ও আমার একাকী কষ্টরা,
কেন রাত্রির পর রাত্রি তোমরা একলা জেগে রও?
ঘুমিয়ে পড়ে শুকতারাটি, ঘুমিয়ে পড়ে অষ্টমীর চাঁদ
তবু কেনো তোমরা জেগে রও?
নির্ঘুম চোখে ঝোরো ঝোরো বর্ষায়
শ্রাবণের জলের মত ঝরছো অনর্গল!
বিমুগ্ধ রজনী চলে যায়, চলে যায় সোনা ঝরা দিন
তবু কেন তোমরা ছেড়ে যাও না?
হৃদয় ভিটের জলচৌকিতে উঠোন পেতে বসে
করে যাও একাকী রাজত্ব!
কেন এত কাঁদো তোমরা, কেন এত উজার করে দিয়ে কাঁদো?
কোন ভাঙ্গনেতে ভেঙ্গেছে এই বুক?
কোন ভুলেতে অনুশোচনারা এভাবে তিলে তিলে করে ক্ষয়!
অনুশোচনার কান্নাতে কি এতই দুঃখ জেগে রয়!
মধ্যরাতে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ যখন মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছিল তখন আনমনেই ডায়েরীর পাতায় আঁকিবুঁকি করছিল অনিন্দিতা! রাতের নীরবতা , আর টুপটুপ করে ঝরে পড়া বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দ ছাপিয়ে ক্রমান্বয়েই তার মনে লিওনার্দোর ক্যানভাসের মত জ্যান্ত হয়ে উঠছিল কষ্টের শিহরণগুলো! উফ কি নিদারুন কষ্ট! মানুষকে কষ্ট দেবার মাঝেও যে এত কষ্ট তা কি কেউ ভেবেছে আগে! আর সেই সাথে যদি যুক্ত হয় অনুশোচনা তবে কষ্টের লেলিহান শিখা কত তীব্র উত্তাপে হৃদয় পুড়িয়ে করে ভস্ম তা হয়ত ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না। তবে রাত্রিগুলো বেশ ভালো লাগে অনিন্দিতার! কেননা রাত্রির ভরাট কালো অন্ধকারে দুঃখগুলো নিমিষেই টুপ করে ডুবে যায়। এতে কারো করুণা বা দয়া ভিক্ষার প্রার্থী হতে হয় না!
বছর তিনেক আগের কথা! যখন মেডিকেলের বিশাল হল রুমে অনিন্দিতার প্রথম দেখা হয় ইমনের সাথে।ইমন তখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আর অনিন্দিতা মাত্র প্রথম বর্ষে ভর্তি হল। এখান থেকেই গল্পের সূচনা!
প্রথম মেডিকেলে ভর্তি হয়ে অনেক কিছুই বুঝতে পারে না অনিন্দিতা। তাছাড়া এত বড় মেডিকেল কলেজ! কোন দিকে লেকচার গ্যালারি, কোথায় ক্যাফেটেরিয়া, অথবা কোথায় ক্লাস সব কিছু যেন গোলক ধাঁধার মত ঘুরপাক খেতে থাকে অনিন্দিতার মস্তিষ্কে! এ দিকে ভর্তি হতে না হতেই শুরু হয় পড়াশুনার বুল্ড্রজার। যেন টিচাররা অপেক্ষায় থাকেন কখন নতুন বর্ষে স্টুডেন্ট আসবে আর তারা তাদের কান ধরে ঢুকিয়ে দিবেন এনাটমি ডিসেকশন রুমে এবং কোন মুর্দার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলবেন ''নে বাবা ডাক্তার হবার সাধ মেটা! সুপিরিয়র ভেনাক্যাভা কোথায় গিয়ে ড্রেইন করে মুখস্থ বল!' এতটুকু সময় নেই। আজ আইটেম, কাল কার্ড ফাইনাল এ রকম হাজারটা পরীক্ষার সিডিউল কাঁধে চেপে বসে অনিন্দিতার। এর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে যখন সে হাবুডুবু খেয়ে বিষমী তুলছিল তখন তার দিকে সহায়তার কোমল হাত বাড়িয়ে দেয় ইমন!
