ঘুম ভাঙে অতনুর, আবছা অন্ধকারে ঘেরা চারিপাশ। ক্লান্ত শরীরে উঠে বসে বিছানায়। অনু বসে আছে। ঠিক সেভাবেই।  বিষন্নতা আর অবসন্নতা গায়ে মেখে। বৃষ্টিভেজা প্রকৃতিও যেন ক্লান্তির ঘেরাটোপে। অবাক চোখে দেখে অতনু, এই একটা রাতের মধ্যেই যেন এক যুগ সময় পেরিয়ে এসেছে মেয়েটা। হঠাৎ করে যেন অনেক পরিণত হয়ে গেছে অনু। ধীরে ধীরে ভোরের আবছা আলো ছড়িয়ে পড়ছে ঘরময়। অনু তাকিয়ে থাকে অতনুর দিকে, অপলক দৃষ্টিতে। সেই দুষ্টুমি ভরা চোখদুটিতে আজ যেন কিসের আকুতি। একটা কষ্টের ডেলা জমা  হয়ে ওঠে বুকের কাছটায়, উদ্বেলিত পিতৃহ্রদয় বার বার বলতে থাকে, ভগবান কেন এত নিষ্ঠুর! মা-হারা মেয়েটাকে তো এতদিন বুকে আগলে রেখেছিলেন তিনি, আর কয়েকটা বছর সময় কি দেওয়া যেত না তাকে! অনেকগুলো কাজ যে বাকি রয়ে গেছে এখনও। কাল রাতে খবরটা শোনার পর থেকে শুধুই মনে হচ্ছে এই একটা কথাই, আর কিছুটা সময় বড্ড জরুরী ছিল তার। আর, চোখের সামনে বার বার ফুটে উঠছে মেয়ের সাথে কাটানো ছোট ছোট মুহূর্তগুলো, হয়ত কখনো খেয়ালও হত না সময়গুলো কতটা সুন্দর, কতটা স্মৃতিবিজড়িত। হারিয়ে যাওয়ার সময় আসন্ন বলেই বোধহয় আরও বেশি করে মনে পড়ছে প্রত্যেকটা দিনের কথা। অনুর মাথায় হাত দেয় অতনু, বলতে চায় অনেক কথা, তবু গলা ধরে আসে, তাকিয়ে থাকে অসহায় চোখে। অনু হাসতে চেষ্টা করে একটু, বোধহয় অসহ্য সময়টা দ্রুত পেরিয়ে যাওয়ার জন্যই বলে ওঠে,
- ‘চা খাবে তো বাবা, করব এখন?’  
- ‘করবি? কর!’
একটু তাড়াতাড়িই উঠে চলে যায় অনু, অতনু বুঝতে পারে অনুকে, কম দিন তো হল না। অনুর মা বেঁচে থাকতে অতনু হয়ত সেভাবে অনুভব করতে শেখে নি, প্রয়োজন হয়নি বলেই। কিন্তু,গত বছর পাঁচেক তো বয়স হল দু’জনের সংসারটার। এই সংসারে অতনুই যে অনুর মা-বাবা-বন্ধু,সবকিছু। মেয়েকে বোঝে অতনু, এই উঠে যাওয়াটা যে রান্নাঘরে গিয়ে নিছক চা করাই নয়, তা বোঝে সে। তাই,আরো অসহায় লাগে নিজের অস্তিত্ব সংকটকে। চায়ের কাপ হাতে অনু ফিরে আসে মিনিট কুড়ি পরে। চোখদুটো লালচে আর ফোলা ফোলা। তবু কিছু জিজ্ঞেস করে না অতনু। নিঃশব্দে চায়ের কাপ তুলে নেয় হাতে। এবার অনু বোধহয় একটু জোর করেই কথা বলতে শুরু করে খুব বেশিরকম স্বাভাবিকভাবে। অতনু তাকিয়ে দেখে মেয়ের অভিনয়।  
-‘বাবা, অনেকদিন মাংস খাই না, আজ রমাপিসিকে বলব একটু মাংস নিয়ে আসতে, হালকা করে করতে বলব, খাবে তো?’
-‘হ্যা, তা তো খেতেই পারি’
-‘আজ আমি কলেজ যাব না বাবা, প্লিজ...’
-‘কেন রে?’
-‘তেমন কোন ইম্পরট্যান্ট ক্লাস নেই। প্লিজ বাবা’
-‘আচ্ছা বেশ, যাস না তাহলে’
আবার কিছুক্ষন নৈঃশব্দ, চায়ের কাপ হাতে অতনু আর অনু। হঠাৎ বেজে ওঠে টেলিফোনটা। খাটে বসেই হাত বাড়িয়ে রিসিভারটা তোলে অনু। নিরবতা, আর নিরবতা – আর তারপরেই, সমস্ত জমা কষ্ট-আবেগ-উচ্ছাস উপচে পড়ে বাঁধ ভাঙা চোখের জলে। চমকে তাকায় অতনু, আবার কিসের সংবাদ! আবার কি অশুভ বার্তা! অপেক্ষা করে অতনু, কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস হয় না। অনুর ধাতস্ত হতে সময় লাগে বেশ কিছুক্ষণ। আর, তারপরে অস্পষ্ট ভেজা গলার উক্তি – ‘ডাক্তার আঙ্কল ফোন করেছিলেন বাবা, তোমার কালকের বায়েপসি রিপোর্টটা ভুল ছিল,ওটা নেগেটিভ হবে’।
অবাক বিস্ময়ে তাকায় অতনু, কথাটা যেন ঠিক বোধগম্য হয় না। ভগবান কি তবে সত্যিই আছেন আমাদের খুব কাছাকাছি!  শুনতে পেয়েছিলেন তিনি একটি পিতৃহ্রদয়ের হাহাকার! কান্নায় ভেঙে পড়া অনুর মাথায় হাত দিয়ে স্থির হয়ে থাকে অতনু। অনুর কান্না যেন আর কোন বাঁধ মানতেই চায় না। কয়েকটা ঘন্টার চাপা আবেগ,বেদনা,উদ্বেগ সব কিছু ঝরে পরে চোখের জলে। আবার নতুন আশা,নতুন স্বপ্ন, নতুন বিশ্বাস, নতুন একটি জীবন। অতনু তাকিয়ে থাকে বন্ধ কাঁচের জানলার বাইরের পৃথিবীটার দিকে। আস্তে আস্তে অন্ধকার কেটে যাচ্ছে, আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে আকাশ। লাল রঙে সদ্য স্নাতসিক্ত সূর্য উঁকি দিচ্ছে পুব আকাশে। শুরু হচ্ছে একটি নতুন দিনের, শুরু হচ্ছে আরো একটি নতুন জীবনের, অনুভব করে অতনু। সমস্ত বিষন্নতা কেটে গিয়ে মনটা আজ বাইরের ঐ পৃথিবীটার মতই নতুন আলোয় সিক্ত ও সজীব।            
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ২৩ এপ্রিল  - ২০১৩ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ১৫ টি
                        
                    
            
            
                    
                        সমন্বিত স্কোর
                        ৫.৯১
                        
                            বিচারক স্কোরঃ ৩.১৯ / ৭.০
                            পাঠক স্কোরঃ ২.৭২ / ৩.০
                        
                     
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                     
 
     
    
        
        বিজ্ঞপ্তি
        “নভেম্বর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
        প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী