সম্পর্কের শুন্যতা

শুন্যতা (অক্টোবর ২০১৩)

দীপঙ্কর বেরা
  • 0
  • ২১
অনিমেষদা আমাদের ঘরে প্রায়ই আসত । আর আমরাও অনিমেষদার ঘরে যেতাম । শহরের পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকতে হলে এরকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে । বেশিদিন চেনা না হলেও বেশ ভাল মত জানাশোনা থাকে । আমরাও গ্রাম থেকে এসে ছোট ছোট একটা সম্পর্কের বেড়া তৈরি করে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করি ।
তখন অনিমেষদার তেমন কাজ ছিল না । উনার মিসেস আমার মিসেসের সঙ্গে কাজ করত । সেই সুবাদে উনিও এখানে থাকেন । খুব সিগারেট খেতেন । তবে আমাকে খুব সমীহ করতেন বলে আমার সামনে কখনই তা খেতেন না । বিভিন্ন জায়গায় ক্যান্টিন , কাঠের কাজ , দোকান , কাপড় ইত্যাদি কি সব যেন করতেন । সন্ধ্যেবেলা আমার কাছে আসতেন - দাদা এলাম । কেমন আছেন ?
আমি মিসেস বেরিয়ে গেলে ঘরের টুকটাক কাজ করতে করতে উত্তর দিতাম - ভাল । আপনি ?
- আর আমাদের থাকা না থাকা সমান । অনিমেষদা আরো কি সব ব্যবসার কথা বলতেন আমি প্রায়ই অল্প না শুনেই বলতাম - করুন না ক্ষতি কি । কিছু একটার সঙ্গে যুক্ত তো থাকবেন । ভাল লাগবে ।
আমার কথা শুনে অনিমেষদা কখনও হো হো করে হাসতেন । কখনও বা গম্ভীর ভাবে বলতেন - জানেন , আমার বাবাই আমাকে ডুবিয়ে দিল । সব ছোট ছেলে । তারা যেহেতু কিছু করে না , অতএব তারাই সব পাবে । আরে বাবা আমার মিসেসের চাকরি করাটাই অপরাধ । আমি তো কিছু করছি না ।
আরো সব কথায় আমি কিছুতেই সাপোর্ট করতে পারি নি । বাবার পয়সায় পোদ্দারি করা আমার তো মনে হয় ঠিক না । নিজের যেটুকু আছে তাতেই অনেক কিছু করা যায় । শুধু সদিচ্ছা থাকা দরকার ।
এসব কথা অনিমেষদাকে বলা যায় না । সম্পর্কে চিড় ধরবে । নিজের স্থায়ী বাসস্থান ছেড়ে এভাবে বাস করলে এই হয় । কিছুতেই প্রাণ খুলে কথাই বলতে পারবেন না । বলেছেন কি মরেছেন । আপনার ঐ নিজস্ব মত আর নিজস্ব থাকে না , ঘুরে ফিরে কোথাকার কথা কোথায় গিয়ে পড়বে আর আপনাকে যাঁতা কলে ফেলে পিসে মারবে তা ভাবতেই পারবেন না ।
তাই চুপ করে থাকি । আমার ছেলের সামনেও বেশ যা তা অনিমেষদা বলতে থাকেন । আমি যতই অন্য দিকে সরে যাই অনিমেষদা বলে - দাদা , আমরা এখানে এসে আপনাদের কাছেই প্রথম উঠেছিলাম । নানান সাহায্য পেয়েছি । আর তো এখানে কাওকে তেমন দেখলাম না । তাই আসি পরামর্শ নিই । আর আমার কাজে আসে । আপনি আমার দাদা ।
আমি হাঁ হুঁ ছাড়া আর কি বলতে পারি । অফিস আর আশেপাশের বিভিন্ন লোকের সাথে মিশে আমার অভিজ্ঞতা কিন্তু সে রকমই কথা বলে ।
অনিমেষদা উঠে পড়েন । বলে - ছেলেকে পড়ান , আমি আসি । গত পরশু গিয়েছিলেন , ভাল লেগেছিল । আমার মিসেস তো দীনুদা বলতে অজ্ঞান । আসুন না মাঝে মাঝে ভাল লাগবে ।
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম । কিছু বললাম না । বললেই আবার দাঁড়াবে আর কথা বলা শেষ হবে না । আমি দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম ।
