যে রাতে কবির মৃত্যু ঘটল

রাত (মে ২০১৪)

মোঃ ইয়াসির ইরফান
  • ১২
আশরাফ সাহেব হঠাত করেই ভীষন চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন । ‘ঐ, ফাহাদ্য এদিকে আয় । হারামজাঁদা । বদমাইশ । তুর ভার্সিটি নাই । সারাদিন ঘরে বসে থাকতে থাকতে তুর পিঠের চামড়া মোটা হয়ে গেছে । হারামী কোথাকার । কোথায় তুই ? সামনে আয়, হতচ্ছাড়া’ । রাগে তিনি দাঁত কিড়মিড় করতে থাকেন ।
ফাহাদ নিজের বিছানায় ঘুমাচ্ছিল । কাজের মেয়েটা এসে এই ভয়ানক সংবাদটা দিতেই সে মহাধন্দে পড়ে গেল । কি এমন করল, যার জন্য আব্বা তার উপর এতটা রেগে গেছেন ! অনেক ভাবনা চিন্তা করেও কোন কূল না পেয়ে শেষে আব্বার চিতকারের উতসমুখের দিকে দুরুদুরু বুকে এগিয়ে যায়, সে ।
চেঁচামেচি শুনে অনেকেই উপস্থিত হয়েছেন । ফাহাদরা যৌথ পরিবার । মেজো চাচা, ছোট চাচা এসেছেন । আম্মা, বড় আপা, চাচী সবাই ফাহাদকে জিজ্ঞাসা করেছেন, ব্যাপার কি ? করেছেটা কি ? কিন্তু সে কোন জবাব দিতে পারছে না । আব্বার সামনে যেতেই, হুংকার ছাড়লেন আশারাফ সাহেব । কিরে ক্লাস-তেলাস নাই ? সারাদিন ঘরে বসে বসে করিস কি ?
ফাহাদ কিছু বলতে গেছিল । কিন্তু তার আগেই আশরাফ সাহেব বলে উঠেন, চুপ থাক শুয়োর । বেশী বড় হয়ে গেছিস না ! আমার খেয়ে আমার পরে তুই ইচ্ছেমত চলবি । সেটা তো হবে না । জুতিয়ে পিঠের চামড়া তুলে আমার জুতা বানাব । বদ কোথাকার ।
ফাহাদের ছোট চাচী এসে একটু ঠান্ডা করার চেষ্টা করেন । আশরাফ সাহেব, ছোট ভাইয়ের এই বধুটিকে বড় বেশী স্নেহ করেন । এবং সেই কারনেই ফাহাদের আম্মা ছোট চাচীকেই এগিয়ে দিলেন । কাজ হল তাতে ।
মেজো চাচা বলে উঠেন, ভাইজান হয়েছেটা কি ? আমাদের একটু বলবেন ?
-হারামজাদা, আমার মানসম্মান নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছে ।
ভাইজ্বান, প্রেম-ফ্রেম জাতীয় ঝামেলা বাঁধাল নাকি ? ছোট চাচা জিজ্ঞাসা করেন ।
-আকরাম, তোর কি মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেছে ? ছোটবঊ অরে ডাক্তার দেখাও । ঐ কুঁড়েটাকে কোন মেয়েটা ফিরিতের জন্য বলবে ? আশরাফ সাহেব সত্যিই ভীষন চটে আছেন । বুঝাই যাচ্ছে ।
ছোটচাচী এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন, ভাইজ্বান ঘটনা কি । একটু খুলে বলেন ।
-ছোটবউ, ফাহাদ্য রে জিজ্ঞাসা কর সে ভার্সিটি যাই না কেন !
-আব্বা, আমি তো বলছি আমার দ্বারা এসব পড়ালেখা হবে না । আমি কবি হব । কবিতা লিখ......
ওকে বাঁধা দিয়ে বলে উঠেন আশরাফ সাহেব, তুর কবিতা আমি তুর পিছন দিয়ে ঢুকাব । বদের হাড্ডি বদ । পেয়েছিস কি তুই ?
