বন্ধু কাব্য

শুন্যতা (অক্টোবর ২০১৩)

ধ্রুব নীল
  • ১৪
'বন্ধু'। একটি নির্ভরতার নাম। ভালবাসা ও আবেগের মিশেলে তৈরী হওয়া এক উপখ্যানের নাম। ঘোর অমানিশাতেও যেন প্রদীপ হয়ে আলো ছড়ায় এই শব্দটি। অভিমানী কয়েকটা বছর পেরিয়ে যাবার পর যখন বুঝলাম, এতদিন খাঁটি বন্ধুটাকেই অনাদরে রেখেছি, তখন আর পিছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ ছিলনা। বিবেক দিয়ে চলতে গিয়ে আবেগের অনেক বড় একটি অংশ হারিয়ে ফেলেছি জীবন থেকে।

ভূলে গিয়েছিলাম, আবেগ আছে বলেই মানুষ স্বপ্ন দেখে, মনের মাঝে নানান স্বপ্নের আল্পনা আঁকে। সেই কত বছর ধরে আবেগ তাড়িত হয়ে কোন পাগলামো করিনা। অথচ পাগলামো করতে কি ভীষন ভাল লাগত আমার!

কোন মেয়ের জন্য হাত কেটে রক্ত বের করতে হয়নি কখনো। অথচ এক ছেলে বন্ধুর জন্য এ কাজটি করেছিলাম অনেকবার। আমার জন্য বন্ধুটিও এ কাজ করেছিল আরো বেশিবার। এমনকি আগুন দিয়ে নিজের হাতের চামড়া ঝলছে দিয়েছিল সে। আজো দেখা হলে তার হাতের পোড়া দাগ গুলো চোখে পড়ে। কি অবাক করা আবেগ ! কি আবেগময় বন্ধুত্ব !!

সবেমাত্র তখন ক্লাস এইটে পড়ি। হাফিজ আর আমি স্যারের বাসায় থেকে বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমাদের বন্ধুত্বে সে কি মান অভিমান! কথা বন্ধ হলে চিঠি আদান প্রদান হতো ওর সাথে। কত চিঠি দিয়েছি ওকে! আমাকেও দিত নিয়মিত। অন্যরা সব ঈর্ষা করত আমাদের। আমার কোন অসুখ হলে ভাত খাইয়ে দিত, জ্বর হলে মাথায় পানি দিয়ে দিত....! যেন বাড়ির মানুষের সেবাটাই পেতাম ওর কাছ থেকে। এছাড়া ওদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল নিয়মিত। ওর মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ আজো মুখে লেগে আছে।

হঠাত্‍ একদিন এক কালবৈশাখী ঝড় এলো জীবনে। সেই ঝড়ে হারিয়ে গেল লুতুপুতু সেই বন্ধুটি। মন থেকে মুছে গেল বন্ধুত্বের সেই স্মৃতিগুলো। এভাবে কেটে গেল প্রায় অর্ধযুগ। এর মাঝে অনেকবার দেখা হয়েছে আমাদের কিন্তু বন্ধুত্বের সেই আবেগ ফিরে আসেনি কখনো। সেও কখনো বলেনি তার অব্যক্ত কথা। "আমি হয়ত ওকে আর আগের মত বন্ধু ভাবিনা..." এই ভেবে।

একদিন সে যখন ড্রয়ার থেকে ফাইল বের করে আমার দেয়া সমস্ত চিঠি দেখাল, তখন স্তব্ধ হয়েছিলাম কয়েক মুহুর্তের জন্য। পুরনো দিনের সব কথা মনে পড়ে গেল। চিঠির প্রতিটি লাইনে যেন একটি করে ইতিহাস বোনা ছিল। কত সুখের ছিল দিনগুলি! কত আবেগের!!

চিঠিতে এখনো আমার শরীরের রক্ত দিয়ে তার নাম লেখা রয়েছে। সে যখন জিজ্ঞেস করল, আমার কাছে তার দেয়া চিঠি গুলো আছে কিনা? আমি উত্তর দিতে পারিনি। নির্বাক ছিলাম অনেক্ষন। আমার কাছে যে একটি চিঠিও নেই। ঐভাবে কখনো গুছিয়ে রাখা হয়নি। চুপ করে বের হয়ে এসেছিলাম ওর রুম থেকে। এগিয়ে দিতে চেয়েছিল সে। আমি আসতে দেইনি। আমার এ অশ্রুভেজা চোখ তাকে দেখাতে চাইনি বলে।

বন্ধুর কাছে বন্ধুত্বের পরীক্ষায় হেরে যাওয়া এই বিবাগী মন হয়ত অপরাধবোধের বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াবে বাকি জীবন। তাতে কি! জয়তো আমারই হয়েছে। একজনের মনে আঁচড় কেটে থাকতে পেরেছি তো এতদিন! এতেই বা কম কিসে!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

১৮ মে - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