ইমন প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যায় অনিন্দিতার। কিন্তু লজ্জা আর প্রত্যাখ্যান হবার ভয়- এ সব সাত পাঁচ ভেবে আর তার ভালোবাসা ''ভালোবাসি'' পর্যন্ত গড়ায় না। তবে অনিন্দিতা ঠিকই বুঝতে পারতো তার জন্য ইমনের অনুভূতি। ছেলেদের চোখে ভালোবাসা আর কামনা- এ দু টো চিনে নিতে পৃথিবীর কোন মেয়েরই সমস্যা হয় না।
অবশেষে অনিন্দিতাই প্রথম এগিয়ে আসে এই দ্বিধা আর জড়তা কাটিয়ে মনের অবিমিশ্র লাজুক অনুভূতিকে একটা নতুন নাম দিতে। লাজুকতার ক্রমশ সংকোচিত অনুভূতিগুলোর কলিকে প্রস্ফুটিত করে সদ্য ফোটা অবারিত ভালোবাসাকে উজ্জ্বল আকাশে করে দিতে বর্ণিল রংধনু। সেই ইমনকে জিজ্ঞাসা করে ,'' তুমি কি আমায় ভালোবাসো?''
কিছুটা কেঁপে ওঠে ইমন! যেন গাঢ় ঘুমে ঘুমিয়ে পড়া অনুভুতি হঠাৎ কোন উচ্ছল কিশোরীর ভুবন কাঁপানো চিৎকারে গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছে! চোখ দুটো তার ছল ছল করে উঠে !
অনিন্দিতা গভীর বিস্ময়ে ভাবে ''এই ছেলেটা কি আমাকে এতই ভালোবাসে!''
ইমনের মৌনতা ভাঙিয়ে তার কথাগুলো শুনে নেয় অনিন্দিতা! আবেগ যেন টপটপ করে ঝরে পড়ছিল ইমনের কন্ঠ থেকে! ''আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি অনিন্দিতা! খুব খুব খুব ভালোবাসি।''
অনিন্দিতা আস্তে করে ইমনের হাত দু টো তুলে ধরে নিজের গাল আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে ছোট্ট করে বলে ,''আমিও''
আর সেই সাথে শুরু হয় তাদের ভালোবাসাবাসি জীবনের নতুন অধ্যায়। তারা রোজ রোজ একটু একটু করে ভালোবাসার পলি হৃদয়ে জমা করে উর্বর করে তোলে ভালোবাসার কোমল ভুমি।
এভাবেই অনুপম সুখের প্রেমানুভুতির রঙিন ঘুড়ি নীল আকাশে উড়িয়ে আগামীর স্বপ্ন বুণে কেটে যায় ২টি মাস।
কিন্তু প্রকৃতির মর্জি হয়ত অন্য কিছুই ছিল! হঠাৎ মেডিকেলে মাইগ্রেশন লেটার আসে অনিন্দিতার। তাকে চলে যেতে হয় এই মেডিকেল কলেজ ছেড়ে অন্য মেডিকেল কলেজে।
তার বাসার কাছে একটা মেডিকেল কলেজে নতুন করে ভর্তি হয় সে। দু 'জনের মাঝে তৈরী হয় কমিউনিকেশন গেপ। তাও তারা সে গেপ কাটিয়ে উঠেছিল। ছুটির দিনগুলোতে ইমন চলে আসতো অনিন্দিতার কলেজে তার সাথে দেখা করতে। এভাবেই হেসে খেলে কাঠবিড়ালির মত তাকধিন তাকধিন করে টই টই করে ঘুরে বেড়িয়ে পাড় হয়ে যাচ্ছিল তাদের দিন।
ইমনের ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না অনিন্দিতার জন্য। সে রোজ সকালে অনিন্দিতার সেল ফোনে ফোন দিয়ে শিস দেয়ার মত করে বলত ''ওঠো সম্রাজ্ঞী সকাল হয়েছে। আর কত ঘুমাবে?'' আর সেই সাথে তার দু চোখ হয়ে উঠতো সেই স্বপ্নে বিভোর যখন সে নিজে অনিন্দিতার কাঁধে নাড়া দিয়ে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে আর তার সাথে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দেখবে খুব সকালে সবার আগে জেগে ওঠা নীলকন্ঠি পাখিটি।
অনিন্দিতার ঘুম জড়ান কন্ঠ সেই স্বপ্ন করে তোলে আরো তীব্র থেকে তীব্রতর।
ইমন একটা কথা প্রায়ই বলত অনিন্দিতাকে '' অনিন্দিতা! আমার খুব ইচ্ছে করে তোমাকে বুকের গভীরে কোথাও লুকিয়ে রাখি! কেউ যেন দেখতে না পায় আমার প্রিয় মানসীটিকে! তাকে যে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি! কিন্তু মাঝে মাঝে খুব ভয় হয় জানো তো! কেউ যদি তোমাকে কেঁড়ে নিয়ে যায় আমার থেকে!''
