেঁটে ছোট খাল পেরিয়ে পতিত জমির পুকুরপাড়ে বসে রইল । নিজের কাছে কিছুটি নেই । ক’টা টাকা ব্যাস । খেয়েছে সেই দুপুরে । দূরে দূরে টিমটিমে লো ভোল্টেজ কারেন্ট বা কুপি জ্বলছে । এখনও অনেকেই জেগে । একটু পরে যেতে হবে । আকাশের দিকে তাকাল - আমার বেঁচে থাকার কারণ কি ? কি সুখ কিসে সুখ ? ভাবতে ভাবতে ঝিমুনি এসে গেল । পাশে খড়খড় শব্দে দাঁড়িয়ে পড়ল । ধূসর রঙের চাদর মাথায় জড়িয়ে নিল । এবার যাওয়া যেতেই পারে । অন্ধকার হলেও রাস্তা মুখস্থ । এখানেই তো চব্বিশ বছর জীবনের ভিত গড়া সময় কেটেছে । আর তাই ভাঙিয়ে গোপলা এখন অফিস বস । বলিহারি যাই । মাটির রাস্তা পাকা হয়েছে । এ সময়ে গ্রামের রাত কখনও দেখে নি । তখন ছিল কেবল ভূতের ভয় । পেছন ফিরে দেখল কেউ কোন ভূত পেছনে আসছে না তো । গোপলা যে ভূত ভবিষ্যতের বাইরে । রাস্তার ধারের গাছগুলো এলোমেলো । গ্রামের সেই সোঁদা গন্ধটা পাচ্ছে না । বদলে কেমন যেন ভ্যাপসা হেমন্তের রাত । শুনশান মাঝ প্রহর । নিজের পায়ের শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই । গ্রামের কুকুর ঝিমিয়ে পড়েছে । মহীমবাবুদের কুকুর আছে কি ? তা প্রায় মাঝে তিরিশ বছর পার । না , সেই বাড়িটা এত বড় করে ফেলেছে । অনেকটা উপরে একটা বাল্ব জ্বলছে । না , আর কেউ কুকুর পোষে না । শেয়াল বা গাছে পাখির ঝাপটা কিছুই নেই । গোপলাকে চিনতে পারল কি ? গোপলা নিজেকে জিজ্ঞেস করল – কোথায় চলেছিস ? উত্তর – নিজেকে খুঁজতে । বিভাসকাকু যে বলত – তুই ক্লাসের ফার্স্ট । গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবি । তোর জন্য গর্ব হয় । তিনি কি ঘুমচ্ছেন । অনেক বয়সও হবে । কত ফোন হল নেট এল কিন্তু গোপলা নিজের জন্মগ্রাম থেকে কোথায় কেমন করে যেন গোপলাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । একদম রাস্তার গা ঘেঁষে সনাতনীর বাড়ি । বলেছিল – আমাদের মনে রাখিস । মনে তো আছেই অন্ধকারে । ধান জমির ছোট্ট আল পেরিয়ে দাঁড়াল বাড়িটার সামনে । দরজাটা সেই দড়ি পেঁচিয়েই বাঁধা । খুলেই ঢুকল । মা বলত – খোকা এলি ? আবছা আঁধার আজ আর ডাকল না । মারা যাওয়ার শেষ কয়দিন খুব যন্ত্রণায় ছটপট করেছিল । কাজের দোহাইয়ে শেষ দেখা দেখতে আসে নি । তার আগে মা কিভাবে মানসিক যন্ত্রণায় ডাইনি অপবাদে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল । শুধু সম্পত্তির লোভে । গোপলা কিছু না পেয়েও সেই আধিভৌতিকে জড়িয়ে পড়ে । গ্রাম ছাড়ার সাথে সাথে দোষী করে না ঢোকার হুমকিও ছিল । তবুও সে অপমান তোয়াক্কা করে রাতের ভূত পরাভৌতিক প্রচারের সাথে যুজতে এল । লুকিয়ে । আজ ঝাঁপিয়ে পড়ে গলা টিপে ধরুক । বলুক – ভূতুড়ে বাড়িতে ভুত খুঁজতে এলি ? আমি বেঁচে থাকতে কোথায় ছিলি ? আবছা অন্ধকারে নিজেকে আঁচ করতে লাগল । পাল্টে গেছে কিছু খুঁটি দেওয়ালগুলো ছিটে বেড়া থেকে আধা খাপছাড়া ইট লাগানো হয়েছে । মুখে ঝুল কালি লেগে গেল । আর ছোট্ট গোপলার বাবা মা দাদা দিদির সাথে দৌড়নোর স্মৃতি ঘুরে বেড়াতে লাগল । কোথাও ভূতুড়ে রহস্য কেন নেই , কেন গা ছমছম করছে না ? ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক খড়ের গাদায় মচমচ শব্দ বাঁশবনের ক্যাঁচকোঁচ সবই আছে কিন্তু ভূত বা ভূতের ভয় কিছুই নেই । পায়ে ঠোক্কর লাগল । ইঁদুরে মাটি তুলেছে । দেওয়ালে ধাক্কা খেল । দেখল দূরে দেখা টিম টিম আলো জ্বলছে । শুনেছে গ্রামের ঝাঁ চকচকে বাড়ি । হ্যাঁ ,ওই তো গোপলার দাদার বাড়ি । দুই ভাই । যেই গোপলা পড়াশুনা করে কাজে বাইরে বেরিয়ে পড়ল তাকেই নানান কায়দা করে গ্রাম ছাড়া করার তালে থাকল । পরে মা বাবাকে গোপলা নিজের কাছে এনে রেখেছিল । কিন্তু সম্পত্তি ! তাই দরদ দেখিয়ে ফিরিয়ে এনে ধীরে ধীরে রোগগ্রস্ত করে তুলল । আর সুখ দুঃখের এই বাড়ি । আশেপাশে খুব কম লোক থাকে । গ্রামে নিজের ক্ষমতা জাহির করতে এই বাড়িকে ভূতুড়ে করেছে । বেশ ভালই আম কাঁঠাল আরো গাছও বসিয়েছে । তখন সন্ধ্যে হলেই তাল গাছের ঝড়ঝড় আওয়াজ পুকুরে মাছের ঝুপঝাপ শুনে ভূতের ভয়ে বুক কাঁপত । নিজের স্মৃতির সাথে কেমন করে মা বাবা এই ঘরে সারাটা গ্রামকে তটস্থ করে রেখেছে কে জানে ? কি ভীষণ এই গ্রামের একচ্ছত্র হওয়ার লোভে ! এবং তাতে সফলও । এতক্ষণ এই বাড়িতে ও আশেপাশে ঘুরে কোন ভূত দেখতে পেল না । তাহলে সব ভূত কাহিনীর পেছনে গল্প থাকেই । কিছু না নিয়েও মা বাবা যাওয়ার পর গোপলাও এই গ্রামে ভূত হয়ে গেছে । দু তিন বার এসেও গ্রামে যে অনাদর অনামুখো হয়েছে তা ভোলার নয় । মা বাবা অনেককে ভয় দেখিয়ে রোগ ছড়িয়ে অকাল এনে নাকি গ্রাম নষ্ট করেছে বলে প্রচার । আজ মা বাবা নেই । আর কি প্রমাণ করবে ? এই গ্রামে ভূত হয়ে থেকে যেতে গোপলা ফিরে এল ভোর হওয়ার আগেই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
একা বেরিয়ে পড়ে গ্রামের বাড়িতে গেল গোপলা। কিন্তু সেখানে ভূতের দেখা পেল না। কিন্তু ভূতুরে একটা পরিবেশ আছে গল্পে। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
মাহমুদ হাসান পারভেজ
পরিচ্ছন্ন গল্প। ভালো লাগলো লেখার স্টাইলটা। খুব অল্প সময়ের ঘটনার গল্পে দীর্ঘ সময়ের বিস্তৃতি।শুধু তাই নয় ভাবনাকে নিয়ে যাচ্ছে নিজের জীবনের কাছাকাছি।অামরা যেন কােনভাবেই মা-বাবার প্রতি কােন অবহেলা না করি।
শুভকামনা সবসময়।
মুহাম্মাদ লুকমান রাকীব
বন্ধু বেশ ভালই লাগল।শুভ কামনা।
"আমার লেখা এই ভৌতিক সংখ্যায় গল্প কবিতা পড়ার আহ্বান জানিয়ে গেলাম।আশা করি আমার পাতায় আসবেন হে প্রিয়বন্ধু।।।"
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।