বাড়ী থেকে ক্রমাগত ফোন আসছে। ধীরে ধীরে আমন্ত্রিতরা বাড়ীতে আসতে শুরু করে দিয়েছে। এদিকে আসল লোকেরই পাত্তা নেই। একটা জরুরী মিটিঙে ফেঁসে গেছিলেন এম অ্যান্ড এম অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সির কর্ণধার শ্রীযুক্ত ময়ুখ চৌধুরী। এই মুহূর্তে বিজ্ঞাপন দুনিয়ায় যাকে বলে “ বিগ নেম”। রাস্তায় হাজারো হেডলাইটের জোনাকি।ক্রসিঙে আটকে গেলেন তিনি। ত্বরিতে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে নিজের অবস্থান জানিয়ে বাড়ীতে ফোন করলেন। আজ অনেক ভি ভি আই পি গেস্টরা নিমন্ত্রিত। একা ভাস্বতী কি সব সামলাতে পারবে? সাহিত্য, সিনেমা, রাজনীতি,সাংস্কৃতিক জগতের সব দিকপাল একেক জন। তবে এই সামাজিক স্ট্যাটাসে আসার জন্য ময়ুখকে কম স্ট্রাগাল করতে হয়নি। ভাস্বতীও তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন । ব্যাবসার লাইনে উত্থান-পতন লেগেই আছে। সেক্ষেত্রে তার সহযোগিতা প্রকৃত অর্থে প্রশ্নাতীত।
ময়ুখ-ভাস্বতির পুত্র-কন্যা –মৈনাক, মউবনি তাদের বিয়ের পঁচিশ বছরের অ্যানিভারসারি মানাতে চায়। প্রথমে কথাটা শুনেই বুকটা কিরকম ধক করে উঠেছিল ময়ুখের। একটা মৃদু আলোড়ন এই বয়সেও অনুভব করেছিলেন। ভাস্বতীর কেমন রি-অ্যাকশান হবে তাই চিন্তা করছিলেন। কিন্তু চোখে-মুখে বা হাবে-ভাবে কোন কিছুতেই আপাত দৃষ্টিতে কোন ভাবান্তর দেখা যায়নি ভাস্বতীর। তবে এ নতুন কিছু নয়। এ সংযম ভাস্বতী সাক্ষাতের সেই প্রথম দিন থেকেই দেখিয়েছে। নাহলে মানসিক ভাবে, শারীরিক ভাবে বিপর্যস্ত একটা মেয়ে কিভাবে চুপচাপ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়েছিল-----ভাবা যায়! অধৈর্য হয়ে উঠছেন ময়ুখ। সিগন্যালে এতক্ষন কখনো আটকে রাখে গাড়ি? আজ কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেরিয়েছেন অফিস থেকে। আর একটু আগে বেরলেই হয়তো ভাল হত কিন্তু মিটিংটা সব ভণ্ডুল করে দিল। এত অতিথি সমাগম হবে বাড়ীতে! গৃহকর্তা না থাকলে চলে! ভাস্বতী বার বার করে বলে দিয়েছিল তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে। তারও কি আজ আচমকা মন উচাটন! ময়ুখ চৌধুরী নামলেন গাড়ী থেকে। সামনে বিশাল যানজট। কলকাতার এই যানজটের সমস্যা যে কবে মিটবে? আর পারা যায় না !
ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বাতানুকূল গাড়ির ভেতর ঢুকে আস্তে করে রবি শঙ্করের সেতারের সি ডি চালালেন। সেই স্বর্গীয় সঙ্গীতের মূর্ছনায় অজান্তেই উদাসী মন বারবার ডানা মেলে চলে যায় সেই সুদূর নীহারিকাপুঞ্জে।
ময়ুখের তখন কত বয়স হবে? ছাব্বিশ-সাতাশ বড় জোর ! একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে ।চাকরিটা মনঃপুত নয়। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । কলকাতার মেসে থাকে। যৌবনের রক্ত তখন টগবগ করে ফুটছে। মনোহর আইচের আখড়ায় রোজ ব্যায়াম করতে যায়। ছোলা আর বাদাম-পেস্তার শরবৎ। আড্ডা -কফি-হাউস-সিনেমা-বইপাড়া –ইন্টার্ভিউ ---হইহই করে দিনগুলো একরকম কেটে যাচ্ছিলো। ইতিমধ্যে একজন দুজন সংসারি হতে শুরু করেছে। তা সেদিন তার বন্ধু, সুশান্তর বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়েই ময়ুখ ফিরছিল। বেরতে বেরতে প্রায় রাত সাড়ে এগারটা বেজে গেল। শীতের রাত। রাস্তাঘাটে লোকজন খুবই কম। কি ভাগ্যি একটা ট্যাক্সি পেয়েছিল সেদিন। বাইপাসের ধার দিয়ে সাঁই সাঁই করে গাড়ী ছুটছে।জনমানবহীন রাস্তা। ইতস্তত একটা দুটো গাড়ী চোখে পড়ে। হঠাৎ অদূরে চোখে পড়ল কারা যেন একটা চলন্ত গাড়ী থেকে একটা মেয়েকে কোন মতে নামিয়ে দিয়ে পালাল। আচমকা চোখের সামনে এমন একটা দৃশ্য দেখে এক লহমায় কেমন হতভম্ব হয়ে গেছিল ময়ুখ। সম্বিত ফিরতেই গাড়ী থামাতে বলল। ট্যাক্সি ড্রাইভারটা কিছুতে রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু ময়ুখ এত অবিবেচক হতে পারেনি। আহত-রক্তাত্ব একটা চেহারা। আঁচরে কামড়ে দানবগুলো একরকম শেষ করে দিয়েছে মেয়েটাকে।ছিন্ন-ভিন্ন পোশাক। এমন নারকীয় দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। ধিকি ধিকি তখনো প্রাণটা চলছে। ট্যাক্সি চালক সমানে তাকে সাবধান করে যাচ্ছিলো,
--চলে আসুন দাদা। এইসব রেপ কেস কোন হাসপাতালে অ্যাডমিশন নেবে না দাদা। পুলিস কেস হয়ে যাবে। মিছিমিছি ভাল করতে গিয়ে ফেঁসে যাবেন আপনি। কেন নিজেকে ঝামেলায় জড়াচ্ছেন? উঠে আসুন। উঠে আসুন।
ঝামেলায় নয় , নিজের জীবনের সাথে তাকে জুড়ে দিয়েছিল ময়ুখ।
নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর অবধারিত প্রশ্নোত্তর। তারপরেই পুলিসের প্যাঁচ-পয়জার। তাতে মানুষের প্রান যায় যাক!
একা হাতে সব মিটিয়েছেন ময়ুখ। হাত ঝেড়ে ফেলেননি। দশ দিন লেগেছিল মেয়েটার সম্পূর্ণ সুস্থ হতে। এবার তাকে বাড়ী পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে তার ডিউটি শেষ।
এরকম একটা মানসিক শক। কোন পুরুষকেই বিশ্বাস করতে মন চাইবে না। তবু ধীরে ধীরে ভাব জমিয়েছে মেয়েটার সাথে। একটু একটু সে নির্ভর করতে, বিশ্বাস করতে শিখছিল তাকে। তবে বেশির ভাগ সময়ই সে চুপ করে থাকত। অসীম শূন্যতার দিকে চেয়ে নীরবতা পালন করত। তথাপি ময়ুখকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
---তোমার বাড়ী কোথায়?
মেয়েটি করুণ দুটি চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
----তোমার নাম কি? কে কে আছে তোমার বাড়ীতে?
