সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার মর্নিং ওয়ার্কের সময় কোথা থেকে সাত আটটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে আমার পায়ের কাছে চলে আসে । আমাদের ঘরের সামনের রাস্তায় রোজ আমার মর্নিং ওয়াকে যাওয়া অভ্যাস । প্রতিদিন আমাকে দেখে তাও যেন চিনতে পারে না । দেখলাম কোথা থেকে একটা নেড়ি কুকুর সারা গায়ে ঘা তাকে দেখেই এমন করছে । সেও ছাড়বার পাত্র নয় , মনে হল পেরে উঠছে না বলে আমার সাহায্য চাইছে । এই ব্যাপারটা বুঝতেই আমার সময় লেগে গেল । ততক্ষণে তাদের হ্যাট হ্যাট করে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছি । পাক মেরে যখন আবার ঘুরে এলাম দেখি সব কুকুর গুলো আমার দিকে কেমন একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আর নেড়িটা ড্রেনের মধ্যে থেকে ঘেউ ঘেউ করে যাচ্ছে । আমি তাদের পাশ কাটিয়ে আরো কয়েক পাক দিলাম । মনটা কেমন বিষাদগ্রস্ত হয়ে রইল । ঘরে এসে চা পেতে দেরি হল বলে কেন জানি না বলেই ফেললাম – সকালে এক কাপ চা পেতে এত দেরি , সারা দিন কর কি ? মিসেস কিছু বলল না । রান্নাঘরে কি যেন গজ গজ করছিল । সেও সকাল সকাল মন খারাপ করতে চায় না । কিন্তু ততক্ষণে আমি তো যা বলার বলে দিয়েছি । স্নান করতে গিয়ে জলের কল খুলতে গিয়ে করে যেন হাতে লেগে গেল । ও মা করে কলকে দু ঘা দিয়ে দিলাম । হাতে লাগল আর নিজের মনে হাসব না রাগব বুঝতেই পারলাম না । খেয়ে অফিস বের হওয়ার সময় ছেলে বলল – বাপি অঙ্কটা দেখে দেবে ? মিলে গেছে কিন্তু মিলছে না । - তুমি কি আর বলার সময় পেলে না । - আমার স্কুলে আজ দেখাতে হবে । - ফ্যাট, যা আগে । বলেই আমি গট গট করে বেরিয়ে গেলাম । পিছনে ছেলে বলছে – মা, এ বাপি তো । ঠিক বুঝলাম না , চিনতেও পারছি না । রাস্তায় আমারও নিজেকে অজানা ঠেকল । আমার এমন জুয়েল ছেলেকে ফ্যাট বললাম , মিসেসকে শুধু শুধু মুখ ঝাড়া দিলাম । না অফিসে শান্ত থাকত হবে । অফিসেও হল উল্টো । বসের সঙ্গে গণ্ডগোল হতে হতে বেঁচে গেলেও এক দাদার সঙ্গে বেঁধে গেল । তিনি তো বললেন – আমি আপনার কলিক নই । আর একটু ভেবে বলুন , আপনি সুধীনদা তো , ঠিক চিনতে পারছি না ! আমি যতই চুপ থাকার চেষ্টা করি এ কি হচ্ছে ? আমি কে ? আর প্রতিবারই কেন জানি না সকালের কুকুরদের মনে পড়ছে । কুকুরগুলো আমাকেই আমার কাছে বারবার কেন অচেনা করে দিচ্ছে । অফিস থেকে ফিরে দেখি কেন কি জানি বাড়ির সবাই বুঝুক আর না বুঝুক আমাকে প্রতি কাজে আর জড়াল না । আমি যতই ঘরে বাইরে আমি হয়ে চিনতে চাইছি কিন্তু অচেনা থেকে যাচ্ছি । সারা পরিবেশ আমাকে খুঁজতে খুঁজতে কি আর করা ঘুমিয়ে পড়লাম । আবার নিজেকে খুঁজতে মর্নিং ওয়াকে জোরে জোরে পা চালালাম । সেই কুকুরদের জটলা আর দেখলাম না । শুধু একেবারে গা ঘেঁষা লাল কুকুরটি দেখছে আমাকে । আমিও পাঁচ টাকার এক বিস্কুট প্যাকেট কেটে তাকে দিতে থাকলাম আর নিজেকে ঝিরঝিরে শান্ত বাতাসে খুঁজে বেড়াতে লাগলাম ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
আবার নিজেকে খুঁজতে মর্নিং ওয়াকে জোরে জোরে পা চালালাম । সেই কুকুরদের জটলা আর দেখলাম না । শুধু একেবারে গা ঘেঁষা লাল কুকুরটি দেখছে আমাকে । আমিও পাঁচ টাকার এক বিস্কুট প্যাকেট কেটে তাকে দিতে থাকলাম আর নিজেকে ঝিরঝিরে শান্ত বাতাসে খুঁজে বেড়াতে লাগলাম । ...............// শেষটা এত সুন্দর ভাবে হয়েছে যে অমূল্য হয়ে গেথে গেলো হৃদয়ে......অনেক ধন্যবাদ দিপঙ্কর আপনাকে............
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।