অফিস থেকে বেরিয়ে ফুটপাতে এসে দাঁড়ায় তিমির , বাইরে ঠাঁ ঠাঁ রোদ্দুর , সামনে দিয়ে উচ্চকিত বয়ে যাচ্ছে সারি সারি বাস-ট্যাক্সি , তবুও তিমিরের অস্তিত্ব জুড়ে শৈত্যপ্রবাহ , চেতনা জুড়ে নৈঃশব্দ্য , তাকে আচ্ছন্ন করে আছে সদ্য ফেলে আসা মুহূর্তগুলি । মাথাটা ঝিম ঝিম করছে । এ কি শয়তানী পাল্লায় পড়েছে । মন বলে কিচ্ছু নেই । মানুষ মানুষের সঙ্গে লড়াই করতে পারে কিন্তু শয়তানের সঙ্গে । পিছন ফিরে অফিসটাকে দেখল । দশতলা । নিজের আলাদা কেবিন । গাড়ি । ফ্ল্যাট । গ্রামের মাইল দুই হেঁটে খালি পায়ে স্কুলে যাওয়া , সারা সপ্তাহ এক জামা , এক পেনেই বছরভর , হ্যারিকেনের আলোতে ভোরবেলার পড়াশুনা , কত দিন আধপেটা খাওয়া সে সব যেন কোন আদ্যিকালে ঘটে গেছে । তিমির উপরে উঠেছে পড়াশুনা করেই । বাবার এর ওর কাছ থেকে বই চেয়ে দেওয়া আর লাইব্রেরীকে সম্বল করেই । তার জোরেই এই অফিসে । আজকের মাস মাইনের সঙ্গে অতীত একটুও মিলছে না । আর কিছুতেই এত উঁচু পদের জীবনযাত্রার সঙ্গেও নিজের শিক্ষার আদর্শের মিলও পাচ্ছে না । মহীতোষবাবু একটু আগে বলেই ফেললেন – এগ্রিমেন্টে কিন্তু আপনি সই করেছেন । কোর্টে আমি যাব তবে তার আগে আপনাকেই দেখে নেব । আমি ও সব এ ও বুঝি না ! ঠিক তাই সিস্টেমের এ এক যাঁতা কল । মিটিংয়ের সবার মতামত থাকবে কিন্তু স্বাক্ষর তিমিরের । টাকার অ্যালটম্যান্ট এসে গেল অতএব কাজ শুরু । পুরো টাকা আসবে কাজের শেষে । কনট্রাকটর কাকে চেনে , না তিমিরবাবুকে । টাকা না এলে তার মানে কি তিমির টাকা দেবে ? এত চারিদিকের প্রজেক্ট তার ম্যানেজিং কমিটি থেকে শুরু করে সব আছে কিন্তু পুরো সিস্টেমে তিমিরের উপর কাঁঠাল রাখা আছে যে কেউ ভেঙে খেয়ে যাবে আর তার দায় তিমিরের । পরের টাকায় পোদ্দারি যাকে বলে । মহীতোষবাবু কনট্রাকটর । টেন্ডার পাবেনই । খারাপ সাপ্লাই । জবাবদিহি , সই , টাকা পাইয়ে দেওয়া সব তিমির । খারাপ ব্যবহার । সহ্য করেছেন কিন্তু আজকে সীমা ছাড়িয়ে গেল । এত দিনের চেনা অনিমাদিও বাঁকা চোখে তাকাল – কি স্যার । একা কেন ? আমাদেরকেও মনে রাখুন । নিজের ঘ্যামে থাকে । এক পয়সা এদিক ওদিক করে না । নিয়ম মেনেই যতটা সম্ভব নিজেকে স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করেছে । কম মাইনের কর্মচারীরা জানে তিমিরবাবুর মত লোক হয় না । আপদে বিপদে সহজেই পাওয়া যায় । কিন্তু মাঝের কর্মচারী । যাদের টাকা পয়সা বা অন্য গোঁজামিল , ফাঁকি এদিক ওদিক না করলে পেটের ভাত হজম হয় না তারাই এই সিস্টেমকে হাতিয়ার করেই তো বলে ফেলল – এবার বাছাধন ! মহীতোষবাবুদের টাকা দিতেই হবে । পাবলিকের টাকা খেয়ে হজম । গাড়ি বাংলো । সৎ গিরি । আরে বাবা ! আজকাল এ সব ব্যাক ডেটেড । মহীতোষবাবুর সঙ্গে রফা কর , কেল্লা ফতে । তা না , মর ! এই গুঞ্জন তিমিরের সামনে হয় না । বসন্তের দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে এল । বুকের মধ্যেই যেন সূর্যের লাল আভা টুকে পড়ছে । নিয়মে থেকে সৎ ভাবে থাকাও এত যন্ত্রণার । বার বার অ্যালটম্যান্ট ফেল করে । কত সব ক্লিয়ারেন্স বাকী । সব দায় তিমিরের ! ছোট খাটোতে পাত্তা দিত না । এখন মহীতোষ আর জনস্রোত তো তাকে ছাড়বে না । কোথায় পালাবে । কোন দিশাই নেই । এ তো আর দশ বিশ নয় । লাখ কোটি । ভাবতেই হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে । জনগণকে নিয়ে এত বড় প্রতারণায় তিমির যুক্ত । নীতি আদর্শ কোথায় ? তিমির ওভার ব্রিজটার নীচে কিভাবে যেন পৌঁছে নির্জন আকাশ দেখতে লাগল । নৈঃশব্দ্যের শৈত্য প্রবাহের মাথায় গরমের খোঁজে ঠায় বসে রাতটা কাটিয়ে দিল । কত কি ভাবতে লাগল । চুরি না করেও চোর । যারা লুটে পুটে নিল তারা সব সাধু । না আর না , এবার যেভাবেই হোক এই অসহায় অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে । জানে সবাই ছাড়া পেয়ে যাবে এমন কি তিমিরও । টাকায় আইনের ফাঁক খুঁজে ঠিক বেরিয়ে আসবে সবাই । কিন্তু তিমিরের আদর্শ । তার কি কোন দাম নেই ? এখন তো ছেড়ে বেরিয়ে আসা যাবে না । মরে মরে মার খেয়ে খেয়েও কিভাবে আদর্শকে ধরে রেখে এই সব কর্পোরেট সংস্থার কোমর ভাঙা যায় তাই ভাবতে ভাবতে তিমির ব্রিজের তলাতেই সকাল করে ফেলল । পরদিন এই শহরে তিমিরকে বাঁচার ঠিকানা দিতে পারে কি না সেই কোটি টাকার প্রশ্ন নিয়ে আবার সূর্য আবার জেগে উঠল ও সবাইকে জাগিয়ে দিল ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।