গ্রাম থেকে এবারই প্রথম ঢাকায় এলাম । উঠলাম এক মেসে । যদিও মেসের কেউ পূর্ব পরিচিত ছিলনা কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে সবার সাথে খুব ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল । তখনো আমি ঢাকা শহরের চালচলনের সাথে নিজেকে খাপ-খাওয়াতে পারিনি তাই অনেক যায়গায় অনেক পরিস্থিতিতেই অপ্রস্তুত হতে হয় । আর নতুন বন্ধুরা সব আমাকে এই শহরের আদব-কেতা শেখাতে ব্যস্ত ।
একদিনের কথা , দুপুরে খেয়ে ঘুমানর চেষ্টা করছি কিন্তু ঘুম আসছেনা তাই শুয়ে শুয়ে গল্প গুচ্ছ পড়ছিলাম। এমন সময় রুমে ঢুকল বেলাল (আমার রুমমেট ) বলল তোমার কাছে কিছু টাকা হবে। বললাম কত । এই পাঁচ-ছ’শ। বললাম হবে। তাহলে ঝটপট রেডি হয়ে নাও, একযায়গায় যেতে হবে, জো হুকুম জাহাপনা বলে কোন প্রশ্ন না করে রেডি হতে লাগলাম। তারপর তাঁতিবাজার মোড় থেকে বাসে উঠে ডিরেক্ট মিরপুর-১০। শাহ্-আলী কমপ্লেক্স থেকে সুন্ধর একটা শোপিছ কিনে “ডেলিসিয়াস ফুড কর্নারে” এসে দেখলাম অনেকের মধ্যে এক কর্নারে একটি টেবিলে দুটি মেয়ে বসে আছে। বেলাল পরিচয় করিয়ে দিল এটা আমার মনের রানী রোদেলা আর ও রোদেলার বান্ধবি মৌ। মৌ শিশির সিক্ত পুষ্পের মত স্নিগ্ধ ও লস্যময়ী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যদি রোদেলার আগে মৌয়ের সাথে দেখা হত বেলালের সম্পর্ক মৌয়ের সাথেই হত, অথবা নাও হতে পারত কারন সম্পর্ক শুধু সৌন্দর্য দিয়ে হয় না মনেরও একটা ব্যাপার থাকে। যা হোক খাবারের অর্ডার দেয়া হল, কি সব খাবার, এসবের সাথে আমি পূর্ব পরিচিত নই। যথাসময়ে খাবার চলে এলো এবং খাবার ও খাওয়ার উপকরন দেখে মনে হল আমি না আসলেই ভাল করতাম। চামচ ধরতে যাই তো খাবার ছুটে যায় খাবার ধরতে যাই তো চামচ ছুটে যায়। আমার ত্রাহি অবস্থা দেখে সভ্যতার বালাই ভুলে মৌ তো হেসেই কূটপাট। আমিও আর মিথ্যে স্মার্টনেস না দেখিয়ে হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলাম। খাওয়া যখন শেষ হল তখন মনে হল সদ্য পুলসিরাত পারহয়ে এলাম। তারপর অনেক গল্প, অনেক কথা, অনেক মজা। অবশেষে বিদায়ের পালা। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল মৌয়ের মোবাইল নাম্বারটা চেয়ে নিতে কিন্তু নিজেকে ওর স্মার্টনেসের কাসে অযোগ্য মনে হচ্ছিল। বাশায় ফিরে এলাম। মনে একটা ব্যাপারই কেবল ঘুরপাক খাচ্ছিল কিভাবে মৌয়ের সাথে সখ্য গড়ে তোলা যায়। বেলালকেও লজ্জায় কিছু বলতে পারছিলামনা। ভরসা কেবল ভাগ্য দেবী অগত্যা তার কৃপার আশায় বসে থাকতে হল যদি মুখপানে চায়। মন থেকে কিছু চাইলে নাকি পাওয়া যায় এই বিশ্বাসের উপর ভরসা করে অপেক্ষায় থাকলাম। প্রায় সপ্তাহ খানেক পর ভাগ্যদেবীর দয়া হল। একটা নাম্বার থেকে ফোন এলো এবং রিনরিনে গলায় জিগ্যেস করল আপনি কি রবিন বলছেন। উত্তর দিলাম হ্যা। আপনি?
-আমি মিতালী।
-সরি চিনতে পারলাম না।
-আপনি আমায় চিনবেন না কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।
-কিভাবে চিনেন?
-তা তো এখন বলা যাবেনা।
-ওকে, যখন ইচ্ছে হয় বলবেন, এখন আপনার জন্য কি করতে পারি বলুন?
-আপনাকে একটা কথা জিগ্যেস করব?
-করুন।
-আপনার মত সহজ সরল ভাল মানুষকে হয়ত অনেকেই ভালবাসে কিন্তু আপনি কি কাউকে ভাল বাসেন?
-আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার আপনার মত অপরিচিত জনকে শেয়ার করব কেন?
-চিনলে করবেন?
-ভেবে দেখব। বলুন আপনি আমায় কিভাবে চিনেন।
-আমার পুরো নাম মিতালী সাহা মৌ, রোদেলার বান্ধবী ।
নামটা শোনার পর আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম, ভাগ্য দেবী মুখতুলে যদি চাইলে তবে আড় নয়নে কেন? আমার সকল স্বপ্ন ভাগ্যদেবী ধর্মের দেয়াল তুলে কেন ঢেকে দিলে।
-কি ভাবছেন? মৌ জিগ্যেস করল।
-না তেমন কিছু না।
-আপনি খুব চাপা স্বভাবের কিছু বলতে চান না।
-আপনি বলবেন আমি শুনব।
-আপনি আমার বন্ধু হবেন?
-হ্যা।
এমনি করেই মৌয়ের সাথে আমার সম্পর্কের সূচনা। এরপর আর দু বছরের জন্য ফিরে তাকাতে হয়নি। এ দু বছরে বন্ধুত্ব ভালবাসায় রুপ নিয়েছে।
কখন থেকে কিভাবে ভালবাসার শুরু সে কথাই বলছি।
একদিন মৌয়ের সাথে কথা হচ্ছিল –
তোর ১০জন ভাল মেয়ে বন্ধুর মধ্যে কাউকে বিয়ে করতে বললে কাকে বেছে নিবি তুই। মৌ জিগ্যেস করল।
-আমার তো একটাই মেয়ে বন্ধু, কিন্তু তোর বেলায় কি হবে?আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম।
-আমি তোকে বেছে নেব। মৌয়ের নির্লিপ্ত উত্তর।
-তোর আমার মাঝে যে অনেক ব্যবধান।
-ইচ্ছে থাকলে কোন ব্যবধানই বাধা নয়।
-আমি ওর কথা বলার ভঙ্গিমায় অবাক হই। ও জানতে চায়, কি ভয় পেলে?
-নীজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিই, নাহ।
-ভাবিস না ফাজলামো করলাম। বলে মৌ।
-ফাজলামোটা সত্যি হতে পারেনা? অনেক সাহস করে বললাম।
-মানে?
-মানে সত্যিই কি আমরা ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে পারিনা?
-জানিনা। লাজুক গলায় মৌ উত্তর দিল। এবং এই প্রথম লজ্জা পেতে দেখলাম মৌকে।প্রেম বা বিয়ের ব্যাপারে মেয়েরা মনে হয় এক্তু বেশিই লাজুক।
আমরা আপনি থেকে তুই হয়েছিলাম এবার তুই থেকে তুমি হলাম!
রসায়নটা মজার না?