অনিন্দিতা হাত নেড়ে ভয়গুলোকে উড়িয়ে দিতে চায়। সে মুখ তির্যক করে বলে ,''দূর বোকা! কে কেড়ে নেবে আবার আমায়!'' সে ইমনকে আশ্বস্ত করে। তবুও ইমন বলে যায় এক ঘোরে বলে যায় কিছু শুন্যতা মেশানো ভয়ের কথা।
অনিন্দিতাও গুরুভক্ত ছাত্রীর মত গভীর মনোযোগে শুনে কথাগুলো। মাঝে মাঝে অবশ্য কিছুটা ন্যাকামো মনে হয় তার কাছে, তবুও শুনে যায় ইমনের খুশির কথা ভেবে।
কিন্তু তাদের এই ভালোবাসার খুনসুটিগুলো যেন প্রকৃতির কাছে অসহ্য হয়ে উঠে ছিল! নিয়তি নেয় অন্য দিকে ইউটার্ন! একদিন অনিন্দিতার ফেসবুকে এড রিকোয়েস্ট পাঠায় এক টিভি তারকা-একজন মডেল ! অনিন্দিতার চোখে লেগে যায় সোনালী রঙের ঘোর। সেই ঘোরের কাছে ইমনকে মনে হয় একদম সাদাসিধে এক মানব! সেই টিভি তারকার সাথে প্রগাড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে অনিন্দিতার। একজন আরেকজনকে ফেসবুকে করে যায় ইনবক্সের পর ইনবক্স। একদিন সেই লোকটি জানায় সে ভালোবাসে অনিন্দিতাকে! অনিন্দিতাও ভালোবাসা আর মোহের মাঝে পার্থক্য ভুলে যায়! ভুলে যায় জগতের হিতাহিত নিয়তিগুলো! ভুলে যায় কারো মনে কষ্ট দিয়ে সুখী হওয়া যায় না। প্রকৃতি যে সব কিছুরই ইকুইলিব্রিয়াম করে! এক সময় পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে মানুষকে সেই জায়গায় এনে দাঁড় করায় যেখানে সে অন্যকে ছেড়ে গিয়েছিল!
হুম ইমনকে ছেড়ে দিয়েছিল অনিন্দিতা! ইমনের কান্নাগুলো তখন তার কানে কম্পন তৈরী করে নি, সে তখন রকস মিউজিকের রমরমে কান ঝাঁঝালো সুরের তালে মগ্ন!
ইমন কেঁদে কেঁদে বলেছিল ,''তোমাকে ছাড়া বাঁচতে খুব কষ্ট হবে!'' তবু পিছু ফিরে তাকায় নি অনিন্দিতা! সামনে যে তখন বসা ছিল তার স্বপ্ন পুরুষ! পিছু ফিরে তাকাবার সময় কই!
স্বপ্নের রাজপুত্র তখন ঘোড়ায় চড়ে মনের সবগুলো রাস্তা ধরে টগবগিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতা কখনোই এক হয় না। বাস্তবের নায়ক নায়িকারা অনেক সময় দৈহিক সৌন্দর্যে স্বপ্নের নায়ক নায়িকাদের মত সুন্দর মোহনীয় নাও হতে পারে, কিন্তু স্বভাবগত দিক থেকে তারা স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যায়।
ইমন দেখতে হয়ত ততটা হ্যান্ডসাম ছিল না, কিন্তু তার ছিল আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। শুধু অনিন্দিতাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো তাই সে দিয়েছিল তার মোহনীয় ব্যক্তিত্বের বিসর্জন। নিজের মাঝের সব অহমিকা অনিন্দিতার পায়ের কাছে ঢেলে দিয়ে বলেছিল ,''খুব ভালোবাসি আমি তোমায়! প্লিজ একটি বার আমার কথা শোনো! আমাকে ছেড়ে যেও না!''
