১ দুই যুগ হলো চিঠিটা হাতে এসেছে। আজো পড়া হয় নি কি লিখা আছে তাতে। প্রথম এবং শেষ চিঠি। খামে বন্দী চিঠিটা মাঝে মাঝে শুধু ছুঁয়ে দেখা হয়। যখন প্রয়োজন পড়ে। আজ যেমন। এই মাত্র ট্রেনটা ষ্টেশন ছেড়ে গেলো। প্লাটফর্মে বসে ল্যাপটপের ব্যাগ খুলে ভিতরের পকেট থেকে চিঠিটা বের করে শুধু ছুঁয়ে দেখে আনোয়ার। রেখে দেয় আবার যখন ছুঁয়ে দেখার প্রয়োজন পড়বে সে জন্য। ২ তিনি যখন বার বার তাকাচ্ছিলেন একটু বিব্রত বোধ করে আনোয়ার। একজন মেয়ে মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকার মতো সুদর্শন বলে নিজেকে মনে করে না। অন্য কোন কারণ থাকতে পারে। হয়তো তাড়াহুড়া করে আসতে শার্টের বোতাম উপর নীচ করে লাগানো। দুই পায়ে দুই রকম জুতা, এমন কি পেন্টের চেইন খোলা আছে কি না সব কিছু এক বার দেখে নেয়া দরকার। না! সব কিছুই ঠিক আছে! ট্রেন আসতে এখনো প্রায় চল্লিশ মিনিট বাকী। বেঞ্চে হাতের ব্যাগটা রেখে পাশের দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট আর এক বোতল পানি কিনে নেয়। হরতাল অবরোধে আজকাল ট্রেনে ভ্রমণ বেশী হচ্ছে। এখন অবশ্য হরতাল না থাকলেও ট্রেনে যাতায়াত হয়। নেশা হয়ে যাচ্ছে। ট্রেনের নেশা না। সিগারেট টানতে পারার বিশেষ সুবিধার নেশা। ডক ডক করে বোতলের অর্ধেকটা পানি মুখে ঢেলে নতুন প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট জ্বালায়। আবার বেঞ্চে বসে ট্রেনের অপেক্ষা। এবার তার চোখও কয়েক মুহূর্ত পর পর মহিলার দিকে ফিরে যাচ্ছে। তিনি লাগেজের উপর বসে আছেন। ছেলেটি পাশে আরেকটি ব্যাগের উপর। একটু দূরে কোর্ট পড়া একজন ভদ্রলোক দাড়িয়ে সিগারেট টানছেন। কিছুক্ষণ পর পর তাকিয়ে দেখছেন স্ত্রী সন্তান আর লাগেজ ঠিক মতো আছে কি না। বয়স ছত্রিশ সাইত্রিশ। যতটুকু সুন্দরী হলে এই বয়সী রমণীকে মহিলা বলতে সংকোচ লাগে তিনি দেখতে তেমন। এমন সুন্দরের দিকে স্বচালিত চোখ বার বার ফিরে যায়। এখনো ফিরে ফিরে দেখছেন। যত বার তাকিয়েছে ততবার চোখে চোখ পড়ছে। আড় চোখে চোখাচখী। এবার মনে হচ্ছে কিছু একটা বলতে চাইছেন। ঘুরে ফিরে আনোয়ারের চোখ সেদিকে যাওয়ার আরেকটি কারণ -মুখটি বেশ পরিচিত লাগছিলো। অবশ্য পরিচিত মনে হওয়ার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। স্বামী আর বারো তেরো বছর বয়সী ছেলে সন্তান নিয়ে তারা বিমান বন্দর রেল স্টেশনে চট্টগ্রাম গামী আন্তঃনগর ট্রেন তূর্ণা এক্সপ্রেস এর অপেক্ষা করছে। আর আনোয়ার উল্টো দিকের ট্রেন ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস এর অপেক্ষায়। তাদের ট্রেন বিশ মিনিট আগে আসবে। দুই তিন মিনিট আগে ঘোষণা দেয়া হয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যেই তূর্ণা ষ্টেশনে পৌছবে। এবার তিনি আর ঠিক থাকতে পাড়ছেন না বলে মনে হলো। এগিয়ে আসছেন আনোয়ারের দিকেই। এতক্ষণ শুধু মুখের একটা পাশ দেখা যাচ্ছিলো। এখন মুখোমুখি। মাথায় সিঁদুর দেখে চিনতে ভুল হলো না। -কেমন আছেন আনোয়ার ভাই? -ভালো। -আমি বুঝতে পাচ্ছিলাম আপনি আমাকে চিনতে পাড়ছেন না। -দুই যুগ পর দেখছি। এতোটা সময়ের পরিবর্তন... চিনতে ভুল কি হতে পারে না? -দুই যুগ আগে কি ঠিক চিনেছিলেন? প্রশ্নটা মগজের মধ্যে একটা পেরেকের মতো বিদ্ধ হলো। দক্ষিণ দিক থেকে একটা আলো ক্রমেই কাছে আসছে। ওর স্বামী লাগেজ হাতে নিয়ে ডাকছে -মাধবী তাড়াতাড়ি আসো ট্রেন চলে আসছে। -যাই। হা কিংবা না কিছুই বলা হলো না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।