দিনের শেষে দিন এল

উচ্ছ্বাস (জুন ২০১৪)

দীপঙ্কর বেরা
সে রাতটা গোপলার খুব মনে পড়ে অনেক প্রতীক্ষার অবসানে হাসি আনন্দ উচ্ছ্বাস আরো কত কি ফিরে এসেছিল । তা বলার নয় ।
স্কুল থেকে ফিরেই বুঝেছিল আজ আর কিছু করার নেই । পেটে বোধ হয় কিছুই পড়বে না । প্রায় জল দিয়ে পুকুরের কলমী তুলে এনে সেদ্ধ করে রেখেছে মা । দু ফোঁটা তেল পর্যন্ত দিয়েছে কি না কে জানে ।
-মা , ও মা , খেতে দাও ।
সামনা সামনি পড়তে হবে বলে মা বলল – শিকেতে রাখা আছে নামিয়ে খেয়ে নে । বলেই চটের একটা বস্তা হাতে চলে গেল । তাই খেতে খেতে গোপলা ভাবল – তার খাওয়ার সময় মা নেই , এটা তো কখনও হয় না । দিদিকে ডাকল – বড়দি । বড়দি । সেও দেখতে পাচ্ছে পাশের বাড়ি গাছপালার মধ্যে ছুটে কোথায় যেন চলে যাচ্ছে ।
এ রকম কোনদিন হয় না । টিনের কৌটোতে মুড়ি নেই । কড়াই ভাতের হাঁড়ি সব ধোয়া । ঢক ঢক করে জল খেয়ে খেলতে চলে গেল । সেখানে দাদার সাথে দেখা । সেও যেন মুখ ফিরিয়ে নিজের হাতের মার্বেল গুটি মারতে ব্যস্ত । লাগছে না । অন্য জনের উল্লাসেও কিছু বলছে না । বার ক’য় হারার পরও খেলা ছাড়ছে না । গোপলাকে দেখেও না দেখার ভান করছে । আজ স্কুলে কিসের জন্য যেন খুব কম মিড ডে মিল দিল । গোপলা ভেবেছিল ঘরে এসে অনেকটা খাবে । ছোড়দি জানে তাও মাকে এসে খাওয়ার কথা বলেছে কি না কে জানে । আর খেলতেও ইচ্ছে করছে না । সন্ধ্যে হয়ে এল ।
পুকুর ঘাটে হাত পা ধুয়ে ঘরে ফিরতেই বুঝল থমথমে ভাব । মা মিনমিনে গলায় বলল – আয় গোপলা কোলে বস । জল জলে হাত পা নিয়েই লাফিয়ে বসে পড়ল । এ রকম অন্য দিন করলে মা বকা দিত । গামছা দিয়ে মুছিয়ে আদর করত । আজ কিছু বলল না । পরা কাপড়েই গোপলার হাত পা মুছিয়ে দিল ।
বড়দি বলল – বাবা কি রায় জ্যেঠুদের বাড়ি গেল ।
মা আঁচলে চোখটা মুছল – ওরা তো সব মিটিয়ে দিয়েছে । বৈশাখের ধান উঠে গেছে তাই কাজও নেই । চৌধুরীদের কাছে যাবে , না হলে দাসবাবুও আছে । কখন বেরিয়েছে দেখা যাক কি নিয়ে ফেরে । তোরা পড় ।
দাদা একটু বুঝতে শিখেছে । এক ধমক দিল – তোর অত খোঁজের কি আছে ? পড় । বেশি বকবক । চুপ ।
দিদি আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিল দাদা থামিয়ে দিল । দিদিরা গজগজ করতে লাগল ।
এই ধমকের চোটে গোপলা আর তার খিদের কথা বলতেই পারল না । পেটের মধ্যে জলগুলো খুব গুলিয়ে উঠছে । চার ভাইবোনে তারপর গুন গুন করে কি পড়ছে নিজেরাই জানে না । মা বাবা এই পড়া কিছুতেই বন্ধ হতে দেয় নি । লোকের কাছে চেয়ে চিনতে বই খাতা পেন ঠিক জোগাড় করে দিচ্ছে ।
মা ঘর বাইরে করতে লাগল । খালি হাঁড়ি কলসি কৌটো সব নাড়তে লাগল । বাবা আর আসে না । সকাল থেকে হন্যে হয়ে এই বৃষ্টি গরমে কত জায়গায় গেছে কিছুতেই এক দানা আনতে পারে নি । কেউ আর ধারও দিতে চায় না । জানে কবে শোধ পাবে ঠিক নেই ।