ফের নিরুত্তর। নির্বাক মুখের দিকে স্রেফ তাকিয়ে থাকে ময়ুখ।
কি স্নিগ্ধ চেহারা! মায়াবী চোখ দুটোতে না জানি কোন দর্দ-ভরী দাস্তান লেখা আছে। কমলালেবুর কোয়ার মত ঠোঁট দুটো দিয়ে যে কোন কথাই বেরয় না! অতঃপর আসল কথাটাতে আসতেই হল ময়ুখকে।
---আমি কালকেই কলকাতা ছেড়ে চলে যাব। আমার বাড়ী বহরমপুরে। এমন কেউ নেইও কলকাতায় যার কাছে তোমায় রেখে যেতে পারব। দু দিন বাদেই আমার চাকরি জয়েন করার ডেট। এন সি এল-এ চাকরি পেয়েছি আমি । মধ্যপ্রদেশে। একটা বিরাট ব্রেক আমার জন্যে। আমাকে যেতেই হবে।
মেয়েটা কেঁদে পায়ে পড়ে গেছিল।
ময়ুখ বুঝেছিল মেয়েটার ধূ ধূ মরুভূমিতে সেই একমাত্র রেনমেকার।
এরপর তো শুরু হল পথ চলা।
কয়লাখনির অঞ্চল। পরিচিত পরিমণ্ডলের বাইরে একদম অন্যরকম লাইফ। তাই কোন অসুবিধে হয়নি। চাকরিও সুখের। একটা গোটা কোয়াটার নিজেদের জন্য। জমাদার, বাবুর্চি , মালী ----সব ফ্রি। তখনো ময়ুখ ভাবেনি যে জীবনটা এই খাতে বয়ে যাবে।
দু-চার ঘর বাঙ্গালিও ছিল। দাসবাবু একদিন সস্ত্রীক এলেন তাদের বাড়ীতে। মেয়েটি নিজের নাম ভাস্বতী বলল। ওর পার্সে ওর নামঠিকানা দেখেছিল ময়ুখ। নিজের আসল নাম সে গোপন করেছিল। ওর অজান্তেই ময়ুখ ওর বাড়িও গেছিল। বুঝতে পেরেছিল কেন ও ফিরে যেতে চায়নি। যৎ সামান্য আয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। ওর পরে আরও দুই বোন আছে। ঐ কলঙ্ক গায়ে মেখে ফিরে এলে ওর বোন দুটোর ভবিষ্যতও অন্ধকার হয়ে যেত। ওর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন-পাড়াপড়শী ---- কেউ ওর প্রত্যাবর্তন চায়নি।
নতুন জীবনে হয়তো ও নতুন নামকরন চেয়েছিল। দাস গিন্নীর কাছ থেকে টুকটাক ঘর-গৃহস্থালির টিপস নিত ভাস্বতী। হাতে ধরে অনেক কাজ শিখিয়েছেন মিসেস দাস ওকে। এইভাবেই জগত-সংসারের কাছে তারা ক্রমে দম্পতি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছিল। না চাইতেই কোথা থেকে টুকটাক প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে একটা আস্ত সংসার গড়ে উঠল। আগের চেয়ে অনেক বেশী স্বচ্ছন্দ হয়েছে ভাস্বতী। তবে মাঝেমাঝেই রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে। চিৎকার করে ওঠে। ভয় পায় সেই অভিশপ্ত দিনের কথা ভেবে।ময়ুখ ছুটে আসে পাশের ঘর থেকে। ফের বিনিদ্র রাত কাটায় দুজনে। এই সময়েই সব চেয়ে মন খুলে গল্প করত ভাস্বতী। তারপর প্রকৃতির নিয়মে তাদের ঘর এক হল।বিছানাও জুড়ে গেল। তারা তখন শরীরে ও মনেপ্রানে স্বামীস্ত্রী। কই কখনো তো আনুষ্ঠানিক বিয়ের কথা বলেনি ভাস্বতী? নাকি তার বলার অপেক্ষায় ছিল? নাকি মনের গহীনে কোথাও লুকিয়ে ছিল কোন অভিমানী দীর্ঘশ্বাস?
এরপর তো কোল আলো করে এল মৈনাক আর ভাস্বতীর যাবতীয় দুখ-জাগানিয়া রাতের অবসান ঘটল। তাদের জীবনটাই আক্ষরিক অর্থে বদলে গেল। কি ঝলমল করত ভাস্বতীর চোখ মুখ তখন। আনন্দ যেন উপচে উপচে পড়ছে। তবে এক এক সময় মনে হত কৃতজ্ঞতায় যেন ভাস্বতী মরমে মরে আছে। মনে মনে কি ময়ুখেরও একটা আত্মগরিমা ছিল না? নাকি ছিল অনুকম্পা? তবে কি সমাজের লোকলজ্জা? তবে কেন ডাকসাইটে সমাজসেবক ময়ুখ চৌধুরী পরবর্তী কালে একটা রেজিস্ট্রি ম্যারেজের চেষ্টা করেননি?