চলে যাওয়ার পর ছেলে বলল – বাপি , কাকুটা না রাস্তার মোড়ে তিন চার জন মেয়েদের সাথে কি সব নিয়ে বেশ জোরে জোরে ঝগড়া করছিল । আমি ছেলেকে চুপিয়ে পড়তে বললাম । কত ভাবে কি রকম করে আমরা অনিমেষদাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি তাই ভাবতে লাগলাম । যেখানে আটকে গেছে , যথাসম্ভব করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি । আমরা সেভাবে কোন আশাও করি নি ।
এর কিছুদিন পর দুপুরবেলা সেদিন আমি বিশেষ কাজে ছুটি নিয়েছি । ঘরেই ছিলাম । হন্তদন্ত হয়ে অনিমেষদা এল । বলল – দাদা , একটা উপকার করতে হবে ।
আমার দিকে দেখে গলাটা নামিয়ে বলল – আপনার অফিসে পাওয়া যায় , কয়েকটি মেশিনারি পার্টস এনে দিতে হবে যা বাজারে কোথাও পাওয়া যায় না । দিতে হবে একজনকে । আসলে নতুন ব্যবসা শুরু করেছি তো ।
আমি অবাক হয়ে যাই – আপনি কি করে জানলেন ?
-সব খবর রাখতে হয় দাদা । আপনি যদি হেল্প না করেন বড্ড বিপদে পড়ে যাব।
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম । অনেক জোরাজুরির পর বাধ্য হয়ে রাজি হই । কেননা এর আগে বেশ কয়েকবার দু চার’শ টাকা নিয়েছে আবার মিটিয়ে দিয়েছ । আবার বলল – কালকেই এনে দিতে হবে , আর আমার মিসেস বা আপনার মিসেস কাওকে বলা চলবে না । আমি মাস খানেকের মধ্যে দিয়ে দেব । দেখবেন কোন অসুবিধা হবেই না ।
অগত্যা সম্পর্ক এমনি তো মানতেই হবে । না হলে আমার মিসেসও রাগ করতে পারে । আমিও অফিস থেকে লুকিয়ে বড় ব্যাগ নিয়ে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিয়ে এসে অনিমেষদাকে লুকিয়ে দিলাম । যা আমি নিজের ঘরের জন্য অফিসের কোন জিনিস নিয়ে আসা পছন্দ করি না ।
এই জিনিস নিয়ে যাওয়ার মাস তিনেক পর থেকে বদলে গেল অনিমেষদা আর তাঁর স্ত্রী । সম্পর্কটা গেল ডুবে , এবার যাওয়া আসা বন্ধ , সঙ্গে এর ওর কাছে আমাদের নিন্দে করা , খিস্তি খাস্তা গালাগাল দেওয়া । আর তার জন্য আমার মিসেস আমাকেই দায়ী করে । বলে – তুমি কি করেছ বা বলেছ মনে কর । আর অনিমেষদা ধীরে ধীরে টাকা পয়সা বেশ ভাল পরিমানে আয় করতে শুরু করলেন । আর বেশ বড়ো লোক হয়ে গেলেন ।
আমি আমার অফিসের কথা কাওকে বলতে পারি নি । কোন লেখাজোখা নেই । যাই হোক করে মাস ছয় ধরে অফিস ম্যানেজ করেছি । ওরা একটা সন্দেহ করলেও আমার সততাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করে নি । তবে মাথাটা আমার হেঁট হয়ে যায় মাঝে মাঝে । ফলে আজও নিজের মর্মে নিজেই জ্বলে মরছি । সারা সমাজ আমার নিজের সংসার আর অফিস সবার কাছে অপরাধী হয়ে শুন্য হৃদয়ে বোবা বোকা হয়ে গেছি । বিশ্বাসের এত বড়ো অবমূল্যায়নে গড়ে তোলা সম্পর্কের যে শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা কোনভাবেই আমি পূরণ করতে পারি নি ।
-০-০-০-০-
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন সরলতার দাম নেই দাদা- কিন্তু যে সরল সে হাজার ঠকলেও এটা থেকে মুক্তি পায়না । খুব ভাল লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল।

১৫ জুন - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৬৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