দিগন্তজোড়া শ্রাবণের মেঘলা আকাশ। নিচে সুবিস্তৃত চলন বিল। সবুজ ঘাসে মোড়া তার পাঁড়। শুয়ে থাকতে দারুন লাগে! এর ওপর চুলে ঋতুর আলতো পরশ থাকলে তো কথাই নেই। কিন্তু মনে সেই আমেজ কই? যেন অনেক দূর থেকে ঋতুর দুএকটা কথা ভেসে আসছে। উত্তরও দিচ্ছি না দেয়ার মতই। মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হাতের মোবাইলটা। একটার পর একটা ম্যাসেজ পড়ে পড়ে দুশ্চিন্তায় ছেয়ে যাচ্ছে মনের আকাশ। কিন্তু কি করতে পারি আমি? বলে দেব ঋতুকে - ওরই ছোট বোন পাঠিয়েছে এগুলো! হ্যাঁ রিনিকে আমি পড়াই। কলেজের গণ্ডিই এখনও পেরোতে পারেনি মেয়েটা। তার ওপর রিনি এও জানে যে ঋতুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে। এতসব কিছু জেনেও রিনি যে ম্যাসেজগুলো পাঠিয়েছে তা পড়ে সত্যিই হতভম্ব হয়ে যাচ্ছি! ভাবছি শক্ত করে বকে দেব নাকি! কিন্তু তাতেও বিপদ, রিনি আবার ওদের সকলের আদরের মধ্যমণি! পরে যদি আমার টিউশনিটাই যায়? এ মুহূর্তে যা আমার পরম সহায়। তাছাড়া বিষয়টা নিয়ে আমি কিছুটা বিব্রতও, ঋতুকে বলি কি করে? এখন বললে ও যদি আমাকেই সন্দেহ করে বসে? তাই বা করে কি করে, ঋতুকে কি আমি আজকে থেকে চিনি? ঋতুর মত স্নিগ্ধ, সরল আর বিচক্ষণ নারী কোথাও দেখিনি! ওর চোখে যে সাগরের গভীরতা তা আমাকে অবাক করে দেয়। বিস্মিত করে আমাকে ওর সরল স্বীকারোক্তি। আচ্ছা, মেয়েরা নাকি মেয়েলি বিষয়গুলো আগে থেকেই বুঝতে পারে। ঋতু কি রিনিকে নিয়ে কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে?
আমি মোবাইলটা রেখে পূর্ণ দৃষ্টিতে চাইলাম ঋতুর চোখে। নাহ, ওর চোখ আর ললাটে কোন ভাঁজ পেলাম না, দেখলাম না গালে সন্দেহের রক্তিম আভাও। শুধু ঠোঁটের কোণে হালকা কৌতুক যা কিনা ওর সৌন্দর্যের চিরচেনা স্বাক্ষর। তবে কি ও কিছুই আন্দাজ করেনি? নাকি উল্টো, পুরোটা আন্দাজ করে সিদ্ধান্তের ভার আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছে! কারণ ছোট বোনের কাছে নিজেকে সে তুচ্ছ ভেবে গুঁটিয়ে নেবে – এটাই তো ওর স্বভাবসুলভ সরলতা। কিন্তু তা কি এতই সরল যে বলী হবে নিজ ভালোবাসা?
আমি উঠে বসি। হাঁটুতে মুখ রেখে আকাশপানে চাই। আকাশের ওই খণ্ডখণ্ড মেঘগুলো যত না ছোট, ঋতুর কাছে নিজেকে মনে হল তার চেয়েও ছোট! ষড়ঋতুর যেমন শত রূপ, আমার ঋতুর তেমনি হাজারো গুণ। ভালোবাসায় ও অনেক মহান। প্রেমময় ঐশ্বর্যে ও আমার মনকে করেছে কানায় কানায় পূর্ণ। ওর নিঃস্বার্থ প্রেমের পরীক্ষায় আমিই আজ পরাজিত। আমি কখনও পারব না ওর মত ত্যাগ স্বীকার করতে। পারব না নিজ মনে তিল তিল করে গড়ে তোলা ভালোবাসাকে অন্যত্র বিসর্জন দিতে।
পড়ন্ত বিকেল। দিগন্তের শেষ সীমায় রক্তিম সূর্য কিছু বাদেই নিজেকে সঁপে দেবে। রক্তাক্ত আকাশ তারই শোঁকে কাতর। ঋতু বিনা আমার জীবনের রঙটাও স্পষ্ট দেখতে পেলাম। শূন্য হয়ে যাওয়া এই বুকে হঠাৎই এক চাঁপা বেদনা এসে ভর করে। কুরে কুরে খায় সুখ নামক নিরাকার বস্তুর শেষ কণাটিও। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় সত্যের ফাঁসীকাষ্ঠে। ঠিক যেন মৃত্যুর আগমুহূর্তে মুখ নিঃসৃত অন্তিম আর্জি হয়ে এক প্রশ্ন বেরিয়া আসে, “ঋতু, ......জানি না কত যুগ আর শতাব্দী লাগে এই ছাদ পেরুতে, পাব কি তোমায় সারথী হয়ে?” “আমি তো তোমারই অপেক্ষায়!” অতি কাঙ্খিত সেই কোমল অথচ স্পষ্ট স্বরে ঋতু।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।