খালটা পেরিয়েই ঝকঝকে দোতলা বাড়ি । গোপলা কখনও ঢোকার সাহস পায় নি । যা কিছু প্রথম হয় এরাই নিয়ে আসে । যেমন রেডিও নাকি প্রথম এনেছিল শুনেছে তবে টিভি প্রথম আসার মাসখানিক থেকে হৈ চৈ দেখেছে । একজন কেয়ার টেকার ঘরটা দেখাশোনা করে আর বাইরের কাজ করে অনেকেই । বাবুরা সব বাইরে থাকে । দু এক মাস অন্তর এসে দু চারদিন থেকে পঁচিশ পঞ্চাশ বিঘের ধান পাট ও তার গোছা গোছা টাকার হিসেব বুঝে নিয়ে আবার চলে যায় । সেই বাড়িতে গোপলা বাবাকে খুঁজতে এসেছে । দোতলার জানলা খোলা । ছোট ছোট ফুল বাগান পেরিয়ে একদিকে ধানের গোলা খড়ের গাদা সবজি চাষ পেরিয়েও কাওকে চোখে পড়ছে না । সামনে একটা মন্দির আছে । তার পরেই চাতাল । বেশ রোদ । বারান্দার সোফায় বসবে কি না ভাবছে । একবার এদিক ওদিক দেখে নিল । না কেউ নেই । কত কি জিনিস ছড়ানো । থাক , এই রোদই ঠিক আছে । -এই কে রে ? তখন থেকে বেশ ঘুরঘুর করছিস । বড়লোকদের বাড়ি খুব নির্জন হয় । গোপলার মা খুব জোরে কথা বলে । তাছাড়া পাড়ায় সবার এত কথা ঘোরে ফেরে যে একটু মন দিয়ে পড়া যায় না । এখানে হঠাৎ জোরে কথায় গোপলা চমকে ওঠে । এখুনি কে কি বলবে তাই পালাবে কি না ভাবছে আর মাকে গিয়ে বলবে বাবাকে খুঁজে পাই নি । কিন্তু বোনটার পেটের যন্ত্রণা তার কি হবে ? সামনে থেকে বেরিয়ে এল এক সুন্দরী । কোনদিন এরকম পরী সিনেমার পর্দা ছাড়া দেখেই নি । বা দেখলেও ঠিক মনে পড়ছে না । -এই মাস্টার , কি চাই ? আমি তখন থেকে দেখছি এদিক ওদিক দেখতে দেখতে পা পা করে ঘরে ঢুকে পড়ছিস ? গোপলার গলা শুকিয়ে গেল । এরকম বড়লোকদের সামনা সামনি কথা বলেনি । দাদাও বলে – গোপলাটা বড্ড মুখচোরা কি করে এগোবে ? সে আরও অনেক কথা বলতে লাগল । তাতে দু একজন করে বাইরে বেরিয়ে এল । গোপলা ন যযৌ ন তস্তৌ । ঘামতে শুরু করছে । তখন বেরিয়ে এল কেয়ার টেকার মতিন দাস । সে বলল – দিদিমণি থামেন , এ আমাদের বিহীনদার ছেলে । কি রে গ্যাপলা কিছু বলবি ? তাও গোপলার মুখ দিয়ে কথা সরে না । শেষে বিহান এল । গোপলা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল । বিহান বলল – কাঁপছিস কেন ? চুপ কর , কাঁদিস না । বল , কি হয়েছে ? গোপলা জড়িয়ে জড়িয়ে বলল – বীণার কাল থেকে পেটে ব্যথা কমছেই না । মার কাছে পয়সা নেই । দাদা কোত্থেকে দু কেজি চাল এনেছিল তাই দিয়ে চলছে । আজ কিছু নেই । দিদিমণি বেশ আহ্লাদের সুরে বলল – আমি বুঝতে পারি নি একটু জোরেই কথা বলেছি । বিহানদা , এ তোমার সেই ছেলে যে প্রায় প্রতি বিষয়ে ফুল নম্বর পায় । ও গ্রেট । পাশের আর এক বয়স্ক দিদিমণি বলল – শেখ , সারাদিন মাঠে ঘাটে রোদে জলে ঝড়ে কাজ করেও ভাল রেজাল্ট করা যায় । -হঁ , রাখো তো গাঁইয়া ! বলেই পরী চলে গেল ভেতরে । বিহান মাথা নাড়ে আর গোপলা আরো চেপে ধরে বাবাকে । কিছু টাকা আর একবেলার ছুটি পেয়ে গোপলার হাত ধরে বিহান বাড়ি পথে পা বাড়ায় । আজ পুরো প্রায় দশ বারোদিন পরে বাড়ি ফিরছে । বাবার হাত চেপে ধরে গোপলা তখন স্ফূর্তিতে কত কথাই বলে যাচ্ছে । বিহানের কানে যাচ্ছে না । খালের ওপারেই বাড়ি তাও যাওয়ার অনুমতি নেই । কেন না তা না হলে মাইনে কমে যাবে তাই এই বাড়িতেই থাকতে হবে । দুই ছেলে এক মেয়ে টুকটাক চাষবাসে সংসার চালানো দায় । এখানে কিছু উপরি মাস মাইনে খুব কাজে দেয় । বাকীটা বউ চম্পাই দেখাশুনা করে । বাবাকে পেয়ে দুইভাই জড়িয়ে ধরল । বীণা বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে । কাল থেকে খায়নি পেট ব্যথা তো করবেই । তাও মুখে হাসি । এই হাসিটুকু বিহানকে বাবা হিসেবে আরও গর্বিত করে । সবাই গোল হয়ে বসে এই রাগে তো পরক্ষণে ভালোবাসা হাসি শুধু হি হি দেখে কেউ বলবে এদের সবার পেটে রাক্ষসী ঘোরাফেরা করছে । আর বাবাকে পাওয়ার সবটুকু আস্বাদ উপভোগ করছে গোপলা । -চল , ডাক্তারের কাছে । বিনুটা আমার দড়ি পাকিয়ে যাচ্ছে । বিহানের কথায় চমক ভাঙে । চম্পা বলে – বাবাকে পেয়েই অর্ধেক ব্যথা চলে গেছে । এবার কিছু গরম গরম উনুনে ফুটুক তাহলে চলে যাবে । কিছু পেয়েছ যাও কিছু চালের ব্যবস্থা কর । সেদিন দুপুরে ভরপেট খেতে খেতে গোপলা টের পেয়েছিল বাবা আসলে একটা ছাদ যেখানে দুমুঠোতে পেট ভরবেই আর নিশ্চিন্তে ঘুম আর কি চাই ?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Rumana Sobhan Porag
সবাই গোল হয়ে বসে এই রাগে তো পরক্ষণে ভালোবাসা হাসি শুধু হি হি দেখে কেউ বলবে এদের সবার পেটে রাক্ষসী ঘোরাফেরা করছে । আর বাবাকে পাওয়ার সবটুকু আস্বাদ উপভোগ করছে গোপলা । _খু্ৱ সুন্দর লিখেছেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।