তারপর হাজারটা স্বপ্ন, হাজার বার ঝগড়া আর হাজার আশার পাল তুলে ডিঙি নায়ে ভাসা। সময় গুলো ভালই চলছিল। কিন্তু খুব বেশিদিন নয়। আগেই বলেছিলাম ভাগ্যদেবী আড় চখে তাকিয়েছে। খবর পেলাম মৌয়ের বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে। কিন্তু মৌ যেহেতু কিছু বলেনাই তাই বিশ্বাস করলাম না।
হঠাৎ একদিন মৌ দেখা করার জন্য ডাকল। গেলাম দেখা করতে কিন্ত, জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা যে আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল তা ভাবিনি।
-রবিন (নিশ্চুপ) জীবনে বড় ধরনের কোন আঘাত যদি আসে সইতে পারবে? ধীর গলায় বলল মৌ।
-একটাই তো জীবন তাও আবার অবিনশ্বর নয়। তাই অত ভাবিনা,যা হবার হবে, বল কি বলবে।
-হেয়ালি রাখ, সিরিয়াসলী বলছি।
-ঠিক আছে বল।
-দেখ রবিন আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি আমার ধর্ম ছাড়তে হবে, ফ্যামিলি ছাড়তে হবে, অনেকগুলো মানুষ কষ্ট পাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি যদি উল্টা পাল্টা কিছু করি আমার বাবা বাচবেনা। কাজেই আমি ফ্যামিলির ঠিক করা পাত্রকেই বিয়ে করছি। ফেব্রুয়ারীর ০৮ তারিখ আমার বিয়ে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। আর আজ থেকে আমরা ভাল বন্ধু হয়ে থাকব।
আমি আর কিছু শুনতে পেলামনা, মাথাটা কেমন ঘুরতে লাগল, বুকের বাম পাশটায় চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভব করলাম, অনেক কষ্ঠে শুধু বললাম তোমার কথা শেষ?
-হু (হ্যা সূচক মাথা নারল মৌ)
বললাম তাহলে চলে যাও, আমাকে একা থাকতে দাও। ধীর পায়ে আমার ঝাপসা চোখের সামনে দিয়ে আমার বুকটা মাড়িয়ে চলে গেল মৌ। চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো, তারপর আর কিছু বলতে পারবনা। যখন চৈতন্য ফিরে পেলাম তখন প্রায় ১৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, মৌদের বাড়িতে হয়ত শঙ্খ শানাই বাজতে শুরু করেছে। আর আমি হসপিটালের সফেদ বিছানায় আবেগঘন সুন্দর অতীতের মাঝে নিজেকে হাড়িয়ে খুঁজছি।
আরও দুদিন পর হসপিটাল থেকে রিলিজ পেলাম। সারাদিন বাসায় বসে বসে সিগারেটের গুষ্ঠী উদ্ধার করি, মাঝে মাঝে বারেও যাই। পড়াশুনা শিকেয় উঠল। জীবনের বোঝাটা বড় ভারি মনেহতে লাগল। এমনি করে চলে গেল ছয় মাস।
অনেক অচেনা নাম্বার থেকে অনেক সময় অনেক পরিচিত মানুষ ফোন করে। শ্বাভাবিক ভাবেই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আজ যখন একটা নাম্বার থেকে ফোন এলো কণ্ঠ শুনে অবাক না হয়ে পারলামনা।
রিনরিনে গলায় যখন জানতে চাইল কেমন আছো আমার ইন্দ্রিয়গুলো এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে আমাকে জানিয়ে দিল এ আর কেও নয়, এ মৌ।
অস্ফুটে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো এতদিন পর তুমি কি মনে করে।
-বল্লেনা কেমন আছো?
উত্তর না দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করল। সেই আগের মতই নিজের প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত অন্য কথা কানেই তুলবেনা।
-তাই বললাম বেঁচে আছি।
-তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
-কি দেখতে চাও?
-তোমাকে !
-আমাকে নতুন করে দেখার তো কিছু নেই।
-অতো কিছু বুঝিনা তুমি আসবে কি না বল?
-কোথায় আসতে হবে?
হয় তো আমি খুব বোকা অথবা খুব ভালবাসি তাই উপেক্ষা করতে পারলাম না।
-রমনায়।
-কখন?