কিন্তু অনিন্দিতার এখন নানান বাহানা। আজ এই ক্লাস, কাল সেই ক্লাস, উফ আমি এখন ওয়ার্ডে, ব্যস্ত আছি, ফোন ধরতে পারবো না। ''এত বার কেন ফোন করো বলো তো?''
মাঝে মাঝে একদম অকারণেই খুব তীব্রভাবে ইমনকে অপমান করতো অনিন্দিতা। কিন্তু ইমনও সব মুখবুজে সহ্য করে যেতো ভালোবাসার খাতিরে। একদিন সারা রাত জেগে সে ফোন দেয় অনিন্দিতাকে। কিন্তু অনিন্দিতা ফোন রিসিভ করে না একটি বার। সকালে ইমন ভারাকান্ত কন্ঠে বলে ,''তোমাকে আমি তোমার জন্য ফোন দেই না। দেই আমার জন্য! ঢের বুঝতে পারি তুমি এখন আর আমায় ভালোবাসো না। তবুও কেন যেন তোমায় ভুলতে পারি না!''
কিন্তু অনিন্দিতা পাথর! তার সব অনুভূতি জুড়ে তখন সেই টিভি তারকার বাস। টিভি তারকার সামান্য অবহেলায় দুঃখের আগুনের পুড়িয়ে ছাড়খাড় করতো তার বুকের পাটাতন। আর সেই রাগ ঝারতো সে ইমনের উপর!
একদিন অপমানের সব থেকে তীব্র সীমা পাড় করে গেলো অনিন্দিতা! ইমন অঝোরে কেঁদে উঠলো। তবুও একটিবার জন্যও অন্তত স্বান্তনা দেবার জন্যও পিছু ফিরে তাকায় নি সে! ফোন নাম্বার চেঞ্জ করে সম্পূর্ণ দূরে সরে আসল সে ইমনের কাছ থেকে!
এদিকে ইমনের থেকে মুক্ত হয়ে খুব জমে ওঠে অনিন্দিতা আর টিভি তারকার প্রেম। শেষ পর্যন্ত সেই প্রেমকে বিয়ের নাম দিতে চায় অনিন্দিতা। টিভি তারকাও ব্যাপারটি মেনে নেয় এবং তার পরিবারে জানায়। কিন্তু টিভি তারকার মা কিছুতেই তাদের এ প্রেম মেনে নিতে চায় না। তিনি যে ছেলের জন্য অন্য মেয়ে দেখে রেখেছেন আর তাদের বংশে এ পর্যন্ত কেউ প্রেম করে বিয়ে করে নি। হাজার হোক বংশের ঐতিহ্য তো আর নষ্ট করা যায় না।! আর ছেলেও প্রচন্ড মা ভক্ত। মায়ের বকুনিতে সে ভুলে যায় তার ''কোন দিন ভুলে যাব না'' বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া প্রেম এবং বিয়ে করে তার মায়ের পছন্দের মেয়েকে।
অনিন্দিতা হয়ে পড়ে একা! ভীষণ একা! একদম নিঃসঙ্গ একা!
প্রতারণা আর স্মৃতি ভুলতে চাওয়ার অনুভূতির তপ্ত শিখায় দগদ্গ করতে থাকে বুকের কষ্টগুলো। প্রিয় মানুষ হারানোর ব্যথা যে কতটা তীব্র হতে পারে শিরায় শিরায় বুঝতে পারে সে! অঝোরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে অনুশোচনার অনুতাপে! কিন্তু সেই দিন কি আর ফিরিয়ে আনা যাবে! তার আজ ইমনের কথা বড্ড মনে পড়ে! ''আচ্ছা সেও কি এভাবে কেঁদে ছিল যখন সে তাকে ছেড়ে দিয়েছিল!'' হুম সে একবার ফেসবুকে টেক্সট করেছিল তার নাকি খুব কষ্ট হচ্ছে!
ইমনের ভাবনাগুলো কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয় অনিন্দিতার। আচ্ছা একটা বার কি তাকে 'সরি' বলা যায় না? অন্তত মন থেকে একটি বার তার কাছে ক্ষমা চাওয়া? সে ক্ষমা করুক আর না করুক অন্তত সে তো কিছুটা স্বস্তি পাবে!