‘আহা ! ও যদি কবি হতে চায় হোক না । পাশাপাশি একটু পড়াশোনা করিস, বাবা’ । -আম্মা বলেন ।
-তুমি চুপ কর । আগ বাড়ায় কথা বলতে আসবা না ।
ছোট চাচাও বলে উঠেন, কবিতা লিখলে সমস্যা কি ! না, ভাইজ্বান । সে তো অন্যায় কিছু করতেছে না ।
ফাহাদ বুঝতে পারছিল না । গোলমালটা কোথায় হল । ও তো ঠিকই কবিতা লিখে আসছিল । কোন সমস্যা-আপত্তি কেউ করে নাই । আজ হঠাত আব্বার কি হল ! ফাহাদের ইচ্ছা, সমস্ত বিষয় নিয়ে কবিতা লিখার । ইতিমধ্যেই অনেক বিষয় নিয়ে লিখে ফেলছে । ওর সাতটা কবিতার খাতাও শেষ । এখন যদি এই বিপদ নেমে আসে, তাইলে তো মুসিবত ।
মেজো চাচা খুব কম কথা বলেন । তিনিও ধীরে ধীরে বলেন, ভাইজ্বান আজ তো রাত হয়ে গেছে । কাল সকালে দেখা যাবে কি করা যায় । আমরাও ওর সাথে কথা বলে দেখি । অন্যায় করলে তো শাস্তি তাঁকে পেতেই হবে ।
-কি বলিস, এসব ! ঐ হারামজাদা কি কবিতা লিখবে । এ্যাই দ্যাখ, এই খাতায় ও কি লিখেছে ।
সর্বনাশ । ফাহাদ আতকে উঠে । এই খাতা আব্বার হাতে গেল কি করে । শীট, ঘুম আসাতে খাতাটা ড্রয়িং রুমে ফেলেই চলে এসেছিল । নিশ্চয় ওই খান থেকে আব্বার হাতে পড়েছে ।
আশরাফ সাহেব বলেন, ছোট বউ তোমাকে নিয়ে তোমার ভাতিজা কবিতা লিখেছে । দ্যাখ । তিনি নিজেই পড়ে শোনান-
দু’দিন পর পর চুলে তিনি
চালান ছোট কাঁচি ।
কাজ ফাঁকিতে Ph.D যিনি
তিনিই ছোট চাচী । (ছোট চাচী)
সবাই সবার মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে । এবার ছোট চাচার দিকে তাকিয়ে বলেন, শোন-
চশমা চোখে ত্যাদড় মুখে
ডাকেন ছোট চাচা ।
কি এক সুখে শুধু বকে
নাকটা করে বোঁচা । (ছোট চাচা)
সাদিয়া, এটা তোকে নিয়ে-
মাপা মাপা কথা বলেন আমার বড় আপা
উপন্যাসেই মগ্ন থাকেন হাসেন হাসি চাপা ।
সাজতে ভীষন ভালবাসেন সময় নিয়ে সাজেন
সাজলে তাঁকে পেত্নী দেখায় তিনি কি তা জানেন ? (বড় আপা)
ফাহাদের মাথা নীচু থেকে আর উঠছে না । একমনে পায়ের নখ দেখতে ব্যস্ত । অনেক কিছু নিয়ে সে লিখেছে । কি কি ঐ খাতাটায় আছে বুঝতে পারছে না । নারীদেহ নিয়ে, নানান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে সে কবিতা লিখেছে । সেসব কি ঐ খাতায় ? ফাহাদের কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠে । আব্বা, তা দেখলে তো বিচ্ছিরি অবস্থা হবে । আল্লাহ, কি হবে এখন ! তার কবিতা কখনোই ছ’লাইনের বেশী বা দু’লাইনের কম হয় না । কিন্তু সে নানাবিধ বিষয় নিয়েই লিখেছে । আপনমনেই বলে উঠে, কবি মন যা কিছুই ভাবতে পারে । কবিতা বলে কথা । বিভিন্ন পত্রিকা ম্যাগাজিনে সে কবিতা পাঠিয়েছে । এই ছাপালো বলে ! তখন সবাই বুঝবে, কবি ফাহাদ কি জিনিস ।