-বিকেল পাঁচটায়।
পরদিন সারে পাঁচটায় রমনায় গিয়ে পৌঁছলাম সেই আগের মতই আধ ঘণ্টা লেটে। আগের মত রাগারাগি করল না মোটেই। শুধু মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল অনেক্ষন। তারপর বলতে শুরু করল,
-এই ছয় মাসে একবারও কি সেভ কর নি? সিগারেট খেতে খেতে টকটকে খয়েরী ঠোট দুটি এভাবে পুড়িয়েছো? চুলগুলো কি রেখে দিলে? কতদিন ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করনা? চোখ দুটি এমন গর্তে চলে গেছে কেন? নেশা টেশাও নাকি কর আজকাল, কেন?
-আমি শুধু বললাম যত্ন করার কেউ ছিলনা তাই।
-নিজের এত অযত্ন করেছো কেন?
-অভিমানে।
-যে এক কথায় তোমাকে পর করে চলে গিয়েছিল তার প্রতি অভিমানের চেয়ে তো ঘৃণা বেশি হওয়া উচিৎ।
-তাহলে যে ভালবাসাকে ছোটো করা হত।
-আমার কথা কিছু জানতে চাইবেনা?মৌ জিজ্ঞেস করল।
-না।
-কেন? পর হয়ে গেছি তাই বুঝি?
-না।
-তাহলে?
-জানি তুমি ভাল নেই, তাই তোমার কষ্ট বাড়াতে চাই না।
আমার এ কথায় জল গড়িয়ে পড়তে লাগল মৌয়ের চোখ থেকে, অনেক ক্ষণ কাঁদল নিঃশব্দে মাথা নিচু করে। তারপর মাথা তুলে বলল, এত অভিমান তোমার যে চোখটাও মুছিয়ে দেবেনা!
-সে অধিকার তো তুমি কেড়ে নিয়েছ অনেকদিন।
-অধিকারের কথাই যখন বলছ তখন অধিকার ধরে কেন রাখতে পারনি? অধিকার তো কেউ কাউকে দেয় না আদায় করে নিতে হয়।
-গাছ যদি ফল দেয় মালি রক্ষা করতে পারে, কিন্তু গাছ যদি ফল না দেয় মালির কিছু করার থাকেনা।
-হয়েছে হয়েছে শুধু বড় বড় কথা।
-তোমার দুই বছরের অভিযোগ ছিল আমি কথা এত কম বলি কেন। যাগগে, বাদ দাও ওসব এতদিন পর দেখা শুধু ঝগড়া করবে?
-না।
-তাহলে?
-তোমাকে জংলী থেকে মানুষ করব চল।
তার পর নিয়ে গেল সেলুনে চুল দাড়ি কাঁটিয়ে বহুদিন পর গেলাম টি এস সি তে ফুস্কা খেলাম ছয় মাস পর, মধুর ক্যান্টিনে চা, নাকে মুখে মাখিয়ে আইসক্রিম, ভুলে গেলাম সব অভিমান।
মেয়েদের এই ক্ষমতাটাই আমাকে অবাক করে, কত সহজে দূরে ঠেলে দিতে পারে আবার কাছেও টানতে পাড়ে সহজেই।
ওর ছত্রছায়ায় আমার গান গাওয়া, কবিতা লেখা, গল্প লেখা, ক্লাশ, পরাশুনা, সবকিছু আবার নিয়মিত হয়ে উঠল পনের দিনেই।
একদিন জানতে চাইলাম ঘর শংসার ছেড়ে চলার পথে পিছনে ফেলে যাওয়া জীর্ণ কুঁড়েঘর মেরামত করতে মরিয়া হয়ে লাগলে কেন?