বহুদিন পর ইমনকে ফোন দেয় অনিন্দিতা! তার ভয়েজ শুনে চমকে ওঠে ইমন! কিন্তু পরক্ষনেই আবার নিজেকে সামলে নেয় । ইমনের এই গুণটি খুব ভালো লাগে অনিন্দিতার। সে খুব সহজে মানিয়ে নিতে জানে!
অবাক হয়ে লক্ষ্য করল অনিন্দিতা, ইমনের সব কিছুকেই কেন যেন আজ তার অসম্ভব ভালো লাগছে! শুধু একটা ব্যাপার লাগছে বেখাপ্পা-ইমনের কন্ঠের সেই আগের আবেগগুলো আর নেই! আগে অনিন্দিতার সাথে কথা বলতে গেলেই কেমন যেন পাল্টে যেতো ইমনের কন্ঠ। খুব আদুরে নরম হয়ে উঠতো। কিন্তু আজ একদম স্বাভাবিক!
কথায় কথায় জানলো ইমন জানালো দু দিন আগে বিয়ে করেছে সে!
ইমন তাকে তার স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। খুব ফ্রেন্ডলি ইমনের স্ত্রী। একদম ইমনের মত। সে অনিন্দিতার সাথে এমনভাবে কথা বলছে যেন কত দিনের চেনা! ইমন তাকে তার কথা বলেছে হয়তবা। সে আপ্লুত কন্ঠে জানালো,' নিজের থেকেও বেশি সে ভালোবাসে ইমনকে।' কথার এক ফাঁকে বলল ,'সামনে থেকে যাকে ভালোবাসবেন তার মন দেখে ভালোবাসবেন, দৈহিক সৌন্দর্য দেখে নয়। তাহলে কোন দিন ঠোকতে হবে না। আমি ইমনকে মন দেখে ভালোবেসেছি তাই ঠকিনি আর আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ যে আপনি তাকে ছেড়ে দিয়েছেন আর এ জন্যই আমি এত ভালো একটা মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।''
'' আসলে জীবনে তৃপ্তি পেতে স্বদেচ্ছাটা খুব জরুরী। আমি মোহের কাছে হেরে গিয়ে ইমনকে পাওয়ার ইচ্ছেটাকে বিসর্জন দেইনি, তাই আমি আজ সুখী, একজন পূর্ণ মানবী। কিন্তু আপনি আপনার ইচ্ছেগুলোকে অসৎ করে ফেলেছিলেন তাই এতটা কষ্ট পেয়েছেন।'' খুব স্বাভাবিক কন্ঠে এ সব বলে শুভেচ্ছা জানিয়ে লাইন কেটে দেয় ইমনের স্ত্রী।
স্তব্ধ হয়ে পড়ে রয় অনিন্দিতা! হুম ইমনের স্ত্রী যা বলেছে ঠিকই বলেছে। আজ যদি সে মানুষের সৌন্দর্য না দেখে মন দেখতো তবে হয়ত তার জীবনে এত কষ্টের দিন কোন দিনই আসতো না।
সে তার পবিত্র ইচ্ছেগুলোর সাথে অসততাকে গুলিয়ে ফেলেছিল যেমনি ভালোবাসার সাথে গুলিয়ে ফেলেছিল মোহকে! সব দোষ সে যান্ত্রিক সভ্যতার উপর চাপিয়ে খুঁজে চলে কষ্ট থেকে পরিত্রাণ!
''হুম সব দোষ এই নষ্ট সভ্যতার! এই সভ্যতাই হাজারো সম্ভাবনার পথ উন্মোচন করে দিন দিন আমাদের লোভী করে তুলছে! তাই আমরা কিছুতেই পাচ্ছি না তৃপ্তি! চাই আরো চাই! আমাদের চাওয়ার ইচ্ছেটা দিনকে দিন বাড়তেই থাকে! চারিদিকে শুরু হয় চাওয়ার প্রতিযোগিতা! অথচ আমরা যদি সামান্যতেই সুখী হতে পারতাম তবে হয়ত কোন দিনই এই নিঃস্বতায় আমাদের ভুগতে হত না।''
একাকীই এ সব হাজারো ভাবনায় দগ্ধ হয় অনিন্দিতা! আর প্রভুর কাছে দু হাত তুলে দোয়া চায় ইমনের জন্য। ''প্রভু তুমি তাকে সারা জীবন সুখে রেখো।''
১৬ মে - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