আসলে মৈনাকের জন্মের পর ময়ুখ তার বাবা-মা কে প্রথম তার জীবনের এই নতুন অধ্যায়ের কথা জানায়।ফলস্বরূপ তাদেরকে ফেলে, মান-অভিমান ভুলে মৈনাক তখন সকলের চোখের মনি। একটা নতুন সূর্য তাদের জীবনকে আলো করে আছে। বাবা-মা নাতির ওষুধ- ডাক্তার- ভ্যাক্সিন- ডায়েট এইসব নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। তারপরেই মহা ধুমধাম করে নাতির অন্নপ্রাশন দেওয়া হল। ময়ূখও তার জীবনের এই গোপন অধ্যায় নিয়ে কাঁটাছেঁড়া চায়নি। শুধু যে লোকলজ্জা তা নয় , ভাস্বতীর মান-সম্মানের দিকটাও সে পূর্ণমাত্রায় খেয়াল রেখেছে। নিজেই নিজের যুক্তির জাল সাজায় ময়ুখ। এখনো সমাজের কি সেই অগ্রগতি হয়েছে? মানবিকতার দায়ে কোন ধর্ষিতাকে বৌমা হিসেবে সহজে মেনে নেবে কি কোন শ্বশুরবাড়ি ? তবে কোন মহত্বের দাবিও রাখেনি ময়ুখ।
যাক ! জ্যামটা কেটেছে। আবার গাড়ী স্টার্ট দিলেন তিনি।
বেশ ঘটা করেই বিবাহবার্ষিকী মানানোর আয়োজন করা হয়েছে। সুবেশা সুশ্রী তরুণীরা সফট ড্রিঙ্কস, হার্ড ড্রিঙ্কস পরিবেশন করছে নানান রকম কাবাব, পাকোড়া সহযোগে। মেনুতেও এলাহী কারবার। চকোলেট পার্লার, আইস-ক্রিম পার্লার সব মজুত। বিয়েটা সামাজিক ভাবে হয়নি বলেই হয়তো এত ধূমধাম –আড়ম্বরের দিকে ঝুঁকেছেন ময়ুখ চৌধুরি।
এসেই খেয়াল করলেন ইতিমধ্যে অতিথি উপস্থিতি খারাপ নয়। হাসিঠাট্টায় সব মশগুল। চোখ ইতি-উতি খুঁজছে ভাস্বতীকে। সামনেই মৈনাককে পেলেন। হন্তদন্ত হয়ে চলেছে বন্ধুদের রিসিভ করতে। চোখ আর হাসিটা অবিকল মায়ের মত।
--কি রে মা কোথায়?
--মৌ পার্লারে নিয়ে গেছে । এক্ষুনি চলে আসবে।
--বলিস কি রে?