আব্বার গলায় কৌতুক ফুটে উঠে । বলেন, এ্যাই দেখো সে হাগু নিয়ে কবিতা লিখেছে ।
হাগু, কখনো তুমি কমলা, কখনো হলুদ, কালো
নরম-পাতলা, শক্ত দানাদার ।
ঐ টুকুতেই কত বর্ণ-গন্ধ বিচিত্রতা তোমার । (হাগু)
মাছি নিয়ে কি লিখছে দ্যাখো-
মাছি মাছি মাছি
শুনে যাও তোমারেই বলছি
পায়খানার উপর তোমারেই দেখেছি
ছিঃ ছিঃ ছিঃ গন্ধ তুমি ছিঃ । (মাছি)
-সে সবাইকে নিয়েই কবিতা লিখছে । এখন তোমরা বলো, আরো পড়ব কি না ! পরে কিন্তু শব্দের জন্য আমাকে কিছু বলতে পারবা না ।
আম্মা বলে উঠেন, আহ থাক । আর কিচ্ছু পড়ার দরকার নাই ।
-ওহ, সে আমাকে নিয়েও কবিতা লিখছে । সেটাতো পড়া হয় নাই ।
- আব্বা, বাদ দেন না । ফাহাদের করুন মিনতি শোনা যায় ।
-না না । বাদ দেব কেন ? বিখ্যাত কবির কবিতা বলে কথা । সে কবিতার শুরুতেই লিখেছে-
আমার আব্বা আশরাফ করিম’কে নিয়ে আমার অমর কবিতা-
আশরাফ বলে, প্রস্রাবের জলে
ভেজাই দেহখান ।
গন্ধের কোলে দুনিয়া ভুলে
সঁপে দেই প্রাণ । (আশরাফ)
এখন তোমরাই বলো, এই ছাগলটার হাতে কবিতা নিরাপদ কি না ! –আব্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন ।
ফাহাদ বুঝতে পারছিল, এর পর তার হাতে কবিতার খাতা দেখলে রি-এ্যাকশন ভয়ানক হবে । মনে হচ্ছে আজকের রাতটা ওর জীবনে বিভীষিকাময় হয়েই থাকবে । সবার চাহনি দেখে বুঝা যাচ্ছে কপালে বড়ই যন্ত্রনা অপেক্ষা করছে । কোন কুক্ষনে যে ঘুমটা এসেছিল । খাতাটা সোফায় রেখেছিল ।

ফাহাদ, তোর কবিতার সমস্ত খাতা আমার কাছে জমা দিবি । আর তুই কবিতা লিখবি কি লিখবি না তুই আর অন্যরা মিলে ঠিক করিস । যেন সমাপ্তি ঘোষনা করলেন আশরাফ সাহেব ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আখতারুজ্জামান সোহাগ খুব খুব মজা পেয়েছি গল্পটি পড়ে। দারুণ লিখেছেন ব্যাঙ্গাত্মক ঢঙে। কবিতাগুলো কিন্তু আসলেই অনেক সুন্দর হয়েছে। কবি ফাহাদের কবিতা!
biplobi biplob Darun liklan, valo laga roylo, shay shata amonthron.
সকাল রয় অনেক ভালোলাগলো
ওয়াহিদ মামুন লাভলু খুব আকর্ষণীয় লেখা। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
ধন্যবাদ । আপনিও শ্রদ্ধা জানবেন ।
বশির আহমেদ রম্য রচনা ভালইতো লিখেছেন । শুভ কামনা রইল ।
ঝরা পাতা চরম লিখেছেন...এখনও হাসছি। ভোট থাকল... :)
Gazi Nishad খুব ভাল লাগলো ভাই। আমার কবিতায় আমন্ত্রণ রইলো।
Salma Siddika ভালই লেগেছে রম্য গল্প
আলমগীর সরকার লিটন না গল্পটা বেশ লাগল ভাবপূর্ণ অভিনন্দন

১৫ এপ্রিল - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