জমিতে কাজ করে লোকের বাড়িতে কাজ করেও কিছুতেই বাবা এত বড় সংসার টানতে পারছে না । দাদা দিদিও হাত লাগায় । কিন্তু তাতেও দিন আনতে দিন যেন কাটতেই চায় না । আধপেটা অভ্যাস হয়ে গেছে । কিন্তু সারাদিন ...।
কুপীটা প্রায় নিবু নিবু । কেরোসিন তেলও বাড়ন্ত । বাইরে পায়ের শব্দে থমকে যায় গুন গুন । তারপর অন্য কেউ চলে গেলে কেউ কোন কথা না বলে আবার দুলে দুলে ঘুম চোখে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে চলেছে ।
হঠাৎ গোপলার চোখে পড়ল – বাবা ! বাবা ! মা , বাবা এসেছে ... ।
একটুও পায়ের শব্দ ছিল না । তাদের জন্য যেন সৌভাগ্য হঠাৎ উপস্থিত । হাতে ভরা ব্যাগ দেখে সবাই আবেগে উচ্ছ্বাসে বাবার কাছে চলে এল । পড়া বন্ধ । মা ব্যাগটা নিল । গোপলা জড়িয়ে ধরতেই বাবা বলল – আর একটু সবুর কর , এখুনি হয়ে যাবে । দাদা দিদি কোল ঘেঁষে চলে এল । কেউ আর কিছু বলল না । জানে বাবা যা এনেছে নিজের গরিমায় উজ্জ্বল হয়ে এনেছে ।
খড়ের চালের সেই ঘরে সেদিন রাতে একটু পরে একটা উনুন জ্বলছে একদিকে ভাত ফুটছে অন্যদিকে একটু পচা মাছ ভাজা হচ্ছে । আর কিছু সবজি কুটে রাখা আছে । মা জানে কি করে কম তেলে গরম কড়াইয়ে মাছ ভাজতে হয় তাই দেখছে গোল হয়ে বসা ছয়টি প্রাণী । উনুনের আলোতে সবার চকচকে মুখ । খুশির জ্যোৎস্নায় আরো বেশি উজ্জ্বল । পেট ভরতে আর কিছুক্ষণ পরেই ।
এত সবের মাঝে মায়ের রান্না করা হাতের পাশে কোলে বসে গোপলা তাই দেখছে । অন্য সময় হলে গোপলাকে সবাই বকত । এখন কিছুটি না বলে হাসির ঝর্ণা বইয়ে দিচ্ছে সারা ঘরে ।
তারপর সে দিন রাতে তৃপ্তির খিদে মিটেছিল সবার । বাবার কষ্টের সেইদিন দিন আনতে সারাটা দিনের দৌড়াদৌড়ি আর শেষে অপরিসীম উচ্ছ্বাস গোপলাকে অনেক বড় মানুষে পরিণত করেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক সুন্দর আর বাস্তব জীবন চিত্র খুব চমত্কার ভাবে একেছেন...খুব ভালো লাগলো....
অনেক ধন্যবাদ জানালাম । ভাল থাকবেন ।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু মূল্যবান জীবন চিত্র তুলে ধরেছেন। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
মোঃ মোজাহারুল ইসলাম শাওন ভালো laglo
অনেক ধন্যবাদ । খুব ভাল থাকবেন ।
আপেল মাহমুদ সীমাহীন অভাবের মাঝে সামান্য প্রাপ্তিই অনাবিল আনন্দ দেয়। ভালো লাগলো দাদা।
biplobi biplob Chutho porishora darun likasan, Dipongkorda. W/c
ধন্যবাদ জানালাম । ভাল থাকবেন
মিনতি গোস্বামী ভালো লিখেছেন তাই আমার শুভেচ্ছা ও ভোট দুটোই দিলাম.
ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন
এফ, আই , জুয়েল # গভীর ভাবনার অনেক সুন্দর একটি গল্প ।।

১৫ জুন - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৬৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