তৃতীয়ার চাঁদ

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

আশিষ বিশ্বাস
  • 0
  • ৩১
এখন ক'টা বাজে? কে জানে! কী হবে জেনে! আর তো কয়েকটা মুহূর্তের অপেক্ষা মাত্র, তারপর-ই তো সব শেষ। জীবনটা আাঁধারে ভরে গেছে। নিকষ কালো অন্ধকার এখন গোলামের সামনে। জীবনটা শেষ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আস্তে করে দরজাটা ভেজিয়ে উঠানে এসে দাঁড়াল সে। মৃদু জ্যোৎস্নায় ভালো করে একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো সন্তর্পণে। আজন্ম দেখা বাড়ীটার প্রতিটা ইঞ্চি তার নখদর্পণে। কুয়ার পাড়, বাথরুম, রান্নাঘরের পেছনে ঘোরা নিম গাছ- সব নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধীরে পা চালিয়ে রান্না ঘরের বেড়ায় গোজা দড়িটি নিয়ে বাড়ীর পিছনে পাকুড় গাছটার পাশ দিয়ে সোজা খোলা মাঠে। আর একটু এগিয়েই জঙ্গলটা। সারা মাঠে একটু জ্যোৎস্নার লেশ থাকলেও এখানে ঘন অন্ধকার ঘাপটি মেরে বসে আছে। বড়ো ছাতিম গাছটার তলে গিয়ে বসল গোলাম। আজ শেষ আশাটুকুও নিঃশেষ হয়ে গেল। রাত্রি বরের হাত ধরে আজ শ্বশুর বাড়ি চলে গেল। সম্পর্কটা শেষ হয়ে গেছিল কয়েক বছর আগেই। তবুও আশা ছিল হয়তো রাত্রি ফিরে আসবে, আবার জীবনটা স্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়ে উঠবে। তাই দিনের পর দিন রাত্রির বাড়ীর সামনের চায়ের দোকানে আড্ডার ছলে অপেক্ষা করেছে কত! কিন্তু না! রাত্রির বাড়ী একদিন ঢেকে গেছে উৎসবের আবরণে আলোর রোশনাই-তে। আর আজ সমস্ত নাটকের যবনিকা পতন। রাত্রির সঙ্গে তার সম্পর্কটা সেই স্কুল জীবন থেকে। স্বপ্নে ভরা কতগুলি বছর কেটে গেছে। তারপর কলেজ, একের পর এক প্রতিযোগিতায় বিফলতা, বেকারত্বের জ্বালা, অর্থকষ্ট- সব মিলিয়ে এক বেসামাল অবস্থা। রাত্রির বাড়ী থেকে এক সময় বিয়ের জন্য দেখাশোনা শুরু হয়ে গেল, অথচ গোলাম অসহায়, শুকনো কিছু ভালোবাসার কথা ছাড়া ঝুলিতে আর কিছু নেই। এক সময় রাত্রি চোখের জলের সঙ্গে বিদায় নিয়েছে। রাত্রি কতবার বলেছে চাকরির চেষ্টা করো, নিজের পায়ে দাঁড়াও, নেহাত পক্ষে একটা ব্যবসা- জীবনের জন্যে সামান্য কিছু উপার্জন করো। কিন্তু কি করা যাবে, কত তো চেষ্টা করলো, কছুতেই তো আর চাকরি হয় না! বন্ধুরাও বলে ব্যবসা করতে, কিন্তু ওসব তো রুচিতে বাঁধে, এতখানি পড়াশোনা করবার ব্যবসা- ভাবাই যায় না! বেসরকারি চাকরির সুযোগ হাতে এসেছিল, কিন্তু তাতেও যত কম মাইনে, উপরন্তু উপর ওয়ালার যত চেখ রাঙানি সহ্য করতে হয় সেটা ভেবে গোলাম মারায় নি ও পথ। বাড়ীতে বিধবা মা। পরামর্শ করতে গেলে হাসি মুখে কিছু বলননি কোনদিন। মাকে কোনদিন হাসতে দেখেননি গোলাম। তার এই ২৬ বছরের জীবনে মা’কে কোনদিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলতে দেখেনি গোলাম। মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে যখন বাড়ী ফিরেছিল, আশা ছিল, মা নিশ্চয়ই খুশি হবে। কিন্তু কোথায় খুশি! গম্ভীর গলায় শুধু বললেন, তাহলে তো বড়ো হয়ে গেছো- এবার কাজকর্মের চেষ্টা শুরু করো। মায়ের অনিচ্ছাতে কলেজে ভর্তি হওয়া, টিউশনি কের পড়াশোনা করা এবং বি.