---ঐ তো মা চলে এসেছে।
রাজরানির মত লাগছে ভাস্বতীকে। তুঁতে আর ক্রিম কালারের ডেডলী কম্বিনেশানের কাঞ্জিভারামে দারুন মানিয়েছে। যেন কোন প্রাসাদের মল্লিকা-এ-আজম। ময়ুখ বুঝতে পারলেন তার ভেতর এক সুনামি চলছে। তার দিকে আলতো করে ঘাড় কাত করে ভাস্বতী ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন অতিথি আপ্যায়নে।
সেই নীরবতা। এই নীরবতার কাছেই নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ময়ুখ। তীব্র কৌতূহল জাগত। আত্মসংযম চুরমার হয়ে যেত তখন। তার চোখের আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলেন অবশেষে।
মউবনি জন্মানোর সময় ময়ুখ ভীষণ অসুখে পড়লেন। কয়লাখনির আকাশে বাতাসে নানা দূষিত ধুলোবালি নিশ্বাসের সাথে ভেতরে গিয়ে বুকে প্যাচ জমে গেছিল। ভাস্বতীর ভরসাতেই কলকাতায় আসা কারণ ময়ুখ ভয় পেতেন কলকাতার স্মৃতি যদি কোন ভাবে আবার ভাস্বতীকে উদ্বেল করে তোলে! কিন্তু ভাস্বতীই সাহস জুগিয়েছে। প্রথমে ছোট ব্যাবসা দিয়ে শুরু। আগে তিনি একটা অ্যাড –এজেন্সিতেই কাজ করতেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লেগে গেল। তারপর বন্ধু-বান্ধব- সোর্স খাটিয়ে ব্যাবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে।
ব্যাস্ত গৃহকর্তা- গৃহকত্রিকে অ্যানাউন্স করে ডেকে আনা হল একত্রে। যেদিন তারা একে অপরের বাহু বেষ্টনে প্রথন শোয় তাইই তাদের বিবাহের দিন বলে এতকাল জনসমক্ষে জানিয়ে এসেছে, তারই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আজ। বন্ধু-বান্ধব,ছেলে-মেয়ে-শুভানুধ্যায়ীদের অনুরোধে জোর করতালির মাধ্যমে মালাবদল করা হল। কোত্থেকে সুশান্তর স্ত্রী মানে শর্মিষ্ঠা আবার এক কৌটো সিঁদুর দিল ময়ুখের হাতে।
---নিন নিন ময়ুখদা পরিয়ে দিন।
---হয়ে যাক। হয়ে যাক । আরেকবার হয়ে যাক। গোটা হল ফেটে পড়ল।
এবার সত্যি বুকটা কেঁপে উঠল ময়ুখের। নিজেই নিজের হৃৎপিণ্ডের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। লাব-ডুব।লাব-ডুব। আড় চোখে তাকালেন ভাস্বতীর দিকে। অনেক বসন্ত পার করে মুখে কিঞ্চিত বলিরেখা। তবু কি সুন্দর! একটু কি নার্ভাস লাগছে ওকে?
সবার তাগাদায় অবশেষে কাঁপা কাঁপা হাতে সিঁদুর পড়ালেন ভাস্বতীকে। অতঃপর তাদের বিবাহ হল। সামাজিক ভাবে।
সব মিটে যাবার পর নিভৃতে ,রাতে যখন সদ্যবিবাহিতা দম্পতির সাক্ষাত হল,
---কই, কিছু বল ভাস্বতী?
---উ...উ কি বলব?
----কি ভাবছ এত? ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে? বাবা-মা বাড়ীর কথা!
ভাস্বতীর চোখে তখন ধূসর আকাশে এক ঝাঁক সাদা বক উড়ে যাবার ছবি দেখেছিলেন ময়ুখ। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাস্বতী বললেন,
----এই স্বীকৃতি দিতে কতটা সময় চলে গেল তাই না!
----তুমি তো কখনো বলনি!
----এক ধর্ষিতাকে তুমি দয়া করলে আমার ভাল লাগতো না।
----আমার ভালবাসায় তো কোনদিন ফাঁকি ছিল না।
-----এতদিনে তা আমি নিশ্চয়ই জানি। বলে ভাস্বতী তাকে জড়িয়ে ধরলেন।
দু হাতে পানপাতার মত মুখটা তুললেন ময়ুখ। সিঁথিতে সিঁদুর জ্বলজ্বল করছে। কপালে গোল লাল টিপ যেন পূর্ণিমার চাঁদ। আবেগে থর থর করে কাঁপছে ভাস্বতী। চোখের কোন চিকচিক করছে। গভীর চুম্বনে-আদরে- অশ্লেষে ভরিয়ে তুললেন ময়ুখ তাকে।
পরিতৃপ্তির-পূর্ণতার এক স্বচ্ছ,ফিনফিনে চাদর যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে ভাস্বতীকে। আজ চাঁদও তার ষোলকলার কাছে ম্লান হয়ে আছে।
০২ জুন - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