আমি কি জানতাম এ ঘরের চাবি আমি ছাড়া আর কারো কাছে নেই, আমি ছাড়া এই ঘর মেরামত করারও কেউ নেই। যখন জানলাম তখন এলাম ঘরটা ঠিক করে চাবিটা অন্য কার হাতে তুলে দিতে।
-মানে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
-মৌ তখন বলতে শুরু করল, বাবা জেনে গিয়েছিল তোমার আর আমার সম্পর্কের কথা, এরপর একদিন আমাকে ডেকে বলল তুমি যদি ভেবে থাক তোমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবে তবে আমার মৃত্যু দেখবে না হয় ওই ছেলেটার মৃত্যু দেখবে, আর যদি কনটাই না দেখতে চাও তবে তোমার জন্য যে ছেলে দেখা হয়েছে তাকে বিয়ে করতে হবে। বাবার কথা মেনে নেয়া ছাড়া আমার আর কোন পথ ছিলনা।নিজের প্রেম বিসর্জন দিয়ে আর তোমাকে কষ্টের সাগরে বিয়ে করলাম বাবার পছন্দের পাত্রকে। মাস পেরুতে না পেরুতেই বুঝতে পাড়লাম অনেক মেয়ের সাথেই তার অবৈধ সম্পর্ক আছে, আরও কিছুদিন পরে বুঝলাম তার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিটা মিথ্যে যা দেখে বাবা পাগল হয়েছিল, এবং মাস দুই আগে জানলাম সে আসলে আমাকে পছন্দ করেনি পসন্দ করেছিল বাবার সম্পত্তিকে, বিভিন্ন ভাবে সে বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে, জানোয়ারটা আমার গায়ে পর্যন্ত হাত তুলতে দ্বিধা করেনি। পনেরদিন আগে রাগ করে চলে আসি। ইচ্ছে করেই তোমার সাথে যোগাযোগ করিনি। ভেবেছিলাম তাতে হয়ত তোমার দুঃখ বাড়বে। যোগাযোগ না থাকলে এমনিতেই হয়ত সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করবে। কিন্তু, তুমি যে এমন মস্ত পাগল ভাবতেও পারিনি। আসলে আমারই ভুল, আমিই তোমাকে চিনতে পারিনি।
-তারপর?
-তারপর সেদিন রোদেলার কাছে জানলাম তোমার কথা, শুনে মনে হল প্রেমিকা হিসেবে তোমার জীবনটা শুধু নষ্টই করেছি, বন্ধু হিসেবে যদি নষ্ট জীবনটা ভাল করতে পারি! আমার জীবনটাতো গেলই তমারতা যদি টেকে।
-গেল কেন? তোমার স্বামী যদি ভুল বুঝতে পেরে নিজের ভুল স্বীকার করে তোমাকে নিতে আসে?
-হুহ! মলিন বদনে ঠোট দুটি এক্তু ফাঁক করে নিশব্দে হাসল মৌ। সে হাসির অর্থ বলে বোঝানো নিঃপ্রয়োজন। তারপরও বলতে থাকল মৌ, সে আশার গুড়ে বালি, কুকুরের লেজে যদি পাইপ ঢোকান হয় পাইপ বাকা হলেও হতে পারে কিন্তু লেজ সোজা করার চেষ্টা বৃথা।
-মৌ তোমাকে আমি এখনও আগের মতই ভালবাসি।
-সে কি আর আমার জানতে বাকি?
-বলছিলাম, তোমার যদি আপত্তি না থাকে তবে......।
-এই এক বছরে সমাজের নিয়ম নীতি একটুও পাল্টায়নি, কাজেই যা এক বছর আগে পারিনি তা আজো অসম্ভব। তবে ভালবেসে যদি সত্যিই চাও আমি ভালথাকি তবে আমায় একটা কথা দিতে হবে, বল দিবে।
-কি কথা?
-যা ঘটে গেছে তা ভেবে জীবনটা আর নষ্ট করনা, নিজেও কষ্ট পেয়না, আমাকেও কষ্ট দিওনা, বল কথাটা রাখবে,তাহলেই অন্য সব কষ্টের মদ্যেও আমি ভাল থাকব।
মৌয়ের ভালবাসা আমার জীবন থেকে যা কেড়ে নিয়েছিল বন্ধুত্ব তারচেয়ে অনেক বেশি ফিরিয়ে দিয়েছে। আমিও চেষ্টা করছি মৌয়ের জন্য বন্ধু হিসেবে কিছু করার।