এ পাশ করা। সবই যেন স্রোতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বাবা সেই কবে মারা গেছেন মনে পড়ে না। প্রতিবেশী বয়স্কদের কাছে শুনেছে বাবা নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। পরে বাসের ড্রাইভার, তারপর অ্যাকসিডেন্ট এবং মৃত্যু, গোলাম কখন এক বছরের শিশু। এসবই পাড়ার বড়োদের কাছে শোনা, মা কোনদিন কিছুই বলেনি, কিছু জিজ্ঞেস করলেও চুপ করে থাকে। পাশের বেসরকারি স্কুলে দপ্তরীর কাজ, বাড়ী ফিরে রান্না-বান্না, ঘর- সংসার, বাজার করা- এটাই মায়ের রোজ নামচা। কি করে একটা মানুষ দিনের পর দিন নিঃশব্দে দিন কাটাতে পারে ভাবলে অবাক হতে হয়। আজ কারো মুখে হয়তো শুনেছে রাত্রির বিয়ের কথা। খেতে বসে বলল, পেটের ভাত জোগাড় করবার মুরত নেই, ছেলের প্রেম করবার শখ, বিয়ে করবার শখ! কথাটা যেন শেলের মতো বিঁধল বুকে, যেন কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা। না, এ জীবন আর রাখবে না গোলাম। ‘আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়’ কথাটা লিখে বিছানায় কাগজটি রেখে নিশুতি রাতে বেড়িয়ে এসেছে সে। হাতে দড়িটি নিতে ভুল করেনি।
একটা পাখি রাত জেগে ডেকে চলেছে। এ ডাকটি নাকি খুব অলক্ষুণে কুক, কুক, কুক। হঠাৎ চোখ গেল রাস্তায়। এত রাতে জঙ্গলের পাশের রাস্তাটি দিয়ে কে হেটে যাচ্ছে! অপেক্ষা করতে থাকে গোলাম মানুষটিকে দেখাবার জন্য। আধো অন্ধকারে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে আসছে, মানুষটি যথা সম্ভব জোরে হাঁটছে। সাদা কাপড় পড়া এক নারী। আরো এগিয়ে আসতে চমকে হাতে ধরা দড়িটি ছুড়ে ফেলে গোলাম বলে উঠল, মা তুমি? এত রাতে কোথায় যাচ্ছ?
- কে গোলাম? তুই কোথায় যাচ্ছিস বাবা? বিছানায় তোর লেখা কাগজটি পড়ে বেরিয়ে এসেছি তোর জন্যে!
- না মানে আমি একটু ...।
- বাবা, তুই যাচ্ছিস সেখানে আমাকেও নিয়ে যাবি বাবা? আমি যে আর বোঝা টানতে পারছি না! মায়ের গলা বোধ হয় বুজে আসছিল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। জীবনে মাকে প্রথম কাঁদতে, আর এত ভালোবাসা মাখা মুখটিকে কেমন করে এতগুলো বছর কর্কশতা দিয়ে ঢেকে রেখেছিল মানুষটা! বড়োদের মুখে শুনেছিল মা নাকি সুন্দর গান গাইত, গোলাম বিশ্বাস করেনি, এত নিরস কোন মানুষ কোনোদিন গাইতে পারে নাকি! কিন্তু আজ এই আধো অন্ধকারে যে মাকে সে আবিষ্কার করল সে সব পারে। আর তার জন্যে সব কিছু করতে পারা যায়। নিস্তব্ধতা ভেঙে গোলামের গলা দিয়ে কয়েকটি শব্দ বেরিয়ে এলো: মা, তোমার জন্যে সব করতে পারি, শুধু আমাকে প্রাণ ভরে কাঁদতে শিখিও!
- দু’জনে বাড়ির দিকে রওনা দিল। গোলামের চোখ গেল আকাশের দিকে। কাস্তের মতো বাঁকা চাঁদ নিস্পলক তাকিয়ে আছে। এই চাঁদটি-ই দিন কয়েক পরে গোল থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে উঠবে আর চারিদিক স্নান করবে শুভ্র আলোয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য প্রথমেই নাম, গোলাম নামটা কেন যেন পছন্দ হয়নি। রাত্রির সাথে মিলিয়ে হলেও একটা সুন্দর নাম রাখা যেত নায়কের। আর যে নিজের টিউশনির টাকায় বিএ পাশ করতে পারে, বেসরকারী চাকুরী করা নিয়ে তার ইগো বেঁচে থাকার কথা নয়। এবার বলি গল্প ভালো লেগেছে। ভালো লেগেছে গাথুনী এবং বাক্য গড়াও। শেষটা নাটকীয় হলেও মনে দাগ কাটে।
সালেহ মাহমুদ UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# সুন্দর গল্প। পান্না ভাইেয়র সাথে সহমত। ধন্যবাদ।
Lutful Bari Panna চমৎকার গল্প, তবে প্যারা করে নিলে পাঠকের ইনভল্ভ হতে সুবিধা হত।
সৈয়দ আহমেদ হাবিব ভাল লেগেছে, অল্প অল্প করে প্যারা করা হলে সুন্দর হয় এবং পড়তেও সুবিধা হয়, প্রথম প্যারাটা একটু বেশী বড় হয়ে গেছে
তাপসকিরণ রায় গল্প ভাল লাগল।কাহিনী কমন--সাধারণ হলেও ভাব ভাষার গুনে বেশ আকর্ষণীয় লেগেছে।
এশরার লতিফ ভালো লাগলো গল্পটি।

২৪ এপ্রিল - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